মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে ভারতের কাছে যে চিঠি পাঠানো হয়েছে তার জবাবের অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশ। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) পর্যন্ত ভারত সে চিঠির কোনো জবাব দেয়নি। তবে বাংলাদেশ পাঠানো চিঠি নিয়ে ভারত সরকারের জবাবের জন্য অপেক্ষা করবে। চিঠির জবাব পেলে তার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে সরকার।
মঙ্গলবার বিকেলে সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম।
শেখ হাসিনার অবস্থান সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারকে এখন পর্যন্ত ভারত সরকার কিছু জানায়নি বলেও জানান তিনি।
২৩ ডিমেম্বর সোমবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে ভারতের কাছে বাংলাদেশ চিঠি পাঠিয়েছে। তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বিচারের সম্মুখীন করার জন্য বাংলাদেশ ফেরত চেয়েছে। এটা ভারতকে জানানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে ভারতকে নোট ভারবাল পাঠানো হয়েছে।’
এর আগে ‘প্রচলিত আইনগত প্রক্রিয়া শেষে’ শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরত আনার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিক পত্র দেয়া হয়েছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে ভারতের কাছে বাংলাদেশ চিঠি পাঠানোর পর এখন কি প্রক্রিয়া অনুসরণ করবে বাংলাদেশ তা নিয়ে মঙ্গলবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে কথা বলেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম।
তিনি জানান, শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয়ার পর ভারত সরকারের উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিছুদিন অপেক্ষা করে এ ব্যাপারে ভারতের জবাব না পাওয়া গেলে ভারতকে ‘তাগিদপত্র’ দেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, গতকালকে (সোমবার) এই কূটনৈতিক পত্র হস্তান্তর করা হয়েছে। এবং এখন পর্যন্ত আমাদের জানামতে, সরকারি চ্যানেলে আমরা কোনো উত্তর পাইনি। এই মুহূর্তে এটা নিয়ে কোনো মন্তব্য আমরা করব না। বরঞ্চ, আমরা অপেক্ষা করব, ভারত সরকারের উত্তরের জন্য। সেই উত্তরের উপরে ভিত্তি করে বাংলাদেশ সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারিত হবে।’
গত ৫ আগস্ট তীব্র গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন। ভারতে অবস্থান করে শেখ হাসিনা রাজনৈতিক বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিষোধগার করছেন বলে বাংলাদেশের একাধিক উপদেষ্টা অভিযোগ করেছেন।
শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করার পর জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো দমন পীড়নকে ‘গণহত্যা’ বিবেচনা করে এ আদালতে বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে সারাদেশে ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অনেক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন অফিসে জমা পড়েছে। জমা পড়া অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনাসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ১৭ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুনানী শেষে শেখ হাসিনাসহ আসামিদের ১৮ নভেম্বরের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
এ প্রেক্ষাপটে প্রায় তিনশ’ মামলায় শেখ হাসিনার বিচার চলার মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে সোমবার ভারত সরকারকে ‘কূটনৈতিকপত্র’ পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
দিল্লিতে হাইকমিশনের মাধ্যমে কূটনৈতিকপত্র পাওয়ার বিষয়টি সোমবার সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল।
নিয়মিত ব্রিফিংয়ে রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘একটি প্রত্যর্পণ অনুরোধের বিষয়ে আমরা বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে কূটনৈতিকপত্র (নোট ভারবাল) পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করছি। এই মুহূর্তে এ বিষয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই।’
মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিকপত্রের উত্তর পেতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কতদিন অপেক্ষা করবে এবং উত্তর যদি না পায় তাহলে পররবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, এমন প্রশ্ন করা হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রফিকুল আলমকে।
উত্তরে তিনি বলেন, ‘সরাসরি এটার উত্তর দেয়া কঠিন হবে। কারণ আপনারা যদি প্রত্যর্পণ চুক্তিটা দেখেন, আমি যতটুকু মনে করতে পারি, এখানে কোনো টাইম লিমিট মেনশন করা নাই। সুতরাং এটার উত্তর পাওয়ার জন্য, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে উত্তর আসার জন্য আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে। আমরা একটা সময় পর্যন্ত নিশ্চয়ই দেখব, যে কোনো জিনিসের উত্তর দেয়ার একটা স্বাভাবিক সময় আছে। যদি সেই সময়ের মধ্যে উত্তর না আসে, তাহলে এটার একটা তাগিদপত্র দেয়া হবে। আবার জানানো হবে যে, আমরা এটার উত্তর প্রত্যাশা করছি। কিন্তু এখন যে পর্যায়ে, গতকালকে মাত্র দেয়া হয়েছে, এর পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, এটা এখনই বলা মুশকিল।’
এ সময় প্রশ্ন করা হয়, যে ‘স্বাভাবিক সময়ের’ কথা বলা হচ্ছে, তা কতদিনের,- এমন প্রশ্নে মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, নির্দিষ্ট ঘটনা ও প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এই সময় বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, ‘এটার সরাসরি কোনো উত্তর নাই। এটা নির্ভর করে বিষয়ের উপরে। আপনি যদি কোনো একটা চুক্তি নেগোশিয়েট করেন, সেই চুক্তির জন্য বিভিন্ন উত্তর, প্রতিউত্তর বিভিন্ন পর্যায়ে হতে থাকে। এটা বছর পার হয়ে যায়, অনেক বছর পার হয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘আবার অন্য কোনো একটা বিষয়, ধরেন কোনো কনস্যুলার অ্যাক্সেসের জন্য অনুরোধ করেন, সেটারও তো একটা সময়সীমা আছে। আপনি যদি ৫ দিন বা ৭ দিনের মধ্যে এই অনুরোধটা গ্রহণ না করে কিংবা এটা যদি আমি কমিউনিকেট না করি, তাহলে তো খুব বেশি গুরুত্ব থাকে না।’
শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়কে ‘সংবেদনশীল’ হিসেবে তুলে ধরে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘প্রত্যেকটা বিষয়ের ওপরে ভিত্তি করে সেটার স্বাভাবিক সময় নির্ধারিত হয়। আপনারা নিশ্চয়ই অনুধাবন করছেন যে, আমি যে বিষয়টা নিয়ে কথা বলছি, সেটা অত্যন্ত সংবেদনশীল একটা বিষয়।
তিনি বলেন, ‘এই সংবেদনশীল সময়ের স্বাভাবিক বিষয় কী, সেটা নির্দিষ্ট করা বা কোনো ধরনের ব্যাখ্যা করার কোনো সুযোগ নাই। এটা যতটুকু সময় দুদেশের সরকার মনে করবে যে, হতে পারে, তারা সেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে। এই মুহূর্তে এটা নিয়ে আমাদের অনুমান করা ঠিক হবে না।’
কোনো দেশ ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানালেও সেটা অগ্রাহ্য হওয়ার নজির আছে কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হচ্ছে কূটনৈতিক চ্যানেল। কিন্তু প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে ভারতের ফোকাল পয়েন্ট হচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আমাদের কাছে এখন তাৎক্ষণিকভাবে এটার তথ্য নাই। তারপরে আমরা হয়ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চেক করে দেখতে পারি, এ ধরনের কোনো রেফারেন্স আছে কিনা। সেটা পরে আমরা জানাতে পারব।
শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়ার অংশ কি না, এমন প্রশ্নে রফিকুল আলম বলেন, ‘অনুরোধপত্র পুরো প্রক্রিয়ারই অংশ। নোট ভারবাল ফেরত প্রক্রিয়ার একটা অংশ। কারণ চুক্তিমতে এটা কূটনৈতিক চ্যানেলে অনুরোধটা করতে হবে। সেই অংশটাই হল এটা। কূটনৈতিক চ্যানেলে অনুরোধ করেছি।’
ভারতে শেখ হাসিনার ‘স্ট্যাটাস’ সম্পর্কে দেশটির সরকার কিছু জানিয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে বিগত সময়ে গণমাধ্যম থেকে আমরা প্রশ্ন পেয়েছি। এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র সচিব বিভিন্ন সময়ে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। এটা নিয়ে আমার এখানে কথা বলার সুযোগ নাই।’
ভারতে অবস্থান করে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আগের বক্তব্যের উদ্ধৃতি টানেন মুখপাত্র। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার এই ধরনের বক্তব্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে ‘ভালোভাবে নিচ্ছে না’, এটা ভারত সরকারকে জানানো হয়েছে।
বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে ভারতের কাছে যে চিঠি পাঠানো হয়েছে তার জবাবের অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশ। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) পর্যন্ত ভারত সে চিঠির কোনো জবাব দেয়নি। তবে বাংলাদেশ পাঠানো চিঠি নিয়ে ভারত সরকারের জবাবের জন্য অপেক্ষা করবে। চিঠির জবাব পেলে তার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে সরকার।
মঙ্গলবার বিকেলে সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম।
শেখ হাসিনার অবস্থান সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারকে এখন পর্যন্ত ভারত সরকার কিছু জানায়নি বলেও জানান তিনি।
২৩ ডিমেম্বর সোমবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে ভারতের কাছে বাংলাদেশ চিঠি পাঠিয়েছে। তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বিচারের সম্মুখীন করার জন্য বাংলাদেশ ফেরত চেয়েছে। এটা ভারতকে জানানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে ভারতকে নোট ভারবাল পাঠানো হয়েছে।’
এর আগে ‘প্রচলিত আইনগত প্রক্রিয়া শেষে’ শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরত আনার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিক পত্র দেয়া হয়েছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে ভারতের কাছে বাংলাদেশ চিঠি পাঠানোর পর এখন কি প্রক্রিয়া অনুসরণ করবে বাংলাদেশ তা নিয়ে মঙ্গলবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে কথা বলেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম।
তিনি জানান, শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয়ার পর ভারত সরকারের উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিছুদিন অপেক্ষা করে এ ব্যাপারে ভারতের জবাব না পাওয়া গেলে ভারতকে ‘তাগিদপত্র’ দেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, গতকালকে (সোমবার) এই কূটনৈতিক পত্র হস্তান্তর করা হয়েছে। এবং এখন পর্যন্ত আমাদের জানামতে, সরকারি চ্যানেলে আমরা কোনো উত্তর পাইনি। এই মুহূর্তে এটা নিয়ে কোনো মন্তব্য আমরা করব না। বরঞ্চ, আমরা অপেক্ষা করব, ভারত সরকারের উত্তরের জন্য। সেই উত্তরের উপরে ভিত্তি করে বাংলাদেশ সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারিত হবে।’
গত ৫ আগস্ট তীব্র গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন। ভারতে অবস্থান করে শেখ হাসিনা রাজনৈতিক বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিষোধগার করছেন বলে বাংলাদেশের একাধিক উপদেষ্টা অভিযোগ করেছেন।
শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করার পর জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো দমন পীড়নকে ‘গণহত্যা’ বিবেচনা করে এ আদালতে বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে সারাদেশে ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অনেক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন অফিসে জমা পড়েছে। জমা পড়া অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনাসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ১৭ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুনানী শেষে শেখ হাসিনাসহ আসামিদের ১৮ নভেম্বরের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
এ প্রেক্ষাপটে প্রায় তিনশ’ মামলায় শেখ হাসিনার বিচার চলার মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে সোমবার ভারত সরকারকে ‘কূটনৈতিকপত্র’ পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
দিল্লিতে হাইকমিশনের মাধ্যমে কূটনৈতিকপত্র পাওয়ার বিষয়টি সোমবার সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল।
নিয়মিত ব্রিফিংয়ে রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘একটি প্রত্যর্পণ অনুরোধের বিষয়ে আমরা বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে কূটনৈতিকপত্র (নোট ভারবাল) পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করছি। এই মুহূর্তে এ বিষয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই।’
মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিকপত্রের উত্তর পেতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কতদিন অপেক্ষা করবে এবং উত্তর যদি না পায় তাহলে পররবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, এমন প্রশ্ন করা হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রফিকুল আলমকে।
উত্তরে তিনি বলেন, ‘সরাসরি এটার উত্তর দেয়া কঠিন হবে। কারণ আপনারা যদি প্রত্যর্পণ চুক্তিটা দেখেন, আমি যতটুকু মনে করতে পারি, এখানে কোনো টাইম লিমিট মেনশন করা নাই। সুতরাং এটার উত্তর পাওয়ার জন্য, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে উত্তর আসার জন্য আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে। আমরা একটা সময় পর্যন্ত নিশ্চয়ই দেখব, যে কোনো জিনিসের উত্তর দেয়ার একটা স্বাভাবিক সময় আছে। যদি সেই সময়ের মধ্যে উত্তর না আসে, তাহলে এটার একটা তাগিদপত্র দেয়া হবে। আবার জানানো হবে যে, আমরা এটার উত্তর প্রত্যাশা করছি। কিন্তু এখন যে পর্যায়ে, গতকালকে মাত্র দেয়া হয়েছে, এর পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, এটা এখনই বলা মুশকিল।’
এ সময় প্রশ্ন করা হয়, যে ‘স্বাভাবিক সময়ের’ কথা বলা হচ্ছে, তা কতদিনের,- এমন প্রশ্নে মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, নির্দিষ্ট ঘটনা ও প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এই সময় বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, ‘এটার সরাসরি কোনো উত্তর নাই। এটা নির্ভর করে বিষয়ের উপরে। আপনি যদি কোনো একটা চুক্তি নেগোশিয়েট করেন, সেই চুক্তির জন্য বিভিন্ন উত্তর, প্রতিউত্তর বিভিন্ন পর্যায়ে হতে থাকে। এটা বছর পার হয়ে যায়, অনেক বছর পার হয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘আবার অন্য কোনো একটা বিষয়, ধরেন কোনো কনস্যুলার অ্যাক্সেসের জন্য অনুরোধ করেন, সেটারও তো একটা সময়সীমা আছে। আপনি যদি ৫ দিন বা ৭ দিনের মধ্যে এই অনুরোধটা গ্রহণ না করে কিংবা এটা যদি আমি কমিউনিকেট না করি, তাহলে তো খুব বেশি গুরুত্ব থাকে না।’
শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়কে ‘সংবেদনশীল’ হিসেবে তুলে ধরে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘প্রত্যেকটা বিষয়ের ওপরে ভিত্তি করে সেটার স্বাভাবিক সময় নির্ধারিত হয়। আপনারা নিশ্চয়ই অনুধাবন করছেন যে, আমি যে বিষয়টা নিয়ে কথা বলছি, সেটা অত্যন্ত সংবেদনশীল একটা বিষয়।
তিনি বলেন, ‘এই সংবেদনশীল সময়ের স্বাভাবিক বিষয় কী, সেটা নির্দিষ্ট করা বা কোনো ধরনের ব্যাখ্যা করার কোনো সুযোগ নাই। এটা যতটুকু সময় দুদেশের সরকার মনে করবে যে, হতে পারে, তারা সেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে। এই মুহূর্তে এটা নিয়ে আমাদের অনুমান করা ঠিক হবে না।’
কোনো দেশ ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানালেও সেটা অগ্রাহ্য হওয়ার নজির আছে কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হচ্ছে কূটনৈতিক চ্যানেল। কিন্তু প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে ভারতের ফোকাল পয়েন্ট হচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আমাদের কাছে এখন তাৎক্ষণিকভাবে এটার তথ্য নাই। তারপরে আমরা হয়ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চেক করে দেখতে পারি, এ ধরনের কোনো রেফারেন্স আছে কিনা। সেটা পরে আমরা জানাতে পারব।
শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়ার অংশ কি না, এমন প্রশ্নে রফিকুল আলম বলেন, ‘অনুরোধপত্র পুরো প্রক্রিয়ারই অংশ। নোট ভারবাল ফেরত প্রক্রিয়ার একটা অংশ। কারণ চুক্তিমতে এটা কূটনৈতিক চ্যানেলে অনুরোধটা করতে হবে। সেই অংশটাই হল এটা। কূটনৈতিক চ্যানেলে অনুরোধ করেছি।’
ভারতে শেখ হাসিনার ‘স্ট্যাটাস’ সম্পর্কে দেশটির সরকার কিছু জানিয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে বিগত সময়ে গণমাধ্যম থেকে আমরা প্রশ্ন পেয়েছি। এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র সচিব বিভিন্ন সময়ে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। এটা নিয়ে আমার এখানে কথা বলার সুযোগ নাই।’
ভারতে অবস্থান করে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আগের বক্তব্যের উদ্ধৃতি টানেন মুখপাত্র। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার এই ধরনের বক্তব্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে ‘ভালোভাবে নিচ্ছে না’, এটা ভারত সরকারকে জানানো হয়েছে।