alt

খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প : ব্যয় পাঁচশ দুই কোটি টাকা, সুফল নেই

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, খুলনা : সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪

খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকায় সড়ক আছে প্রায় এক হাজার ২১৫টি, যার অধিকাংশই বৃষ্টি হলেই পানিতে ডুবে যায়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। অথচ নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে খরচ করা হয়েছে বিপুল অঙ্কের অর্থ।

কেসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাসুদ করিম বলেন, ‘খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন (প্রথমপর্যায়)’ প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৮২ শতাংশ। খরচ হয়েছে ৫০২ কোটি টাকা। তবে এর মধ্যে নগরের ১২শ’ কিলোমিটার নালা নির্মাণ কাজের ১৩৩ কিলোমিটার নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। যার অগ্রগতি ১৩ শতাংশ। বাকি চার ধাপের কাজ করা সম্ভব হলে পুরো প্রকল্পের সুফল পাওয়া যাবে।

প্রকল্পের মেয়াদ দেড় বছর বাড়িয়ে ২০২৬ সালের ৩০ জুন করার প্রস্তাব দিলেও তা অনুমোদন হয়নি- উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘নতুন করে আবারও প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে।’ তবে শহরঘেঁষা নদ-নদীর তলদেশ ভরাটের বিষয়টি স্বীকার করলেও নদীগুলো ড্রেজিংয়ের বিষয়ে প্রকল্পে কোনো প্রস্তাবনা নেই বলেও জানান তিনি।

এত কিছুর পরও বৃষ্টি হলেই নগরের রয়েল মোড়, বাইতিপাড়া, মৌলভীপাড়া, টিভিবাউন্ডারী রোড, পিটিআই মোড়, টুটপাড়া জোড়াকল বাজার, মহির বাড়ি খালপাড়, রূপসা ঘাট, নতুন বাজার, গল্লামারি, গোবরচাকা নবীনগর, খালিশপুর মুজগুন্নি, বাস্তুহারা কলোনি, হাউজিং এলাকা, ফুলবাড়ি গেট, রেলিগেট, মহেশ্বরপাশা, দৌলতপুর, রায়েরমহল ও বয়রা বাজারসহ প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সড়ক ও নিম্নœাঞ্চল পানিতে ডুবে যায়।

নাগরিক নেতারা নগরবাসীর এ দুর্ভোগের কারণ হিসেবে বলছেন, ‘অপরিকল্পিত, অনিয়ন্ত্রিত এবং ত্রুটিযুক্ত’ পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কাজে ‘ধীরগতির’ কারণে নগরবাসীর জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলছে না। বিশেষ করে রূপসা, ভৈরবসহ শহরঘেষা নদ-নদীগুলোর তলদেশ ভরাট হলেও সেগুলোর ড্রেজিং বা খননের দিকে নজর না দিয়ে শুধুমাত্র নগরের নালা ভাঙা-গড়ার কাজ চলছে। তাছাড়া নগরের ২২টি খালের অধিকাংশই প্রভাবশালীদের দখলের। এ কারণে বেশিরভাগ খালের আয়তন সংকুচিত হয়েছে। খালগুলোর এ অবস্থার কারণে শহরে পানির চাপ বাড়ছে। ফলে তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।

নগরের পিটিআই মোড়ের বাসিন্দা মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘একটু বৃষ্টি হলেই মোড়ের ছয়টি রাস্তা পানিতে তলিয়ে যায়। গত দুই বছর আগে করা উঁচু স্থানগুলোর কারণে পানি দীর্ঘ সময় ধরে জমে থাকে। রূপসা নদীতে ভাটা শুরু না হলে এ পানি সরে না। তখন নোংরা পানির মধ্যেই চলাচল করতে হয় আমাদের।’ প্রতি বর্ষায় নগরের এমন জলাবদ্ধতার জন্য সিটি করপোরেশনকেই দায়ী করেন তিনি।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাবেক সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, ‘নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে কোটি টাকা ব্যয়েও প্রকৃতপক্ষে নগর জলজটমুক্ত হচ্ছে না। সঠিক তদারকির অভাবে এ খাতে বিপুল অর্থ ব্যয় কাজে আসছে না। এ কারণে জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী পদক্ষেপের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন খুলনার মানুষ।’

