alt

জাতীয়

বিডিআরে বিদ্রোহ নয়, ‘ওটা সেনা হত্যার ষড়যন্ত্র’: তদন্ত কমিশন প্রধান

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২৫

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত নতুন তদন্ত কমিশনের প্রধান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান মনে করছেন, ২০০৯ সালের ওই সময়ে বিডিআরে কোনো বিদ্রোহ হয়নি, ওটা ছিল সেনা কর্মকর্তাদের ‘হত্যার একটি ষড়যন্ত্র’। রাজধানীর পিলখানায় তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের সদরদপ্তরে দুইদিন ধরে সংঘটিত ওই ঘটনাকে ‘পলাশীর যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি’ হিসেবেও বর্ণনা করেন বিডিআরের সাবেক এই মহাপরিচালক, যাকে সপ্তাহ দুয়েক আগে তদন্ত কমিশনের প্রধান করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

৬ জানুয়ারি সোমবার রাজধানীতে অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্যদের উপস্থিতিতে এক আলোচনায় তিনি বলেন, ‘আমাদের আর্মি ঠাঁই দাঁড়িয়ে ছিল আর দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা মিলে এই হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে গেছে।’ ক্ষমতার পালাবদলের পর আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দেশ-বিদেশে আলোড়ন তৈরি করা ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহতের ওই ঘটনায় পুনঃতদন্তের জোরালো দাবির মধ্যে গত ২৩ ডিসেম্বর সাত সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়।

তিন মাসের জন্য সময়ে বেঁধে দেয়া হয়েছে তাদেরকে। এখনও ঠিকমতো তদন্তের কাজ শুরু করতে পারেনি কমিশন, দপ্তর ও যানবাহনও বরাদ্দ হয়নি। গত সোমবার রাজধানীর মহাখালীতে রাওয়া কমপ্লেক্সে বিডিআর হত্যাকাণ্ডে নিহত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন কমিশনের প্রধান ফজলুর রহমান, যিনি ২০০০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০০১ সালের ১১ জুলাই পর্যন্ত বিজিবির প্রধান ছিলেন।

২০০১ সালের এপ্রিলে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী সীমান্তে বিএসএফের সঙ্গে বিজিবির সংঘাতের ঘটনার পর ওই বছর ১১ জুলাই বিজিবি মহাপরিচালক থেকে সরিয়ে তাকে সেনাবাহিনীতে ফেরত নেয়া হয়। এরপর বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় ২০০২ সালের ১৭ মার্চ তাকে আগাম অবসরে পাঠানো হয়।

মতবিনিময় সভায় সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সংগঠন রাওয়ার প্রতিনিধি, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় নিহত কর্মকর্তাদের স্বজন, পিলখানা থেকে বেঁচে ফেরা কর্মকর্তা ও সেই সময় সেনাবাহিনীতে কর্মরত ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় অংশ নেয়া ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে অনেকেই প্রথমে কথা বলেন। তারপর তাদের কিছু প্রশ্নের উত্তর দেন স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রধান ফজলুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘ইট ওয়াজ নট আ মিউটিনি। ইট ওয়াজ আ কন্সপিরেসি কিলিং দ্যা অফিসার্স। এর দ্বারা বিডিআরকে দুর্বল করা হয়েছে, তার নাম বদল করে দেয়া হয়েছে। আর্মিকে দুর্বল করা হয়েছে, দেশকে দুর্বল করা হয়েছে। ‘এখানে অনেকে বলেছেন, ভারত জড়িত। আমাদের মধ্যে অনেকের মতামত থাকতে পারে। নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে আমি একটা কথা বলতে চাই। শুধু ভারত জড়িত বললে হবে না, অমুক জেনারেল জড়িত বললে হবে না। তার স্বপক্ষে প্রমাণ হাজির করতে হবে। যত ছোটই হোক বা বড় হোক, গুরুত্বপূর্ণ নাই হোক- আপনারা প্রমাণ দেন। এটার ওপর নির্ভর করবে অনেক কিছু।’

