alt

জাতীয়

সড়ক ছাড়েনি পোশাক শ্রমিকরা ৩০ কারখানায় ছুটি ঘোষণা

প্রতিনিধি, গাজীপুর : সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪

রোববারও ছিল গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে পোশাক শ্রমিকদের অবরোধ-সংবাদ

গাজীপুরে বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে গাজীপুর মহানগরীর মালেকের বাড়ী এলাকায় টি এন জেড অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে। ৯ নভেম্বর শনিবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। টানা ত্রিশ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে টানা অবরোধের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়েকে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করছে।

সকাল থেকেই সড়ক অবরোধ থাকার কারণে শত শত কর্মজীবী মানুষ বিড়ম্বনায় পড়েন। অবরোধের ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহা সড়কের ভবানীপুর ও টাঙ্গাইলের দিকে কোনাবাড়ী এবং ঢাকার দিকে চান্দনা চৌরাস্তা থেকে আবদুল্লাপুর পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশ ও শ্রমিক সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মালেকের বাড়ী এলাকায় টি এন জেড অ্যাপারেলস লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতন ভাতা না দিয়ে কর্তৃপক্ষ কারখানা বন্ধ রেখেছে। ওই গ্রুপের ৬টি কারখানার চার মাসের বেতন বকেয়া আছে। এ নিয়ে শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরেই বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ তা পরিশোধ করেনি। এ অবস্থায় শনিবার সকাল থেকে শ্রমিকরা কারখানার সামনে জড়ো হতে থাকেন। এক পর্যায়ে তারা মালেকের বাডী কলম্বিয়া মোড় এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু মালিক পক্ষের থেকে সমাধান না আসায় বিক্ষোভ অব্যাহত রাখেন শ্রমিকরা। এতে প্রায় ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় বন্ধ রয়েছে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান বাহন চলাচল। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ।

আন্দোলনেরত শ্রমিকরা বলেন, জানিয়েছেন বারবার মালিক পক্ষ থেকে বেতন পরিশোধের আশ্বাস দেয়া হলেও তা মানা হয়নি, তাই এবার বেতন ছাড়া মহাসড়ক ছাড়বেন না তারা। টি এন জেড গ্রুপের শ্রমিক হোসনেয়ারা সংবাদকে বলেন, আমরা সাধারণ শ্রমিক কাজ করে খাই আমরা কত টাকা বেতন পাই? ১৫ থেকে বিশ হাজার। তার ওপর যদি তিন মাস বেতন বন্ধ থাকে আমরা কিভাবে চলব? আমরা অন্য কোনো কারখানায় চাকরির জন্য গেলে আমরা যখন ফিঙ্গার প্রিন্ট দেই তখন তারা বলে তোমরা ওমুক কারখানায় অন্দোলন করছো। তাই তোমাদেরকে নেয়া হবে না। বাধ্য হয়েই আমরা অন্য কোনো কারখানায় চাকরির জন্য যেতে পারছি না।

এদিকে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আশপাশের ৩০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

দুদিন ধরে চলমান শ্রমিক বিক্ষোভ নিয়ে গাড়ী চালক আব্দুল্লাহ আল মামুন সংবাদকে বলেন, আমি ময়মনসিংহ থেকে রওনা দিয়েছে শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে এখন সন্ধ্যা ৬টা বাজে। ১১ ঘণ্টা সময় লাগছে আমার গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত আসতে। যেখানে সর্বোচ্চ দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগে। আমি যাব ফরিদপুর কবে পৌছাব কিছুই বুঝতে পারছি না।

গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদ মিয়া সংবাদকে বলেন, রোববার (১০ নভেম্বর) দুপুরে শ্রমমন্ত্রণালয়ে মালিক পক্ষ বিজিএমইএ এর সঙ্গে আলোচনায় বসেন। কারখানার মালিক হেদায়েত উল্লাহ একটি লোনের আবেদন করেছেন। শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে সেটা অগ্রগামী করে দেয়া হয়েছে। এমন সংবাদ পেয়ে আমি বিকেলে অবার পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে শ্রমিকদের কে এই কথা জানালে শ্রমিকরা তা প্রত্যাক্ষাণ করে। তাই আমরা ফিরে এসেছি। আশা করছি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।

রোববার বিকেলে গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম সংবাদকে কে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, গাজীপুর মহানগরীর মালেকের বাড়ি এলাকার টি এন জেড গ্রুপের শ্রমিকরা শনিবার সকাল ৯টা থেকে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর এই দুই মাসের বেতনের জন্য ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়েতে অবস্থান করছেন। তাদের একটাই কথা, বেতন না পাওয়া পর্যন্ত তারা হাইওয়ে ছাড়বে না। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ ও প্রশাসনসহ মালিককের সঙ্গে কথা বলে শ্রমিকদের একাধিকবার আশ্বাস দেয়া হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার সর্বশেষ তাদের (শ্রমিকদের) বেতন পরিশোধ করার কথা বলা হয়। মালিকপক্ষকে একাধিকবার সময় দেয়া হয়েছিল, কিন্তু বারবার বেতন পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছেন, যে কারণে শ্রমিকরা এখন আর আমাদের কথা আর বিশ্বাস করে না। টি এন জেড গ্রুপের মালিক দুইজন। বর্তমানে একজন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। যিনি দেশে আছেন তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি এখন মন্ত্রণালয়ে বসে আছেন। সেখানে এক্সপোর্ট বিল্ড আপ ফান্ড আছে। সেখানে উনার কিছু টাকা আছে। উনি চাচ্ছেন এই টাকা যদি তাকে ব্যবস্থা করে দেয়া হয়, ১১-১২ কোটি টাকার মতো হয়, তাহলে উনি এই দুই মাসের বেতনের টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। উনার এই জরুরি মুহূর্তে ১১ কোটি থেকে ১২ কোটি টাকার দরকার বলে উনি আমাকে জানিয়েছেন।

পুলিশ জানায়, গাজীপুর মহানগরীর মালেকের বাড়ি এলাকার টি এন জেড গ্রুপের শ্রমিকরা শনিবার সকাল ৯টা থেকে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর এই দুই মাসের বেতনের জন্য ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়েতে অবস্থান করছেন। তাদের একটাই কথা, বেতন না পাওয়া পর্যন্ত তারা হাইওয়ে ছাড়বে না। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ ও প্রশাসনসহ মালিককের সঙ্গে কথা বলে শ্রমিকদের একাধিকবার আশ্বাস দেয়া হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার সর্বশেষ তাদের (শ্রমিকদের) বেতন পরিশোধ করার কথা বলা হয়। মালিকপক্ষকে একাধিকবার সময় দেয়া হয়েছিল, কিন্তু উনারা বারবার বেতন পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছেন, যে কারণে শ্রমিকরা এখন আর আমাদের কথা আর বিশ্বাস করে না। আমরা কোন মুখে ওদেরকে (শ্রমিকদের) বলব, তোমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করো, তোমাদের একটা ব্যবস্থা আমরা করে দেব। শ্রমিকদের মতো মালিকের প্রতি আমাদেরও আস্থা নেই। যে কারণে ওরা রোববার থেকে মহাসড়কে বসে আছে। আমরা তাদের একাধিকবার বুঝানোর চেষ্টা করেছি, আমাদের অফিসে এসে বসো, অবস্থান নাও। কিন্তু ওরা নাছোড়বান্দা, মহাসড়ক ছাড়বে না। এটাকে কেন্দ্র করে রোববার সন্ধ্যায়ও ওদেরকে বোঝানো হয়েছে, রাতেও চেষ্টা করেছিলাম ওরা যায়নি। আজকের তারা মহাসড়কে আছে। এই ধারাবাহিকতায় টি এন জেড গ্রুপ, কলম্বিয়া, ভোগড়া বাইপাস, চৌরাস্তার আশপাশে ৩০টি কারখানা ছুটি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকরা ভেতরে ঢুকতে পারছে না। আমরা আবারও চেষ্টা করছি। একটু আগে সেনাবাহিনী এসেছিল, আমরাসহ কথা বলেছি। আশা করি এর সমাধান হবে। এটা নিয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, বিজিএমইএ, শ্রম অধিদপ্তর কাজ করছে।