আশরাফ-উজ-জামান আরও বলেন, ‘শুধু নালা নির্মাণ করলেই হবে না, এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। বর্জ্য পড়ে অধিকাংশ নতুন নালা ভরাট হয়ে গেছে। এ বিষয়ে কেসিসির নজরদারি কম।’

খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘নগরের কিছু জায়গায় উন্নয়নকাজ চলমান থাকায় সেখানে পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া শহরের তুলনায় ভৈরব ও রূপসা নদীর তলদেশ উঁচু হওয়ায় জোয়ারের সময় উল্টো নদীর পানি নগরে প্রবেশ করে। এ কারণে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে সময় লাগছে।’

নগরের মুজগুন্নি এলাকার আবদুর রহমান বলেন, ‘সড়ক ও নালার কাজ হলেও আমাদের ভোগান্তির কোনো কমতি হয়নি। বৃষ্টি হলেই নিচু এলাকা ডুবে যায়। সড়কটির পানি আবু নাসের হাসপাতাল ও নেভি স্কুলের মাঝখান দিয়ে যে নালা চলে গেছে, সেখান দিয়ে গিয়ে ময়ূর নদীতে পড়ে। নালা পাকা হয়ে যেখানে শেষ হয়েছে, সেখানে এক সময় বড় একটি খাল ছিল। প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলের কারণে এটি এখন একটি নালায় পরিণত হয়েছে। এ জন্য পানি নামতে পারছে না।’

কেসিসি সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ‘খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে (প্রথমপর্যায়)’ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন হয়। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৮২৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। ২০২৩ সালে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। প্রকল্প ব্যয় কমে দাঁড়ায় ৮২৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। মেয়াদ নির্ধারণ হয় ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। প্রকল্পে নালা নির্মাণ, খাল খনন, সøুইসগেট, পাম্পহাউস নির্মাণসহ ১৭৭টি কাজ করার কথা ছিল।

কেসিসি সূত্র বলছে, প্রকল্পের আওতায় গত ছয় বছরে ১০৪টি নালা পুনর্নিমাণ করেছে কেসিসি। ময়ূর নদসহ সাতটি খাল পুনঃখনন ও ৩২টি নালার সংস্কার চলছে। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫০২ কোটি টাকা। তবে এই বিপুল অর্থ ব্যয়ের পরও নগরের জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। কেসিসির কর্মকর্তাদের দাবি, নগরকে জলাবদ্ধতা মুক্ত করতে নতুন করে পাম্পহাউজ ও সøুুইজগেট নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছে কেসিসি। প্রথমপর্যায়ের চলমান ড্রেনেজ প্রকল্পের বাকি চারধাপ এবং পাম্পহাউজ ও সøুুইজগেট নির্মাণ শেষ হলে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে রক্ষা মিলবে বলে আশা করছে কেসিসি কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী মো. মশিউজ্জামান বলেন, নগরের পানি রূপসা নদীতে গিয়ে পড়ে। রূপসার তলদেশ উঁচু হয়ে গেছে। জোয়ারের সময় বৃষ্টি হলে পানি বের হতে পারে না, উল্টো নদীর পানি নগরে প্রবেশ করে। এজন্য প্রায় ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রূপসায় একটি স্লুইসগেট ও পাম্প হাউজ নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। পাম্পহাউজ নির্মাণ হলে বৃষ্টির পানি পাম্প করে নদীতে ফেলে দেয়া হবে। আর নদীর পানিও নগরে প্রবেশ আটকে দেয়া হবে। ফলে নগরে আর বৃষ্টির পানি জমবে না।

প্রসঙ্গত, খুলনা শহরের জলাবদ্ধতার বাস্তবতা নিয়ে এক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন অনুষ্ঠান ১১ নভেম্বর দুপুরে নগরের শহীদ হাদিস পার্কে অনুষ্ঠিত হয়েছে। খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ও সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ এর উদ্বোধন করেন।

অনুষ্ঠানে অতিথিরা বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যক্তি সচেতনতা খুব জরুরি। শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হলে আমাদের উদাসীন আচরণ পরিবর্তন করতে হবে। টেকসই নগর উন্নয়নে সংঘবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। ঢাকাসহ অন্য শহরের প্রেক্ষাপটে খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণযোগ্য অবস্থায় আছে। আমরা যদি পরিকল্পনায় আর কোনো ভুল না করি, ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি না করি, সময়ের কাজ সময়ে করি তাহলে জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। বিভিন্ন দপ্তর-প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে একটি সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব।

