৮ নভেম্বর শুক্রবার বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রতিবাদ সমাবেশে অতর্কিত হামলা করা হয়। এর প্রতিবাদে শনিবার (৯ নভেম্বর) জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে জরুরি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। সেখান থেকে নাটক বন্ধ করতে আসা বিক্ষোভকারী কারা, তাদের পরিচয় স্পষ্ট করে একটি সুষ্ঠু তদন্তের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন।
ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামাল বায়েজীদ তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা তো নাট্যকর্মী, আমাদের পরিচয় স্পষ্ট। তবে যারা নাটক বন্ধ করতে চাচ্ছে, তারা কারা? তাদের পরিচয় আমরা জানতে চাই। যেভাবে আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে, তা সন্ত্রাসী আচরণ। আমরা এর বিচার চাই।’ কামাল বায়েজীদ আরও বলেন, ‘যারা হামলা করেছে, এই চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় এনে শিল্পচর্চার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।’
বিক্ষোভকারীদের দাবি স্পষ্ট নয় বলে মনে করেন কামাল বায়েজীদ। তিনি বলেন, ‘তারা এসে বলছে ‘দেশ বাংলা’র নাটক বন্ধ করতে হবে। তারা নাটকের দলের নামও জানে না। বলছে, বাংলা একাডেমিতে নাটক করতে দেয়া হবে না। এটা যে শিল্পকলা একাডেমি, এটাও তারা জানে না। তাহলে তারা কারা? নাটক বন্ধ করার মতো দাবি তুলে যে সন্ত্রাসী আচরণ করছে, তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তাদের কারা মদদ দিচ্ছে, তাদের পরিচয়ও সামনে আনতে হবে।’
বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে সমাধাণ করার চিন্তা আছে কিনা? প্রশ্নে কামাল বায়েজীদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা কারা, এটাই তো আমরা জানি না। তাদের তো একটা প্ল্যাটফর্ম থাকতে হবে। এরপর তাদের সঙ্গে কথা বলা যায়। কয়েকজন ব্যক্তি একটা ‘মব’ সৃষ্টি করে নাটক বন্ধ করার দাবি তুলবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব।’ ১৫ নভেম্বরের মধ্যে তদন্ত করে ব্যবস্থা না নিলে সারাদেশের নাট্যকর্মীদের নিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানান কামাল বায়েজীদ। সংবাদ সম্মেলনে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের অনুষ্ঠান সম্পাদক খন্দকার শাহ আলম বলেন, ‘যারা এই হামলা করেছে, তারা নিজেদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা বলে পরিচয় দিচ্ছে। নাট্যাঙ্গনেরও তো অনেকেই জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিল, আহতও হয়েছে। যে দলের নাটক তারা বন্ধ করার দাবি তুলেছে, সেই দলের অনেকেই তো আন্দোলনে অংশ নিয়েছে।’ প্রশ্ন রেখে খন্দকার শাহ আলম আরও বলেন, ‘নাট্যদলে তো নানা রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষ আছে। একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ, কিন্তু নাটক বন্ধ করতে চায়। তারা আসলে কী চায়?’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নাট্যজন ঝুনা চৌধুরী, তপন হাফিজ, ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের নির্দেশক ও নাট্যকার মাসুম রেজা, অভিনেতা কামাল আহমেদ।
২ নভেম্বর দেশ নাটক প্রযোজিত ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের প্রদর্শনী মাঝপথে বন্ধ করে দেয়া হয়। ওইদিন টিকিট বিক্রি শুরু হয় বিকেল থেকে। এরপর সন্ধ্যা ছয়টার দিকে একদল লোক শিল্পকলার গেটের সামনে দেশ নাটকের সদস্য এহসানুল আজিজ বাবুকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
পরে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক জামিল আহমেদ গিয়ে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করলে যথারীতি নাটকের প্রদর্শনী শুরু হয়। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা আবার সংগঠিত হয়ে নাট্যশালার গেটের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে তারা গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে মহাপরিচালক দেশ নাটকের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে প্রদর্শনী বন্ধ করার সিদ্ধান্ত দেন।
পরদিন এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসে নাটক বন্ধের কারণ, ওই সময়ের পরিস্থিতি ও করণীয় নিয়ে কথা বলেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক। তিনি জানান, দর্শকের ‘নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে’ নাটকের প্রদর্শনী মাঝপথে বন্ধ করে দেয়া হয়। পরিস্থিতি দেখে তার আশঙ্কা হয়েছিল, শিল্পকলা একাডেমিও ‘আক্রান্ত হতে পারে’।
এ ঘটনায় উদীচী, দেশ নাটক বিবৃতি দিয়ে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন বিক্ষুব্ধ থিয়েটারকর্মীরা। এ ঘটনায় শুক্রবার বিকেলে প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। শিল্পকলা একাডেমির প্রবেশদ্বারের মুখে সমাবেশে শতাধিক নাট্যকর্মী অংশ নেন। সমাবেশ চলাকালীন কয়েকজন লোক এসে পেছন থেকে ‘ডিম ছুড়ে’ মারে এবং নাট্যকর্মীদের ধাওয়া খেয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
সমাবেশে ডিম ছুড়ে মারার পর বক্তব্যে মামুনুর রশীদ বলেন, ‘সভা শেষ করব না। ভেতরে নাটক হবে, বাইরে আমরা পাহারা দেব। এই দুষ্কৃতকারীদের দেখে ছাড়ব।’ ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা মহানগর) তপন হাফিজ এ বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের সমাবেশ শেষ হচ্ছিল। এরমধ্যে অতর্কিতভাবে কিছু দুষ্কৃতকারী পেছন থেকে ডিম ছুড়ে মারে।
পরে নাট্যকর্মীরা নাট্যশালার সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। এর আধা ঘণ্টা পর আবারও ৪০-৫০ জন বিক্ষোভকারী সংগঠিত হয়ে এসে নাট্যশালার সামনে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যারিকেড তৈরি করেন। নাট্যকর্মীরা অবস্থান নেন নাট্যশালার মেইন গেটের সামনে। অন্যদিকে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নেন দুর্নীতি দমন কমিশনের গেটের সামনে। উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে নাট্যশালার সামনের চত্বর। সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় বিক্ষোভকারীরা নাট্যশালার সামনে থেকে চলে যান।
রোববার, ১০ নভেম্বর ২০২৪
৮ নভেম্বর শুক্রবার বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রতিবাদ সমাবেশে অতর্কিত হামলা করা হয়। এর প্রতিবাদে শনিবার (৯ নভেম্বর) জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে জরুরি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। সেখান থেকে নাটক বন্ধ করতে আসা বিক্ষোভকারী কারা, তাদের পরিচয় স্পষ্ট করে একটি সুষ্ঠু তদন্তের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন।
ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামাল বায়েজীদ তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা তো নাট্যকর্মী, আমাদের পরিচয় স্পষ্ট। তবে যারা নাটক বন্ধ করতে চাচ্ছে, তারা কারা? তাদের পরিচয় আমরা জানতে চাই। যেভাবে আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে, তা সন্ত্রাসী আচরণ। আমরা এর বিচার চাই।’ কামাল বায়েজীদ আরও বলেন, ‘যারা হামলা করেছে, এই চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় এনে শিল্পচর্চার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।’
বিক্ষোভকারীদের দাবি স্পষ্ট নয় বলে মনে করেন কামাল বায়েজীদ। তিনি বলেন, ‘তারা এসে বলছে ‘দেশ বাংলা’র নাটক বন্ধ করতে হবে। তারা নাটকের দলের নামও জানে না। বলছে, বাংলা একাডেমিতে নাটক করতে দেয়া হবে না। এটা যে শিল্পকলা একাডেমি, এটাও তারা জানে না। তাহলে তারা কারা? নাটক বন্ধ করার মতো দাবি তুলে যে সন্ত্রাসী আচরণ করছে, তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তাদের কারা মদদ দিচ্ছে, তাদের পরিচয়ও সামনে আনতে হবে।’
বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে সমাধাণ করার চিন্তা আছে কিনা? প্রশ্নে কামাল বায়েজীদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা কারা, এটাই তো আমরা জানি না। তাদের তো একটা প্ল্যাটফর্ম থাকতে হবে। এরপর তাদের সঙ্গে কথা বলা যায়। কয়েকজন ব্যক্তি একটা ‘মব’ সৃষ্টি করে নাটক বন্ধ করার দাবি তুলবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব।’ ১৫ নভেম্বরের মধ্যে তদন্ত করে ব্যবস্থা না নিলে সারাদেশের নাট্যকর্মীদের নিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানান কামাল বায়েজীদ। সংবাদ সম্মেলনে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের অনুষ্ঠান সম্পাদক খন্দকার শাহ আলম বলেন, ‘যারা এই হামলা করেছে, তারা নিজেদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা বলে পরিচয় দিচ্ছে। নাট্যাঙ্গনেরও তো অনেকেই জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিল, আহতও হয়েছে। যে দলের নাটক তারা বন্ধ করার দাবি তুলেছে, সেই দলের অনেকেই তো আন্দোলনে অংশ নিয়েছে।’ প্রশ্ন রেখে খন্দকার শাহ আলম আরও বলেন, ‘নাট্যদলে তো নানা রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষ আছে। একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ, কিন্তু নাটক বন্ধ করতে চায়। তারা আসলে কী চায়?’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নাট্যজন ঝুনা চৌধুরী, তপন হাফিজ, ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের নির্দেশক ও নাট্যকার মাসুম রেজা, অভিনেতা কামাল আহমেদ।
২ নভেম্বর দেশ নাটক প্রযোজিত ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের প্রদর্শনী মাঝপথে বন্ধ করে দেয়া হয়। ওইদিন টিকিট বিক্রি শুরু হয় বিকেল থেকে। এরপর সন্ধ্যা ছয়টার দিকে একদল লোক শিল্পকলার গেটের সামনে দেশ নাটকের সদস্য এহসানুল আজিজ বাবুকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
পরে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক জামিল আহমেদ গিয়ে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করলে যথারীতি নাটকের প্রদর্শনী শুরু হয়। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা আবার সংগঠিত হয়ে নাট্যশালার গেটের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে তারা গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে মহাপরিচালক দেশ নাটকের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে প্রদর্শনী বন্ধ করার সিদ্ধান্ত দেন।
পরদিন এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসে নাটক বন্ধের কারণ, ওই সময়ের পরিস্থিতি ও করণীয় নিয়ে কথা বলেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক। তিনি জানান, দর্শকের ‘নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে’ নাটকের প্রদর্শনী মাঝপথে বন্ধ করে দেয়া হয়। পরিস্থিতি দেখে তার আশঙ্কা হয়েছিল, শিল্পকলা একাডেমিও ‘আক্রান্ত হতে পারে’।
এ ঘটনায় উদীচী, দেশ নাটক বিবৃতি দিয়ে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন বিক্ষুব্ধ থিয়েটারকর্মীরা। এ ঘটনায় শুক্রবার বিকেলে প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। শিল্পকলা একাডেমির প্রবেশদ্বারের মুখে সমাবেশে শতাধিক নাট্যকর্মী অংশ নেন। সমাবেশ চলাকালীন কয়েকজন লোক এসে পেছন থেকে ‘ডিম ছুড়ে’ মারে এবং নাট্যকর্মীদের ধাওয়া খেয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
সমাবেশে ডিম ছুড়ে মারার পর বক্তব্যে মামুনুর রশীদ বলেন, ‘সভা শেষ করব না। ভেতরে নাটক হবে, বাইরে আমরা পাহারা দেব। এই দুষ্কৃতকারীদের দেখে ছাড়ব।’ ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা মহানগর) তপন হাফিজ এ বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের সমাবেশ শেষ হচ্ছিল। এরমধ্যে অতর্কিতভাবে কিছু দুষ্কৃতকারী পেছন থেকে ডিম ছুড়ে মারে।
পরে নাট্যকর্মীরা নাট্যশালার সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। এর আধা ঘণ্টা পর আবারও ৪০-৫০ জন বিক্ষোভকারী সংগঠিত হয়ে এসে নাট্যশালার সামনে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যারিকেড তৈরি করেন। নাট্যকর্মীরা অবস্থান নেন নাট্যশালার মেইন গেটের সামনে। অন্যদিকে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নেন দুর্নীতি দমন কমিশনের গেটের সামনে। উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে নাট্যশালার সামনের চত্বর। সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় বিক্ষোভকারীরা নাট্যশালার সামনে থেকে চলে যান।