ঢাকাসহ সারাদেশে শুরু হওয়া অপারেশন ডেভিল হান্টে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৩০৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার রাত থেকে রবিবার পর্যন্ত অপারেশন পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।রবিবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য জানান। তিনি জানান, অপারেশন ডেভিল হান্টে শনিবার রাত থেকে রবিবার পর্যন্ত ১ হাজার ৩০৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে দেশের সব মেট্রোপলিটন পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ২৭৪ জনকে। অন্যদিকে সারাদেশের রেঞ্জ পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ১ হাজার ৩৪ জনকে।
জানা গেছে, ডেভিল অর্থ হচ্ছে শয়তান আর হান্ট অর্থ শিকার। ডেভিল হান্ট, যার ইংরেজি শাব্দিক অর্থ গিয়ে দাঁড়ায় শয়তান শিকার করা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত ডেভিল হান্ট বলতে, দেশবিরোধী চক্র, সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীদের আইনের আওতায় আনতে বোঝানো হয়েছে। অপারেশন ডেভিল হান্ট একটি বিশেষ অভিযান। যা শনিবার থেকে সারাদেশে একযোগে শুরু হয়েছে। ৭ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের ছাত্র-জনতার ওপর সন্ত্রাসী হামলা করে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। ঘটনার পরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার সিদ্ধান্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় অপারেশন ডেভিল হান্ট নামক বিশেষ অভিযান শুরু হয়।
গাজীপুরে ডেভিল হান্টে গ্রেপ্তার ৬৫
আমাদের জেলা বার্তা পরিবেশক, গাজীপুর জানান, দেশজুড়ে চলমান অপারেশন ডেভিল হান্টের অংশ হিসেবে গাজীপুর জেলার পাঁচটি থানায় ৪০ জন ও মহানগরের ৮টি থানায় ২৫ জনসহ ৬৫ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী আটক হয়েছে। এই ঘটনায় প্রায় ৬শ’ জনকে আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে। আদালতে নেয়ার পর প্রিজনভ্যানে ওঠানোর সময় আসামিদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে দুই সাংবাদিক আহত হয়েছেন। রবিবার গাজীপুরে এসব ঘটনা ঘটে।
গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মো. যাবের সাদেক ও গাজীপুর মহানগরের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. জাহিদুল হক ৬৫ আসামি গ্রেপ্তারের বিষয়টি সংবাদকে নিশ্চিত করেন। পুলিশ সুপার জানান, অপারেশন ডেভিল হান্টে এখন পর্যন্ত (দুপুর ১টা) ৪০ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা বিভিন্নভাবে ফ্যাসিস্ট সরকারের লোকজন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে আটককৃতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। গাজীপুর মহানগরের ৮টি থানায় মোট ২৫ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. জাহিদুল হক। তিনি বলেছেন অপারেশন ডেভিল হান্ট চলমান রয়েছে।
নোয়াখালীতে চেয়ারম্যানসহ আটক ৭
আমাদের নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, অপারেশন ‘ডেভিল হান্টের’ প্রথমদিনে নোয়াখালীর হাতিয়ায় যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ ৭ জনকে আটক করেছে। রবিবার দুপুরের দিকে আসামিদের বিচারিক আদালতে হাজির করা হয়। এর আগে, শনিবার রাতে হাতিয়ার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলেন- হাতিয়া উপজেলার চরঈশ্বর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আজাদ (৬৪), হাতিয়া পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের সাদ্দাম হোসেন (২৬), ৩ নং ওয়ার্ডের আবুল কালাম বিটু (৪৪), নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের আদর্শগ্রামের আজিম উদ্দিন (৩১), তমরুদ্দি ইউনিয়নের সিরাজুল ইসলাম প্রকাশ রাকছান (২৪), আবদুল মাজেদ পলাশ (৪৩) ও আব্দুল জাহের (৩৯)।
অভিযান সূত্রে জানা যায়, নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ ও পুলিশের সদস্যরা যৌথ অভিযান চালিয়ে ৫নং চরঈশ্বর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আজাদকে ওছখালী পুরাতন বাজারের ২নং ওয়ার্ড থেকে আটক হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে আরও ছয়জনকে আটক করে যৌথ বাহিনী। অভিযানে একটি প্লাস্টিকের হাতলযুক্ত ছুরি, একটি কুড়াল, দুইটি কাঠের হাতলযুক্ত ছুরি ও তিনটি লম্বা তলোয়ার উদ্ধার করা হয়।
রাজশাহীতে গ্রেপ্তার ১২ জন
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) থানা ও ডিবি পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে মোট ১২ জনকে আটক করা হয়েছে। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ মহানগরীর বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা, বিস্ফোরণ ঘটানো ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের অভিযোগে একজন, অন্যান্য অপরাধে ৩ জন এবং ওয়ারেন্টভুক্ত ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
খাগড়াছড়িতে ছাত্রলীগের চার নেতাকর্মী আটক
আমাদের খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার গুইমারা উপজেলায় সারাদেশে শুরু হওয়া ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ৪ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার রাতেই গুইমারাতে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে পুলিশ।
ঠাকুরগাঁওয়ে ৭ আ’লীগ নেতা গ্রেপ্তার
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী ও রাণীশংকৈলে পুলিশের বিশেষ অভিযানে আওয়ামী লীগ-যুবলীগসহ ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রবিবার দুপুরে আসামিদের বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানান বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি, তদন্ত দিবাকর অধিকারী ও রাণীশংকৈল থানার ওসি মুহ. আরশেদুল হক।
‘ডেভিল’ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপারেশন চলবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধেই অভিযানে নেমেছেন তারা। আর যতক্ষণ না ‘ডেভিল’ শেষ হচ্ছে, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ ততক্ষণ চলবে। রবিবার সকালে রাজধানীর ফার্মগেটে মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউটের নতুন মৃত্তিকা ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন উপদেষ্টা।
এ অভিযান কাদের বিরুদ্ধে, সেই প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ডেভিল মানে কী? শয়তানই তো টার্গেট এটায়। যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে, যারা আইন অমান্য করে, দুষ্কৃতকারী এবং সন্ত্রাসী, তারাই এটার টার্গেট।’ অপারেশনে পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে। পাঁচজন পুলিশ কর্মকর্তাকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে, ওইটা আপনাদের মিডিয়ায় চলে আসছে।’
গাজীপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় সবাইকে গ্রেপ্তার করা হবে বলেও হুঁশিয়ার করেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ‘গাজীপুরে যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, অনেককেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। যাদের আনা হয় নাই, তাদেরও খুব তাড়াতাড়ি নিয়ে আসা হবে এবং তাদের যেন সর্বোচ্চ শাস্তি হয়, এই ব্যবস্থা করা হবে।’ শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে একটি সভা হয়। সংশ্লিষ্ট এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে অপারেশন ডেভিল হান্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয় সেখানে। এর আগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০২ সালের ১৬ অক্টোবর ‘অপারেশন ক্লিন হার্ট’ নামে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হয়েছি।
সমন্বয় ‘এক জায়গা থেকে’ আইজিপি
সারাদেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামে যে অভিযান শুরু হয়েছে, সেটির সঙ্গে যৌথ বাহিনীর চলমান অভিযানের ‘পার্থক্য’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। শনিবার নতুন এ অভিযান শুরুর ঘোষণার পর তিনি বলেন, পাঁচ মাস ধরে যে অভিযান চলছে, সেখানে বাহিনীগুলো অপারেশন ফিল্ডে গিয়ে ‘যার যারটা মিলিয়ে নেন’, কিন্তু এখানে পরিকল্পনাটা সব বাহিনী একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসে করবে। এছাড়া অপারেশন ডেভিল হান্টের ব্যাপ্তিও বেশি বলে তুলে ধরেন পুলিশপ্রধান। যারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ঝামেলা করতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এ অভিযান চালানোর কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যারাই ব্যাঘাত ঘটাবে, সেটা গোলযোগ সৃষ্টিকারী হতে পারে, নাশকতা সৃষ্টিকারী হতে পারে, সমাজে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী হতে পারে, গুজব প্রচারকারী হতে পারেÑ সবকিছুই এর মধ্যে চলে আসবে।’ এ অভিযান কতদিন চলবে সে বিষয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, ‘এটা সরকারের সিদ্ধান্ত।’
সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, পুলিশ, র্যাব ও আনসারের সমন্বয়ে যৌথ অপারেশন টিম এ অভিযান চালাচ্ছে। দেশজুড়ে এ অভিযানে অস্ত্র উদ্ধারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকায় অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চলমান যৌথ বাহিনীর অভিযান ও ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ এক নয় বলে তুলে ধরে আইজিপি বলেন, ‘ওখানে (যৌথ বাহিনীর অভিযান) উনারা যার যারটা করে অপারেশন ফিল্ডে গিয়ে মিলিয়ে নেন, কিন্তু এখানে পরিকল্পনাটা সব বাহিনী একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষে সমন্বিতভাবে করবে। ‘এখানে একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থাকবে, যেখানে আগে থেকেই সবকিছু সমন্বয় করে করা হবে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সন্ত্রাস নির্মূলের এ অপারেশন পরিচালনা করবে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাহিনীগুলো গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সারাদেশে একযোগে যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করছে। বাহিনীগুলোর মধ্যে রয়েছে পুলিশ, র?্যাব, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবি। অপারেশন ডেভিল হান্টের প্রাথমিক ধাপে বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার হয়েছে এবং বেশ কিছু অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, এ অভিযান দীর্ঘমেয়াদি হবে এবং সন্ত্রাসবাদের মূল উৎপত্তিস্থল চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রোববার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
ঢাকাসহ সারাদেশে শুরু হওয়া অপারেশন ডেভিল হান্টে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৩০৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার রাত থেকে রবিবার পর্যন্ত অপারেশন পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।রবিবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য জানান। তিনি জানান, অপারেশন ডেভিল হান্টে শনিবার রাত থেকে রবিবার পর্যন্ত ১ হাজার ৩০৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে দেশের সব মেট্রোপলিটন পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ২৭৪ জনকে। অন্যদিকে সারাদেশের রেঞ্জ পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ১ হাজার ৩৪ জনকে।
জানা গেছে, ডেভিল অর্থ হচ্ছে শয়তান আর হান্ট অর্থ শিকার। ডেভিল হান্ট, যার ইংরেজি শাব্দিক অর্থ গিয়ে দাঁড়ায় শয়তান শিকার করা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত ডেভিল হান্ট বলতে, দেশবিরোধী চক্র, সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীদের আইনের আওতায় আনতে বোঝানো হয়েছে। অপারেশন ডেভিল হান্ট একটি বিশেষ অভিযান। যা শনিবার থেকে সারাদেশে একযোগে শুরু হয়েছে। ৭ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের ছাত্র-জনতার ওপর সন্ত্রাসী হামলা করে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। ঘটনার পরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার সিদ্ধান্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় অপারেশন ডেভিল হান্ট নামক বিশেষ অভিযান শুরু হয়।
গাজীপুরে ডেভিল হান্টে গ্রেপ্তার ৬৫
আমাদের জেলা বার্তা পরিবেশক, গাজীপুর জানান, দেশজুড়ে চলমান অপারেশন ডেভিল হান্টের অংশ হিসেবে গাজীপুর জেলার পাঁচটি থানায় ৪০ জন ও মহানগরের ৮টি থানায় ২৫ জনসহ ৬৫ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী আটক হয়েছে। এই ঘটনায় প্রায় ৬শ’ জনকে আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে। আদালতে নেয়ার পর প্রিজনভ্যানে ওঠানোর সময় আসামিদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে দুই সাংবাদিক আহত হয়েছেন। রবিবার গাজীপুরে এসব ঘটনা ঘটে।
গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মো. যাবের সাদেক ও গাজীপুর মহানগরের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. জাহিদুল হক ৬৫ আসামি গ্রেপ্তারের বিষয়টি সংবাদকে নিশ্চিত করেন। পুলিশ সুপার জানান, অপারেশন ডেভিল হান্টে এখন পর্যন্ত (দুপুর ১টা) ৪০ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা বিভিন্নভাবে ফ্যাসিস্ট সরকারের লোকজন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে আটককৃতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। গাজীপুর মহানগরের ৮টি থানায় মোট ২৫ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. জাহিদুল হক। তিনি বলেছেন অপারেশন ডেভিল হান্ট চলমান রয়েছে।
নোয়াখালীতে চেয়ারম্যানসহ আটক ৭
আমাদের নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, অপারেশন ‘ডেভিল হান্টের’ প্রথমদিনে নোয়াখালীর হাতিয়ায় যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ ৭ জনকে আটক করেছে। রবিবার দুপুরের দিকে আসামিদের বিচারিক আদালতে হাজির করা হয়। এর আগে, শনিবার রাতে হাতিয়ার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলেন- হাতিয়া উপজেলার চরঈশ্বর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আজাদ (৬৪), হাতিয়া পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের সাদ্দাম হোসেন (২৬), ৩ নং ওয়ার্ডের আবুল কালাম বিটু (৪৪), নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের আদর্শগ্রামের আজিম উদ্দিন (৩১), তমরুদ্দি ইউনিয়নের সিরাজুল ইসলাম প্রকাশ রাকছান (২৪), আবদুল মাজেদ পলাশ (৪৩) ও আব্দুল জাহের (৩৯)।
অভিযান সূত্রে জানা যায়, নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ ও পুলিশের সদস্যরা যৌথ অভিযান চালিয়ে ৫নং চরঈশ্বর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আজাদকে ওছখালী পুরাতন বাজারের ২নং ওয়ার্ড থেকে আটক হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে আরও ছয়জনকে আটক করে যৌথ বাহিনী। অভিযানে একটি প্লাস্টিকের হাতলযুক্ত ছুরি, একটি কুড়াল, দুইটি কাঠের হাতলযুক্ত ছুরি ও তিনটি লম্বা তলোয়ার উদ্ধার করা হয়।
রাজশাহীতে গ্রেপ্তার ১২ জন
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) থানা ও ডিবি পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে মোট ১২ জনকে আটক করা হয়েছে। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ মহানগরীর বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা, বিস্ফোরণ ঘটানো ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের অভিযোগে একজন, অন্যান্য অপরাধে ৩ জন এবং ওয়ারেন্টভুক্ত ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
খাগড়াছড়িতে ছাত্রলীগের চার নেতাকর্মী আটক
আমাদের খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার গুইমারা উপজেলায় সারাদেশে শুরু হওয়া ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ৪ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার রাতেই গুইমারাতে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে পুলিশ।
ঠাকুরগাঁওয়ে ৭ আ’লীগ নেতা গ্রেপ্তার
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী ও রাণীশংকৈলে পুলিশের বিশেষ অভিযানে আওয়ামী লীগ-যুবলীগসহ ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রবিবার দুপুরে আসামিদের বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানান বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি, তদন্ত দিবাকর অধিকারী ও রাণীশংকৈল থানার ওসি মুহ. আরশেদুল হক।
‘ডেভিল’ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপারেশন চলবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধেই অভিযানে নেমেছেন তারা। আর যতক্ষণ না ‘ডেভিল’ শেষ হচ্ছে, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ ততক্ষণ চলবে। রবিবার সকালে রাজধানীর ফার্মগেটে মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউটের নতুন মৃত্তিকা ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন উপদেষ্টা।
এ অভিযান কাদের বিরুদ্ধে, সেই প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ডেভিল মানে কী? শয়তানই তো টার্গেট এটায়। যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে, যারা আইন অমান্য করে, দুষ্কৃতকারী এবং সন্ত্রাসী, তারাই এটার টার্গেট।’ অপারেশনে পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে। পাঁচজন পুলিশ কর্মকর্তাকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে, ওইটা আপনাদের মিডিয়ায় চলে আসছে।’
গাজীপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় সবাইকে গ্রেপ্তার করা হবে বলেও হুঁশিয়ার করেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ‘গাজীপুরে যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, অনেককেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। যাদের আনা হয় নাই, তাদেরও খুব তাড়াতাড়ি নিয়ে আসা হবে এবং তাদের যেন সর্বোচ্চ শাস্তি হয়, এই ব্যবস্থা করা হবে।’ শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে একটি সভা হয়। সংশ্লিষ্ট এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে অপারেশন ডেভিল হান্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয় সেখানে। এর আগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০২ সালের ১৬ অক্টোবর ‘অপারেশন ক্লিন হার্ট’ নামে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হয়েছি।
সমন্বয় ‘এক জায়গা থেকে’ আইজিপি
সারাদেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামে যে অভিযান শুরু হয়েছে, সেটির সঙ্গে যৌথ বাহিনীর চলমান অভিযানের ‘পার্থক্য’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। শনিবার নতুন এ অভিযান শুরুর ঘোষণার পর তিনি বলেন, পাঁচ মাস ধরে যে অভিযান চলছে, সেখানে বাহিনীগুলো অপারেশন ফিল্ডে গিয়ে ‘যার যারটা মিলিয়ে নেন’, কিন্তু এখানে পরিকল্পনাটা সব বাহিনী একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসে করবে। এছাড়া অপারেশন ডেভিল হান্টের ব্যাপ্তিও বেশি বলে তুলে ধরেন পুলিশপ্রধান। যারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ঝামেলা করতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এ অভিযান চালানোর কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যারাই ব্যাঘাত ঘটাবে, সেটা গোলযোগ সৃষ্টিকারী হতে পারে, নাশকতা সৃষ্টিকারী হতে পারে, সমাজে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী হতে পারে, গুজব প্রচারকারী হতে পারেÑ সবকিছুই এর মধ্যে চলে আসবে।’ এ অভিযান কতদিন চলবে সে বিষয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, ‘এটা সরকারের সিদ্ধান্ত।’
সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, পুলিশ, র্যাব ও আনসারের সমন্বয়ে যৌথ অপারেশন টিম এ অভিযান চালাচ্ছে। দেশজুড়ে এ অভিযানে অস্ত্র উদ্ধারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকায় অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চলমান যৌথ বাহিনীর অভিযান ও ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ এক নয় বলে তুলে ধরে আইজিপি বলেন, ‘ওখানে (যৌথ বাহিনীর অভিযান) উনারা যার যারটা করে অপারেশন ফিল্ডে গিয়ে মিলিয়ে নেন, কিন্তু এখানে পরিকল্পনাটা সব বাহিনী একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষে সমন্বিতভাবে করবে। ‘এখানে একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থাকবে, যেখানে আগে থেকেই সবকিছু সমন্বয় করে করা হবে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সন্ত্রাস নির্মূলের এ অপারেশন পরিচালনা করবে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাহিনীগুলো গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সারাদেশে একযোগে যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করছে। বাহিনীগুলোর মধ্যে রয়েছে পুলিশ, র?্যাব, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবি। অপারেশন ডেভিল হান্টের প্রাথমিক ধাপে বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার হয়েছে এবং বেশ কিছু অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, এ অভিযান দীর্ঘমেয়াদি হবে এবং সন্ত্রাসবাদের মূল উৎপত্তিস্থল চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।