alt

জাতীয়

বাকু জলবায়ু সম্মেলনের প্রথম দিনে জলবায়ু অর্থায়নের ওপর গুরুত্বারোপ

অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার : মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন এর সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী সংস্থা হল কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ (কপ)। ১৯৯২ সালে রিও সম্মেলনে ইউএনএফসিসিসি গঠনের পর থেকে প্রতি বছর কপের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় যেখানে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা প্রতিক্রিয়ার অগ্রগতি যাচাই করা হয়, গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রুতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। এই সম্মেলনগুলো প্রত্যেকটা দেশকে এক ছাদের নিচে নিয়ে আসে। ১৯৯৫ সালের ২ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল জার্মানির বার্লিনে প্রথম কপ-১ কনফারেন্সটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল যেখানে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যৌথ উদ্যোগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল।

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কপ-২১ সম্মেলনটিতে ১৯৬টি দেশের মতামতের ভিত্তিতে প্যারিস চুক্তির সুপারিশ হয়। ওই চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২০৩০ সালে গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন প্রায় ৪৩ শতাংশ কমাতে হবে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে কীভাবে কার্বন নির্গমন শূন্যের কোঠায় নেয়া যায় সেই বিষয়টি আলোচনায় স্থান পায়। তারই ধারাবাহিকতায় দুবাইতে ঐতিহাসিক কপ ২৮ এ আমরা লস এন্ড ড্যামেজ ফান্ডের আশ্বাস পেয়েছি যেটি থেকে ২০২৬ সাল নাগাদ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলিতে অর্থায়ন করা হবে।

আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিত কপ ২৯ প্রত্যাশা করা হচ্ছে প্যারিস চুক্তির অধীনে জলবায়ু অর্থায়ন অভিযোজন এবং বৈশ্বিক মূল্যায়নের (গ্লোবাল স্টকটেক) ক্ষেত্রে বড় অগ্রগতি আসবে। বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট সমাধানের লক্ষ্যে কপ ২৯ এ প্রায় ২০০ দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতারা একত্রিত হবেন। এবারের সম্মেলনের মূল লক্ষ্য জলবায়ু সংকটের ভুক্তভোগী দরিদ্র দেশগুলোকে আরও অর্থসহায়তা দেয়ার পথ খুঁজে বের করা।

গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ইউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের (ইউএনইপি) একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলির শুধুমাত্র ১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার সঙ্গে আজকের চরম আবহাওয়ার প্রভাব মোকাবিলা করতে প্রতিদিন প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। তারা আসলে যা পাচ্ছে তা তার দশমাংশেরও কম, দিনে প্রায় ৭৫ মিলিয়ন ডলার। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস কঠোর ভাষায় বলেছেন : ‘জলবায়ু বিপর্যয় নতুন বাস্তবতা এবং আমরা এ সম্পর্কে সচেতন হচ্ছি না। জলবায়ু সংকট এখানেই এবং আমরা সুরক্ষা গ্রহণকে পিছিয়ে দিতে পারি না। আমাদের মানিয়ে নিতে হবে এবং সেটা এখনই।’ তিনি উল্লেখ করেছেন যে যখন অভিযোজন তহবিল প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম পড়ছে, তখন এই সমস্ত ধ্বংসের উদ্যোক্তারা- বিশেষ করে জীবাশ্ম জ্বালানী শিল্প- ব্যাপক মুনাফা এবং ভর্তুকি পাচ্ছে।

ইউনেপ রিপোর্টের প্রধান গবেষক হেনরি নিউফেল্ড বলেছেন, সবচেয়ে খারাপ বিষয় হলো যখন অভিযোজন তহবিল বৃদ্ধি পাচ্ছে- ২০২১ সালে ২২ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২২ সালে ২৮ বিলিয়ন ডলার তখন জলবায়ু সংকটের সবচেয়ে মারাত্মক প্রভাবগুলি আরও দ্রুত বাড়ছে।

শীর্ষ সম্মেলনের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুখতার বাবায়েভ কপ ২৯ কে ‘প্যারিস চুক্তির জন্য সত্যের মুহূর্ত’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ধ্বংসের পথে আছি, তবে এগুলো ভবিষ্যতের সমস্যা নয়। জলবায়ু পরিবর্তন ইতোমধ্যে আমাদের সামনে উপস্থিত।’ তিনি মনে করেন কপ ২৯ হলো সকলের জন্য একটি নতুন পথের সূচনা করার অপ্রত্যাশিত মুহূর্ত।

জাতিসংঘের জলবায়ু প্রধান সাইমন স্টিয়েল উদ্বোধনী প্লেনারিতে বলেন যে তিনি স্টিয়েল গ্রেনাডা দ্বীপের ক্যারিয়াকাউ থেকে এসেছেন, যা জুলাই মাসে হারিকেন বেরিল দ্বারা বিধ্বস্ত হয়েছিল। তিনি একজন বয়স্ক প্রতিবেশী, ফ্লোরেন্সের সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা নিজের একটি ছবি দেখিয়েছিলেন, যার বাড়ি ঝড়ে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। জাতিসংঘের আলোচনা ফ্লোরেন্সের মতো মানুষের ক্ষতি করে এমন পরিবেশগত বিপর্যয় থেকে দূরে অনুভব করতে পারে তবুও জলবায়ু সংকট বিশ্বের প্রতিটি একক ব্যক্তিকে কোনো না কোনোভাবে প্রভাবিত করছে, জ্বালানী শক্তির বিল বাড়িয়ে দিচ্ছে, বৈশ্বিক অস্থিতিশীলতাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং জীবন কেড়ে নিচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। কপ ২৯ -এ প্রধান অগ্রাধিকারগুলির মধ্যে একটি নতুন বৈশ্বিক আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ করা হবে, কার্বন বাজারের নিয়মগুলি চূড়ান্ত করা হবে এবং গ্রহ-সতর্কতা দূষণ কমানোর প্রতিশ্রুতি দেয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

আরব আমিরাতের বিদায়ী কপ প্রেসিডেন্ট সুলতান আল জাবের, আজারবাইজানের কপ প্রেসিডেন্ট মুখতার বাবায়েভকে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ উপদেশ দিয়ে বলেন, ‘কাজকে কথার চেয়ে বেশি প্রাধান্য দিন। ইতিহাস আমাদের কাজ দিয়ে বিচার করবে, আমাদের কথা দিয়ে নয়।’ তিনি আরও বলেন, স্বেচ্ছাসেবী শিল্প উদ্যোগ, তেল এবং গ্যাস ডিকার্বনাইজেশন চার্টার, এখন ২০৩০ সালের মধ্যে শূন্য মিথেন নির্গমনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বিশ্বব্যাপী উৎপাদনের ৪৪ শতাংশ প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা রয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে ‘ট্রানজিশন এওয়ে বা পরিবর্তন থেকে দূরে’ পদক্ষেপটি কার্যকর করা হচ্ছে এমন কোনো লক্ষণ আছে কিনা তা গত বুধবার ২০২৪ গ্লোবাল কার্বন বাজেট প্রকাশের সঙ্গে আসতে পারে।

গ্লোবাল উইটনেসের জ্যেষ্ঠ জীবাশ্ম জ্বালানি তদন্তকারী প্যাট্রিক গ্যালি বলেন, জলবায়ু সংকট প্রতি বছর আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মনে হচ্ছে যেন প্রতি বছর আমাদের আরেকটি জীবাশ্ম জ্বালানী কোম্পানি জলবায়ু আলোচনাকে ব্যবহার করছে আরও বেশি তেল ও গ্যাস চুক্তির জন্য। যে দুর্বল দেশগুলি তাদের বেঁচে থাকার জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি পথ সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে কপের ওপর নির্ভর করছে, সেখানে স্টেট অয়েল কোম্পানি (সোকার) বিদেশি সংস্থাগুলির সঙ্গে ২৫টি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সোকার-এর লক্ষ্য- কয়েক দশক ধরে প্রচুর পরিমাণে তেল এবং গ্যাস উৎপাদন করা যা সরাসরি জাতিসংঘের জলবায়ু আলোচনার বিবৃত লক্ষ্যের বিরোধী। স্বার্থের এই দ্বন্দ্ব জলবায়ু ভাঙন রোধের দিকে অগ্রগতি হ্রাস করছে। বড় দূষণকারীদের এই আলোচনায় স্থান দেয়া উচিত নয়। অনেক দেরি হওয়ার আগে আমাদের অবশ্যই তাদের এই আলোচনা থেকে বের করে দিতে হবে।

