alt

জাতীয়

সংশয় নিয়েই শুরু হলো বাকু জলবায়ু সম্মেলন

শাফিউল আল ইমরান, বাকু (আজারবাইজান) থেকে : মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪

আজারবাইজানের বাকুতে শুরু হয়েছে জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৯-সংবাদ

পটুয়াখালীর কলাপাড়া থেকে আসা দুলালী বেগম। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত নারী। তিনি এবার আজারবাইজানের বাকুতে এসেছেন তার দুর্দশার কথা শুনাতে। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০০৭ সালে সিডর বন্যায় আমাদের সবকিছু শেষ করে দিয়ে যায়। সেইসাথে ঘুর্ণিঝড় ও বন্যায় আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কৃষি জমির পরিমাণ কমে যায়। ঘূর্ণিঝড় ও জলোস্বাচ্ছের কারণে আমাদের ঘরবাড়ি নদী ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে ও নানান রোগে আক্রান্ত হই। এ কারণে কৃষি জমির অভাব ও কর্মসস্থান কমে যাওয়ার কারণে মানুষরা গ্রাম ছেড়ে শহরে যাচ্ছে।‘

সম্মেলনে জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে বিশ্ববাসীর সামনে বাংলাদেশের লাখো দুর্গত মানুষের পক্ষে অভিজ্ঞতা তুলে ধরার মধ্য দিয়ে আজারবাইজানের বাকুতে শুরু হলো বিশ্ব জলবায়ু সম্মলেন (কপ-২৯)।

জাতিসংঘের মহাসচিব অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে বলেন, ‘জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে অভিযোজনের অর্থ না দিলেও উন্নত দেশগুলো জীবশ্ম জ্বালানি বিক্রি করে ব্যাপক মুনাফা করছে। কপ প্রেসিডেন্ট বলছেন, প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন করার এটা সময়। ধ্বংসের পথে রয়েছে বিশ্ব।’

সম্মেলনের উদ্বোধনীর বক্তৃতায় কপ-২৯ প্রেসিডেন্ট ও আজারবাইজানের পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রী মুখতার বাবায়েভ বলেছেন, ‘তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মধ্য দিয়েই টেকসই ভবিষ্যত গড়তে হবে। তিনি বলেন, একক কোনো দেশের পক্ষে বর্তমান সংকট সমাধান সম্ভব নয়।’

ধারিত্রী রক্ষার এই সম্মেলনে যোগ দিতে বাকু এসে পৌঁছেছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। সোমবার (১১ নভেম্বর) স্থানীয় সময় বিকেল চারটায় বাকু পৌঁছান তিনি। বাকুতে ব্যস্ত সময় কাটাবেন তিনি। ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এসব বিষয় তিনি বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরবেন। বিভিন্ন ফোরামে বক্তব্য রাখবেন এবং সেখানে অংশগ্রহণকারী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে তার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

