নারায়নগঞ্জে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবকাঠামো নির্মাণ কাজই হয়নি; অথচ এসব কাজের নামে ‘অগ্রিম বিল’ দেয়া হয়েছে। এই অভিযোগে গত ৩ ফেব্রুয়ারি জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী সম্পা সাহাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) প্রধান কার্যালয় থেকে। নোটিশের পরদিন তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করেই আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছেন।
নোটিশে বলা হয়েছে, একটি তদন্ত কমিটি গত ২ ফেব্রুয়ারি নারায়নগঞ্জের সার্বিক কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে ‘উন্নয়ন কাজের বাস্তব অগ্রগতির সঙ্গে আর্থিক ব্যয়ের গরমিল পরিলক্ষিত হয়।’
‘এমতাবস্থায়, আর্থিক অনিয়মের কারণে কেন তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিবিধামা ২০১৮ এর বিধান মোতাবেক উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তার যথাযথ ব্যাখ্যা আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রধান প্রকৌশলী বরাবর দাখিল করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।’
ইইডির একাধিক প্রকৌশলী জানিয়েছেন, সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ‘শিক্ষা ছুটির’ আদেশ ভাগিয়েছেন সম্পা সাহা। কিন্তু আমেরিকায় যাওয়ার আগে ইইডির প্রধান প্রকৌশলীর কাছ থেকে কোনো ‘অনাপত্তিপত্র’ নেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়নগঞ্জের সরকারি ইসলামিক এডুকেশন ট্রাস্ট, আইটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি মহিলা হাইস্কুল এবং একটি সরকারি কলেজে অবকাঠামো নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এ পর্যন্ত যে পরিমাণ বিল দেয়া হয়েছে, তাতে অন্তত পাঁচ কোটি টাকার কোনো কাজ হয়নি।
কিশোরগঞ্জের নির্বাহী
প্রকৌশলীও আমেরিকায়
ইইডির কিশোরগঞ্জ অফিসের একজন প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, ‘জেলায় ২৫টি প্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন নির্মাণ ও পুরনো ভবন সংস্কারের জন্য অগ্রিম বিল দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে তিনটি কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলো হয়নি। সরকার পরির্বতনের পর অনেক ঠিকাদার আত্মগোপনে চলে গেছেন। আর জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম শিক্ষা ছুটিতে আমেরিকায় চলে গেছেন।’ তিনি সেখানে চাকরি নিয়েছেন বলে তার এক সহকর্মী জানিয়েছেন।
কিশোরগঞ্জের শিক্ষাভবন নির্মাণ কাজগুলো ঠিকমত হচ্ছে না জানিয়ে ওই প্রকৌশলী বলেন, ‘সম্প্রতি প্রধান কার্যালয় (ইইডি) থেকে একটি টিম তদন্ত কাজে এখানে এসেছিলেন। তারাও নির্মাণ কাজের অগ্রগতিতে হতাশা ব্যক্ত করেছেন।’
কিশোরগঞ্জ জেলায় অন্তত ২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একাডেমিক ভবন নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য বিভিন্ন ঠিকাদারকে অন্তত ২০ কোটি টাকা ‘অগ্রিম’ দিয়ে দীর্ঘ শিক্ষা ছুটিতে আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী।
শতাধিক ঠিকাদার আত্মগোপনে
ইইডি থেকে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শতাধিক ঠিকাদার আত্মগোপনে চলে গেছেন।
এতে বিভিন্ন জেলায় শিক্ষা ভবন নির্মাণ ও সংস্কারে ‘অগ্রিম’ বিল দিয়ে চাপের মুখে পরেছে ইইডি। ওইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্মাণ ও সংস্কার কাজ স্থবির হয়ে পরেছে।
অগ্রিম বিল পরিশোধ করা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলিকে সমপরিমাণ কাজ সম্পন্ন করতে গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল ইইডির প্রধান কার্যালয় থেকে। কিন্তু তা খুব একটা কাজে আসেনি।
এর পর সম্প্রতি প্রধান কার্যালয়ের তিন শীর্ষ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়; যারা বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের সদস্য ছিলেন।
এরপর গত ১০ ফেব্রুয়ারি একদিনেই ১৩ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীকে বদলি করা হয়েছে। এদিন আরও দশ জেলায় নতুন নির্বাহী প্রকৌশলী পদায়ন দেয়া হয়েছে।
কয়েকজন প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বদলি হওয়া ১৩ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীর মধ্যে ফেনী, নরসিংদী, ঝালকাটি, চাপাঁইনবাবগঞ্জ ও বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে কোনো ‘অভিযোগ নেই’। অথচ তাদেরও ‘শাস্তিমূলক’ বদলি করা হয়েছে। এ নিয়ে প্রকৌশলীদের মধ্যে ‘অসন্তোষ’ রয়েছে
মন্ত্রণালয় ও মাউশির ‘অসন্তোষ’
জানা গেছে, সম্প্রতি রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত দু’দিনের বিশেষ সভায় প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের ‘অগ্রিম’ বিল ভাগিয়ে নেয়ার ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত এক সভায় ‘সরকারি কলেজসমূহে বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ প্রকল্পের’ পরিচালক (পিডি) ‘স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজ ও স্বরুপকাঠি সরকারি কলেজের’ নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রে কিছুটা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।’
এই প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণ কাজের তদারকি করছেন ইইডির প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান।
ওই দুটি কলেজের ভবন নির্মাণের ‘চ্যালেঞ্জের’ বিষয়ে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘একটি কলেজে সমস্যা হয়েছিল; আমরা রিটেন্ডার করেছি, কাজ শুরু হয়েছে। আরেকটি কলেজে কাজের ঠিকাদার....সরকার পরিবর্তনের পর পালিয়ে গেছে। সেটিও রিটেন্ডার হচ্ছে।’
শিক্ষা ভবন নির্মাণে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ও ধীরগতিতে মাউশির অধীনে বাস্তবায়ন হওয়া প্রকল্পের কর্মকর্তারাও চাপে পরছেন। এই চাপ লাগবে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল পরিদর্শনে গেছেন ইইডির প্রধান প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন। সেখানে তিনি শেরপুর, জামালপুর ও সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। এরপর প্রধান প্রকৌশলী যান বগুড়ায়। সেখানে তিনি গতকাল লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ অন্যান্য প্রকৌশলীদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
ঢাকায় অগ্রিম বিল নিয়ে ‘ধুয়াশা’
ঢাকার মিরপুরে আব্বাস উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে অবকাঠামো নির্মাণের জন্য একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় দেড় কোটি টাকা অগ্রিম দেয়া হয়। এরপর নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে দেরিতে নির্মাণ কাজ শুরু করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এছাড়া ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজ, দক্ষিণ খানের মৈনের টেক উচ্চ বিদ্যালয়, কদমতলী থানার নতুন জুরাইন কেএম মঈনউদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয়, উত্তরা থানার উত্তরা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, দারুস সালাম থানার হযরত শাহ আলী মডেল হাই স্কুলসহ রাজধানীর অন্তত ২৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজের জন্য অগ্রিম বিল দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
অগ্রিম বিলের বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্য বদলি হওয়া ইইডির ঢাকা মেট্রোর নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল করিম সংবাদকে বলেন, ‘আমি এক বছরেরও কম সময় এখানে ছিলাম। আমি কোনো অগ্রিম দেয়নি। এই অগ্রিম বিল আগে দেয়া ছিল; আমি নানাভাবে ম্যানেজ করে ঠিকাদারদের কাছ থেকে অন্তত ২৫টি প্রতিষ্ঠানের কাজ সম্পন্ন করিয়েছি।’
জাহিদুল করিমের আগে ঢাকা মেট্রোর নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন হাসান শওকত, যিনি বর্তমানে প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আমি এক টাকাও কাউকে অগ্রিম বিল দেয়নি। আমার অগোচরে সহকারি বা উপসহকারি প্রকৌশলীরা অগ্রিম বিল দিয়ে থাকলে এর দায় তাদেরই।’
কারিগরি শিক্ষার অবকাঠামো নির্মাণে বিপত্তি