কমিশন প্রধান অবসরপ্রাপ্ত এই সেনা কর্মকর্তা বলেন,‘আমরা খুব শিগগির একটি ওয়েবসাইট খুলব, যেখানে দালিলিক প্রমান তথ্য উপাত্ত চাইব। এরই মধ্যে বিভিন্নভাবে অনেক সাড়া পাওয়া গেছে। আমরা গোপন করব না।’ বিডিআর হত্যাকা- নিয়ে বিস্ফোরকে আইনে করা একটি মামলা এখনও চলমান থাকার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে মামলা চলমান, তাদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের বিষয়ে তদন্ত কমিশন কী করতে পারে সে বিষয়টি নিয়েও আমরা কথা বলব।’

পদুয়া-রৌমারী যুদ্ধে তিনি কমান্ডার থাকাবস্থায় ‘ভারত পরাজিত’ দাবি করে ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমি মনে করি তখন থেকে বিডিআর বিদ্রোহের পরিকল্পনা শুরু হয়েছে।’ অবসরপ্রাপ্ত এই সেনা কর্মকর্তাকে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর হত্যাযজ্ঞের পর এ নিয়ে বিভিন্ন ফোরামে সরব হতে দেখা যায়। শেখ হাসিনার সরকারের ওই সময়ে টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে আয়োজিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে তাকে অংশ নিতে দেখা যেত তাকে।

বিডিআর হত্যাকা-ের সময় সদরদপ্তরে বাহিনীর সাবেক মহাপরিচালক হিসেবে উপস্থিত থাকার স্মৃতিচারণ করে কমিশন প্রধান ফজলুর বলেন, ‘এই যে নারকীয় ঘটনা ঘটে গেল সেদিন বিডিআর’র প্যারেডে দাওয়াতে আমি উপস্থিত ছিলাম (সাবেক) ডিজি হিসেবে। পাদুয়া-রৌমারীর যুদ্ধের পরে বিডিআরে গেলে গেটে থাকা সদস্যরা গাড়িতে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। যেন গাড়ির কাঁচ ভেঙে ফেলবে। কিন্তু সেদিন কেউ এল না, সব ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। গিয়ে দেখলাম উত্তরের গ্যালারিতে যেখানে হাজার দুয়েকের মতো সৈনিক বসে, সেখানে বসেছে মাত্র ১শ’ বা ২শ’।

‘ওদিন ছিল লাঞ্চের পরে এক্স ডিজিরা ভিভিআইপি রুমে থাকবেন। বিকেলে চা খেয়ে ফিরে আসবেন। তবে আমি তখনই ফিরে এসে আমার স্ত্রীকে বললাম আমার সেখানে ভালো লাগল না। কেমন যেন আমার মনে হচ্ছে। যাই হোক পরে তো এই ঘটনা ঘটল।’ এ ঘটনায় তাকে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে তুলে ধরার বর্ণনা দিয়ে ফজলুর রহমান বলেন, ‘পাঁচ তারিখে সৌরভ শুক্লা নামের ভারতের এক ব্যক্তি ইন্ডিয়া টুডেতে লিখল পাকিস্তানের আইএসআই সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীর মাধ্যমে জেনারেল ফজলুর রহমানকে ৪০ কোটি টাকা দিয়েছেন। এবং আমি সেই টাকা ৪০০ বিডিআর সদস্যদের মাঝে বিতরণ করেছি। প্রায় ১শ’র মতো ডিএডি এবং জেসিওকে আমি এক কোটি করে টাকা দিয়েছি। সেটা জনকণ্ঠে পাবলিশ হলো, সিএনএফ এ পাবলিশ হলো।

‘শেখ হাসিনা আর তোফায়েল এটা নিয়ে পার্লামেন্টে কথা বললেন। শেখ হাসিনা সেই পেপারটা হাতে সংসদে দাঁড়িয়ে বললেন জেনারেল ফজলুর রহমান আমাকে খুন করতে চেয়েছিলেন। আমি সেই ব্যক্তি। আমার জীবনের ওপরও আঘাত এসেছিল।’