এদিকে ৩০ ঘণ্টা ধরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবরোধ থাকায় আশপাশের সড়ক মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে এর প্রভাব পড়েছে। স্থবির হয়ে গেছে যাতায়াত ব্যবস্থা।

শনিবার সকাল ৯টার পর শ্রমিকরা মহাসড়কে নেমে আসলে ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন লোকজন। একই অবস্থা রোববার সকালে। মহাসড়কের ভোগরা এলাকায় শ্রমিকদের অবস্থানের কারণে ওই মহাসড়কের বিকল্প পথে যানবাহন চলাচল করছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ নাজির আহমেদ খান সংবাদকে বলেন, মহাসড়ক থেকে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিয়ে সড়ক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা বারবার চেষ্টা করছেন। শ্রমিকদের দাবির বিষয় নিয়ে মালিক পক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন। কিন্তু বিকেলের পর কারখানার চেয়ারম্যান হেদায়েত উল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। তবে বৈঠেেক তিনি কয়েকদিন সময় চেয়েছেন বলে আমরা জানতে পারছি। শ্রমিকরা এই প্রস্তাব নাকোচ করে এখনও মহাসড়কে অবস্থান করছেন। আশা করছি শীঘ্রই এ সমস্যার সমাধান হবে।

ঢালাও ভাবে প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন বাতিল সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার অন্তরায় : সম্পাদক পরিষদ

ছবি

জিয়াউল আহসানকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিল ট্রাইব্যুনাল

কপ২৯ : দীর্ঘ সময় পেরিয়ে কার্বন ক্রেডিট বাণিজ্য অনুমোদিত

ছবি

মহাসড়কে অবরোধ প্রত্যাহার, গাজীপুরে ১৪ কারখানা বন্ধ

ছবি

ট্রাইব্যুনালে ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ র‌্যাবের গুলিতে পা হারানো লিমনের

ছবি

জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা প্রয়োজন : প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

ঢালাও মামলায় বিব্রত সরকার: আইন উপদেষ্টা

ছবি

গণমাধ্যমের ওপর সরকারের কোনো চাপ নেই : নাহিদ ইসলাম

ছবি

অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসায় আল-আজহারের গ্র্যান্ড ইমাম

ছবি

প্রকল্পের কাজ সেনাবাহিনী দ্বারা বাস্তবায়িত হোক, এতে কোনো সমস্যা নাই: শিক্ষা উপদেষ্টা

ছবি

সাবেক নির্বাচন কমিশনার স ম জাকারিয়ার মৃত্যু

ছবি

কপ-২৯ সম্মেলনে দেশের জলবায়ু সংকট তুলে ধরার আহ্বান

ছবি

সচিবালয়ে তিন উপদেষ্টার দপ্তর থেকে সরানো হলো শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি

বাকু জলবায়ু সম্মেলনের প্রথম দিনে জলবায়ু অর্থায়নের ওপর গুরুত্বারোপ

ছবি

সংশয় নিয়েই শুরু হলো বাকু জলবায়ু সম্মেলন

‘সেখ বশির উদ্দিনের’ বিরুদ্ধে হত্যা মামলা, তিনি কে, কেউ নিশ্চিত না

বশিরউদ্দিন ও ফারুকীকে উপদেষ্টা করায় ‘বৈষম্যবিরোধীদের’ বিক্ষোভ

বড়পুকুরিয়ায় কয়লা উত্তোলন বন্ধের উপক্রম

অবরোধ ও কর্মবিরতি: ‘৩শ’র বেশি’ গার্মেন্ট কারখানায় ‘ভাঙচুর-আগন’