ছবি

ডেঙ্গুতে হাসপাতালে ভর্তি ৭৭ হাজার ছাড়িয়েছে

ছবি

দলগুলো না পারলে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার: প্রেস সচিব

কার্যকর দুর্নীতি প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধতার বিকল্প নেই: টিআইবি

নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সংস্থা: নতুন ১৬টি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আপত্তি আছে কিনা, জানাতে ইসির গণবিজ্ঞপ্তি

ছবি

৪ দিনের সফরে চট্টগ্রামে পাকিস্তান নৌবাহিনীর জাহাজ

ছবি

বাংলাদেশের সঙ্গে উত্তেজনা চায় না ভারত: রাজনাথ সিং

ছবি

ইতিহাসের গভীর বোধ ছাড়া কোনো সংস্কারক প্রজ্ঞাবান হতে পারেন না: প্রধান বিচারপতি

ছবি

প্রধান বিচারপতি: বিচার বিভাগকে সময়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক রাখতে হলে সংস্কার অপরিহার্য

ছবি

রাজশাহীতে নির্বাচন প্রসঙ্গে মন্তব্য এড়িয়ে গেলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল

ছবি

নির্বাচন নিয়ে যারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, তারা স্বৈরাচারের দোসর : শফিকুল আলম

সাঁওতাল হত্যা দিবস: তিন হত্যার বিচার দাবি, সাঁওতালদের বিক্ষোভ

ছবি

আধুনিক অর্থনীতির ভিত্তি তৈরিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা ব্যাপক অবদান রাখছেন: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

১০-২০ কোটি টাকা ছাড়া ভোট করা যায় না, আমাদের ভাবতে হয়: আসিফ

ছবি

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ব্যয় নিয়ে তোলা অভিযোগ ভিত্তিহীন: কমিশনের প্রতিবাদ

ছবি

ইসি শতভাগ প্রস্তুত, ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগেই সংসদ নির্বাচন সম্ভব: মাছউদ

ছবি

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন: প্রেস সচিব

ছবি

আইআরআইয়ের প্রাক-নির্বাচনী মূল্যায়ন প্রতিবেদন, বাংলাদেশে প্রাক-নির্বাচনী পরিবেশ এখনও নাজুক

ছবি

মেঘনা-ধনাগোদা নদীর উপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করলেন সেতু বিভাগের সচিব

ছবি

তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের রায় ‘অসৎ উদ্দেশ্যে’ দেয়া হয়েছিল দাবি অ্যাটর্নি জেনারেলের

হালদা নদীকে মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন: দলগুলোকে দায়িত্ব দেয়ার চার দিনেও অগ্রগতি নেই

ছবি

শতভাগ জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনে বড় বাধা দুর্বল আইন, শক্তিশালীকরণের দাবি

ছবি

ইন্টারনেট বন্ধে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা, বিলুপ্ত হচ্ছে এনটিএমসি

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১০৩৪ জন

ছবি

আওয়ামী লীগের চিঠিতে কোনও কাজ হবে না: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

জুলাইযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলমকে নির্যাতনের অভিযোগে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশের চূড়ান্ত অনুমোদন

ছবি

সাবেক বিচারপতিসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

ডেঙ্গুতে একদিনে সর্বোচ্চ ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে আরও ১,০৬৯ জন

জামিনে মুক্তি পাওয়া আ’লীগ নেতারা অপরাধে জড়ালে কঠোর ব্যবস্থা: উপদেষ্টা

ছবি

তদন্ত প্রতিবেদন: পাইলটের ত্রুটির কারণে মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হয়

ছবি

বাংলাদেশে পুলিশ সংস্কারে সহায়তার আগ্রহ আয়ারল্যান্ডের

ছবি

নির্বাচন হলে দেশে স্থিতিশীলতা আরও ভালো হবে, আশা সেনাবাহিনীর

ছবি

অগ্নিঝুঁকিতে বেনাপোল স্থলবন্দরের পণ্যাগার, ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ, নিরাপত্তা জোরদার

ছবি

নির্বাচন হলে দেশে স্থিতিশীলতা আসবে, সেনাবাহিনী ফিরবে ব্যারাকে: জিওসি মাইনুর রহমান

ছবি

নিষিদ্ধ দলের মিছিলের চেষ্টা করলে আইনের কঠোর প্রয়োগ: প্রেস সচিব

tab

খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প : ব্যয় পাঁচশ দুই কোটি টাকা, সুফল নেই