২০১৩ সালে সারাদেশের ১০০টি উপজেলায় একটি করে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণের সিন্ধান্ত নিয়েছিল। ২০১৪ সালের শুরুতেই দুই বছর মেয়াদী এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু হয়। এরপর তিন দফা মেয়াদ ও প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হলেও বাস্তবায়ন শেষ হচ্ছে না।
কারণ ১০০টি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজের অন্তত ১২টিই দেয়া হয় ‘ডালি’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকও ‘আত্মগোপনে’ চলে গেছেন বলে প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন।
তারা জানান, ‘ডালির’ কব্জায় থাকা ১২টি কাজের মধ্যে রাজবাড়ী জেলার একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম মোটামুটি শেষ হয়েছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলির নির্মাণ কাজ স্থবির হয়ে পরেছে। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা, টাঙ্গাইল, মৌলভীবাজার, কুমিল্লা, মুন্সিগঞ্জে একটি করে এবং বাগেরহাটে দুটি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ অনেকটা বন্ধই রয়েছে বলে প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন।
এর মধ্যে গাইবান্ধাসহ কয়েকটি জেলায় কারিগরি প্রতিষ্ঠান নির্মাণের জন্য ‘মোটা অঙ্কের অগ্রিম’ বিল দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এই অনিয়মের জন্য জেলা পর্যায়ের প্রকৌশলী ও ঠিকাদাররা দায়ি হলেও তাদের বিরুদ্ধে ‘শাস্তিমূলক পদক্ষেপ’ নেয়া হচ্ছে না। অথচ এসব কাজের জন্য ‘অহেতুক’ ইইডির প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ফাহিম ইকবালকে সম্প্রতি একাধিক সভায় ‘শাসানো’ হয়েছে।
সিলেটে বারবার ‘নিস্ফল তদন্ত’
দু’জন প্রকৌশলী জানিয়েছেন, গত পাঁচ বছরে ইইডির সিলেট অঞ্চলে ১২০টির মতো প্রতিষ্ঠানে নির্মাণ কাজের নামে অগ্রিম বিল পরিশোধ করা হয়েছে। অগ্রিম বিল নিয়ে দু’জন ঠিকাদার মারা গেছেন এবং অন্তত তিনজন যুক্তরাজ্যে চলে গেছেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাকিরাও কাজ বন্ধ রেখেছেন। ওই সময়কার সিলেট অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলীকে পরবর্তীতে পদোন্নতি দিয়ে ময়মনসিংহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এসব অনিয়ম খতিয়ে দেখতে গত বছরের ২ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ নেওয়ারা জাহানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। একই বিভাগের যুগ্ম সচিব মিজানুর রহমানকে সদস্য ও উপসচিব মোহাম্মদ আলতাফ হোসেনকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।
এরপর অভিযুক্ত প্রকৌশলীর ‘তদবিরের প্রভাবে’ তদন্ত কমিটির আহ্বায়ককে বাদ দিয়ে তার ‘পছন্দের’ ব্যক্তিকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপরও তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি।
পরবর্তীতে ইইডি কর্তৃপক্ষ নিজেরাই একটি টিম পাঠিয়ে সিলেটের অনিয়মের ঘটনাগুলো তদন্ত করায়। এ কমিটি একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন দেয়, সেটিও আলোর মুখে দেখেনি।
ওই কমিটি সিলেট জেলার অন্তত ৮০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণে ‘নিয়মহির্ভূতভাবে’ ১৫ কোটি টাকার অগ্রিম বিল দেয়ার তথ্য প্রমাণ পায়। এই অগ্রিম বিল ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেয়া হয়েছিল; কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
এবার ইইডির পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) ড. অমিতাভ চক্রবর্ত্তীকে সিলেটের যাবতীয় নির্মাণের অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার নেতৃত্বে একটি টিম শিগগিরই সিলেটের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে যাচ্ছেন।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন নির্মাণ, বিদ্যমান ভবনের সম্প্রসারণ, রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামতসহ ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন এবং আসবাব সরবরাহ করে। এ ছাড়া মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও আইসিটি ল্যাব স্থাপন, ইন্টারনেট সংযোগ ও আইসিটি সুবিধাও দেয়ার কাজ করে থাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন এ অধিদপ্তর।
শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
নারায়নগঞ্জে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবকাঠামো নির্মাণ কাজই হয়নি; অথচ এসব কাজের নামে ‘অগ্রিম বিল’ দেয়া হয়েছে। এই অভিযোগে গত ৩ ফেব্রুয়ারি জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী সম্পা সাহাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) প্রধান কার্যালয় থেকে। নোটিশের পরদিন তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করেই আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছেন।
নোটিশে বলা হয়েছে, একটি তদন্ত কমিটি গত ২ ফেব্রুয়ারি নারায়নগঞ্জের সার্বিক কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে ‘উন্নয়ন কাজের বাস্তব অগ্রগতির সঙ্গে আর্থিক ব্যয়ের গরমিল পরিলক্ষিত হয়।’
‘এমতাবস্থায়, আর্থিক অনিয়মের কারণে কেন তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিবিধামা ২০১৮ এর বিধান মোতাবেক উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তার যথাযথ ব্যাখ্যা আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রধান প্রকৌশলী বরাবর দাখিল করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।’
ইইডির একাধিক প্রকৌশলী জানিয়েছেন, সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ‘শিক্ষা ছুটির’ আদেশ ভাগিয়েছেন সম্পা সাহা। কিন্তু আমেরিকায় যাওয়ার আগে ইইডির প্রধান প্রকৌশলীর কাছ থেকে কোনো ‘অনাপত্তিপত্র’ নেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়নগঞ্জের সরকারি ইসলামিক এডুকেশন ট্রাস্ট, আইটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি মহিলা হাইস্কুল এবং একটি সরকারি কলেজে অবকাঠামো নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এ পর্যন্ত যে পরিমাণ বিল দেয়া হয়েছে, তাতে অন্তত পাঁচ কোটি টাকার কোনো কাজ হয়নি।
কিশোরগঞ্জের নির্বাহী
প্রকৌশলীও আমেরিকায়
ইইডির কিশোরগঞ্জ অফিসের একজন প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, ‘জেলায় ২৫টি প্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন নির্মাণ ও পুরনো ভবন সংস্কারের জন্য অগ্রিম বিল দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে তিনটি কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলো হয়নি। সরকার পরির্বতনের পর অনেক ঠিকাদার আত্মগোপনে চলে গেছেন। আর জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম শিক্ষা ছুটিতে আমেরিকায় চলে গেছেন।’ তিনি সেখানে চাকরি নিয়েছেন বলে তার এক সহকর্মী জানিয়েছেন।
কিশোরগঞ্জের শিক্ষাভবন নির্মাণ কাজগুলো ঠিকমত হচ্ছে না জানিয়ে ওই প্রকৌশলী বলেন, ‘সম্প্রতি প্রধান কার্যালয় (ইইডি) থেকে একটি টিম তদন্ত কাজে এখানে এসেছিলেন। তারাও নির্মাণ কাজের অগ্রগতিতে হতাশা ব্যক্ত করেছেন।’
কিশোরগঞ্জ জেলায় অন্তত ২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একাডেমিক ভবন নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য বিভিন্ন ঠিকাদারকে অন্তত ২০ কোটি টাকা ‘অগ্রিম’ দিয়ে দীর্ঘ শিক্ষা ছুটিতে আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী।
শতাধিক ঠিকাদার আত্মগোপনে
ইইডি থেকে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শতাধিক ঠিকাদার আত্মগোপনে চলে গেছেন।
এতে বিভিন্ন জেলায় শিক্ষা ভবন নির্মাণ ও সংস্কারে ‘অগ্রিম’ বিল দিয়ে চাপের মুখে পরেছে ইইডি। ওইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্মাণ ও সংস্কার কাজ স্থবির হয়ে পরেছে।
অগ্রিম বিল পরিশোধ করা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলিকে সমপরিমাণ কাজ সম্পন্ন করতে গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল ইইডির প্রধান কার্যালয় থেকে। কিন্তু তা খুব একটা কাজে আসেনি।
এর পর সম্প্রতি প্রধান কার্যালয়ের তিন শীর্ষ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়; যারা বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের সদস্য ছিলেন।
এরপর গত ১০ ফেব্রুয়ারি একদিনেই ১৩ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীকে বদলি করা হয়েছে। এদিন আরও দশ জেলায় নতুন নির্বাহী প্রকৌশলী পদায়ন দেয়া হয়েছে।
