চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে পণ্যবাহী জাহাজে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত সাত জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে চাঁদপুর শহরের স্বর্ণখোলা রোডে মর্গ থেকে এক এক করে মরদেহ নিয়া যান পরিবারের সদস্যরা। এ সময় স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে সেখানকার পরিবেশ। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান স্বজনরা।
হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু করেছে পুলিশ, নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড, সিআইডি ও প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। ধারণা করা হচ্ছে, নৌপথে অস্থিরতা তৈরি করতেই এ হত্যাকা-গুলো ঘটানো হতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।
২৩ ডিসেম্বর সোমবার সকালে চাঁদপুরের নৌ-সীমানার মেঘনা নদীতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মালবাহী লাইটার জাহাজ এমভি আল-বাখেরার সাত জনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় একজন ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। মঙ্গলবার রাতেই চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিহত সাত জনের মরদেহ নিয়ে আসা হয়। সকালে এক এক করে মর্গে পাঠানো হয় সাত মরদেহ।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত পরিবারের কাছে ২০ হাজার টাকার চেক ও নৌ-পুলিশের পক্ষ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা দেয়া হয়।
জাহাজে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহতরা হলেন- ফরিদপুর সদরের মো. কিবরিয়া (৫৬-মাস্টার), একই এলাকার শেখ সবুজ (৩৫-লস্কর), নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার আমিনুল মুন্সী (৪০- সুকানি), মাগুরা মোহাম্মদপুর উপজেলার মো. মাজেদুল (১৬-লস্কর), একই এলাকার সজিবুল ইসলাম (২৬-লস্কর), নড়াইল লোহাগড়া উপজেলার মো. সালাউদ্দিন (৪০-ইঞ্জিনচালক)। এছাড়া জাহাজের বাবুর্চি রানার (২০) ঠিকানা পাওয়া যায়নি।
** নিহতদের স্বজনদের দাবি এটি ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’
চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে জাহাজে নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। উর্পাজনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে দিশেহারা নিহতদের পরিবার-পরিজনেরা। নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবি, হত্যাকা-ে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি নৌ-পথের নিরাপত্তা বাড়াতে হবে।
নিহতদের মধ্যে দুইজনের বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়ায়। উপজেলার লাহুড়িয়া ইউনিয়নের এগারোনলি গ্রামের সালাউদ্দিন (৪৫) দীর্ঘ ২০ বছর জাহাজে চাকরি করেন। দীর্ঘ চাকরি জীবনে তিনি জাহাজের চালক ছিলেন। অভাবের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন তিনি। মা, স্ত্রী, এক সন্তান ও দুই মেয়ে নিয়ে তার সংসার। গত ১৪ ডিসেম্বর বাড়ি থেকে কাজে যান তিনি। সালাউদ্দিনের বড় মেয়ে ইতি খানম বলেন, বাবাই ছিল আমাদের সংসারের একমাত্র আয়ের ব্যক্তি। বাবাকে হারিয়ে আমরা দিশেহারা।
আরেক নিহত আমিনুর রহমান মুন্সীর (৪৮) বাড়িও লোহাগড়ার উত্তর লঙ্কারচর গ্রামে। সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি হিসেবে প্রায় ১২ বছর ধরে জাহাজে কাজ করেন তিনি। তার এক মেয়ে ও দুই ছেলে। গত ২০ ডিসেম্বর গ্রামের বাড়ি নড়াইল থেকে কাজে যান তিনি।
জাহাজের নিহত লস্কর শেখ সবুজের (৩৫) ছোট ভাই সাদিকুর রহমান বলেন, ‘জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়া আমার মামা। তার মাধ্যমেই আমার ছোট ভাই সবুজ কাজে আসেন। তিনি লস্কর হিসেবে কাজ করেন। গত একদিন আগে আমার সঙ্গে ভাইয়ের কথা হয়েছে। যে মর্মান্তিক ঘটনায় আমার ভাই হত্যার শিকার হয়েছে, আমি চাই এমন ধরণের ঘটনা যাতে না ঘটে। এই জাহাজে থাকা প্রত্যেকটি হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি। ঘটনাটি যাতে করে কেউ ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা না করে আমি এটিও দাবি করছি।’
একই ধরণের দাবি জানালেন, জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়ার ভাই আউয়াল হোসেন। তিনি বলেন, এই মাসেই আমার ভাইয়ের চাকরির মেয়াদ শেষ হত। তিনি ১ জানুয়ারি থেকে অবসরে যেতেন। উনার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ের জানুয়ারি মাসে বিয়ে হওয়ার কথা। কিন্তু এই ঘটনার পরে সব পকিল্পনাই শেষ।
নিহত আমিনুল মুন্সীর বড় ভাই মো. হুমায়ুন, ইঞ্জিন চালক সালাউদ্দিনের মামাত ভাই জাহাঙ্গীর বলেন, ঘটনাটি আমরা ডাকাতি শুনলেও খুনের ঘটনার দৃশ্য দেখে মনে হয়েছে এটি পরিকল্পিত হত্যা। কারণ প্রত্যেকটি নিহতের মাথায় ধারলো অস্ত্রের আঘাত। যারা খুন হয়েছেন সবারই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জাহাজে পাওয়া গেছে। এমনকি জাহাজে থাকা ৫ জনকে উদ্ধারের সময় তাদেরকে শোয়া অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
এমভি আল-বাখেরা নামের জাহাজে হত্যাকা-ের শিকার সাতজনের মধ্যে দু’জন হলেন গোলাম কিবরিয়া ও তার ভাগ্নে সবুজ শেখ। তাদের বাড়ি ফরিদপুর সদর উপজেলার গেরদা ইাউনিয়নের জোয়োইড় মোড় গ্রামে। গোলাম কিবরিয়া ওই জাহাজের মাস্টার ছিলেন। আর সবুজ জাহাজের লস্কর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
৪০ বছর ধরে জাহাজে চালক হিসেবে কাজ করেছেন গোলাম কিবরিয়া (৬৫)। বয়স বেড়ে যাওয়ায় কাজ ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবছিলেন তিনি। এ জন্য ভাগ্নে সবুজ শেখকে (২৫) নিয়ে যান জাহাজে। গোলাম কিবরিয়ার ইচ্ছা ছিল, সবুজকে কাজ শিখিয়ে জাহাজের হাল ধরানোর উপযুক্ত করে তুলবেন। মামার ডাকে ৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে গিয়ে জাহাজে ওঠেন সবুজ। ১৪ দিনের মাথায় দু’জনেরই জীবনপ্রদীপ নিভে গেছে নৃশংস এক হত্যাকা-ে।
চার ভাই এক বোনের মধ্যে গোলাম কিবরিয়া ছিলেন সবার বড়। তার একমাত্র বোন রাজিয়া বেগমের ছেলে সবুজ শেখ। বেশ কয়েকটি পেশায় কাজ করেও কোথাও স্থায়ী হতে পারেননি সবুজ। এ জন্য ভাগ্নেকে নিজের কাছে নিয়ে জাহাজ চালানোর প্রশিক্ষণ দিতে চেয়েছিলেন গোলাম কিবরিয়া। কান্নাজড়িত কণ্ঠে রাজিয়া বেগম বলেন, ‘কোনো কাজ করত না সবুজ। ভবঘুরের মতো জীবনযাপন করত। ভাই গোলাম কিবরিয়া বলে ‘তোর ছেলেকে আমার কাছে দে, কাজ শিকিয়ে জাহাজের হাল ধরিয়ে দেব।’ এ আশায় ১৪ দিন আগে চট্টগ্রামবন্দরে গিয়ে মামার সঙ্গে কাজে যোগ দেয় সবুজ। কিন্তু মামা ও ভাগ্নের যে এ পরিণতি হবে তা তো স্বপ্নেও ভাবিনি।’
* মেঘনার এই সাত খুনের ঘটনায় নড়ে চড়ে বসেছে প্রশাসন
এদিকে, সারবোঝাই এমভি আল-বাকেরা জাহাজ ক্রু সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা ও আহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। কমিটিকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তথ্য জানানো হয়েছে।
নৌ-পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘৮ জন নয়, সেখানে আমরা ৯ জন থাকার খবর পাচ্ছি। এরই মধ্যে আমাদের কাছে আরও নানা তথ্য আসছে। এটা প্রথমদিকে ডাকাতি মনে হলেও এখন এটা পরিকল্পিত হত্যাকা- ধরেই আমরা এগুচ্ছি। নৌ-পথে অস্থিরতা তৈরি করতেই এমনটি করা হয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের পর লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের করা হয়েছে।’
হাইমচর থানার ওসি মহিউদ্দিন সুমন বলেন, ‘ঘটনার পর নিহত সাত জনেরই ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর এবং একই সঙ্গে পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে।’
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, নিহত সাত পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে দেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন নেতা হারুনুর রশিদ বলেন, সেভেন মার্ডারের ঘটনায় জড়িতদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার, প্রত্যেককে ২০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ এবং সব জাহাজের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জোড় দাবি জানাচ্ছি।
বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে পণ্যবাহী জাহাজে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত সাত জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে চাঁদপুর শহরের স্বর্ণখোলা রোডে মর্গ থেকে এক এক করে মরদেহ নিয়া যান পরিবারের সদস্যরা। এ সময় স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে সেখানকার পরিবেশ। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান স্বজনরা।
হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু করেছে পুলিশ, নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড, সিআইডি ও প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। ধারণা করা হচ্ছে, নৌপথে অস্থিরতা তৈরি করতেই এ হত্যাকা-গুলো ঘটানো হতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।
২৩ ডিসেম্বর সোমবার সকালে চাঁদপুরের নৌ-সীমানার মেঘনা নদীতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মালবাহী লাইটার জাহাজ এমভি আল-বাখেরার সাত জনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় একজন ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। মঙ্গলবার রাতেই চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিহত সাত জনের মরদেহ নিয়ে আসা হয়। সকালে এক এক করে মর্গে পাঠানো হয় সাত মরদেহ।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত পরিবারের কাছে ২০ হাজার টাকার চেক ও নৌ-পুলিশের পক্ষ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা দেয়া হয়।
জাহাজে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহতরা হলেন- ফরিদপুর সদরের মো. কিবরিয়া (৫৬-মাস্টার), একই এলাকার শেখ সবুজ (৩৫-লস্কর), নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার আমিনুল মুন্সী (৪০- সুকানি), মাগুরা মোহাম্মদপুর উপজেলার মো. মাজেদুল (১৬-লস্কর), একই এলাকার সজিবুল ইসলাম (২৬-লস্কর), নড়াইল লোহাগড়া উপজেলার মো. সালাউদ্দিন (৪০-ইঞ্জিনচালক)। এছাড়া জাহাজের বাবুর্চি রানার (২০) ঠিকানা পাওয়া যায়নি।
** নিহতদের স্বজনদের দাবি এটি ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’
চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে জাহাজে নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। উর্পাজনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে দিশেহারা নিহতদের পরিবার-পরিজনেরা। নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবি, হত্যাকা-ে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি নৌ-পথের নিরাপত্তা বাড়াতে হবে।
নিহতদের মধ্যে দুইজনের বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়ায়। উপজেলার লাহুড়িয়া ইউনিয়নের এগারোনলি গ্রামের সালাউদ্দিন (৪৫) দীর্ঘ ২০ বছর জাহাজে চাকরি করেন। দীর্ঘ চাকরি জীবনে তিনি জাহাজের চালক ছিলেন। অভাবের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন তিনি। মা, স্ত্রী, এক সন্তান ও দুই মেয়ে নিয়ে তার সংসার। গত ১৪ ডিসেম্বর বাড়ি থেকে কাজে যান তিনি। সালাউদ্দিনের বড় মেয়ে ইতি খানম বলেন, বাবাই ছিল আমাদের সংসারের একমাত্র আয়ের ব্যক্তি। বাবাকে হারিয়ে আমরা দিশেহারা।
আরেক নিহত আমিনুর রহমান মুন্সীর (৪৮) বাড়িও লোহাগড়ার উত্তর লঙ্কারচর গ্রামে। সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি হিসেবে প্রায় ১২ বছর ধরে জাহাজে কাজ করেন তিনি। তার এক মেয়ে ও দুই ছেলে। গত ২০ ডিসেম্বর গ্রামের বাড়ি নড়াইল থেকে কাজে যান তিনি।
জাহাজের নিহত লস্কর শেখ সবুজের (৩৫) ছোট ভাই সাদিকুর রহমান বলেন, ‘জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়া আমার মামা। তার মাধ্যমেই আমার ছোট ভাই সবুজ কাজে আসেন। তিনি লস্কর হিসেবে কাজ করেন। গত একদিন আগে আমার সঙ্গে ভাইয়ের কথা হয়েছে। যে মর্মান্তিক ঘটনায় আমার ভাই হত্যার শিকার হয়েছে, আমি চাই এমন ধরণের ঘটনা যাতে না ঘটে। এই জাহাজে থাকা প্রত্যেকটি হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি। ঘটনাটি যাতে করে কেউ ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা না করে আমি এটিও দাবি করছি।’
একই ধরণের দাবি জানালেন, জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়ার ভাই আউয়াল হোসেন। তিনি বলেন, এই মাসেই আমার ভাইয়ের চাকরির মেয়াদ শেষ হত। তিনি ১ জানুয়ারি থেকে অবসরে যেতেন। উনার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ের জানুয়ারি মাসে বিয়ে হওয়ার কথা। কিন্তু এই ঘটনার পরে সব পকিল্পনাই শেষ।
নিহত আমিনুল মুন্সীর বড় ভাই মো. হুমায়ুন, ইঞ্জিন চালক সালাউদ্দিনের মামাত ভাই জাহাঙ্গীর বলেন, ঘটনাটি আমরা ডাকাতি শুনলেও খুনের ঘটনার দৃশ্য দেখে মনে হয়েছে এটি পরিকল্পিত হত্যা। কারণ প্রত্যেকটি নিহতের মাথায় ধারলো অস্ত্রের আঘাত। যারা খুন হয়েছেন সবারই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জাহাজে পাওয়া গেছে। এমনকি জাহাজে থাকা ৫ জনকে উদ্ধারের সময় তাদেরকে শোয়া অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
এমভি আল-বাখেরা নামের জাহাজে হত্যাকা-ের শিকার সাতজনের মধ্যে দু’জন হলেন গোলাম কিবরিয়া ও তার ভাগ্নে সবুজ শেখ। তাদের বাড়ি ফরিদপুর সদর উপজেলার গেরদা ইাউনিয়নের জোয়োইড় মোড় গ্রামে। গোলাম কিবরিয়া ওই জাহাজের মাস্টার ছিলেন। আর সবুজ জাহাজের লস্কর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
৪০ বছর ধরে জাহাজে চালক হিসেবে কাজ করেছেন গোলাম কিবরিয়া (৬৫)। বয়স বেড়ে যাওয়ায় কাজ ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবছিলেন তিনি। এ জন্য ভাগ্নে সবুজ শেখকে (২৫) নিয়ে যান জাহাজে। গোলাম কিবরিয়ার ইচ্ছা ছিল, সবুজকে কাজ শিখিয়ে জাহাজের হাল ধরানোর উপযুক্ত করে তুলবেন। মামার ডাকে ৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে গিয়ে জাহাজে ওঠেন সবুজ। ১৪ দিনের মাথায় দু’জনেরই জীবনপ্রদীপ নিভে গেছে নৃশংস এক হত্যাকা-ে।
চার ভাই এক বোনের মধ্যে গোলাম কিবরিয়া ছিলেন সবার বড়। তার একমাত্র বোন রাজিয়া বেগমের ছেলে সবুজ শেখ। বেশ কয়েকটি পেশায় কাজ করেও কোথাও স্থায়ী হতে পারেননি সবুজ। এ জন্য ভাগ্নেকে নিজের কাছে নিয়ে জাহাজ চালানোর প্রশিক্ষণ দিতে চেয়েছিলেন গোলাম কিবরিয়া। কান্নাজড়িত কণ্ঠে রাজিয়া বেগম বলেন, ‘কোনো কাজ করত না সবুজ। ভবঘুরের মতো জীবনযাপন করত। ভাই গোলাম কিবরিয়া বলে ‘তোর ছেলেকে আমার কাছে দে, কাজ শিকিয়ে জাহাজের হাল ধরিয়ে দেব।’ এ আশায় ১৪ দিন আগে চট্টগ্রামবন্দরে গিয়ে মামার সঙ্গে কাজে যোগ দেয় সবুজ। কিন্তু মামা ও ভাগ্নের যে এ পরিণতি হবে তা তো স্বপ্নেও ভাবিনি।’
* মেঘনার এই সাত খুনের ঘটনায় নড়ে চড়ে বসেছে প্রশাসন
এদিকে, সারবোঝাই এমভি আল-বাকেরা জাহাজ ক্রু সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা ও আহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। কমিটিকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তথ্য জানানো হয়েছে।
নৌ-পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘৮ জন নয়, সেখানে আমরা ৯ জন থাকার খবর পাচ্ছি। এরই মধ্যে আমাদের কাছে আরও নানা তথ্য আসছে। এটা প্রথমদিকে ডাকাতি মনে হলেও এখন এটা পরিকল্পিত হত্যাকা- ধরেই আমরা এগুচ্ছি। নৌ-পথে অস্থিরতা তৈরি করতেই এমনটি করা হয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের পর লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের করা হয়েছে।’
হাইমচর থানার ওসি মহিউদ্দিন সুমন বলেন, ‘ঘটনার পর নিহত সাত জনেরই ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর এবং একই সঙ্গে পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে।’
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, নিহত সাত পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে দেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন নেতা হারুনুর রশিদ বলেন, সেভেন মার্ডারের ঘটনায় জড়িতদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার, প্রত্যেককে ২০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ এবং সব জাহাজের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জোড় দাবি জানাচ্ছি।