অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে সুশাসন নিশ্চিত করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সংস্কার কমিশন (রেগুলেটরি রিফর্মস কমিশন) গঠনের সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স। টাস্কফোর্সের খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইনকানুন-নিয়মনীতির অতি নিয়ন্ত্রণ এবং আমলাতন্ত্রের লালফিতার দৌরাত্ম্যের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বাধা সৃষ্টি করছে। এ জন্য একটি সংস্কার কমিশন গঠন অপরিহার্য।
একই সঙ্গে সরকারি সেবা পেতে ঘুষ আদান-প্রদান এবং মাঠঘাটে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে একটি স্বতন্ত্র ‘গুন্ডা প্রতিরোধ দল’ (অ্যান্টি গুন স্কোয়াড) গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন খাতে সংস্কারের জন্য কয়েকটি কমিশন, টাস্কফোর্স ও কমিটি গঠন করে। অর্থনৈতিক কৌশল পুননির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণে গত সেপ্টেম্বরে গঠন করা হয় টাস্কফোর্স।
বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণে ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদের নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে সরকার। চলতি সপ্তাহে এই টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
প্রতিবেদনের খসড়ায় বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত কমিশন ব্যবসা পরিচালনা, করনীতি, বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক সুশাসনে বিভিন্ন ধরনের আইনকানুন, নিয়মনীতি মূল্যায়ন, পর্যবেক্ষণ ও সংশোধনের কাজ করবে। এ ছাড়া সরকারি নিয়মনীতি, আইনকানুন মূল্যায়ন ও পর্যবেক্ষণের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে একটি মন্ত্রণালয় স্থাপনেরও সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স।
খসড়া প্রতিবেদনে চাঁদাবাজি বন্ধে আলাদা দল গঠন; স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা; পেশাদারদের দিয়ে সরকারি পর্যায়ে নেতৃত্ব গঠন, সরকারি সেবা সহজ করা; বাজারের চাহিদা অনুসারে শ্রমশক্তি প্রস্তুত করা; রপ্তানি বৈচিত্র্যময় করা; তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি; নিত্যপণ্যের মজুত বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয় সুপারিশ করা হয়েছে।
গু-া প্রতিরোধে দল
বাজারঘাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে স্বতন্ত্র ‘গুণ্ডা প্রতিরোধ দল’ গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। এমনকি সরকারি সেবা পেতে অনৈতিক লেনদেন বা ঘুষ বন্ধেও এ স্কোয়াড কাজ করতে পারে। খসড়ায় বলা হয়, সরকারি সেবা পেতে (অনলাইনে রেল টিকিট কেনা, পাসপোর্ট ইত্যাদি) অনেক সময় ঘুষ দিতে হয়। এ ধরনের অনৈতিক লেনদেনের সমস্যা সরকারি সেবার বাইরে বেসরকারি খাতেও বিস্তৃত হয়েছে। যেমন বাজারঘাট, পরিবহন ও নির্মাণ খাত। এসব খাতে চাঁদাবাজি বন্ধে গু-া, মাস্তান ও সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধে দলটি কীভাবে কাজ করবে, তাও প্রতিবেদনের খসড়ায় বলা হয়েছে। এই দল গঠনে সরকারি সংস্থার সদস্যদের দিয়ে কিংবা বেসরকারি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের কর্মীও নেয়া যেতে পারে।
ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করা
উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করতে নানা ধরনের সুপারিশ করা হয়েছে। রপ্তানি বাড়াতে দুটি উপায়ের কথা বলা হয়েছে। প্রথমত, উদীয়মান ও সম্ভাবনাময় খাতগুলো নানা ধরনের নীতি সহায়তা দেয়া। দ্বিতীয়ত, তৈরি পোশাকের বাইরে প্রায় দেড় হাজার প্রতিষ্ঠান আছে, যারা বছরে ১০ লাখ ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি করে। এসব প্রতিষ্ঠানকে সহায়তার কথা বলা হয়েছে।
এ ছাড়া, বিনিয়োগকারীদের জন্য এক দরজায় সব সেবা (ওয়ানস্টপ সার্ভিস) আরও বেশি কার্যকর করতে হবে। এ সেবা অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার বৃদ্ধিকে কৌশলগত অগ্রাধিকারে আনার কথা বলা হয়েছে।
টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনের খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, এসব সুপারিশ হলো অর্থনৈতিক সংস্কারের পথনকশা। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কিছু কার্যকর উদ্যোগ বা প্রকল্প নিতে পারে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার।
বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫
অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে সুশাসন নিশ্চিত করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সংস্কার কমিশন (রেগুলেটরি রিফর্মস কমিশন) গঠনের সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স। টাস্কফোর্সের খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইনকানুন-নিয়মনীতির অতি নিয়ন্ত্রণ এবং আমলাতন্ত্রের লালফিতার দৌরাত্ম্যের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বাধা সৃষ্টি করছে। এ জন্য একটি সংস্কার কমিশন গঠন অপরিহার্য।
একই সঙ্গে সরকারি সেবা পেতে ঘুষ আদান-প্রদান এবং মাঠঘাটে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে একটি স্বতন্ত্র ‘গুন্ডা প্রতিরোধ দল’ (অ্যান্টি গুন স্কোয়াড) গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন খাতে সংস্কারের জন্য কয়েকটি কমিশন, টাস্কফোর্স ও কমিটি গঠন করে। অর্থনৈতিক কৌশল পুননির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণে গত সেপ্টেম্বরে গঠন করা হয় টাস্কফোর্স।
বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণে ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদের নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে সরকার। চলতি সপ্তাহে এই টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
প্রতিবেদনের খসড়ায় বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত কমিশন ব্যবসা পরিচালনা, করনীতি, বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক সুশাসনে বিভিন্ন ধরনের আইনকানুন, নিয়মনীতি মূল্যায়ন, পর্যবেক্ষণ ও সংশোধনের কাজ করবে। এ ছাড়া সরকারি নিয়মনীতি, আইনকানুন মূল্যায়ন ও পর্যবেক্ষণের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে একটি মন্ত্রণালয় স্থাপনেরও সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স।
খসড়া প্রতিবেদনে চাঁদাবাজি বন্ধে আলাদা দল গঠন; স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা; পেশাদারদের দিয়ে সরকারি পর্যায়ে নেতৃত্ব গঠন, সরকারি সেবা সহজ করা; বাজারের চাহিদা অনুসারে শ্রমশক্তি প্রস্তুত করা; রপ্তানি বৈচিত্র্যময় করা; তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি; নিত্যপণ্যের মজুত বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয় সুপারিশ করা হয়েছে।
গু-া প্রতিরোধে দল
বাজারঘাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে স্বতন্ত্র ‘গুণ্ডা প্রতিরোধ দল’ গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। এমনকি সরকারি সেবা পেতে অনৈতিক লেনদেন বা ঘুষ বন্ধেও এ স্কোয়াড কাজ করতে পারে। খসড়ায় বলা হয়, সরকারি সেবা পেতে (অনলাইনে রেল টিকিট কেনা, পাসপোর্ট ইত্যাদি) অনেক সময় ঘুষ দিতে হয়। এ ধরনের অনৈতিক লেনদেনের সমস্যা সরকারি সেবার বাইরে বেসরকারি খাতেও বিস্তৃত হয়েছে। যেমন বাজারঘাট, পরিবহন ও নির্মাণ খাত। এসব খাতে চাঁদাবাজি বন্ধে গু-া, মাস্তান ও সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধে দলটি কীভাবে কাজ করবে, তাও প্রতিবেদনের খসড়ায় বলা হয়েছে। এই দল গঠনে সরকারি সংস্থার সদস্যদের দিয়ে কিংবা বেসরকারি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের কর্মীও নেয়া যেতে পারে।
ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করা
উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করতে নানা ধরনের সুপারিশ করা হয়েছে। রপ্তানি বাড়াতে দুটি উপায়ের কথা বলা হয়েছে। প্রথমত, উদীয়মান ও সম্ভাবনাময় খাতগুলো নানা ধরনের নীতি সহায়তা দেয়া। দ্বিতীয়ত, তৈরি পোশাকের বাইরে প্রায় দেড় হাজার প্রতিষ্ঠান আছে, যারা বছরে ১০ লাখ ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি করে। এসব প্রতিষ্ঠানকে সহায়তার কথা বলা হয়েছে।
এ ছাড়া, বিনিয়োগকারীদের জন্য এক দরজায় সব সেবা (ওয়ানস্টপ সার্ভিস) আরও বেশি কার্যকর করতে হবে। এ সেবা অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার বৃদ্ধিকে কৌশলগত অগ্রাধিকারে আনার কথা বলা হয়েছে।
টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনের খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, এসব সুপারিশ হলো অর্থনৈতিক সংস্কারের পথনকশা। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কিছু কার্যকর উদ্যোগ বা প্রকল্প নিতে পারে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার।