আঁচল ফাউন্ডেশনের সমীক্ষা
সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আত্মহত্যার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। গত এক বছরে ৩১০ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন, যার মধ্যে ৬১% মেয়ে শিক্ষার্থী বলে জানিয়েছে সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন।
একটি ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি জানায়, শিক্ষার স্তর অনুযায়ী মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি (৪৬.১%)। এছাড়া ২০২৩ সালে ৫১৩ জন এবং ২০২২ সালে ৫৩২ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছিলেন, যা থেকে বোঝা যায়, সামগ্রিকভাবে আত্মহত্যার সংখ্যা কিছুটা কমলেও শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ এখনও কাটেনি।
স্কুলগামীদের আত্মহত্যার হার বেশি
২০২৪ সালে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি (৪৯.৪%)। কলেজ পর্যায়ে এই হার ২৩.২% এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ১৭.৭৪%। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার ৬.৮%।
শিক্ষার স্তর অনুযায়ী, মাধ্যমিক পর্যায়ে আত্মহত্যার হার ৪৬.১%, উচ্চ মাধ্যমিকে ১৯.৪% এবং স্নাতক পর্যায়ে ১৪.৬%। এছাড়া প্রাথমিক পর্যায়ে ৭.৪%, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ১.৯%, ডিপ্লোমা পর্যায়ে ০.৬%, এবং সদ্য পড়ালেখা শেষ করা বেকারদের মধ্যে ০.৬% আত্মহত্যা করেছেন।
ঢাকায় আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি
আঁচল ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগে ২৯% শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন, যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে খুলনায় ১৭.৭%, চট্টগ্রামে ১৫.৮%, রাজশাহী ও বরিশালে ১০.৭%, রংপুরে ৭.৭%, ময়মনসিংহে ৫.৫% এবং সিলেটে ২.১% আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।
আত্মহত্যার প্রধান কারণগুলো কী?
২০২৪ সালে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার অন্যতম প্রধান কারণ অভিমান (২৮.৪%)। এছাড়া প্রেমঘটিত সম্পর্কের কারণে ১৬.৮%, পড়ালেখার চাপে ১৪.২%, এবং মানসিক অস্থিরতায় ৫.৫% শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।
কীভাবে আত্মহত্যা করেছেন?
সমীক্ষায় দেখা গেছে, আত্মহত্যার সবচেয়ে বেশি মাধ্যম ছিল গলায় ফাঁস (৮৩.৫%)। এছাড়া বিষপান (৮.৭%), এবং অন্যান্য উপায়ে (উঁচু থেকে লাফ, ট্রেনে কাটা পড়া, পানিতে ডোবা, ছুরি দিয়ে আঘাত ইত্যাদি) ৪.৬% শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।
আত্মহত্যা রোধে সুপারিশ
আঁচল ফাউন্ডেশন শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে বেশ কিছু সুপারিশ দিয়েছে।
>> শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘স্বেচ্ছাসেবী অ্যাম্বাসেডর’ নিয়োগ। তারা তাদের সহপাঠীদের মানসিক চাপ, হতাশা বা উদ্বেগ চিহ্নিত করে মানসিক সহায়তার জন্য কাউন্সেলিং সেন্টারে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে।
>> শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছোট ছোট দল তৈরি করা যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের অভিজ্ঞতা, উদ্বেগ বা মানসিক চাপ নিয়ে আলোচনা করতে পারবে। এটি বন্ধুত্বপূর্ণ এবং গোপনীয়তা রক্ষার পরিবেশ তৈরি করবে।
>> শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস, আবেগ নিয়ন্ত্রণ, সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য নিয়মিত কর্মশালা করা।
>> আত্মহত্যা প্রতিরোধে ‘মেন্টাল হেলথ চ্যালেঞ্জ’ বা ‘জীবনের জন্য পয়েন্ট অর্জন’ নামে গেমিং অ্যাপ চালু করা, যেখানে শিক্ষার্থীরা মানসিক সুস্থতার জন্য ভালো অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে পয়েন্ট অর্জন করতে পারবে।