কমিশনপ্রধান বলেন, ‘ষড়যন্ত্র যাই হোক, মনে করেন এটার সঙ্গে ওই সময়কার সরকার জড়িত, ভারত জড়িত, ওখানকার কিছু ষড়যন্ত্রকারী, বাংলাদেশের কিছু রাজনীতিবিদ জড়িত। সব আমি বুঝলাম জড়িত। কিন্তু সেদিন যদি সেনাবাহিনী সেখানে যেত তাহলে কী হত্যাকা- হত? এই হত্যাকা- হত না। ‘পলাশীর পুনরাবৃত্তি হয়েছে সেখানে। আমরা পড়েছিলাম ১৭৫৭ সালে পলাশীর মাঠে কী করে সৈন্যরা দাঁড়িয়েছিল আর লর্ড ক্লাইভের বাহিনী এসে আমাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। তার চেয়েও জঘন্য, হৃদয় বিদারক ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেছে ২০০৯ সালে।’

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের আর্মি ঠাঁই দাঁড়িয়ে ছিল আর দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা মিলে এই হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে গেছে। আমি মনে করি না এটা বিডিআর বিদ্রোহ ছিল। আমি মনে করি না যে, কোনো দাবি আদায়ের জন্য সৈনিকরা নির্মমভাবে আমাদের অফিসারদেরকে নিহত করতে পারে। আমরা জানবার চেষ্টা করছি, কে কখন বিডিআরে ওই সময় পোস্টিং হয়েছিল। একজন অফিসার সাত দিন আগে, ১০ দিন আগে, এক মাস আগে সেখানে পোস্টিং পেয়ে গিয়ে কী এমন অপরাধ করতে পারে যে তাকে মেরে ফেলতে হবে।’

দেড় দশক আগের এ ঘটনার আগের তদন্ত প্রতিবেদনগুলো চেয়ে পাঠানোর কথা তুলে ধরে বিডিআরের সাবেক এই ডিজি বলেন,‘এটা একটা বিশাল তদন্তের বিষয়। আমাদের যতদূর যাওয়া প্রয়োজন আমি যাব। জেনারেল জাহাঙ্গীর একটা তদন্ত করেছেন, আনিসুজ্জামান নামের একজন সচিবের নেতৃত্বে তদন্ত হয়েছিল। আমরা সেগুলো রিকল করেছি। সেগুলো আমরা পড়ব। আমরা যদি সব সৈনিককে নিয়ে আসতে চাই এটা ছয় বছরেও শেষ হবে না।’

কেউ তদন্তের বাইরে থাকবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘পদুয়ার রৌমারী যুদ্ধে আমি ছিলাম কমান্ডার। যেখানে ভারত পরাজিত হয়। আমার সাড়ে চার বছর চাকরি থাকা অবস্থায় চাকরিচ্যুত করা হয়। কোন সরকার করেছিল সেটা আমি বলতে চাই না। ‘আমাদের দৃষ্টি প্রসারিত করতে হবে। পাদুয়া-রৌমারী যুদ্ধে ভারতকে হারানোর জন্য যে সরকার আমাকে চাকরিচ্যুত করেছিল সে আওয়ামী লীগ সরকার নয়। আওয়ামী লীগ সরকার আমাকে পদচ্যুত করেছিল। আমি ডিজি বিডিআর ছিলাম, আমাকে ইলেভেন ডিভিশনের জিওসি করা হয়েছিল। তারপরই আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। কাজেই তদন্তের বাইরে কেউ থাকবে না।’

কমিশনপ্রধান বলেন, ‘আমরা প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ প্রার্থনা করেছি। এখনও আমরা অফিস পাইনি। আগামীকাল খুব সম্ভব আমরা বিজিবি হেডকোয়ার্টার্সে অফিস করব। ডিজি বিজিবি একটা গাড়ি দিয়েছেন। সেখান থেকে যদি তার সাক্ষাতের জন্য যেতে পারি খুব ভাগ্যবান মনে করব। সেখান থেকে অফিস পরিদর্শন করব। পরশু থেকে যেন কাজ শুরু করতে পারি। এরপর আমরা সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাত করব।

