একটি সবজির দাম কমলেও বৃদ্ধি পাচ্ছে আরেকটির দাম। প্রতিনিয়ত দামের ওঠা-নামায় ভোক্তার রীতিমতো বোবাকান্না চলছে। এদিকে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজশাহীতে বিভিন্ন বেসরকারি কোল্ডস্টোরে অভিযান চালিয়ে করা হচ্ছে জরিমানা। এমতাবস্থায় বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে শুক্র ও শনিবার রাজশাহী শহরের বিভিন্ন জায়গায় ন্যায্যমূল্যে সবজি বিক্রি করছেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে বাজারমূল্যের তুলনায় ২ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত কম দামে এসব পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। উদ্যোগটির প্রশংসা করেছেন ক্রেতাসহ স্থানীয়রা। আর শিক্ষার্থীরা বলছেন, চলমান বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতেই এমন উদ্যোগে শামিল হয়েছেন তারা।
ভোরে গ্রামের হাটে গিয়ে তাজা শাকসবজি কিনে আনেন শিক্ষার্থীরা। এরপর ‘আমরা রাজশাহীবাসী’-এর ব্যানারে সকাল ও সন্ধ্যায় শহরে বিভিন্ন স্থানে বসানো হয় ভ্রাম্যমাণ দোকান। সেখান থেকে এসব পণ্য কিনতে ভিড় করেন অনেকেই।
শনিবার (৯ নভেম্বর) ভোরে পবা উপজেলার খড়খড়ি বাইপাস এলাকায় গিয়ে সবজি কিনে আনেন শিক্ষার্থীরা। পরে একটি ভ্যানে করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে আনেন মুশফিক মঈন ও মো. জহিরুল ইসলাম নামের দুই শিক্ষার্থী। তারা ভ্যান থেকে সবজি নামাতে শুরু করলে সেখানে হাজির হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার।
এরকিছু সময়ের মধ্যে হাজির হন এ কার্যক্রমের উদ্যোক্তা ও চিকিৎসক রায়হানুল নঈমী (আশিক) এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. বেলাল হোসেন। তারা সবাই বিনোদপুরে বাজারে সকাল সকাল পণ্য বিক্রির কাজ শুরু করেন। তাদের দোকানে আলু, জালি কুমড়া, শসা, পেঁপে, ফুলকপি, টমেটো, শিম, পটোল, শাল, সবুজ শাক, করলা, মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন পণ্যের সমাহার দেখা যায়।
শিক্ষার্থীরা জানান, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই দেশ কয়েক দফা বন্যার কবলে পড়ে। এতে নতুন সরকারের জন্য বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ দুরূহ হয়ে দাঁড়ায়। এর মধ্যে নতুন করে পুরোনো সিন্ডিকেট আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ফলে নিত্যপণ্যের দাম নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। সারাদেশেই জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা কাজ শুরু করেছেন। তারা রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ন্যায্যমূল্যে বিভিন্ন ধরনের পণ্য বিক্রি শুরু করেছেন।
শনিবার সকালে বিনোদপুরে তেমন একটি ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে সবজি কেনেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়াতুল ফেরদৌসী। জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব জায়গাতেই ছোট-বড় সিন্ডিকেট আছে। এ ধরনের উদ্যোগ সেই সিন্ডিকেট কিছুটা হলেও দুর্বল করবে। আর তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ উদ্যোগ নিয়েছেন, যা দামেও কম।
কিছুক্ষণ পর শিক্ষার্থীদের দোকান থেকে দুই আঁটি শাক কেনেন ভ্যানচালক রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, বাজারে একই ধরনের শাকের আঁটি ১২ থেকে ১৫ টাকা, অথচ সেখান থেকে মাত্র ১০ টাকায় এ পণ্য পাচ্ছেন। এছাড়া ৬৮ টাকা কেজি দরে কিনেছেন আলু। বাজারে এই পণ্য ৭০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের এমন উদ্যোগ আরও বড় পরিসরে করা দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, যেসব কাঁচাবাজারে স্থানীয় সিন্ডিকেট আছে। সেখানেই তারা আবার ভ্রাম্যমাণ দোকান বসিয়েছেন। এটি তাদের জন্য একটি প্রতিবাদী দোকান। সিন্ডিকেটে যুক্তরা যদি এটা থেকে শিক্ষা না নেয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা আরও বড় পরিসরে দোকান বসাবেন। বাজারে বড় ধরনের বৈষম্য আছে। তারা খুব অল্প পরিমাণে পণ্য কিনেও কম দামে বিক্রি করতে পারছেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা তা পারছেন না। মূলত সিন্ডিকেট ভাঙার জন্যই এ উদ্যোগ।