কার্বন ব্রিফের ডা. সাইমন ইভান্সের মতে, খসড়া এজেন্ডা নিয়ে আলোচনার জন্য উদ্বোধনী প্লেনারি থামানো হয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি বিতর্কিত বিষয় রয়েছে। এই বিতর্কিত বিষয়গুলির মধ্যে রয়েছে ঊট-এর ঈইঅগ-এটি কার্বন বর্ডার অ্যাডজাস্টমেন্ট মেকানিজম, এক ধরণের কার্বন শুল্ক, যা দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার অধীনে রয়েছে এবং গত বছর এটিকে এজেন্ডায় নেয়ার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল।

এক সংবাদ সম্মেলনে জলবায়ু এনজিও অয়েল চেঞ্জ ইন্টারন্যাশনালের সহ-ব্যবস্থাপক অ্যালি রোজেনব্লুথ বলেন, জলবায়ু আন্দোলনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডনাল্ড ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচন ‘ভয়াবহ’ সংবাদ। ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে কয়েক ডজন পরিবেশগত বিধি প্রত্যাহার করেছিলেন। তিনি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়েছিলেন- যা তিনি আবার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ট্রাম্পের আসন্ন ভূমিকা মার্কিন জলবায়ু কর্ম পরিকল্পনা এবং জলবায়ু অর্থায়নের প্রতিশ্রুতিতে একটি বড় বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব রোধে জরুরী পদক্ষেপ না নিলে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রায় দুই কোটি মানুষ তাদের বর্তমান আবাসস্থল থেকে স্থানান্তরিত হবে এবং ২০৮০ সালের মধ্যে দেশটির ১৩ শতাংশ উপকূলীয় এলাকা সমুদ্রের পানির নিচে হারিয়ে যেতে পারে। শিল্পোন্নত দেশগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রদান করার জন্য। কিন্তু তারা তাদের কথা রাখেনি ২০১৫ সাল থেকে দেশটি গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড থেকে মাত্র ১৩ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে। ২০২০ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ২০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হলেও এই বছর পর্যন্ত বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক উৎস থেকে মাত্র ৭১০ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে যা প্যারিস কপে প্রতিশ্রুতিকৃত অর্থের মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ। তবে ২০২৩ সালে দুবাইতে অনুষ্ঠিত কপ ২৮ এ আমরা যে লস এন্ড ড্যামেজ ফান্ডের আশ্বাস পেয়েছি যেটি থেকে ২০২৬ সাল নাগাদ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলিতে অর্থায়ন করা হবে সেই অঙ্গীকারের কার্যকর প্রতিফলন আমরা এই কপ থেকে পেতে পারি। লস এন্ড ড্যামেজ ফান্ড পাওয়ার জন্য যে সকল প্রয়োজনীয় পদ্ধতি গ্রহণ হবে সেই পদক্ষেপ আমরা এই কপ থেকেই পাব বলে আমার বিশ্বাস।

[অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার, ডিন, বিজ্ঞান অনুষদ, অধ্যাপক, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, যুগ্ম সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং চেয়ারম্যান, বায়ুম-লীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)]

নেপালের জলবিদ্যুতের জন্য ‘দক্ষিণ এশীয় গ্রিড’ চান ইউনূস

ছবি

কপ২৯ এর তৃতীয় দিনেও নেই কোনো দৃশ্যমান অর্জন

ছবি

গাজীপুরে দফায় দফায় শ্রমিক বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ

ছবি

সব আহতকে ‘না দেখেই’ ফিরছিলেন, তোপের মুখে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, গাড়ি আটকে বিক্ষোভ

ছবি

জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় ‘নতুন সভ্যতার’ ডাক প্রধান উপদেষ্টার

ছবি

৫ বছর ধরে ছয় রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল বন্ধ, ৯টি চলছে জোড়াতালি দিয়ে

ছবি

জুলাই গণহত্যার ১০০তম দিনে শহীদি স্মৃতিকথাঃ কান্দে আমার মায়

বিপ্লবের ১০০ তম দিন উপলক্ষ্যে শহীদ ও আহতদের নিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর কর্মসূচি

ছবি

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই হবে বইমেলা: সংস্কৃতি উপদেষ্টা

ছবি

শিল্পকলার সামনে পথনাটক করে প্রতিবাদ ও নিরাপত্তা চাইবে নাট্যকর্মীরা

ছবি

নেপাল ও ভুটানের উৎপাদিত জলবিদ্যুতের জন্য ‘দক্ষিণ এশীয় গ্রিড’ চান ইউনূস

ছবি

সেনাবাহিনী কত দিন মাঠে থাকবে সে সিদ্ধান্ত সরকারের

ছবি

টেকসই পৃথিবীর জন্য ভিন্নধারার সভ্যতা গড়ে তুলতে হবে : ড. ইউনূস

ছবি

স্বাস্থ্য উপদেষ্টার গাড়ির ওপর উঠে গেল আহতরা

ঢালাও ভাবে প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন বাতিল সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার অন্তরায় : সম্পাদক পরিষদ

ছবি

জিয়াউল আহসানকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিল ট্রাইব্যুনাল

কপ২৯ : দীর্ঘ সময় পেরিয়ে কার্বন ক্রেডিট বাণিজ্য অনুমোদিত

ছবি

মহাসড়কে অবরোধ প্রত্যাহার, গাজীপুরে ১৪ কারখানা বন্ধ

ছবি

ট্রাইব্যুনালে ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ র‌্যাবের গুলিতে পা হারানো লিমনের

ছবি

জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা প্রয়োজন : প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

ঢালাও মামলায় বিব্রত সরকার: আইন উপদেষ্টা

ছবি

গণমাধ্যমের ওপর সরকারের কোনো চাপ নেই : নাহিদ ইসলাম

ছবি

অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসায় আল-আজহারের গ্র্যান্ড ইমাম

ছবি

প্রকল্পের কাজ সেনাবাহিনী দ্বারা বাস্তবায়িত হোক, এতে কোনো সমস্যা নাই: শিক্ষা উপদেষ্টা

ছবি

সাবেক নির্বাচন কমিশনার স ম জাকারিয়ার মৃত্যু

ছবি

কপ-২৯ সম্মেলনে দেশের জলবায়ু সংকট তুলে ধরার আহ্বান

ছবি

সচিবালয়ে তিন উপদেষ্টার দপ্তর থেকে সরানো হলো শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি

ছবি

সংশয় নিয়েই শুরু হলো বাকু জলবায়ু সম্মেলন

‘সেখ বশির উদ্দিনের’ বিরুদ্ধে হত্যা মামলা, তিনি কে, কেউ নিশ্চিত না

বশিরউদ্দিন ও ফারুকীকে উপদেষ্টা করায় ‘বৈষম্যবিরোধীদের’ বিক্ষোভ

বড়পুকুরিয়ায় কয়লা উত্তোলন বন্ধের উপক্রম

অবরোধ ও কর্মবিরতি: ‘৩শ’র বেশি’ গার্মেন্ট কারখানায় ‘ভাঙচুর-আগন’

দরবার হল থেকে সরানো হলো শেখ মুজিবুরের ছবি : উপদেষ্টা মাহফুজ আলম

ছবি

খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প : ব্যয় পাঁচশ দুই কোটি টাকা, সুফল নেই

ছবি

ঢাকায় বন্য প্রাণী অলিম্পিয়াডের চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত

ছবি

অবরোধ প্রত্যাহারের ৩০ মিনিট পর ফের বন্ধ ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক

tab

জাতীয়

বাকু জলবায়ু সম্মেলনের প্রথম দিনে জলবায়ু অর্থায়নের ওপর গুরুত্বারোপ

অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার

মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন এর সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী সংস্থা হল কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ (কপ)। ১৯৯২ সালে রিও সম্মেলনে ইউএনএফসিসিসি গঠনের পর থেকে প্রতি বছর কপের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় যেখানে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা প্রতিক্রিয়ার অগ্রগতি যাচাই করা হয়, গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রুতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। এই সম্মেলনগুলো প্রত্যেকটা দেশকে এক ছাদের নিচে নিয়ে আসে। ১৯৯৫ সালের ২ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল জার্মানির বার্লিনে প্রথম কপ-১ কনফারেন্সটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল যেখানে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যৌথ উদ্যোগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল।

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কপ-২১ সম্মেলনটিতে ১৯৬টি দেশের মতামতের ভিত্তিতে প্যারিস চুক্তির সুপারিশ হয়। ওই চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২০৩০ সালে গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন প্রায় ৪৩ শতাংশ কমাতে হবে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে কীভাবে কার্বন নির্গমন শূন্যের কোঠায় নেয়া যায় সেই বিষয়টি আলোচনায় স্থান পায়। তারই ধারাবাহিকতায় দুবাইতে ঐতিহাসিক কপ ২৮ এ আমরা লস এন্ড ড্যামেজ ফান্ডের আশ্বাস পেয়েছি যেটি থেকে ২০২৬ সাল নাগাদ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলিতে অর্থায়ন করা হবে।

আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিত কপ ২৯ প্রত্যাশা করা হচ্ছে প্যারিস চুক্তির অধীনে জলবায়ু অর্থায়ন অভিযোজন এবং বৈশ্বিক মূল্যায়নের (গ্লোবাল স্টকটেক) ক্ষেত্রে বড় অগ্রগতি আসবে। বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট সমাধানের লক্ষ্যে কপ ২৯ এ প্রায় ২০০ দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতারা একত্রিত হবেন। এবারের সম্মেলনের মূল লক্ষ্য জলবায়ু সংকটের ভুক্তভোগী দরিদ্র দেশগুলোকে আরও অর্থসহায়তা দেয়ার পথ খুঁজে বের করা।

গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ইউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের (ইউএনইপি) একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলির শুধুমাত্র ১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার সঙ্গে আজকের চরম আবহাওয়ার প্রভাব মোকাবিলা করতে প্রতিদিন প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। তারা আসলে যা পাচ্ছে তা তার দশমাংশেরও কম, দিনে প্রায় ৭৫ মিলিয়ন ডলার। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস কঠোর ভাষায় বলেছেন : ‘জলবায়ু বিপর্যয় নতুন বাস্তবতা এবং আমরা এ সম্পর্কে সচেতন হচ্ছি না। জলবায়ু সংকট এখানেই এবং আমরা সুরক্ষা গ্রহণকে পিছিয়ে দিতে পারি না। আমাদের মানিয়ে নিতে হবে এবং সেটা এখনই।’ তিনি উল্লেখ করেছেন যে যখন অভিযোজন তহবিল প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম পড়ছে, তখন এই সমস্ত ধ্বংসের উদ্যোক্তারা- বিশেষ করে জীবাশ্ম জ্বালানী শিল্প- ব্যাপক মুনাফা এবং ভর্তুকি পাচ্ছে।

ইউনেপ রিপোর্টের প্রধান গবেষক হেনরি নিউফেল্ড বলেছেন, সবচেয়ে খারাপ বিষয় হলো যখন অভিযোজন তহবিল বৃদ্ধি পাচ্ছে- ২০২১ সালে ২২ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২২ সালে ২৮ বিলিয়ন ডলার তখন জলবায়ু সংকটের সবচেয়ে মারাত্মক প্রভাবগুলি আরও দ্রুত বাড়ছে।

শীর্ষ সম্মেলনের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুখতার বাবায়েভ কপ ২৯ কে ‘প্যারিস চুক্তির জন্য সত্যের মুহূর্ত’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ধ্বংসের পথে আছি, তবে এগুলো ভবিষ্যতের সমস্যা নয়। জলবায়ু পরিবর্তন ইতোমধ্যে আমাদের সামনে উপস্থিত।’ তিনি মনে করেন কপ ২৯ হলো সকলের জন্য একটি নতুন পথের সূচনা করার অপ্রত্যাশিত মুহূর্ত।

জাতিসংঘের জলবায়ু প্রধান সাইমন স্টিয়েল উদ্বোধনী প্লেনারিতে বলেন যে তিনি স্টিয়েল গ্রেনাডা দ্বীপের ক্যারিয়াকাউ থেকে এসেছেন, যা জুলাই মাসে হারিকেন বেরিল দ্বারা বিধ্বস্ত হয়েছিল। তিনি একজন বয়স্ক প্রতিবেশী, ফ্লোরেন্সের সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা নিজের একটি ছবি দেখিয়েছিলেন, যার বাড়ি ঝড়ে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। জাতিসংঘের আলোচনা ফ্লোরেন্সের মতো মানুষের ক্ষতি করে এমন পরিবেশগত বিপর্যয় থেকে দূরে অনুভব করতে পারে তবুও জলবায়ু সংকট বিশ্বের প্রতিটি একক ব্যক্তিকে কোনো না কোনোভাবে প্রভাবিত করছে, জ্বালানী শক্তির বিল বাড়িয়ে দিচ্ছে, বৈশ্বিক অস্থিতিশীলতাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং জীবন কেড়ে নিচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। কপ ২৯ -এ প্রধান অগ্রাধিকারগুলির মধ্যে একটি নতুন বৈশ্বিক আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ করা হবে, কার্বন বাজারের নিয়মগুলি চূড়ান্ত করা হবে এবং গ্রহ-সতর্কতা দূষণ কমানোর প্রতিশ্রুতি দেয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

আরব আমিরাতের বিদায়ী কপ প্রেসিডেন্ট সুলতান আল জাবের, আজারবাইজানের কপ প্রেসিডেন্ট মুখতার বাবায়েভকে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ উপদেশ দিয়ে বলেন, ‘কাজকে কথার চেয়ে বেশি প্রাধান্য দিন। ইতিহাস আমাদের কাজ দিয়ে বিচার করবে, আমাদের কথা দিয়ে নয়।’ তিনি আরও বলেন, স্বেচ্ছাসেবী শিল্প উদ্যোগ, তেল এবং গ্যাস ডিকার্বনাইজেশন চার্টার, এখন ২০৩০ সালের মধ্যে শূন্য মিথেন নির্গমনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বিশ্বব্যাপী উৎপাদনের ৪৪ শতাংশ প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা রয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে ‘ট্রানজিশন এওয়ে বা পরিবর্তন থেকে দূরে’ পদক্ষেপটি কার্যকর করা হচ্ছে এমন কোনো লক্ষণ আছে কিনা তা গত বুধবার ২০২৪ গ্লোবাল কার্বন বাজেট প্রকাশের সঙ্গে আসতে পারে।