দরবার হল থেকে সরানো হলো শেখ মুজিবুরের ছবি : উপদেষ্টা মাহফুজ আলম

ছবি

খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প : ব্যয় পাঁচশ দুই কোটি টাকা, সুফল নেই

ছবি

ঢাকায় বন্য প্রাণী অলিম্পিয়াডের চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত

ছবি

অবরোধ প্রত্যাহারের ৩০ মিনিট পর ফের বন্ধ ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক

ছবি

শিক্ষামন্ত্রণালয়ের আশ্বাস, ৪ ঘন্টা পর সচিবালয় ছাড়লো জবি শিক্ষার্থীরা

ছবি

বিমান বন্দরে প্রবাসীরা অতিথির মত সম্মান পাবেন : প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

তিনদিনের মধ্যে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস উপদেষ্টা নাহিদের

ছবি

দেখা করলো না শিক্ষা সচিব, সচিবালয়ের সামনে অবস্থান জবি শিক্ষার্থীদের

ছবি

প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য শাহজালালে বিশেষ লাউঞ্জ উদ্বোধন

ছবি

পাহাড়ে সেনাশাসন নেই, সেনাবাহিনী রুটিন দ্বায়িত্ব পালন করছে

ছবি

কাফরুলে গ‍্যাসের চুলা ধরাতে গিয়ে বিস্ফোরণ : নারীসহ দগ্ধ ৫

ছবি

নতুন উপদেষ্টাদের দায়িত্ব বণ্টনে পুরোনোদের কিছু পরিবর্তন

ছবি

পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে সিঙ্গাপুরের সহায়তা চান প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

এক দিনে ১৩৩৭ জন হাসপাতালে ভর্তি, ৫ জনের মৃত্যু

ছবি

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে তিন নতুন সদস্য

ছবি

শপথ নিতে ডাক পেয়েছেন যারা

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সেনা প্রধানের সাক্ষাৎ

tab

জাতীয়

সড়ক ছাড়েনি পোশাক শ্রমিকরা ৩০ কারখানায় ছুটি ঘোষণা

প্রতিনিধি, গাজীপুর

রোববারও ছিল গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে পোশাক শ্রমিকদের অবরোধ-সংবাদ

সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪

গাজীপুরে বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে গাজীপুর মহানগরীর মালেকের বাড়ী এলাকায় টি এন জেড অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে। ৯ নভেম্বর শনিবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। টানা ত্রিশ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে টানা অবরোধের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়েকে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করছে।

সকাল থেকেই সড়ক অবরোধ থাকার কারণে শত শত কর্মজীবী মানুষ বিড়ম্বনায় পড়েন। অবরোধের ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহা সড়কের ভবানীপুর ও টাঙ্গাইলের দিকে কোনাবাড়ী এবং ঢাকার দিকে চান্দনা চৌরাস্তা থেকে আবদুল্লাপুর পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশ ও শ্রমিক সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মালেকের বাড়ী এলাকায় টি এন জেড অ্যাপারেলস লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতন ভাতা না দিয়ে কর্তৃপক্ষ কারখানা বন্ধ রেখেছে। ওই গ্রুপের ৬টি কারখানার চার মাসের বেতন বকেয়া আছে। এ নিয়ে শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরেই বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ তা পরিশোধ করেনি। এ অবস্থায় শনিবার সকাল থেকে শ্রমিকরা কারখানার সামনে জড়ো হতে থাকেন। এক পর্যায়ে তারা মালেকের বাডী কলম্বিয়া মোড় এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু মালিক পক্ষের থেকে সমাধান না আসায় বিক্ষোভ অব্যাহত রাখেন শ্রমিকরা। এতে প্রায় ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় বন্ধ রয়েছে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান বাহন চলাচল। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ।