শেখ হাসিনাকে ফেরত আনার চিঠির জবাব মেলেনি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

বিসিসির ৫ পদের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত

ছবি

সচিবালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন: তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন

ছবি

শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়াল ভারত, ফেরত চেয়েছে বাংলাদেশ

ছবি

জওয়ানদের মুক্তির দাবিতে যমুনায় পদযাত্রা, শাহবাগে পুলিশের বাধা

ছবি

কুয়াশা ও শীতল হাওয়ার দাপট, শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা কাল থেকে

ছবি

ইউনূস-শফিক ‘একান্ত’ বৈঠকে ‘সংস্কার ও জাতীয় ঐকমত্য’ নিয়ে আলোচনা

ছবি

চালের বাজারে অস্থিরতার কারণ জানালেন বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

মোবাইলে ১০০ টাকা রিচার্জে ৪৪ টাকা ব্যবহার করতে পারবেন গ্রাহক

ছবি

নোট-গাইডের বিরুদ্ধে ‘কঠোর অবস্থানে’ সরকার: এনসিটিবি চেয়ারম্যান

ছবি

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নির্মাণাধীন আবাসিক প্রকল্পে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট

ছবি

সাড়ে সাত বছর পর মা ও ছেলে

ছবি

বিআরটিএর অভিযানে ৫৪ লক্ষ ৬১ হাজার টাকা জরিমানা

ছবি

চালের বাজার সহনীয় রাখতে প্রয়োজনে বিশেষ ওএমএস: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থানে হতাহতদের সরকারি সহায়তা আগামী সপ্তাহ থেকে

ছবি

অন্তর্বর্তী সরকারের ৯ ও নিজেদের ৫ অগ্রাধিকারের কথা জানালেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম

ছবি

বাংলাদেশে ভূমিকম্প অনুভূত

‘জুলাই ঘোষণাপত্র’: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির গণসংযোগ শুরু

ছবি

বিমানবন্দর থেকে সরাসরি ‘লন্ডন ক্লিনিকে’ নেয়া হবে খালেদা জিয়াকে

ছবি

ফেলানী হত্যার ১৪ বছর আজ: এখনও বিচারের আশায় বাবা-মা

ছবি

‘হঠাৎ বন্ধ’ রামপাল, উৎপাদনে ফিরেছে পায়রা

বঙ্গবন্ধু মেডিকেল ভার্সিটির ডাক্তারসহ ১৫ জনকে বরখাস্ত

আন্তঃক্যাডার ‘দ্বন্দ্ব’ প্রকট, দাবি না মানলে কঠোর হুমকি ২৫ ক্যাডারের

ছবি

অভিযানের সময় পোশাক পরতে হবে, পরিচয়পত্র দেখাতে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

নবম ও দশম শ্রেণীর বইয়ে আবু সাঈদের মৃত্যু তারিখ ভুল!

ছবি

সেনাবাহিনী জাতির অহংকার ও বিশ্বাসের জায়গা : প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

অভিনেতা প্রবীর মিত্র মারা গেছেন

‘মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত ও মীমাংসিত’ বিষয়গুলো ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ হলে দেশ বাধাগ্রস্ত হবে: ড. কামাল

ছবি

‘জুলাই ঘোষণাপত্র’, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার তারিখ ঠিক হয়নি: প্রেস সচিব

ছবি

খালেদা জিয়া লন্ডন যাচ্ছেন মঙ্গলবার

ছবি

অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করায় হামলার শিকার গণঅধিকার পরিষদ নেতা

ছবি

নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে, ব্রিটিশ এমপিকে ইউনূস

ছবি

নতুন “ডিজিটাল সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৪” মানবাধিকার লঙ্ঘনের নতুন হাতিয়ার

ছবি

৪৩তম বিসিএস: রাজনৈতিক পরিচয়ে চাকরি থেকে বঞ্চিত হবে কেন?

ছবি

প্রবীণ শ্রমিক নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা সহিদুল্লাহ চৌধুরীকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন

ছবি

পাঁচ দিনের মধ্যে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির আভাস

tab

জাতীয়

বিডিআরে বিদ্রোহ নয়, ‘ওটা সেনা হত্যার ষড়যন্ত্র’: তদন্ত কমিশন প্রধান

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২৫

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত নতুন তদন্ত কমিশনের প্রধান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান মনে করছেন, ২০০৯ সালের ওই সময়ে বিডিআরে কোনো বিদ্রোহ হয়নি, ওটা ছিল সেনা কর্মকর্তাদের ‘হত্যার একটি ষড়যন্ত্র’। রাজধানীর পিলখানায় তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের সদরদপ্তরে দুইদিন ধরে সংঘটিত ওই ঘটনাকে ‘পলাশীর যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি’ হিসেবেও বর্ণনা করেন বিডিআরের সাবেক এই মহাপরিচালক, যাকে সপ্তাহ দুয়েক আগে তদন্ত কমিশনের প্রধান করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

৬ জানুয়ারি সোমবার রাজধানীতে অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্যদের উপস্থিতিতে এক আলোচনায় তিনি বলেন, ‘আমাদের আর্মি ঠাঁই দাঁড়িয়ে ছিল আর দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা মিলে এই হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে গেছে।’ ক্ষমতার পালাবদলের পর আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দেশ-বিদেশে আলোড়ন তৈরি করা ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহতের ওই ঘটনায় পুনঃতদন্তের জোরালো দাবির মধ্যে গত ২৩ ডিসেম্বর সাত সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়।

তিন মাসের জন্য সময়ে বেঁধে দেয়া হয়েছে তাদেরকে। এখনও ঠিকমতো তদন্তের কাজ শুরু করতে পারেনি কমিশন, দপ্তর ও যানবাহনও বরাদ্দ হয়নি। গত সোমবার রাজধানীর মহাখালীতে রাওয়া কমপ্লেক্সে বিডিআর হত্যাকাণ্ডে নিহত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন কমিশনের প্রধান ফজলুর রহমান, যিনি ২০০০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০০১ সালের ১১ জুলাই পর্যন্ত বিজিবির প্রধান ছিলেন।

২০০১ সালের এপ্রিলে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী সীমান্তে বিএসএফের সঙ্গে বিজিবির সংঘাতের ঘটনার পর ওই বছর ১১ জুলাই বিজিবি মহাপরিচালক থেকে সরিয়ে তাকে সেনাবাহিনীতে ফেরত নেয়া হয়। এরপর বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় ২০০২ সালের ১৭ মার্চ তাকে আগাম অবসরে পাঠানো হয়।

মতবিনিময় সভায় সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সংগঠন রাওয়ার প্রতিনিধি, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় নিহত কর্মকর্তাদের স্বজন, পিলখানা থেকে বেঁচে ফেরা কর্মকর্তা ও সেই সময় সেনাবাহিনীতে কর্মরত ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় অংশ নেয়া ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে অনেকেই প্রথমে কথা বলেন। তারপর তাদের কিছু প্রশ্নের উত্তর দেন স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রধান ফজলুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘ইট ওয়াজ নট আ মিউটিনি। ইট ওয়াজ আ কন্সপিরেসি কিলিং দ্যা অফিসার্স। এর দ্বারা বিডিআরকে দুর্বল করা হয়েছে, তার নাম বদল করে দেয়া হয়েছে। আর্মিকে দুর্বল করা হয়েছে, দেশকে দুর্বল করা হয়েছে। ‘এখানে অনেকে বলেছেন, ভারত জড়িত। আমাদের মধ্যে অনেকের মতামত থাকতে পারে। নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে আমি একটা কথা বলতে চাই। শুধু ভারত জড়িত বললে হবে না, অমুক জেনারেল জড়িত বললে হবে না। তার স্বপক্ষে প্রমাণ হাজির করতে হবে। যত ছোটই হোক বা বড় হোক, গুরুত্বপূর্ণ নাই হোক- আপনারা প্রমাণ দেন। এটার ওপর নির্ভর করবে অনেক কিছু।’