রাজশাহীতে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পবা উপজেলার বিভিন্ন বে-সরকারি কোল্ডস্টোরে অভিযান পরিচালনা করেছে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. সোহরাব হোসেন। এর মধ্যে ৮ নভেম্বর শুক্রবার বেলা ১১টায় উপজেলার হিমালয় কোল্ডস্টোরে স্টক রেজিস্ট্রার সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করায় পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন তিনি।
উপজেলা তথ্যসূত্রে জানা গেছে, উপজেলা বাজার নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্স কমিটি প্রতি সপ্তাহে আলুর দাম বৃদ্ধির সঙ্গে কোন সিন্ডিকেট জড়িত আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার লক্ষ্যে আলুর বৃহদাকার সংরক্ষণকারীদের তালিকা, বর্তমান মজুতের পরিমাণ, মজুদকাল প্রভৃতি তথ্যবিবরণী পর্যবেক্ষণ করছে। সেই লক্ষ্যে হিমালয় কোল্ডস্টোরে স্টক রেজিস্ট্রার সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করায় পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা বাজার নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্স কমিটির সভাপতি মো. সোহরাব হোসেন জানান, সরকার সারাদেশে কোল্ডস্টোরের আলু মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। এই লক্ষ্যে বাস্তবায়নে বাজার দর নিয়ন্ত্রণ ও মজুদদারি ঠেকাতে স্টক রেজিস্ট্রারের কোনো বিকল্প নেই। আলুর দাম বৃদ্ধিতে কোন সিন্ডিকেট জড়িত আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে উপজেলার বিভিন্ন কোল্ডস্টোরে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে। হিমালয় কোল্ডস্টোরে স্টক রেজিস্ট্রার সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করায় পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আলু সিন্ডিকেট করে বাজার অস্থিতিশীল করে তুলছে এমন সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি। এসময় উপজেলা বাজার নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্স কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
রোববার, ১০ নভেম্বর ২০২৪
একটি সবজির দাম কমলেও বৃদ্ধি পাচ্ছে আরেকটির দাম। প্রতিনিয়ত দামের ওঠা-নামায় ভোক্তার রীতিমতো বোবাকান্না চলছে। এদিকে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজশাহীতে বিভিন্ন বেসরকারি কোল্ডস্টোরে অভিযান চালিয়ে করা হচ্ছে জরিমানা। এমতাবস্থায় বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে শুক্র ও শনিবার রাজশাহী শহরের বিভিন্ন জায়গায় ন্যায্যমূল্যে সবজি বিক্রি করছেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে বাজারমূল্যের তুলনায় ২ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত কম দামে এসব পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। উদ্যোগটির প্রশংসা করেছেন ক্রেতাসহ স্থানীয়রা। আর শিক্ষার্থীরা বলছেন, চলমান বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতেই এমন উদ্যোগে শামিল হয়েছেন তারা।
ভোরে গ্রামের হাটে গিয়ে তাজা শাকসবজি কিনে আনেন শিক্ষার্থীরা। এরপর ‘আমরা রাজশাহীবাসী’-এর ব্যানারে সকাল ও সন্ধ্যায় শহরে বিভিন্ন স্থানে বসানো হয় ভ্রাম্যমাণ দোকান। সেখান থেকে এসব পণ্য কিনতে ভিড় করেন অনেকেই।
শনিবার (৯ নভেম্বর) ভোরে পবা উপজেলার খড়খড়ি বাইপাস এলাকায় গিয়ে সবজি কিনে আনেন শিক্ষার্থীরা। পরে একটি ভ্যানে করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে আনেন মুশফিক মঈন ও মো. জহিরুল ইসলাম নামের দুই শিক্ষার্থী। তারা ভ্যান থেকে সবজি নামাতে শুরু করলে সেখানে হাজির হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার।
এরকিছু সময়ের মধ্যে হাজির হন এ কার্যক্রমের উদ্যোক্তা ও চিকিৎসক রায়হানুল নঈমী (আশিক) এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. বেলাল হোসেন। তারা সবাই বিনোদপুরে বাজারে সকাল সকাল পণ্য বিক্রির কাজ শুরু করেন। তাদের দোকানে আলু, জালি কুমড়া, শসা, পেঁপে, ফুলকপি, টমেটো, শিম, পটোল, শাল, সবুজ শাক, করলা, মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন পণ্যের সমাহার দেখা যায়।
শিক্ষার্থীরা জানান, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই দেশ কয়েক দফা বন্যার কবলে পড়ে। এতে নতুন সরকারের জন্য বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ দুরূহ হয়ে দাঁড়ায়। এর মধ্যে নতুন করে পুরোনো সিন্ডিকেট আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ফলে নিত্যপণ্যের দাম নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। সারাদেশেই জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা কাজ শুরু করেছেন। তারা রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ন্যায্যমূল্যে বিভিন্ন ধরনের পণ্য বিক্রি শুরু করেছেন।
শনিবার সকালে বিনোদপুরে তেমন একটি ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে সবজি কেনেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়াতুল ফেরদৌসী। জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব জায়গাতেই ছোট-বড় সিন্ডিকেট আছে। এ ধরনের উদ্যোগ সেই সিন্ডিকেট কিছুটা হলেও দুর্বল করবে। আর তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ উদ্যোগ নিয়েছেন, যা দামেও কম।
কিছুক্ষণ পর শিক্ষার্থীদের দোকান থেকে দুই আঁটি শাক কেনেন ভ্যানচালক রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, বাজারে একই ধরনের শাকের আঁটি ১২ থেকে ১৫ টাকা, অথচ সেখান থেকে মাত্র ১০ টাকায় এ পণ্য পাচ্ছেন। এছাড়া ৬৮ টাকা কেজি দরে কিনেছেন আলু। বাজারে এই পণ্য ৭০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের এমন উদ্যোগ আরও বড় পরিসরে করা দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, যেসব কাঁচাবাজারে স্থানীয় সিন্ডিকেট আছে। সেখানেই তারা আবার ভ্রাম্যমাণ দোকান বসিয়েছেন। এটি তাদের জন্য একটি প্রতিবাদী দোকান। সিন্ডিকেটে যুক্তরা যদি এটা থেকে শিক্ষা না নেয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা আরও বড় পরিসরে দোকান বসাবেন। বাজারে বড় ধরনের বৈষম্য আছে। তারা খুব অল্প পরিমাণে পণ্য কিনেও কম দামে বিক্রি করতে পারছেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা তা পারছেন না। মূলত সিন্ডিকেট ভাঙার জন্যই এ উদ্যোগ।
রাজশাহীতে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পবা উপজেলার বিভিন্ন বে-সরকারি কোল্ডস্টোরে অভিযান পরিচালনা করেছে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. সোহরাব হোসেন। এর মধ্যে ৮ নভেম্বর শুক্রবার বেলা ১১টায় উপজেলার হিমালয় কোল্ডস্টোরে স্টক রেজিস্ট্রার সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করায় পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন তিনি।
উপজেলা তথ্যসূত্রে জানা গেছে, উপজেলা বাজার নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্স কমিটি প্রতি সপ্তাহে আলুর দাম বৃদ্ধির সঙ্গে কোন সিন্ডিকেট জড়িত আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার লক্ষ্যে আলুর বৃহদাকার সংরক্ষণকারীদের তালিকা, বর্তমান মজুতের পরিমাণ, মজুদকাল প্রভৃতি তথ্যবিবরণী পর্যবেক্ষণ করছে। সেই লক্ষ্যে হিমালয় কোল্ডস্টোরে স্টক রেজিস্ট্রার সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করায় পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা বাজার নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্স কমিটির সভাপতি মো. সোহরাব হোসেন জানান, সরকার সারাদেশে কোল্ডস্টোরের আলু মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। এই লক্ষ্যে বাস্তবায়নে বাজার দর নিয়ন্ত্রণ ও মজুদদারি ঠেকাতে স্টক রেজিস্ট্রারের কোনো বিকল্প নেই। আলুর দাম বৃদ্ধিতে কোন সিন্ডিকেট জড়িত আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে উপজেলার বিভিন্ন কোল্ডস্টোরে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে। হিমালয় কোল্ডস্টোরে স্টক রেজিস্ট্রার সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করায় পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আলু সিন্ডিকেট করে বাজার অস্থিতিশীল করে তুলছে এমন সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি। এসময় উপজেলা বাজার নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্স কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।