এবারের জলবায়ু সম্মেলনের শীর্ষ আলোচ্যসূচিতে রয়েছে অর্থায়ন। এই অবস্থায় গত কয়েক বছর ধরেই নতুন অর্থায়নের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছিল জাতিসংঘ। নিউ কালেকটিভ কোয়ান্টিফাইড গোল (এনসিকিউজি) নামের এই লক্ষ্য এ বছর চূড়ান্ত করার পালা। উন্নয়নশীল দেশগুলো এই লক্ষ্য চূড়ান্তের অপেক্ষায় আছে। এ কারণেই এবারের সম্মেলনে অর্থায়নকে শীর্ষ এজেন্ডা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, এবারের কনফারেন্স অব দ্য পার্টি (কপ) হচ্ছে অর্থায়নের কপ। কিন্তু এবারের সম্মেলন জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ট্রিলিয়ন ডলারের চাহিদা কতটা পূরণ করতে সক্ষম হবে সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কারণ বিশ্বনেতাদের অনুপস্থিতি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং অংশ নিচ্ছেন না। সুতারং জলবায়ু অর্থায়ন কতোটা সফলতার মুখ দেখবে সেটি নিয়ে শঙ্কা আছে।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ ‘পাপুয়া নিউগিনি’ এবারের জলবায়ু সম্মেলন বয়কট করেছে। এখন কপের মূল আলোচনার বিষয় ডনাল্ড ট্রাম্প। তার সিদ্ধান্তের ওপর-ই নির্ভর করছে ভবিষ্যতের জলবায়ু আলোচনা কোন দিকে যাবে। কারণ প্রথমবার প্রেসিডেন্ট হয়েই তিনি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন। শুধু তাই নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রধানত দায়ী হওয়া সত্ত্বেও জীবাশ্ম জ্বালানির প্রসারকে তিনি উৎসাহিত করেছেন। অথচ গত চার বছর ধরে বাইডেন প্রশাসন তার বিপরীতে জলবায়ু পরিবর্তনের পক্ষে কাজ করে গেছেন। দায়িত্ব নিয়েই তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে আবার প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফিরিয়ে এনেছেন। তেল-গ্যাস উৎপাদন কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিপুল বিনিয়োগ করেছেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি সাইমন স্টিল ন?্যায?্যতার ভিত্তিতে জলবায়ুর অর্থায়নে সব পক্ষকে চুক্তির জন্য চাপ দেয়ার মাধ?্যমে যৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর তাগিদ দিয়েছেন। কাক্সিক্ষত ফলাফল ছাড়া বাকু ছেড়ে যাওয়া ঠিক হবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

জলবায়ু সম্মেলন শুরু আগ মুহুর্তে এক প্রতিবেদনে উঠে এলো, গত এক দশকে চরম আবহাওয়ার কারণে ২ ট্রিলিয়ন (২ লাখ কোটি) ডলার ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। ব্যক্তি পর্যায়ের ক্ষতির হিসাব করে দেখা গেছে, বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন এবং আটলান্টিকের দ্বীপ বাহামাসের বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত চরম আবহাওয়ার ৪ হাজার ঘটনা বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে আন্তর্জাতিক চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি)। ১৭০টি দেশের সাড়ে ৪ কোটির বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক সংগঠন আইসিসির সদর দপ্তর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক সংগঠন এটি।

চরম আবহাওয়ার ঘটনার মধ্যে ঘরবাড়ি ভাসিয়ে নেয়ার মতো আকস্মিক বন্যা এবং বছরের পর বছর ধরে কৃষিজমির উর্বরতা নষ্ট করে এমন অব্যাহত খরার মতো বিষয়গুলোর উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত দুই বছরেই ৪৫১ বিলিয়ন (৪৫ হাজার ১০০ কোটি) ডলার সমমানের ক্ষতি হয়েছে। চরম আবহাওয়ার প্রভাবে ২০১৪ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে বলেও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। গত ১০ বছরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে যুক্তরাষ্ট্র। চরম আবহাওয়ায় দেশটির অর্থনীতি ৯৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এরপরের অবস্থানে আছে চীন ও ভারত। এ দুই দেশে একই সময়ে ক্ষতি হয়েছে যথাক্রমে ২৬ হাজার ৮০০ কোটি ও ১১ হাজার ২০০ কোটি ডলার।

বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন গবেষণায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চরম আবহাওয়ার প্রভাব জনিত যে চিত্র এ যাবৎ উঠে এসেছে, আইসিসির পরিসংখ্যান বলছে, প্রকৃত চিত্র তার চেয়েও ভয়াবহ

নেপালের জলবিদ্যুতের জন্য ‘দক্ষিণ এশীয় গ্রিড’ চান ইউনূস

ছবি

কপ২৯ এর তৃতীয় দিনেও নেই কোনো দৃশ্যমান অর্জন

ছবি

গাজীপুরে দফায় দফায় শ্রমিক বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ

ছবি

সব আহতকে ‘না দেখেই’ ফিরছিলেন, তোপের মুখে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, গাড়ি আটকে বিক্ষোভ

ছবি

জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় ‘নতুন সভ্যতার’ ডাক প্রধান উপদেষ্টার

ছবি

৫ বছর ধরে ছয় রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল বন্ধ, ৯টি চলছে জোড়াতালি দিয়ে

ছবি

জুলাই গণহত্যার ১০০তম দিনে শহীদি স্মৃতিকথাঃ কান্দে আমার মায়

বিপ্লবের ১০০ তম দিন উপলক্ষ্যে শহীদ ও আহতদের নিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর কর্মসূচি

ছবি

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই হবে বইমেলা: সংস্কৃতি উপদেষ্টা

ছবি

শিল্পকলার সামনে পথনাটক করে প্রতিবাদ ও নিরাপত্তা চাইবে নাট্যকর্মীরা

ছবি

নেপাল ও ভুটানের উৎপাদিত জলবিদ্যুতের জন্য ‘দক্ষিণ এশীয় গ্রিড’ চান ইউনূস

ছবি

সেনাবাহিনী কত দিন মাঠে থাকবে সে সিদ্ধান্ত সরকারের

ছবি

টেকসই পৃথিবীর জন্য ভিন্নধারার সভ্যতা গড়ে তুলতে হবে : ড. ইউনূস

ছবি

স্বাস্থ্য উপদেষ্টার গাড়ির ওপর উঠে গেল আহতরা

ঢালাও ভাবে প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন বাতিল সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার অন্তরায় : সম্পাদক পরিষদ

ছবি

জিয়াউল আহসানকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিল ট্রাইব্যুনাল

কপ২৯ : দীর্ঘ সময় পেরিয়ে কার্বন ক্রেডিট বাণিজ্য অনুমোদিত

ছবি

মহাসড়কে অবরোধ প্রত্যাহার, গাজীপুরে ১৪ কারখানা বন্ধ

ছবি

ট্রাইব্যুনালে ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ র‌্যাবের গুলিতে পা হারানো লিমনের

ছবি

জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা প্রয়োজন : প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

ঢালাও মামলায় বিব্রত সরকার: আইন উপদেষ্টা

ছবি

গণমাধ্যমের ওপর সরকারের কোনো চাপ নেই : নাহিদ ইসলাম

ছবি

অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসায় আল-আজহারের গ্র্যান্ড ইমাম

ছবি

প্রকল্পের কাজ সেনাবাহিনী দ্বারা বাস্তবায়িত হোক, এতে কোনো সমস্যা নাই: শিক্ষা উপদেষ্টা

ছবি

সাবেক নির্বাচন কমিশনার স ম জাকারিয়ার মৃত্যু

ছবি

কপ-২৯ সম্মেলনে দেশের জলবায়ু সংকট তুলে ধরার আহ্বান

ছবি

সচিবালয়ে তিন উপদেষ্টার দপ্তর থেকে সরানো হলো শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি

বাকু জলবায়ু সম্মেলনের প্রথম দিনে জলবায়ু অর্থায়নের ওপর গুরুত্বারোপ

‘সেখ বশির উদ্দিনের’ বিরুদ্ধে হত্যা মামলা, তিনি কে, কেউ নিশ্চিত না

বশিরউদ্দিন ও ফারুকীকে উপদেষ্টা করায় ‘বৈষম্যবিরোধীদের’ বিক্ষোভ

বড়পুকুরিয়ায় কয়লা উত্তোলন বন্ধের উপক্রম

অবরোধ ও কর্মবিরতি: ‘৩শ’র বেশি’ গার্মেন্ট কারখানায় ‘ভাঙচুর-আগন’

দরবার হল থেকে সরানো হলো শেখ মুজিবুরের ছবি : উপদেষ্টা মাহফুজ আলম

ছবি

খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প : ব্যয় পাঁচশ দুই কোটি টাকা, সুফল নেই

ছবি

ঢাকায় বন্য প্রাণী অলিম্পিয়াডের চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত

ছবি

অবরোধ প্রত্যাহারের ৩০ মিনিট পর ফের বন্ধ ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক

tab

জাতীয়

সংশয় নিয়েই শুরু হলো বাকু জলবায়ু সম্মেলন

শাফিউল আল ইমরান, বাকু (আজারবাইজান) থেকে

আজারবাইজানের বাকুতে শুরু হয়েছে জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৯-সংবাদ

মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪

পটুয়াখালীর কলাপাড়া থেকে আসা দুলালী বেগম। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত নারী। তিনি এবার আজারবাইজানের বাকুতে এসেছেন তার দুর্দশার কথা শুনাতে। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০০৭ সালে সিডর বন্যায় আমাদের সবকিছু শেষ করে দিয়ে যায়। সেইসাথে ঘুর্ণিঝড় ও বন্যায় আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কৃষি জমির পরিমাণ কমে যায়। ঘূর্ণিঝড় ও জলোস্বাচ্ছের কারণে আমাদের ঘরবাড়ি নদী ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে ও নানান রোগে আক্রান্ত হই। এ কারণে কৃষি জমির অভাব ও কর্মসস্থান কমে যাওয়ার কারণে মানুষরা গ্রাম ছেড়ে শহরে যাচ্ছে।‘

সম্মেলনে জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে বিশ্ববাসীর সামনে বাংলাদেশের লাখো দুর্গত মানুষের পক্ষে অভিজ্ঞতা তুলে ধরার মধ্য দিয়ে আজারবাইজানের বাকুতে শুরু হলো বিশ্ব জলবায়ু সম্মলেন (কপ-২৯)।

জাতিসংঘের মহাসচিব অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে বলেন, ‘জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে অভিযোজনের অর্থ না দিলেও উন্নত দেশগুলো জীবশ্ম জ্বালানি বিক্রি করে ব্যাপক মুনাফা করছে। কপ প্রেসিডেন্ট বলছেন, প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন করার এটা সময়। ধ্বংসের পথে রয়েছে বিশ্ব।’

সম্মেলনের উদ্বোধনীর বক্তৃতায় কপ-২৯ প্রেসিডেন্ট ও আজারবাইজানের পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রী মুখতার বাবায়েভ বলেছেন, ‘তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মধ্য দিয়েই টেকসই ভবিষ্যত গড়তে হবে। তিনি বলেন, একক কোনো দেশের পক্ষে বর্তমান সংকট সমাধান সম্ভব নয়।’

ধারিত্রী রক্ষার এই সম্মেলনে যোগ দিতে বাকু এসে পৌঁছেছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। সোমবার (১১ নভেম্বর) স্থানীয় সময় বিকেল চারটায় বাকু পৌঁছান তিনি। বাকুতে ব্যস্ত সময় কাটাবেন তিনি। ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এসব বিষয় তিনি বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরবেন। বিভিন্ন ফোরামে বক্তব্য রাখবেন এবং সেখানে অংশগ্রহণকারী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে তার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