গ্লোবাল উইটনেসের জ্যেষ্ঠ জীবাশ্ম জ্বালানি তদন্তকারী প্যাট্রিক গ্যালি বলেন, জলবায়ু সংকট প্রতি বছর আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মনে হচ্ছে যেন প্রতি বছর আমাদের আরেকটি জীবাশ্ম জ্বালানী কোম্পানি জলবায়ু আলোচনাকে ব্যবহার করছে আরও বেশি তেল ও গ্যাস চুক্তির জন্য। যে দুর্বল দেশগুলি তাদের বেঁচে থাকার জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি পথ সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে কপের ওপর নির্ভর করছে, সেখানে স্টেট অয়েল কোম্পানি (সোকার) বিদেশি সংস্থাগুলির সঙ্গে ২৫টি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সোকার-এর লক্ষ্য- কয়েক দশক ধরে প্রচুর পরিমাণে তেল এবং গ্যাস উৎপাদন করা যা সরাসরি জাতিসংঘের জলবায়ু আলোচনার বিবৃত লক্ষ্যের বিরোধী। স্বার্থের এই দ্বন্দ্ব জলবায়ু ভাঙন রোধের দিকে অগ্রগতি হ্রাস করছে। বড় দূষণকারীদের এই আলোচনায় স্থান দেয়া উচিত নয়। অনেক দেরি হওয়ার আগে আমাদের অবশ্যই তাদের এই আলোচনা থেকে বের করে দিতে হবে।

কার্বন ব্রিফের ডা. সাইমন ইভান্সের মতে, খসড়া এজেন্ডা নিয়ে আলোচনার জন্য উদ্বোধনী প্লেনারি থামানো হয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি বিতর্কিত বিষয় রয়েছে। এই বিতর্কিত বিষয়গুলির মধ্যে রয়েছে ঊট-এর ঈইঅগ-এটি কার্বন বর্ডার অ্যাডজাস্টমেন্ট মেকানিজম, এক ধরণের কার্বন শুল্ক, যা দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার অধীনে রয়েছে এবং গত বছর এটিকে এজেন্ডায় নেয়ার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল।

এক সংবাদ সম্মেলনে জলবায়ু এনজিও অয়েল চেঞ্জ ইন্টারন্যাশনালের সহ-ব্যবস্থাপক অ্যালি রোজেনব্লুথ বলেন, জলবায়ু আন্দোলনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডনাল্ড ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচন ‘ভয়াবহ’ সংবাদ। ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে কয়েক ডজন পরিবেশগত বিধি প্রত্যাহার করেছিলেন। তিনি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়েছিলেন- যা তিনি আবার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ট্রাম্পের আসন্ন ভূমিকা মার্কিন জলবায়ু কর্ম পরিকল্পনা এবং জলবায়ু অর্থায়নের প্রতিশ্রুতিতে একটি বড় বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব রোধে জরুরী পদক্ষেপ না নিলে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রায় দুই কোটি মানুষ তাদের বর্তমান আবাসস্থল থেকে স্থানান্তরিত হবে এবং ২০৮০ সালের মধ্যে দেশটির ১৩ শতাংশ উপকূলীয় এলাকা সমুদ্রের পানির নিচে হারিয়ে যেতে পারে। শিল্পোন্নত দেশগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রদান করার জন্য। কিন্তু তারা তাদের কথা রাখেনি ২০১৫ সাল থেকে দেশটি গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড থেকে মাত্র ১৩ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে। ২০২০ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ২০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হলেও এই বছর পর্যন্ত বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক উৎস থেকে মাত্র ৭১০ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে যা প্যারিস কপে প্রতিশ্রুতিকৃত অর্থের মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ। তবে ২০২৩ সালে দুবাইতে অনুষ্ঠিত কপ ২৮ এ আমরা যে লস এন্ড ড্যামেজ ফান্ডের আশ্বাস পেয়েছি যেটি থেকে ২০২৬ সাল নাগাদ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলিতে অর্থায়ন করা হবে সেই অঙ্গীকারের কার্যকর প্রতিফলন আমরা এই কপ থেকে পেতে পারি। লস এন্ড ড্যামেজ ফান্ড পাওয়ার জন্য যে সকল প্রয়োজনীয় পদ্ধতি গ্রহণ হবে সেই পদক্ষেপ আমরা এই কপ থেকেই পাব বলে আমার বিশ্বাস।

[অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার, ডিন, বিজ্ঞান অনুষদ, অধ্যাপক, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, যুগ্ম সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং চেয়ারম্যান, বায়ুম-লীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)]

back to top