কমিশন প্রধান অবসরপ্রাপ্ত এই সেনা কর্মকর্তা বলেন,‘আমরা খুব শিগগির একটি ওয়েবসাইট খুলব, যেখানে দালিলিক প্রমান তথ্য উপাত্ত চাইব। এরই মধ্যে বিভিন্নভাবে অনেক সাড়া পাওয়া গেছে। আমরা গোপন করব না।’ বিডিআর হত্যাকা- নিয়ে বিস্ফোরকে আইনে করা একটি মামলা এখনও চলমান থাকার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে মামলা চলমান, তাদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের বিষয়ে তদন্ত কমিশন কী করতে পারে সে বিষয়টি নিয়েও আমরা কথা বলব।’

পদুয়া-রৌমারী যুদ্ধে তিনি কমান্ডার থাকাবস্থায় ‘ভারত পরাজিত’ দাবি করে ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমি মনে করি তখন থেকে বিডিআর বিদ্রোহের পরিকল্পনা শুরু হয়েছে।’ অবসরপ্রাপ্ত এই সেনা কর্মকর্তাকে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর হত্যাযজ্ঞের পর এ নিয়ে বিভিন্ন ফোরামে সরব হতে দেখা যায়। শেখ হাসিনার সরকারের ওই সময়ে টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে আয়োজিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে তাকে অংশ নিতে দেখা যেত তাকে।

বিডিআর হত্যাকা-ের সময় সদরদপ্তরে বাহিনীর সাবেক মহাপরিচালক হিসেবে উপস্থিত থাকার স্মৃতিচারণ করে কমিশন প্রধান ফজলুর বলেন, ‘এই যে নারকীয় ঘটনা ঘটে গেল সেদিন বিডিআর’র প্যারেডে দাওয়াতে আমি উপস্থিত ছিলাম (সাবেক) ডিজি হিসেবে। পাদুয়া-রৌমারীর যুদ্ধের পরে বিডিআরে গেলে গেটে থাকা সদস্যরা গাড়িতে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। যেন গাড়ির কাঁচ ভেঙে ফেলবে। কিন্তু সেদিন কেউ এল না, সব ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। গিয়ে দেখলাম উত্তরের গ্যালারিতে যেখানে হাজার দুয়েকের মতো সৈনিক বসে, সেখানে বসেছে মাত্র ১শ’ বা ২শ’।

‘ওদিন ছিল লাঞ্চের পরে এক্স ডিজিরা ভিভিআইপি রুমে থাকবেন। বিকেলে চা খেয়ে ফিরে আসবেন। তবে আমি তখনই ফিরে এসে আমার স্ত্রীকে বললাম আমার সেখানে ভালো লাগল না। কেমন যেন আমার মনে হচ্ছে। যাই হোক পরে তো এই ঘটনা ঘটল।’ এ ঘটনায় তাকে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে তুলে ধরার বর্ণনা দিয়ে ফজলুর রহমান বলেন, ‘পাঁচ তারিখে সৌরভ শুক্লা নামের ভারতের এক ব্যক্তি ইন্ডিয়া টুডেতে লিখল পাকিস্তানের আইএসআই সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীর মাধ্যমে জেনারেল ফজলুর রহমানকে ৪০ কোটি টাকা দিয়েছেন। এবং আমি সেই টাকা ৪০০ বিডিআর সদস্যদের মাঝে বিতরণ করেছি। প্রায় ১শ’র মতো ডিএডি এবং জেসিওকে আমি এক কোটি করে টাকা দিয়েছি। সেটা জনকণ্ঠে পাবলিশ হলো, সিএনএফ এ পাবলিশ হলো।

‘শেখ হাসিনা আর তোফায়েল এটা নিয়ে পার্লামেন্টে কথা বললেন। শেখ হাসিনা সেই পেপারটা হাতে সংসদে দাঁড়িয়ে বললেন জেনারেল ফজলুর রহমান আমাকে খুন করতে চেয়েছিলেন। আমি সেই ব্যক্তি। আমার জীবনের ওপরও আঘাত এসেছিল।’

কমিশনপ্রধান বলেন, ‘ষড়যন্ত্র যাই হোক, মনে করেন এটার সঙ্গে ওই সময়কার সরকার জড়িত, ভারত জড়িত, ওখানকার কিছু ষড়যন্ত্রকারী, বাংলাদেশের কিছু রাজনীতিবিদ জড়িত। সব আমি বুঝলাম জড়িত। কিন্তু সেদিন যদি সেনাবাহিনী সেখানে যেত তাহলে কী হত্যাকা- হত? এই হত্যাকা- হত না। ‘পলাশীর পুনরাবৃত্তি হয়েছে সেখানে। আমরা পড়েছিলাম ১৭৫৭ সালে পলাশীর মাঠে কী করে সৈন্যরা দাঁড়িয়েছিল আর লর্ড ক্লাইভের বাহিনী এসে আমাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। তার চেয়েও জঘন্য, হৃদয় বিদারক ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেছে ২০০৯ সালে।’

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের আর্মি ঠাঁই দাঁড়িয়ে ছিল আর দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা মিলে এই হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে গেছে। আমি মনে করি না এটা বিডিআর বিদ্রোহ ছিল। আমি মনে করি না যে, কোনো দাবি আদায়ের জন্য সৈনিকরা নির্মমভাবে আমাদের অফিসারদেরকে নিহত করতে পারে। আমরা জানবার চেষ্টা করছি, কে কখন বিডিআরে ওই সময় পোস্টিং হয়েছিল। একজন অফিসার সাত দিন আগে, ১০ দিন আগে, এক মাস আগে সেখানে পোস্টিং পেয়ে গিয়ে কী এমন অপরাধ করতে পারে যে তাকে মেরে ফেলতে হবে।’

দেড় দশক আগের এ ঘটনার আগের তদন্ত প্রতিবেদনগুলো চেয়ে পাঠানোর কথা তুলে ধরে বিডিআরের সাবেক এই ডিজি বলেন,‘এটা একটা বিশাল তদন্তের বিষয়। আমাদের যতদূর যাওয়া প্রয়োজন আমি যাব। জেনারেল জাহাঙ্গীর একটা তদন্ত করেছেন, আনিসুজ্জামান নামের একজন সচিবের নেতৃত্বে তদন্ত হয়েছিল। আমরা সেগুলো রিকল করেছি। সেগুলো আমরা পড়ব। আমরা যদি সব সৈনিককে নিয়ে আসতে চাই এটা ছয় বছরেও শেষ হবে না।’

কেউ তদন্তের বাইরে থাকবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘পদুয়ার রৌমারী যুদ্ধে আমি ছিলাম কমান্ডার। যেখানে ভারত পরাজিত হয়। আমার সাড়ে চার বছর চাকরি থাকা অবস্থায় চাকরিচ্যুত করা হয়। কোন সরকার করেছিল সেটা আমি বলতে চাই না। ‘আমাদের দৃষ্টি প্রসারিত করতে হবে। পাদুয়া-রৌমারী যুদ্ধে ভারতকে হারানোর জন্য যে সরকার আমাকে চাকরিচ্যুত করেছিল সে আওয়ামী লীগ সরকার নয়। আওয়ামী লীগ সরকার আমাকে পদচ্যুত করেছিল। আমি ডিজি বিডিআর ছিলাম, আমাকে ইলেভেন ডিভিশনের জিওসি করা হয়েছিল। তারপরই আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। কাজেই তদন্তের বাইরে কেউ থাকবে না।’

কমিশনপ্রধান বলেন, ‘আমরা প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ প্রার্থনা করেছি। এখনও আমরা অফিস পাইনি। আগামীকাল খুব সম্ভব আমরা বিজিবি হেডকোয়ার্টার্সে অফিস করব। ডিজি বিজিবি একটা গাড়ি দিয়েছেন। সেখান থেকে যদি তার সাক্ষাতের জন্য যেতে পারি খুব ভাগ্যবান মনে করব। সেখান থেকে অফিস পরিদর্শন করব। পরশু থেকে যেন কাজ শুরু করতে পারি। এরপর আমরা সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাত করব।

back to top