এবারের জলবায়ু সম্মেলনের শীর্ষ আলোচ্যসূচিতে রয়েছে অর্থায়ন। এই অবস্থায় গত কয়েক বছর ধরেই নতুন অর্থায়নের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছিল জাতিসংঘ। নিউ কালেকটিভ কোয়ান্টিফাইড গোল (এনসিকিউজি) নামের এই লক্ষ্য এ বছর চূড়ান্ত করার পালা। উন্নয়নশীল দেশগুলো এই লক্ষ্য চূড়ান্তের অপেক্ষায় আছে। এ কারণেই এবারের সম্মেলনে অর্থায়নকে শীর্ষ এজেন্ডা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, এবারের কনফারেন্স অব দ্য পার্টি (কপ) হচ্ছে অর্থায়নের কপ। কিন্তু এবারের সম্মেলন জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ট্রিলিয়ন ডলারের চাহিদা কতটা পূরণ করতে সক্ষম হবে সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কারণ বিশ্বনেতাদের অনুপস্থিতি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং অংশ নিচ্ছেন না। সুতারং জলবায়ু অর্থায়ন কতোটা সফলতার মুখ দেখবে সেটি নিয়ে শঙ্কা আছে।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ ‘পাপুয়া নিউগিনি’ এবারের জলবায়ু সম্মেলন বয়কট করেছে। এখন কপের মূল আলোচনার বিষয় ডনাল্ড ট্রাম্প। তার সিদ্ধান্তের ওপর-ই নির্ভর করছে ভবিষ্যতের জলবায়ু আলোচনা কোন দিকে যাবে। কারণ প্রথমবার প্রেসিডেন্ট হয়েই তিনি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন। শুধু তাই নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রধানত দায়ী হওয়া সত্ত্বেও জীবাশ্ম জ্বালানির প্রসারকে তিনি উৎসাহিত করেছেন। অথচ গত চার বছর ধরে বাইডেন প্রশাসন তার বিপরীতে জলবায়ু পরিবর্তনের পক্ষে কাজ করে গেছেন। দায়িত্ব নিয়েই তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে আবার প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফিরিয়ে এনেছেন। তেল-গ্যাস উৎপাদন কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিপুল বিনিয়োগ করেছেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি সাইমন স্টিল ন?্যায?্যতার ভিত্তিতে জলবায়ুর অর্থায়নে সব পক্ষকে চুক্তির জন্য চাপ দেয়ার মাধ?্যমে যৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর তাগিদ দিয়েছেন। কাক্সিক্ষত ফলাফল ছাড়া বাকু ছেড়ে যাওয়া ঠিক হবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

জলবায়ু সম্মেলন শুরু আগ মুহুর্তে এক প্রতিবেদনে উঠে এলো, গত এক দশকে চরম আবহাওয়ার কারণে ২ ট্রিলিয়ন (২ লাখ কোটি) ডলার ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। ব্যক্তি পর্যায়ের ক্ষতির হিসাব করে দেখা গেছে, বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন এবং আটলান্টিকের দ্বীপ বাহামাসের বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত চরম আবহাওয়ার ৪ হাজার ঘটনা বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে আন্তর্জাতিক চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি)। ১৭০টি দেশের সাড়ে ৪ কোটির বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক সংগঠন আইসিসির সদর দপ্তর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক সংগঠন এটি।

চরম আবহাওয়ার ঘটনার মধ্যে ঘরবাড়ি ভাসিয়ে নেয়ার মতো আকস্মিক বন্যা এবং বছরের পর বছর ধরে কৃষিজমির উর্বরতা নষ্ট করে এমন অব্যাহত খরার মতো বিষয়গুলোর উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত দুই বছরেই ৪৫১ বিলিয়ন (৪৫ হাজার ১০০ কোটি) ডলার সমমানের ক্ষতি হয়েছে। চরম আবহাওয়ার প্রভাবে ২০১৪ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে বলেও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। গত ১০ বছরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে যুক্তরাষ্ট্র। চরম আবহাওয়ায় দেশটির অর্থনীতি ৯৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এরপরের অবস্থানে আছে চীন ও ভারত। এ দুই দেশে একই সময়ে ক্ষতি হয়েছে যথাক্রমে ২৬ হাজার ৮০০ কোটি ও ১১ হাজার ২০০ কোটি ডলার।

বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন গবেষণায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চরম আবহাওয়ার প্রভাব জনিত যে চিত্র এ যাবৎ উঠে এসেছে, আইসিসির পরিসংখ্যান বলছে, প্রকৃত চিত্র তার চেয়েও ভয়াবহ

back to top