গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারে প্রক্রিয়া জোরদার করছে অন্তর্বর্তী সরকার
গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে ভারতের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। তবে ভারত এখনো আনুষ্ঠানিক জবাব দেয়নি। এ প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, যদি ভারত শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ না করে, তবে তা দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান প্রত্যর্পণ চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হবে।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, “আমরা প্রত্যর্পণের জন্য কূটনৈতিক চিঠি দিয়েছি। চিঠি লেখার পরও যদি ভারত সাড়া না দেয়, তবে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে, তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঠিক করবে।”
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। "আমাদের যা যা করণীয়, আমরা তা করে যাচ্ছি। প্রয়োজন হলে আরও পদক্ষেপ নেওয়া হবে," যোগ করেন তিনি।
ভারতে অবস্থান এবং নোট ভারবাল পাঠানোর প্রেক্ষাপট
প্রবল ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। সেই থেকে তিনি সেখানে অবস্থান করছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে চলমান গণআন্দোলনের সময় দমন-পীড়ন এবং ‘গণহত্যা’ সংঘটনের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে।
২০২৩ সালের ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে দেশে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অনেক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে জমা পড়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলায় শেখ হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
বিচারের মুখোমুখি করতে ২০২৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর ভারতকে আনুষ্ঠানিক নোট ভারবাল পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু ভারত এখনো সাড়া না দিয়ে বরং শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর খবর দিয়েছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগের তদন্ত দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কনভেনশনাল কোর্ট এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করতে হয়েছে। বিচারক, প্রসিকিউটর এবং তদন্তকারী নিয়োগসহ অন্যান্য কাঠামো প্রস্তুত করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ঘন ঘন শুনানির তারিখ নির্ধারণ হবে। এটি বিচারের গতি বাড়াবে এবং প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হবে।”
বিচারের গতিকে আরও ত্বরান্বিত করতে দ্বিতীয় একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গঠনের পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।
সংবিধান সংস্কার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, “সংবিধানের সঙ্গে সংঘর্ষমূলক কোনো সংস্কার করা হচ্ছে না। যা করা হচ্ছে, তা রাষ্ট্রের শক্তি ও সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে।”
তিনি জানান, সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা আইন মন্ত্রণালয়ের নেই। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিভিন্ন জেলায় আড়াই হাজারের বেশি গায়েবি মামলা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন আইন উপদেষ্টা। তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকার এসব মামলা চিহ্নিত করেছে এবং আগামী সাত দিনের মধ্যে এগুলো প্রত্যাহার করা হবে।
তিনি বলেন, “গায়েবি মামলা চিহ্নিত করতে কিছুটা সময় লেগেছে। তবে আমরা এখন প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত করছি। ২৫ জেলায় আড়াই হাজারের বেশি মামলা গায়েবি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, আরও কিছু থাকতে পারে।”
আইন উপদেষ্টা জানান, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার সরকারের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার। এজন্য প্রক্রিয়া পুনর্গঠনসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, “আসামিদের বিচারের আওতায় আনতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জনগণকে আশ্বস্ত করতে চাই যে বিচারকাজ কোনোভাবেই বিলম্বিত হবে না।”
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণে ভারতের অনাগ্রহ দুই দেশের চুক্তি লঙ্ঘনের আশঙ্কা তৈরি করেছে। তবে বাংলাদেশ সরকার জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।
গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারে প্রক্রিয়া জোরদার করছে অন্তর্বর্তী সরকার
মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫
গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে ভারতের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। তবে ভারত এখনো আনুষ্ঠানিক জবাব দেয়নি। এ প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, যদি ভারত শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ না করে, তবে তা দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান প্রত্যর্পণ চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হবে।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, “আমরা প্রত্যর্পণের জন্য কূটনৈতিক চিঠি দিয়েছি। চিঠি লেখার পরও যদি ভারত সাড়া না দেয়, তবে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে, তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঠিক করবে।”
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। "আমাদের যা যা করণীয়, আমরা তা করে যাচ্ছি। প্রয়োজন হলে আরও পদক্ষেপ নেওয়া হবে," যোগ করেন তিনি।
ভারতে অবস্থান এবং নোট ভারবাল পাঠানোর প্রেক্ষাপট
প্রবল ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। সেই থেকে তিনি সেখানে অবস্থান করছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে চলমান গণআন্দোলনের সময় দমন-পীড়ন এবং ‘গণহত্যা’ সংঘটনের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে।
২০২৩ সালের ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে দেশে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অনেক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে জমা পড়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলায় শেখ হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
বিচারের মুখোমুখি করতে ২০২৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর ভারতকে আনুষ্ঠানিক নোট ভারবাল পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু ভারত এখনো সাড়া না দিয়ে বরং শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর খবর দিয়েছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগের তদন্ত দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কনভেনশনাল কোর্ট এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করতে হয়েছে। বিচারক, প্রসিকিউটর এবং তদন্তকারী নিয়োগসহ অন্যান্য কাঠামো প্রস্তুত করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ঘন ঘন শুনানির তারিখ নির্ধারণ হবে। এটি বিচারের গতি বাড়াবে এবং প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হবে।”
বিচারের গতিকে আরও ত্বরান্বিত করতে দ্বিতীয় একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গঠনের পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।
সংবিধান সংস্কার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, “সংবিধানের সঙ্গে সংঘর্ষমূলক কোনো সংস্কার করা হচ্ছে না। যা করা হচ্ছে, তা রাষ্ট্রের শক্তি ও সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে।”
তিনি জানান, সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা আইন মন্ত্রণালয়ের নেই। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিভিন্ন জেলায় আড়াই হাজারের বেশি গায়েবি মামলা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন আইন উপদেষ্টা। তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকার এসব মামলা চিহ্নিত করেছে এবং আগামী সাত দিনের মধ্যে এগুলো প্রত্যাহার করা হবে।
তিনি বলেন, “গায়েবি মামলা চিহ্নিত করতে কিছুটা সময় লেগেছে। তবে আমরা এখন প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত করছি। ২৫ জেলায় আড়াই হাজারের বেশি মামলা গায়েবি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, আরও কিছু থাকতে পারে।”
আইন উপদেষ্টা জানান, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার সরকারের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার। এজন্য প্রক্রিয়া পুনর্গঠনসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, “আসামিদের বিচারের আওতায় আনতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জনগণকে আশ্বস্ত করতে চাই যে বিচারকাজ কোনোভাবেই বিলম্বিত হবে না।”
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণে ভারতের অনাগ্রহ দুই দেশের চুক্তি লঙ্ঘনের আশঙ্কা তৈরি করেছে। তবে বাংলাদেশ সরকার জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।