ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্তি বাতিলের পর ঢাকার ৭ সরকারি কলেজ পরিচালনায় সমাধান খুঁজে পাচ্ছে না শিক্ষা প্রশাসন। ৭ কলেজ পরিচালনায় ‘স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার কথা বলছেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষা উপদেষ্টা।
কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয় মডেল বা কাঠামো কেমন হবে সেই বিষয়ে তেমন কিছুই জানেন না কলেজগুলোর অধ্যক্ষ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) শীর্ষ কর্মকর্তারা।
গণঅভ্যুত্থানের পর গত বছর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ৭ কলেজ নিয়ে আলাদা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে গত ডিসেম্বরে ৭ কলেজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ একটি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়নে চার সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, ঢাবির উপ-উপাচার্য ও ইউজিসির একজন সদস্য এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন। এই কমিটিই এখন ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের দায়িত্বে রয়েছে।
পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে গত ডিসেম্বর আরেকটি কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এই অবস্থায় ‘৭ কলেজের’ সঙ্গে না থেকে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা গতকাল ফের কর্মসূচি পালন করেছেন। এ দাবিতে তারা ‘শাটডাউন তিতুমীর’ কর্মসূচি শুরু পালন করেছেন। দাবি না মানলে শিক্ষার্থীরা আজ থেকে রাজধানীর মহাখালীতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন।
৭ কলেজের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত তিতুমীর কলেজের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেছেন, ‘তিতুমীর ও ইডেন মহিলা কলেজ ছাড়া বাকি ৫টি কলেজে অনার্স-মাস্টার্সের পাশাপাশি একাদশ শ্রেণীও চালু রয়েছে। এখন এই ৭ কলেজ পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় হলে সেখানে একাদশ শ্রেণী থাকবে কিনা সেটি নিয়েও ভাবতে হবে।’
৫টি কলেজে একাদশ শ্রেণী পাঠদান বন্ধ হলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামতে পারে জানিয়ে ওই শিক্ষক বলেন, ‘ঢাকায় এমনিতেই একাদশ শ্রেণীতে পাঠদান হয় এমন সরকারি কলেজের সংখ্যা সীমিত। তাছাড়া এগুলোতে স্বল্প আয়ের ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা বেশি ভর্তি হয়। সেই সুযোগ বন্ধ হোক সেটি কেউ চাইবে না।’
৭ কলেজের মধ্যে একাদশ শ্রেণী রয়েছে এমন কলেজগুলো হলো- ঢাকা কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ও মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ।
তিতুমীর সরকারি কলেজের অপর একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেছেন, ‘তিতুমীর কলেজে বর্তমানে প্রায় ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। আর শিক্ষক আছেন মাত্র ২১০ জন। অবকাঠামো সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের শ্রেণী কার্যক্রমও ঠিকমত নেয়া সম্ভব হয় না। আবার বিভাগওয়ারি শিক্ষকদের বসার কক্ষেরও স্বল্পতা রয়েছে। আবাসনের ব্যবস্থাও নেই। সেখানে এই কলেজকে কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপান্তর করা সম্ভব?’ ৭ কলেজের প্রতিটিতেই এই ‘সংকট’ রয়েছে বলে ওই অধ্যাপক জানিয়েছেন।
৭ কলেজ পরিচালনায় ‘স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের’ কাঠামো কেমন হতে পারে সে বিষয়ে ঢাকা কলেজে অধ্যক্ষ একেএম ইলিয়াস সাংবাদিকদের বলেন, ৭ কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের জন্য একটি নীতিমালা প্রয়োজন হবে। ৭ কলেজের পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম সবকিছু চলমান রাখার জন্য ইউজিসি, ঢাবি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্বন্বয় প্রয়োজন আছে।
স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো কেমন হতে পারে সেই বিষয়ে তার তেমন ধারণা নেই জানিয়ে ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষ বলেন, ৭ কলেজের সমস্যাগুলোকে তারা প্রত্যেকটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে ‘অ্যাড্রেস’ করবেন। উচ্চ পর্যায়ের কমিটি একটি স্বতন্ত্র কাঠামোর রূপরেখা দেবে বরেও তিনি জানান।
শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ গত মঙ্গলবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, ৭ কলেজ নিয়ে তারা একটি নতুন মডেল দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন। যেহেতু এই কলেজগুলোকে উচ্চ মাধ্যমিকের (একাদশ শ্রেণী) শিক্ষার্থী রয়েছে তাই এসব প্রতিষ্ঠানকে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর সহজ নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি নতুন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকার কলেজগুলোকে পরিচালনার কথা ভাবছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে মাউশির একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকারি কলেজগুলো মাউশির অধীনে পরিচালিত হলেও ৭ কলেজ সংক্রান্ত কোনো আলোচনায় তাদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে না। অথচ সরকারের বিভিন্ন মহল থেকেই মাউশির কর্মকর্তার কাছে এ সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাওয়া হচ্ছে। ৭ কলেজ পরিচালনা ও স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়
সংক্রান্ত বিষয়ে ২৮ জানুয়ারি রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। তবে ওই বৈঠকের বিষয়বস্তু বা সিদ্ধান্ত সর্ম্পকে কোনো কিছুই জানানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে ‘শাটডাউন তিতুমীর’:
‘৭ কলেজের’ সঙ্গে না থেকে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা বুধবার ২৮ জানুয়ারি ‘শাটডাউন তিতুমীর’ কর্মসূচি পালন করেছেন। এ দাবি না মানলে শিক্ষার্থীরা আজ থেকে রাজধানীর মহাখালীতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের দাবি, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো গঠন করতে হবে। সে সঙ্গে ভিসি ও প্রো-ভিসি নিয়োগ দিয়ে প্রশাসনিক কাঠামো গঠন করতে হবে।
এর আগে ৭ জানুয়ারি কলেজ ফটকে ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়’ লেখা টানিয়ে দিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। এরপর কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করতে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। বুধবার থেকে সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর আন্দোলনের সংগঠন ‘তিতুমীর ঐক্য’।
তিতুমীর ঐক্যের সংগঠক গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম বলেন, তারা ‘যৌক্তিক’ দাবি পূরণে আন্দোলন করছেন। তারা সরকারকে ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়েছেন তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো গঠন করতে। এ সময়ের মধ্যে ভিসি-প্রোভিসি নিয়োগ দিয়ে প্রশাসনিক কাঠামো গঠন করা না হলে আজ মহাখালীতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানান তিনি।
আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে শাটডাউন তিতুমীর কর্মসূচি পালন চলবে।’
তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে গত ৩ ডিসেম্বর পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ কমিটি বুধবার নাগাদ কোনো প্রতিবেদন দেয়নি।
আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে গত ১৯ নভেম্বর সকাল থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ‘ক্লোজডাউন তিতুমীর’ কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এর আগের দিন সকালে মহাখালীর আমতলী, কাঁচাবাজার ও রেলক্রসিংয়ে শতশত শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে অবরোধ করেছিলেন। পরে বিকেলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনার পর কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়।
ঢাবি ও ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে গত সোমবার (২৭ জানুয়ারি) ঢাবি উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান ঢাবির অধিভুক্তি থেকে ৭ কলেজকে মুক্ত করার ঘোষণা দেন। এর অংশ হিসেবে চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৪-২৫ সেশন থেকেই ঢাবির অধীনে ৭ কলেজের শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম বন্ধের কথা বলা হয়।
বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্তি বাতিলের পর ঢাকার ৭ সরকারি কলেজ পরিচালনায় সমাধান খুঁজে পাচ্ছে না শিক্ষা প্রশাসন। ৭ কলেজ পরিচালনায় ‘স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার কথা বলছেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষা উপদেষ্টা।
কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয় মডেল বা কাঠামো কেমন হবে সেই বিষয়ে তেমন কিছুই জানেন না কলেজগুলোর অধ্যক্ষ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) শীর্ষ কর্মকর্তারা।
গণঅভ্যুত্থানের পর গত বছর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ৭ কলেজ নিয়ে আলাদা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে গত ডিসেম্বরে ৭ কলেজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ একটি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়নে চার সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, ঢাবির উপ-উপাচার্য ও ইউজিসির একজন সদস্য এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন। এই কমিটিই এখন ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের দায়িত্বে রয়েছে।
পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে গত ডিসেম্বর আরেকটি কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এই অবস্থায় ‘৭ কলেজের’ সঙ্গে না থেকে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা গতকাল ফের কর্মসূচি পালন করেছেন। এ দাবিতে তারা ‘শাটডাউন তিতুমীর’ কর্মসূচি শুরু পালন করেছেন। দাবি না মানলে শিক্ষার্থীরা আজ থেকে রাজধানীর মহাখালীতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন।
৭ কলেজের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত তিতুমীর কলেজের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেছেন, ‘তিতুমীর ও ইডেন মহিলা কলেজ ছাড়া বাকি ৫টি কলেজে অনার্স-মাস্টার্সের পাশাপাশি একাদশ শ্রেণীও চালু রয়েছে। এখন এই ৭ কলেজ পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় হলে সেখানে একাদশ শ্রেণী থাকবে কিনা সেটি নিয়েও ভাবতে হবে।’
৫টি কলেজে একাদশ শ্রেণী পাঠদান বন্ধ হলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামতে পারে জানিয়ে ওই শিক্ষক বলেন, ‘ঢাকায় এমনিতেই একাদশ শ্রেণীতে পাঠদান হয় এমন সরকারি কলেজের সংখ্যা সীমিত। তাছাড়া এগুলোতে স্বল্প আয়ের ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা বেশি ভর্তি হয়। সেই সুযোগ বন্ধ হোক সেটি কেউ চাইবে না।’
৭ কলেজের মধ্যে একাদশ শ্রেণী রয়েছে এমন কলেজগুলো হলো- ঢাকা কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ও মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ।
তিতুমীর সরকারি কলেজের অপর একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেছেন, ‘তিতুমীর কলেজে বর্তমানে প্রায় ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। আর শিক্ষক আছেন মাত্র ২১০ জন। অবকাঠামো সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের শ্রেণী কার্যক্রমও ঠিকমত নেয়া সম্ভব হয় না। আবার বিভাগওয়ারি শিক্ষকদের বসার কক্ষেরও স্বল্পতা রয়েছে। আবাসনের ব্যবস্থাও নেই। সেখানে এই কলেজকে কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপান্তর করা সম্ভব?’ ৭ কলেজের প্রতিটিতেই এই ‘সংকট’ রয়েছে বলে ওই অধ্যাপক জানিয়েছেন।
৭ কলেজ পরিচালনায় ‘স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের’ কাঠামো কেমন হতে পারে সে বিষয়ে ঢাকা কলেজে অধ্যক্ষ একেএম ইলিয়াস সাংবাদিকদের বলেন, ৭ কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের জন্য একটি নীতিমালা প্রয়োজন হবে। ৭ কলেজের পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম সবকিছু চলমান রাখার জন্য ইউজিসি, ঢাবি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্বন্বয় প্রয়োজন আছে।
স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো কেমন হতে পারে সেই বিষয়ে তার তেমন ধারণা নেই জানিয়ে ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষ বলেন, ৭ কলেজের সমস্যাগুলোকে তারা প্রত্যেকটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে ‘অ্যাড্রেস’ করবেন। উচ্চ পর্যায়ের কমিটি একটি স্বতন্ত্র কাঠামোর রূপরেখা দেবে বরেও তিনি জানান।
শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ গত মঙ্গলবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, ৭ কলেজ নিয়ে তারা একটি নতুন মডেল দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন। যেহেতু এই কলেজগুলোকে উচ্চ মাধ্যমিকের (একাদশ শ্রেণী) শিক্ষার্থী রয়েছে তাই এসব প্রতিষ্ঠানকে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর সহজ নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি নতুন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকার কলেজগুলোকে পরিচালনার কথা ভাবছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে মাউশির একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকারি কলেজগুলো মাউশির অধীনে পরিচালিত হলেও ৭ কলেজ সংক্রান্ত কোনো আলোচনায় তাদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে না। অথচ সরকারের বিভিন্ন মহল থেকেই মাউশির কর্মকর্তার কাছে এ সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাওয়া হচ্ছে। ৭ কলেজ পরিচালনা ও স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়
সংক্রান্ত বিষয়ে ২৮ জানুয়ারি রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। তবে ওই বৈঠকের বিষয়বস্তু বা সিদ্ধান্ত সর্ম্পকে কোনো কিছুই জানানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে ‘শাটডাউন তিতুমীর’:
‘৭ কলেজের’ সঙ্গে না থেকে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা বুধবার ২৮ জানুয়ারি ‘শাটডাউন তিতুমীর’ কর্মসূচি পালন করেছেন। এ দাবি না মানলে শিক্ষার্থীরা আজ থেকে রাজধানীর মহাখালীতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের দাবি, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো গঠন করতে হবে। সে সঙ্গে ভিসি ও প্রো-ভিসি নিয়োগ দিয়ে প্রশাসনিক কাঠামো গঠন করতে হবে।
এর আগে ৭ জানুয়ারি কলেজ ফটকে ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়’ লেখা টানিয়ে দিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। এরপর কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করতে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। বুধবার থেকে সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর আন্দোলনের সংগঠন ‘তিতুমীর ঐক্য’।
তিতুমীর ঐক্যের সংগঠক গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম বলেন, তারা ‘যৌক্তিক’ দাবি পূরণে আন্দোলন করছেন। তারা সরকারকে ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়েছেন তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো গঠন করতে। এ সময়ের মধ্যে ভিসি-প্রোভিসি নিয়োগ দিয়ে প্রশাসনিক কাঠামো গঠন করা না হলে আজ মহাখালীতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানান তিনি।
আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে শাটডাউন তিতুমীর কর্মসূচি পালন চলবে।’
তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে গত ৩ ডিসেম্বর পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ কমিটি বুধবার নাগাদ কোনো প্রতিবেদন দেয়নি।
আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে গত ১৯ নভেম্বর সকাল থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ‘ক্লোজডাউন তিতুমীর’ কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এর আগের দিন সকালে মহাখালীর আমতলী, কাঁচাবাজার ও রেলক্রসিংয়ে শতশত শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে অবরোধ করেছিলেন। পরে বিকেলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনার পর কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়।
ঢাবি ও ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে গত সোমবার (২৭ জানুয়ারি) ঢাবি উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান ঢাবির অধিভুক্তি থেকে ৭ কলেজকে মুক্ত করার ঘোষণা দেন। এর অংশ হিসেবে চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৪-২৫ সেশন থেকেই ঢাবির অধীনে ৭ কলেজের শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম বন্ধের কথা বলা হয়।