কয়েকজন প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বদলি হওয়া ১৩ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীর মধ্যে ফেনী, নরসিংদী, ঝালকাটি, চাপাঁইনবাবগঞ্জ ও বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে কোনো ‘অভিযোগ নেই’। অথচ তাদেরও ‘শাস্তিমূলক’ বদলি করা হয়েছে। এ নিয়ে প্রকৌশলীদের মধ্যে ‘অসন্তোষ’ রয়েছে
মন্ত্রণালয় ও মাউশির ‘অসন্তোষ’
জানা গেছে, সম্প্রতি রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত দু’দিনের বিশেষ সভায় প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের ‘অগ্রিম’ বিল ভাগিয়ে নেয়ার ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত এক সভায় ‘সরকারি কলেজসমূহে বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ প্রকল্পের’ পরিচালক (পিডি) ‘স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজ ও স্বরুপকাঠি সরকারি কলেজের’ নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রে কিছুটা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।’
এই প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণ কাজের তদারকি করছেন ইইডির প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান।
ওই দুটি কলেজের ভবন নির্মাণের ‘চ্যালেঞ্জের’ বিষয়ে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘একটি কলেজে সমস্যা হয়েছিল; আমরা রিটেন্ডার করেছি, কাজ শুরু হয়েছে। আরেকটি কলেজে কাজের ঠিকাদার....সরকার পরিবর্তনের পর পালিয়ে গেছে। সেটিও রিটেন্ডার হচ্ছে।’
শিক্ষা ভবন নির্মাণে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ও ধীরগতিতে মাউশির অধীনে বাস্তবায়ন হওয়া প্রকল্পের কর্মকর্তারাও চাপে পরছেন। এই চাপ লাগবে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল পরিদর্শনে গেছেন ইইডির প্রধান প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন। সেখানে তিনি শেরপুর, জামালপুর ও সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। এরপর প্রধান প্রকৌশলী যান বগুড়ায়। সেখানে তিনি গতকাল লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ অন্যান্য প্রকৌশলীদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
ঢাকায় অগ্রিম বিল নিয়ে ‘ধুয়াশা’
ঢাকার মিরপুরে আব্বাস উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে অবকাঠামো নির্মাণের জন্য একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় দেড় কোটি টাকা অগ্রিম দেয়া হয়। এরপর নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে দেরিতে নির্মাণ কাজ শুরু করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এছাড়া ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজ, দক্ষিণ খানের মৈনের টেক উচ্চ বিদ্যালয়, কদমতলী থানার নতুন জুরাইন কেএম মঈনউদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয়, উত্তরা থানার উত্তরা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, দারুস সালাম থানার হযরত শাহ আলী মডেল হাই স্কুলসহ রাজধানীর অন্তত ২৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজের জন্য অগ্রিম বিল দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
অগ্রিম বিলের বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্য বদলি হওয়া ইইডির ঢাকা মেট্রোর নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল করিম সংবাদকে বলেন, ‘আমি এক বছরেরও কম সময় এখানে ছিলাম। আমি কোনো অগ্রিম দেয়নি। এই অগ্রিম বিল আগে দেয়া ছিল; আমি নানাভাবে ম্যানেজ করে ঠিকাদারদের কাছ থেকে অন্তত ২৫টি প্রতিষ্ঠানের কাজ সম্পন্ন করিয়েছি।’
জাহিদুল করিমের আগে ঢাকা মেট্রোর নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন হাসান শওকত, যিনি বর্তমানে প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আমি এক টাকাও কাউকে অগ্রিম বিল দেয়নি। আমার অগোচরে সহকারি বা উপসহকারি প্রকৌশলীরা অগ্রিম বিল দিয়ে থাকলে এর দায় তাদেরই।’
কারিগরি শিক্ষার অবকাঠামো নির্মাণে বিপত্তি
২০১৩ সালে সারাদেশের ১০০টি উপজেলায় একটি করে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণের সিন্ধান্ত নিয়েছিল। ২০১৪ সালের শুরুতেই দুই বছর মেয়াদী এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু হয়। এরপর তিন দফা মেয়াদ ও প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হলেও বাস্তবায়ন শেষ হচ্ছে না।
কারণ ১০০টি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজের অন্তত ১২টিই দেয়া হয় ‘ডালি’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকও ‘আত্মগোপনে’ চলে গেছেন বলে প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন।
তারা জানান, ‘ডালির’ কব্জায় থাকা ১২টি কাজের মধ্যে রাজবাড়ী জেলার একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম মোটামুটি শেষ হয়েছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলির নির্মাণ কাজ স্থবির হয়ে পরেছে। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা, টাঙ্গাইল, মৌলভীবাজার, কুমিল্লা, মুন্সিগঞ্জে একটি করে এবং বাগেরহাটে দুটি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ অনেকটা বন্ধই রয়েছে বলে প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন।
এর মধ্যে গাইবান্ধাসহ কয়েকটি জেলায় কারিগরি প্রতিষ্ঠান নির্মাণের জন্য ‘মোটা অঙ্কের অগ্রিম’ বিল দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এই অনিয়মের জন্য জেলা পর্যায়ের প্রকৌশলী ও ঠিকাদাররা দায়ি হলেও তাদের বিরুদ্ধে ‘শাস্তিমূলক পদক্ষেপ’ নেয়া হচ্ছে না। অথচ এসব কাজের জন্য ‘অহেতুক’ ইইডির প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ফাহিম ইকবালকে সম্প্রতি একাধিক সভায় ‘শাসানো’ হয়েছে।
সিলেটে বারবার ‘নিস্ফল তদন্ত’
দু’জন প্রকৌশলী জানিয়েছেন, গত পাঁচ বছরে ইইডির সিলেট অঞ্চলে ১২০টির মতো প্রতিষ্ঠানে নির্মাণ কাজের নামে অগ্রিম বিল পরিশোধ করা হয়েছে। অগ্রিম বিল নিয়ে দু’জন ঠিকাদার মারা গেছেন এবং অন্তত তিনজন যুক্তরাজ্যে চলে গেছেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাকিরাও কাজ বন্ধ রেখেছেন। ওই সময়কার সিলেট অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলীকে পরবর্তীতে পদোন্নতি দিয়ে ময়মনসিংহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এসব অনিয়ম খতিয়ে দেখতে গত বছরের ২ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ নেওয়ারা জাহানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। একই বিভাগের যুগ্ম সচিব মিজানুর রহমানকে সদস্য ও উপসচিব মোহাম্মদ আলতাফ হোসেনকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।
এরপর অভিযুক্ত প্রকৌশলীর ‘তদবিরের প্রভাবে’ তদন্ত কমিটির আহ্বায়ককে বাদ দিয়ে তার ‘পছন্দের’ ব্যক্তিকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপরও তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি।
পরবর্তীতে ইইডি কর্তৃপক্ষ নিজেরাই একটি টিম পাঠিয়ে সিলেটের অনিয়মের ঘটনাগুলো তদন্ত করায়। এ কমিটি একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন দেয়, সেটিও আলোর মুখে দেখেনি।
ওই কমিটি সিলেট জেলার অন্তত ৮০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণে ‘নিয়মহির্ভূতভাবে’ ১৫ কোটি টাকার অগ্রিম বিল দেয়ার তথ্য প্রমাণ পায়। এই অগ্রিম বিল ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেয়া হয়েছিল; কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
এবার ইইডির পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) ড. অমিতাভ চক্রবর্ত্তীকে সিলেটের যাবতীয় নির্মাণের অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার নেতৃত্বে একটি টিম শিগগিরই সিলেটের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে যাচ্ছেন।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন নির্মাণ, বিদ্যমান ভবনের সম্প্রসারণ, রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামতসহ ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন এবং আসবাব সরবরাহ করে। এ ছাড়া মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও আইসিটি ল্যাব স্থাপন, ইন্টারনেট সংযোগ ও আইসিটি সুবিধাও দেয়ার কাজ করে থাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন এ অধিদপ্তর।