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, খুলনা

সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪

খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকায় সড়ক আছে প্রায় এক হাজার ২১৫টি, যার অধিকাংশই বৃষ্টি হলেই পানিতে ডুবে যায়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। অথচ নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে খরচ করা হয়েছে বিপুল অঙ্কের অর্থ।

কেসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাসুদ করিম বলেন, ‘খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন (প্রথমপর্যায়)’ প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৮২ শতাংশ। খরচ হয়েছে ৫০২ কোটি টাকা। তবে এর মধ্যে নগরের ১২শ’ কিলোমিটার নালা নির্মাণ কাজের ১৩৩ কিলোমিটার নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। যার অগ্রগতি ১৩ শতাংশ। বাকি চার ধাপের কাজ করা সম্ভব হলে পুরো প্রকল্পের সুফল পাওয়া যাবে।

প্রকল্পের মেয়াদ দেড় বছর বাড়িয়ে ২০২৬ সালের ৩০ জুন করার প্রস্তাব দিলেও তা অনুমোদন হয়নি- উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘নতুন করে আবারও প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে।’ তবে শহরঘেঁষা নদ-নদীর তলদেশ ভরাটের বিষয়টি স্বীকার করলেও নদীগুলো ড্রেজিংয়ের বিষয়ে প্রকল্পে কোনো প্রস্তাবনা নেই বলেও জানান তিনি।

এত কিছুর পরও বৃষ্টি হলেই নগরের রয়েল মোড়, বাইতিপাড়া, মৌলভীপাড়া, টিভিবাউন্ডারী রোড, পিটিআই মোড়, টুটপাড়া জোড়াকল বাজার, মহির বাড়ি খালপাড়, রূপসা ঘাট, নতুন বাজার, গল্লামারি, গোবরচাকা নবীনগর, খালিশপুর মুজগুন্নি, বাস্তুহারা কলোনি, হাউজিং এলাকা, ফুলবাড়ি গেট, রেলিগেট, মহেশ্বরপাশা, দৌলতপুর, রায়েরমহল ও বয়রা বাজারসহ প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সড়ক ও নিম্নœাঞ্চল পানিতে ডুবে যায়।

নাগরিক নেতারা নগরবাসীর এ দুর্ভোগের কারণ হিসেবে বলছেন, ‘অপরিকল্পিত, অনিয়ন্ত্রিত এবং ত্রুটিযুক্ত’ পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কাজে ‘ধীরগতির’ কারণে নগরবাসীর জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলছে না। বিশেষ করে রূপসা, ভৈরবসহ শহরঘেষা নদ-নদীগুলোর তলদেশ ভরাট হলেও সেগুলোর ড্রেজিং বা খননের দিকে নজর না দিয়ে শুধুমাত্র নগরের নালা ভাঙা-গড়ার কাজ চলছে। তাছাড়া নগরের ২২টি খালের অধিকাংশই প্রভাবশালীদের দখলের। এ কারণে বেশিরভাগ খালের আয়তন সংকুচিত হয়েছে। খালগুলোর এ অবস্থার কারণে শহরে পানির চাপ বাড়ছে। ফলে তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।

নগরের পিটিআই মোড়ের বাসিন্দা মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘একটু বৃষ্টি হলেই মোড়ের ছয়টি রাস্তা পানিতে তলিয়ে যায়। গত দুই বছর আগে করা উঁচু স্থানগুলোর কারণে পানি দীর্ঘ সময় ধরে জমে থাকে। রূপসা নদীতে ভাটা শুরু না হলে এ পানি সরে না। তখন নোংরা পানির মধ্যেই চলাচল করতে হয় আমাদের।’ প্রতি বর্ষায় নগরের এমন জলাবদ্ধতার জন্য সিটি করপোরেশনকেই দায়ী করেন তিনি।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাবেক সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, ‘নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে কোটি টাকা ব্যয়েও প্রকৃতপক্ষে নগর জলজটমুক্ত হচ্ছে না। সঠিক তদারকির অভাবে এ খাতে বিপুল অর্থ ব্যয় কাজে আসছে না। এ কারণে জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী পদক্ষেপের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন খুলনার মানুষ।’

আশরাফ-উজ-জামান আরও বলেন, ‘শুধু নালা নির্মাণ করলেই হবে না, এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। বর্জ্য পড়ে অধিকাংশ নতুন নালা ভরাট হয়ে গেছে। এ বিষয়ে কেসিসির নজরদারি কম।’

খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘নগরের কিছু জায়গায় উন্নয়নকাজ চলমান থাকায় সেখানে পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া শহরের তুলনায় ভৈরব ও রূপসা নদীর তলদেশ উঁচু হওয়ায় জোয়ারের সময় উল্টো নদীর পানি নগরে প্রবেশ করে। এ কারণে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে সময় লাগছে।’

নগরের মুজগুন্নি এলাকার আবদুর রহমান বলেন, ‘সড়ক ও নালার কাজ হলেও আমাদের ভোগান্তির কোনো কমতি হয়নি। বৃষ্টি হলেই নিচু এলাকা ডুবে যায়। সড়কটির পানি আবু নাসের হাসপাতাল ও নেভি স্কুলের মাঝখান দিয়ে যে নালা চলে গেছে, সেখান দিয়ে গিয়ে ময়ূর নদীতে পড়ে। নালা পাকা হয়ে যেখানে শেষ হয়েছে, সেখানে এক সময় বড় একটি খাল ছিল। প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলের কারণে এটি এখন একটি নালায় পরিণত হয়েছে। এ জন্য পানি নামতে পারছে না।’

কেসিসি সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ‘খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে (প্রথমপর্যায়)’ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন হয়। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৮২৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। ২০২৩ সালে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। প্রকল্প ব্যয় কমে দাঁড়ায় ৮২৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। মেয়াদ নির্ধারণ হয় ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। প্রকল্পে নালা নির্মাণ, খাল খনন, সøুইসগেট, পাম্পহাউস নির্মাণসহ ১৭৭টি কাজ করার কথা ছিল।

কেসিসি সূত্র বলছে, প্রকল্পের আওতায় গত ছয় বছরে ১০৪টি নালা পুনর্নিমাণ করেছে কেসিসি। ময়ূর নদসহ সাতটি খাল পুনঃখনন ও ৩২টি নালার সংস্কার চলছে। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫০২ কোটি টাকা। তবে এই বিপুল অর্থ ব্যয়ের পরও নগরের জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। কেসিসির কর্মকর্তাদের দাবি, নগরকে জলাবদ্ধতা মুক্ত করতে নতুন করে পাম্পহাউজ ও সøুুইজগেট নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছে কেসিসি। প্রথমপর্যায়ের চলমান ড্রেনেজ প্রকল্পের বাকি চারধাপ এবং পাম্পহাউজ ও সøুুইজগেট নির্মাণ শেষ হলে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে রক্ষা মিলবে বলে আশা করছে কেসিসি কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী মো. মশিউজ্জামান বলেন, নগরের পানি রূপসা নদীতে গিয়ে পড়ে। রূপসার তলদেশ উঁচু হয়ে গেছে। জোয়ারের সময় বৃষ্টি হলে পানি বের হতে পারে না, উল্টো নদীর পানি নগরে প্রবেশ করে। এজন্য প্রায় ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রূপসায় একটি স্লুইসগেট ও পাম্প হাউজ নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। পাম্পহাউজ নির্মাণ হলে বৃষ্টির পানি পাম্প করে নদীতে ফেলে দেয়া হবে। আর নদীর পানিও নগরে প্রবেশ আটকে দেয়া হবে। ফলে নগরে আর বৃষ্টির পানি জমবে না।

প্রসঙ্গত, খুলনা শহরের জলাবদ্ধতার বাস্তবতা নিয়ে এক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন অনুষ্ঠান ১১ নভেম্বর দুপুরে নগরের শহীদ হাদিস পার্কে অনুষ্ঠিত হয়েছে। খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ও সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ এর উদ্বোধন করেন।

অনুষ্ঠানে অতিথিরা বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যক্তি সচেতনতা খুব জরুরি। শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হলে আমাদের উদাসীন আচরণ পরিবর্তন করতে হবে। টেকসই নগর উন্নয়নে সংঘবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। ঢাকাসহ অন্য শহরের প্রেক্ষাপটে খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণযোগ্য অবস্থায় আছে। আমরা যদি পরিকল্পনায় আর কোনো ভুল না করি, ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি না করি, সময়ের কাজ সময়ে করি তাহলে জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। বিভিন্ন দপ্তর-প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে একটি সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব।

back to top