>> শিক্ষার্থীদের জন্য ‘ফিলিংস অ্যালার্ম সিস্টেম’ চালু করা, যা তাদের মেজাজের ওঠা-নামা পর্যবেক্ষণ করবে এবং হতাশার লক্ষণ দেখা দিলে সতর্কবার্তা পাঠাবে।
>> অভিভাবকদের মাঝে মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সচেতনতা বাড়াতে এবং কীভাবে সন্তানদের মানসিক চাপ ও হতাশা সামলাতে সাহায্য করা যায় সে বিষয়ে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়ার কর্মসূচি চালু করা।
>> শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আর্ট, মিউজিক, ড্রামা বা ড্যান্স থেরাপি ক্লাস চালু করা। এতে শিক্ষার্থীরা তাদের আবেগকে সৃজনশীল উপায়ে প্রকাশ করতে পারবে এবং মানসিক চাপ মুক্ত থাকবে।
>> সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “#LifeMatters” বা “#TalkToUs” এর মতো ক্যাম্পেইন চালু করে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খোলামেলা আলোচনায় উৎসাহিত করা। যেখানে বিশেষজ্ঞরাও বিনামূল্যে পরামর্শ দিতে পারবেন।
>> নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ কমাতে বিশেষ স্কলারশিপ চালু করা।
>> আত্মহত্যার পেছনের কারণ বিশ্লেষণ এবং কার্যকর সমাধান বের করার জন্য গবেষণা তহবিল তৈরি করা।
>> বছরে একদিন ‘জীবন সংরক্ষণ প্রতিশ্রুতি দিবস’ পালন করা।
>> প্রতিদিন বা প্রতি সপ্তাহে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি সেশন রাখা, যেখানে তারা তাদের জীবনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। এটি তাদের ইতিবাচক চিন্তাভাবনা গড়ে তুলতে সহযোগিতা করবে।
>> মানসিক স্বাস্থ্য সেবার জন্য হেল্প লাইন চালু করা, যেটি সবসময় সচল থাকবে।
আঁচল ফাউন্ডেশনের সমীক্ষা
শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫
সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আত্মহত্যার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। গত এক বছরে ৩১০ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন, যার মধ্যে ৬১% মেয়ে শিক্ষার্থী বলে জানিয়েছে সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন।
একটি ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি জানায়, শিক্ষার স্তর অনুযায়ী মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি (৪৬.১%)। এছাড়া ২০২৩ সালে ৫১৩ জন এবং ২০২২ সালে ৫৩২ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছিলেন, যা থেকে বোঝা যায়, সামগ্রিকভাবে আত্মহত্যার সংখ্যা কিছুটা কমলেও শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ এখনও কাটেনি।
স্কুলগামীদের আত্মহত্যার হার বেশি
২০২৪ সালে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি (৪৯.৪%)। কলেজ পর্যায়ে এই হার ২৩.২% এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ১৭.৭৪%। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার ৬.৮%।
শিক্ষার স্তর অনুযায়ী, মাধ্যমিক পর্যায়ে আত্মহত্যার হার ৪৬.১%, উচ্চ মাধ্যমিকে ১৯.৪% এবং স্নাতক পর্যায়ে ১৪.৬%। এছাড়া প্রাথমিক পর্যায়ে ৭.৪%, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ১.৯%, ডিপ্লোমা পর্যায়ে ০.৬%, এবং সদ্য পড়ালেখা শেষ করা বেকারদের মধ্যে ০.৬% আত্মহত্যা করেছেন।
ঢাকায় আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি
আঁচল ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগে ২৯% শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন, যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে খুলনায় ১৭.৭%, চট্টগ্রামে ১৫.৮%, রাজশাহী ও বরিশালে ১০.৭%, রংপুরে ৭.৭%, ময়মনসিংহে ৫.৫% এবং সিলেটে ২.১% আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।
আত্মহত্যার প্রধান কারণগুলো কী?
২০২৪ সালে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার অন্যতম প্রধান কারণ অভিমান (২৮.৪%)। এছাড়া প্রেমঘটিত সম্পর্কের কারণে ১৬.৮%, পড়ালেখার চাপে ১৪.২%, এবং মানসিক অস্থিরতায় ৫.৫% শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।
কীভাবে আত্মহত্যা করেছেন?
সমীক্ষায় দেখা গেছে, আত্মহত্যার সবচেয়ে বেশি মাধ্যম ছিল গলায় ফাঁস (৮৩.৫%)। এছাড়া বিষপান (৮.৭%), এবং অন্যান্য উপায়ে (উঁচু থেকে লাফ, ট্রেনে কাটা পড়া, পানিতে ডোবা, ছুরি দিয়ে আঘাত ইত্যাদি) ৪.৬% শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।
আত্মহত্যা রোধে সুপারিশ
আঁচল ফাউন্ডেশন শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে বেশ কিছু সুপারিশ দিয়েছে।
>> শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘স্বেচ্ছাসেবী অ্যাম্বাসেডর’ নিয়োগ। তারা তাদের সহপাঠীদের মানসিক চাপ, হতাশা বা উদ্বেগ চিহ্নিত করে মানসিক সহায়তার জন্য কাউন্সেলিং সেন্টারে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে।
>> শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছোট ছোট দল তৈরি করা যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের অভিজ্ঞতা, উদ্বেগ বা মানসিক চাপ নিয়ে আলোচনা করতে পারবে। এটি বন্ধুত্বপূর্ণ এবং গোপনীয়তা রক্ষার পরিবেশ তৈরি করবে।
>> শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস, আবেগ নিয়ন্ত্রণ, সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য নিয়মিত কর্মশালা করা।
>> আত্মহত্যা প্রতিরোধে ‘মেন্টাল হেলথ চ্যালেঞ্জ’ বা ‘জীবনের জন্য পয়েন্ট অর্জন’ নামে গেমিং অ্যাপ চালু করা, যেখানে শিক্ষার্থীরা মানসিক সুস্থতার জন্য ভালো অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে পয়েন্ট অর্জন করতে পারবে।
>> শিক্ষার্থীদের জন্য ‘ফিলিংস অ্যালার্ম সিস্টেম’ চালু করা, যা তাদের মেজাজের ওঠা-নামা পর্যবেক্ষণ করবে এবং হতাশার লক্ষণ দেখা দিলে সতর্কবার্তা পাঠাবে।
>> অভিভাবকদের মাঝে মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সচেতনতা বাড়াতে এবং কীভাবে সন্তানদের মানসিক চাপ ও হতাশা সামলাতে সাহায্য করা যায় সে বিষয়ে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়ার কর্মসূচি চালু করা।
>> শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আর্ট, মিউজিক, ড্রামা বা ড্যান্স থেরাপি ক্লাস চালু করা। এতে শিক্ষার্থীরা তাদের আবেগকে সৃজনশীল উপায়ে প্রকাশ করতে পারবে এবং মানসিক চাপ মুক্ত থাকবে।
>> সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “#LifeMatters” বা “#TalkToUs” এর মতো ক্যাম্পেইন চালু করে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খোলামেলা আলোচনায় উৎসাহিত করা। যেখানে বিশেষজ্ঞরাও বিনামূল্যে পরামর্শ দিতে পারবেন।
>> নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ কমাতে বিশেষ স্কলারশিপ চালু করা।
>> আত্মহত্যার পেছনের কারণ বিশ্লেষণ এবং কার্যকর সমাধান বের করার জন্য গবেষণা তহবিল তৈরি করা।
>> বছরে একদিন ‘জীবন সংরক্ষণ প্রতিশ্রুতি দিবস’ পালন করা।
>> প্রতিদিন বা প্রতি সপ্তাহে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি সেশন রাখা, যেখানে তারা তাদের জীবনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। এটি তাদের ইতিবাচক চিন্তাভাবনা গড়ে তুলতে সহযোগিতা করবে।
>> মানসিক স্বাস্থ্য সেবার জন্য হেল্প লাইন চালু করা, যেটি সবসময় সচল থাকবে।