আন্দোলনেরত শ্রমিকরা বলেন, জানিয়েছেন বারবার মালিক পক্ষ থেকে বেতন পরিশোধের আশ্বাস দেয়া হলেও তা মানা হয়নি, তাই এবার বেতন ছাড়া মহাসড়ক ছাড়বেন না তারা। টি এন জেড গ্রুপের শ্রমিক হোসনেয়ারা সংবাদকে বলেন, আমরা সাধারণ শ্রমিক কাজ করে খাই আমরা কত টাকা বেতন পাই? ১৫ থেকে বিশ হাজার। তার ওপর যদি তিন মাস বেতন বন্ধ থাকে আমরা কিভাবে চলব? আমরা অন্য কোনো কারখানায় চাকরির জন্য গেলে আমরা যখন ফিঙ্গার প্রিন্ট দেই তখন তারা বলে তোমরা ওমুক কারখানায় অন্দোলন করছো। তাই তোমাদেরকে নেয়া হবে না। বাধ্য হয়েই আমরা অন্য কোনো কারখানায় চাকরির জন্য যেতে পারছি না।

এদিকে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আশপাশের ৩০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

দুদিন ধরে চলমান শ্রমিক বিক্ষোভ নিয়ে গাড়ী চালক আব্দুল্লাহ আল মামুন সংবাদকে বলেন, আমি ময়মনসিংহ থেকে রওনা দিয়েছে শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে এখন সন্ধ্যা ৬টা বাজে। ১১ ঘণ্টা সময় লাগছে আমার গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত আসতে। যেখানে সর্বোচ্চ দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগে। আমি যাব ফরিদপুর কবে পৌছাব কিছুই বুঝতে পারছি না।

গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদ মিয়া সংবাদকে বলেন, রোববার (১০ নভেম্বর) দুপুরে শ্রমমন্ত্রণালয়ে মালিক পক্ষ বিজিএমইএ এর সঙ্গে আলোচনায় বসেন। কারখানার মালিক হেদায়েত উল্লাহ একটি লোনের আবেদন করেছেন। শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে সেটা অগ্রগামী করে দেয়া হয়েছে। এমন সংবাদ পেয়ে আমি বিকেলে অবার পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে শ্রমিকদের কে এই কথা জানালে শ্রমিকরা তা প্রত্যাক্ষাণ করে। তাই আমরা ফিরে এসেছি। আশা করছি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।

রোববার বিকেলে গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম সংবাদকে কে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, গাজীপুর মহানগরীর মালেকের বাড়ি এলাকার টি এন জেড গ্রুপের শ্রমিকরা শনিবার সকাল ৯টা থেকে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর এই দুই মাসের বেতনের জন্য ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়েতে অবস্থান করছেন। তাদের একটাই কথা, বেতন না পাওয়া পর্যন্ত তারা হাইওয়ে ছাড়বে না। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ ও প্রশাসনসহ মালিককের সঙ্গে কথা বলে শ্রমিকদের একাধিকবার আশ্বাস দেয়া হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার সর্বশেষ তাদের (শ্রমিকদের) বেতন পরিশোধ করার কথা বলা হয়। মালিকপক্ষকে একাধিকবার সময় দেয়া হয়েছিল, কিন্তু বারবার বেতন পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছেন, যে কারণে শ্রমিকরা এখন আর আমাদের কথা আর বিশ্বাস করে না। টি এন জেড গ্রুপের মালিক দুইজন। বর্তমানে একজন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। যিনি দেশে আছেন তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি এখন মন্ত্রণালয়ে বসে আছেন। সেখানে এক্সপোর্ট বিল্ড আপ ফান্ড আছে। সেখানে উনার কিছু টাকা আছে। উনি চাচ্ছেন এই টাকা যদি তাকে ব্যবস্থা করে দেয়া হয়, ১১-১২ কোটি টাকার মতো হয়, তাহলে উনি এই দুই মাসের বেতনের টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। উনার এই জরুরি মুহূর্তে ১১ কোটি থেকে ১২ কোটি টাকার দরকার বলে উনি আমাকে জানিয়েছেন।

পুলিশ জানায়, গাজীপুর মহানগরীর মালেকের বাড়ি এলাকার টি এন জেড গ্রুপের শ্রমিকরা শনিবার সকাল ৯টা থেকে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর এই দুই মাসের বেতনের জন্য ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়েতে অবস্থান করছেন। তাদের একটাই কথা, বেতন না পাওয়া পর্যন্ত তারা হাইওয়ে ছাড়বে না। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ ও প্রশাসনসহ মালিককের সঙ্গে কথা বলে শ্রমিকদের একাধিকবার আশ্বাস দেয়া হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার সর্বশেষ তাদের (শ্রমিকদের) বেতন পরিশোধ করার কথা বলা হয়। মালিকপক্ষকে একাধিকবার সময় দেয়া হয়েছিল, কিন্তু উনারা বারবার বেতন পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছেন, যে কারণে শ্রমিকরা এখন আর আমাদের কথা আর বিশ্বাস করে না। আমরা কোন মুখে ওদেরকে (শ্রমিকদের) বলব, তোমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করো, তোমাদের একটা ব্যবস্থা আমরা করে দেব। শ্রমিকদের মতো মালিকের প্রতি আমাদেরও আস্থা নেই। যে কারণে ওরা রোববার থেকে মহাসড়কে বসে আছে। আমরা তাদের একাধিকবার বুঝানোর চেষ্টা করেছি, আমাদের অফিসে এসে বসো, অবস্থান নাও। কিন্তু ওরা নাছোড়বান্দা, মহাসড়ক ছাড়বে না। এটাকে কেন্দ্র করে রোববার সন্ধ্যায়ও ওদেরকে বোঝানো হয়েছে, রাতেও চেষ্টা করেছিলাম ওরা যায়নি। আজকের তারা মহাসড়কে আছে। এই ধারাবাহিকতায় টি এন জেড গ্রুপ, কলম্বিয়া, ভোগড়া বাইপাস, চৌরাস্তার আশপাশে ৩০টি কারখানা ছুটি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকরা ভেতরে ঢুকতে পারছে না। আমরা আবারও চেষ্টা করছি। একটু আগে সেনাবাহিনী এসেছিল, আমরাসহ কথা বলেছি। আশা করি এর সমাধান হবে। এটা নিয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, বিজিএমইএ, শ্রম অধিদপ্তর কাজ করছে।

এদিকে ৩০ ঘণ্টা ধরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবরোধ থাকায় আশপাশের সড়ক মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে এর প্রভাব পড়েছে। স্থবির হয়ে গেছে যাতায়াত ব্যবস্থা।

শনিবার সকাল ৯টার পর শ্রমিকরা মহাসড়কে নেমে আসলে ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন লোকজন। একই অবস্থা রোববার সকালে। মহাসড়কের ভোগরা এলাকায় শ্রমিকদের অবস্থানের কারণে ওই মহাসড়কের বিকল্প পথে যানবাহন চলাচল করছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ নাজির আহমেদ খান সংবাদকে বলেন, মহাসড়ক থেকে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিয়ে সড়ক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা বারবার চেষ্টা করছেন। শ্রমিকদের দাবির বিষয় নিয়ে মালিক পক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন। কিন্তু বিকেলের পর কারখানার চেয়ারম্যান হেদায়েত উল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। তবে বৈঠেেক তিনি কয়েকদিন সময় চেয়েছেন বলে আমরা জানতে পারছি। শ্রমিকরা এই প্রস্তাব নাকোচ করে এখনও মহাসড়কে অবস্থান করছেন। আশা করছি শীঘ্রই এ সমস্যার সমাধান হবে।

back to top