ধানমন্ডি ৩২-এর ঘটনার পর কূটনৈতিক টানাপোড়েন
ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ভাঙার ঘটনায় ভারত সরকারের দেওয়া প্রতিক্রিয়াকে ‘অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত’ বলে অভিহিত করেছে বাংলাদেশ সরকার।
রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, আমরা প্রতিবেশী দেশে নানা ধরনের পরিস্থিতি দেখেছি, কিন্তু বাংলাদেশ কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরকারিভাবে মন্তব্য করে না। একই ধরনের আচরণ অন্যদের কাছ থেকেও প্রত্যাশিত।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছয় মাস পর, ভারতে বসে অনলাইনে ভাষণ দেওয়ার পরদিন ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ধানমন্ডিতে শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। একইসঙ্গে বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
বাংলাদেশ সরকার এ ধরনের হামলা বন্ধের আহ্বান জানালেও, ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই পরিস্থিতির জন্য শেখ হাসিনাকেই দায়ী করেছে। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, “ভারতে পলাতক অবস্থায় বসে শেখ হাসিনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, যা জনমনে তীব্র ক্ষোভ তৈরি করেছে এবং এর বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে সাম্প্রতিক হামলাগুলোর মাধ্যমে।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় ভারতের শীর্ষ কূটনীতিককে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানায়।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানান, বাংলাদেশ সরকার ভারতের কাছে লিখিত অনুরোধ করেছে যাতে শেখ হাসিনাকে ‘উসকানিমূলক’ বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত রাখা হয়। “এ ধরনের বক্তব্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে,” বলেন তিনি।
তিনি আরও জানান, “ভারত এখনও আমাদের অনুরোধের আনুষ্ঠানিক জবাব দেয়নি। তবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা আবারও প্রতিবাদপত্র দিয়েছি এবং ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনারের হাতে তা তুলে দেওয়া হয়েছে।”
ভারত এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছে, “বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর অবশ্যই দুঃখজনক। বাঙালির পরিচয়ের অন্যতম প্রতীক এই বাসভবনের প্রতি সম্মান থাকা উচিত।”
পরদিন, বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনারকে তলব করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানায়।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, “এটা দুঃখজনক যে, বাংলাদেশ সরকারের বিবৃতিতে ভারতকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে এবং অভ্যন্তরীণ সুশাসন ইস্যুতে দায়ী করা হচ্ছে। বাস্তবে, এসব বিবৃতিই বিরাজমান অস্থিরতার জন্য দায়ী।”
তিনি আরও বলেন, “শেখ হাসিনার যে বক্তব্য নিয়ে কথা বলা হচ্ছে, তা তার ব্যক্তিগত মতামত, এতে ভারতের কোনো ভূমিকা নেই। একে ভারত সরকারের অবস্থানের সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।”
“আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে পরস্পরের কল্যাণে কাজ করার মনোভাব আশা করি, পরিস্থিতি আরও জটিল করার প্রচেষ্টা নয়,” যোগ করেন তিনি।
ভারতের প্রতিক্রিয়ার পর বাংলাদেশ সরকার তাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে।
রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, “ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিক্রিয়া আমাদের জন্য অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এমন মন্তব্য কাম্য নয়।”
তিনি বলেন, “আপনারা জানেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ভারতে বসে রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন, যা বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি তার বক্তব্যকে কেন্দ্র করেই ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অস্থিরতা তৈরি হয়।”
দিল্লিতে বাংলাদেশের হাই কমিশনারকে তলবের বিষয়ে মন্তব্য চাইলে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না।”
বর্তমান পরিস্থিতি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। শেখ হাসিনার অবস্থান, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়ার মধ্যে কীভাবে ভারসাম্য আনা হবে, তা নিয়েই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি নির্ভর করবে দুই দেশের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর।
ধানমন্ডি ৩২-এর ঘটনার পর কূটনৈতিক টানাপোড়েন
রোববার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ভাঙার ঘটনায় ভারত সরকারের দেওয়া প্রতিক্রিয়াকে ‘অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত’ বলে অভিহিত করেছে বাংলাদেশ সরকার।
রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, আমরা প্রতিবেশী দেশে নানা ধরনের পরিস্থিতি দেখেছি, কিন্তু বাংলাদেশ কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরকারিভাবে মন্তব্য করে না। একই ধরনের আচরণ অন্যদের কাছ থেকেও প্রত্যাশিত।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছয় মাস পর, ভারতে বসে অনলাইনে ভাষণ দেওয়ার পরদিন ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ধানমন্ডিতে শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। একইসঙ্গে বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
বাংলাদেশ সরকার এ ধরনের হামলা বন্ধের আহ্বান জানালেও, ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই পরিস্থিতির জন্য শেখ হাসিনাকেই দায়ী করেছে। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, “ভারতে পলাতক অবস্থায় বসে শেখ হাসিনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, যা জনমনে তীব্র ক্ষোভ তৈরি করেছে এবং এর বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে সাম্প্রতিক হামলাগুলোর মাধ্যমে।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় ভারতের শীর্ষ কূটনীতিককে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানায়।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানান, বাংলাদেশ সরকার ভারতের কাছে লিখিত অনুরোধ করেছে যাতে শেখ হাসিনাকে ‘উসকানিমূলক’ বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত রাখা হয়। “এ ধরনের বক্তব্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে,” বলেন তিনি।
তিনি আরও জানান, “ভারত এখনও আমাদের অনুরোধের আনুষ্ঠানিক জবাব দেয়নি। তবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা আবারও প্রতিবাদপত্র দিয়েছি এবং ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনারের হাতে তা তুলে দেওয়া হয়েছে।”
ভারত এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছে, “বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর অবশ্যই দুঃখজনক। বাঙালির পরিচয়ের অন্যতম প্রতীক এই বাসভবনের প্রতি সম্মান থাকা উচিত।”
পরদিন, বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনারকে তলব করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানায়।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, “এটা দুঃখজনক যে, বাংলাদেশ সরকারের বিবৃতিতে ভারতকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে এবং অভ্যন্তরীণ সুশাসন ইস্যুতে দায়ী করা হচ্ছে। বাস্তবে, এসব বিবৃতিই বিরাজমান অস্থিরতার জন্য দায়ী।”
তিনি আরও বলেন, “শেখ হাসিনার যে বক্তব্য নিয়ে কথা বলা হচ্ছে, তা তার ব্যক্তিগত মতামত, এতে ভারতের কোনো ভূমিকা নেই। একে ভারত সরকারের অবস্থানের সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।”
“আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে পরস্পরের কল্যাণে কাজ করার মনোভাব আশা করি, পরিস্থিতি আরও জটিল করার প্রচেষ্টা নয়,” যোগ করেন তিনি।
ভারতের প্রতিক্রিয়ার পর বাংলাদেশ সরকার তাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে।
রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, “ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিক্রিয়া আমাদের জন্য অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এমন মন্তব্য কাম্য নয়।”
তিনি বলেন, “আপনারা জানেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ভারতে বসে রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন, যা বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি তার বক্তব্যকে কেন্দ্র করেই ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অস্থিরতা তৈরি হয়।”
দিল্লিতে বাংলাদেশের হাই কমিশনারকে তলবের বিষয়ে মন্তব্য চাইলে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না।”
বর্তমান পরিস্থিতি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। শেখ হাসিনার অবস্থান, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়ার মধ্যে কীভাবে ভারসাম্য আনা হবে, তা নিয়েই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি নির্ভর করবে দুই দেশের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর।