বৃহস্পতিবার ১৩ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করতে প্রথমে জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ, পরে টেনে হেঁচড়ে সরিয়ে দেয় -সংবাদ
আন্দোলনের ৮ম দিন বৃহস্পতিবার ১৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরেও রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে আন্দোলন করেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে বাতিল হওয়া তৃতীয় ধাপের প্রার্থীরা। তারা অন্যান্য দিনের মতো বাতিল হওয়া নিয়োগ ফিরে পাওয়ার দাবি জানান এবং বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
এ সময় চারদিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশ তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু তারা পুলিশের কথা শোনেননি। একপর্যায়ে বেলা দুইটার দিকে পুলিশ জলকামান থেকে গরম পানি ছিটিয়ে ও ধাওয়া দিয়ে তাদের সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করে। কিন্তু লাঠিচার্জ, জলকামান উপেক্ষা করেই সড়কে শুয়ে পড়েন আন্দোলনকারীরা। একটা পর্যায়ে টেনেহিঁচড়ে সড়ক থেকে আন্দোলনকারীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। পরে পাশেই জাদুঘরের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে বাতিল হওয়া কয়েক শ’ চাকরি প্রত্যাশী শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এতে ওই রুট দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সৃষ্টি দীর্ঘ যানজটের। পুলিশ আন্দোলনকারীদের সরে যেতে বললেও যাচ্ছিল না তারা।
পরে দুপুর আড়াইটার দিকে অবরোধকারীদের রাস্তা থেকে সরাতে লাঠিচার্জ ও জলকামান ব্যবহার শুরু করে পুলিশ। জলকামানের পানিতে আন্দোলনকারীরা ভিজে যান। আন্দোলনস্থলে পানি জমে যায়। আন্দোলনকারীরা পানির ভেতরই আর জলকামানের পানি উপেক্ষা করে ব্যানার গায়ে দিয়ে শুয়ে থাকেন। ফলে কয়েক দফায় পানি নিক্ষেপ করেও তাদের সরানো যাচ্ছিল না। এতে পুলিশ লাঠিচার্জ করতে থাকে।
তাতেও সরানো যাচ্ছিল না আন্দোলনকারীদের। দেখা যায়, নারী পুলিশ সদস্যরা আন্দোলনে অংশ নেয়া নারীদের সেখান থেকে সরে যেতে লাঠিচার্জ করছেন। তাতেও সরছেন না আন্দোলনকারীরা। বরং তারা আরও জড়ো হয়ে একত্রে শুয়ে পড়েন। সেখান থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে যেতে দেখা যায়। ব্যাপক গতিতে জলকামান দিয়ে পাটি ছিটানোর ফলে কয়েকজন নারী অসুস্থ হয়ে পড়েন।
তাদের ঘিরে রাখেন অন্য নারীরা। দীর্ঘ সময় ধরে এভাবে কাজ না হওয়ায় পুলিশ টেনেহিঁচড়ে আন্দোলনকারীদের মূল সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। পরে আন্দোলনকারীরা জাদুঘরের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন। তবে তারা সেখানেই অবস্থান করবেন বলে বেলা ৩টার দিকে জানিয়েছেন।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. খালেদ মনসুর বলেন, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে আন্দোলনকারীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। এ সময় ১৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মাসুদ আলম বলেন, ‘ওরা বয়সে ছোট, বারবারই একই ভুল করছে। আমরা চেষ্টা করছিলাম রাস্তাটা ফাঁকা করার জন্য। তাই কয়েকজনকে নিয়ে আসছি। তবে যাচাই-বাছাই শেষে তাদের ছেড়ে দেয়া হবে। ‘আপাতত সাতজন পুরুষ ও সাতজন নারী আন্দোলনকারীকে নিয়ে আসা হয়েছে। আমরা তাদের ছেড়ে দেব।’
আন্দোলনরত শিক্ষকেরা বলেন, আমরা মেধা দিয়ে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। পুলিশ ভ্যারিফাই করেই আমাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আমাদের কেন আন্দোলন করতে হবে। আমাদের দাবি মানতে হবে। আমরা সাত দিন ধরে একটি যৌক্তিক দাবির জন্য আন্দোলন করছি। কোনো উপদেষ্টা কথা বলছেন না। আমরা কী এই দেশের নাগরিক নই? আমরা তো ছাত্রদের পাশে ছিলাম। এখন আমাদের পাশে ছাত্র প্রতিনিধি নেই কেন?
এদিকে, জাতীয় জাদুঘরের সামনে টানা চতুর্থ দিনের মতো অবস্থান নেন আন্দোলনকারী। দুপুরে কিছু সময়ের জন্য তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করলেই এ হট্টগোল বাধে। এ নিয়ে ৮ম দিনে গড়িয়েছে তাদের আন্দোলন। এর আগে চারদিন একই দাবিতে তারা প্রেসক্লাবের সামনে কর্মসূচি পালন করেছেন। বুধবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে আন্দোলন চলাকালে সন্ধ্যার আগে নিয়োগ প্রত্যাশীরা ঘোষণা দেন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি ‘জাস্টিস ফর টিচার’, ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ শুরু হবে। ৬ হাজার ৫৩১ জনের যোগদান নিশ্চিত করতে এই কর্মসূচি দেয়া হয়।
রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি অবরোধ করে আন্দোলন করায় শাহবাগ ও আশপাশের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দেখা দেয় তীব্র যানজট। একে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস, অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ এই সিগন্যাল পয়েন্ট আটকা থাকায় কোন দিকেই যানবাহন যেতে পারছিল না। ফলে কারওয়ান বাজার, বাংলামটর, সায়েন্সল্যাব, মৎস্য ভবনসহ আশপাশের এলাকাও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ব্যক্তিগত গাড়িগুলো আশপাশের গলি দিয়ে গন্তব্যে যেতে পারলেও ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে যাত্রাবাহী বাস। এতে দূরপাল্লার যাত্রীরা বিপাকে পড়েন। শাহবাগে হাসপাতালে আসা রোগী ও স্বজনরাও ভোগান্তিতে পড়েছেন। প্রায় ৩টার দিকে আন্দোনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে ব্যস্ততম এই মোড় দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়।
ডিএমপির রমনা ট্রাফিক বিভাগের শাহবাগ জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মেহেদী হাসান শাকিল বলেন, এমনেই শাহবাগ মোড়ে যানজট থাকে। এর মধ্যে আবার শিক্ষকরা সড়ক অবরোধের ফলে একটু যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়ার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বৃহস্পতিবার ১৩ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করতে প্রথমে জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ, পরে টেনে হেঁচড়ে সরিয়ে দেয় -সংবাদ
বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
আন্দোলনের ৮ম দিন বৃহস্পতিবার ১৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরেও রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে আন্দোলন করেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে বাতিল হওয়া তৃতীয় ধাপের প্রার্থীরা। তারা অন্যান্য দিনের মতো বাতিল হওয়া নিয়োগ ফিরে পাওয়ার দাবি জানান এবং বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
এ সময় চারদিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশ তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু তারা পুলিশের কথা শোনেননি। একপর্যায়ে বেলা দুইটার দিকে পুলিশ জলকামান থেকে গরম পানি ছিটিয়ে ও ধাওয়া দিয়ে তাদের সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করে। কিন্তু লাঠিচার্জ, জলকামান উপেক্ষা করেই সড়কে শুয়ে পড়েন আন্দোলনকারীরা। একটা পর্যায়ে টেনেহিঁচড়ে সড়ক থেকে আন্দোলনকারীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। পরে পাশেই জাদুঘরের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে বাতিল হওয়া কয়েক শ’ চাকরি প্রত্যাশী শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এতে ওই রুট দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সৃষ্টি দীর্ঘ যানজটের। পুলিশ আন্দোলনকারীদের সরে যেতে বললেও যাচ্ছিল না তারা।
পরে দুপুর আড়াইটার দিকে অবরোধকারীদের রাস্তা থেকে সরাতে লাঠিচার্জ ও জলকামান ব্যবহার শুরু করে পুলিশ। জলকামানের পানিতে আন্দোলনকারীরা ভিজে যান। আন্দোলনস্থলে পানি জমে যায়। আন্দোলনকারীরা পানির ভেতরই আর জলকামানের পানি উপেক্ষা করে ব্যানার গায়ে দিয়ে শুয়ে থাকেন। ফলে কয়েক দফায় পানি নিক্ষেপ করেও তাদের সরানো যাচ্ছিল না। এতে পুলিশ লাঠিচার্জ করতে থাকে।
তাতেও সরানো যাচ্ছিল না আন্দোলনকারীদের। দেখা যায়, নারী পুলিশ সদস্যরা আন্দোলনে অংশ নেয়া নারীদের সেখান থেকে সরে যেতে লাঠিচার্জ করছেন। তাতেও সরছেন না আন্দোলনকারীরা। বরং তারা আরও জড়ো হয়ে একত্রে শুয়ে পড়েন। সেখান থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে যেতে দেখা যায়। ব্যাপক গতিতে জলকামান দিয়ে পাটি ছিটানোর ফলে কয়েকজন নারী অসুস্থ হয়ে পড়েন।
তাদের ঘিরে রাখেন অন্য নারীরা। দীর্ঘ সময় ধরে এভাবে কাজ না হওয়ায় পুলিশ টেনেহিঁচড়ে আন্দোলনকারীদের মূল সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। পরে আন্দোলনকারীরা জাদুঘরের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন। তবে তারা সেখানেই অবস্থান করবেন বলে বেলা ৩টার দিকে জানিয়েছেন।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. খালেদ মনসুর বলেন, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে আন্দোলনকারীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। এ সময় ১৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মাসুদ আলম বলেন, ‘ওরা বয়সে ছোট, বারবারই একই ভুল করছে। আমরা চেষ্টা করছিলাম রাস্তাটা ফাঁকা করার জন্য। তাই কয়েকজনকে নিয়ে আসছি। তবে যাচাই-বাছাই শেষে তাদের ছেড়ে দেয়া হবে। ‘আপাতত সাতজন পুরুষ ও সাতজন নারী আন্দোলনকারীকে নিয়ে আসা হয়েছে। আমরা তাদের ছেড়ে দেব।’
আন্দোলনরত শিক্ষকেরা বলেন, আমরা মেধা দিয়ে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। পুলিশ ভ্যারিফাই করেই আমাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আমাদের কেন আন্দোলন করতে হবে। আমাদের দাবি মানতে হবে। আমরা সাত দিন ধরে একটি যৌক্তিক দাবির জন্য আন্দোলন করছি। কোনো উপদেষ্টা কথা বলছেন না। আমরা কী এই দেশের নাগরিক নই? আমরা তো ছাত্রদের পাশে ছিলাম। এখন আমাদের পাশে ছাত্র প্রতিনিধি নেই কেন?
এদিকে, জাতীয় জাদুঘরের সামনে টানা চতুর্থ দিনের মতো অবস্থান নেন আন্দোলনকারী। দুপুরে কিছু সময়ের জন্য তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করলেই এ হট্টগোল বাধে। এ নিয়ে ৮ম দিনে গড়িয়েছে তাদের আন্দোলন। এর আগে চারদিন একই দাবিতে তারা প্রেসক্লাবের সামনে কর্মসূচি পালন করেছেন। বুধবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে আন্দোলন চলাকালে সন্ধ্যার আগে নিয়োগ প্রত্যাশীরা ঘোষণা দেন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি ‘জাস্টিস ফর টিচার’, ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ শুরু হবে। ৬ হাজার ৫৩১ জনের যোগদান নিশ্চিত করতে এই কর্মসূচি দেয়া হয়।
রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি অবরোধ করে আন্দোলন করায় শাহবাগ ও আশপাশের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দেখা দেয় তীব্র যানজট। একে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস, অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ এই সিগন্যাল পয়েন্ট আটকা থাকায় কোন দিকেই যানবাহন যেতে পারছিল না। ফলে কারওয়ান বাজার, বাংলামটর, সায়েন্সল্যাব, মৎস্য ভবনসহ আশপাশের এলাকাও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ব্যক্তিগত গাড়িগুলো আশপাশের গলি দিয়ে গন্তব্যে যেতে পারলেও ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে যাত্রাবাহী বাস। এতে দূরপাল্লার যাত্রীরা বিপাকে পড়েন। শাহবাগে হাসপাতালে আসা রোগী ও স্বজনরাও ভোগান্তিতে পড়েছেন। প্রায় ৩টার দিকে আন্দোনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে ব্যস্ততম এই মোড় দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়।
ডিএমপির রমনা ট্রাফিক বিভাগের শাহবাগ জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মেহেদী হাসান শাকিল বলেন, এমনেই শাহবাগ মোড়ে যানজট থাকে। এর মধ্যে আবার শিক্ষকরা সড়ক অবরোধের ফলে একটু যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়ার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।