নাগরিক ভোগান্তি কমাতে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশ
দেশের বিভিন্ন খাত ডিজিটাইজ করা হলেও এখনো নাগরিক সেবা পেতে ভোগান্তির শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষকে। এই বাস্তবতা মাথায় রেখে মাঠ প্রশাসনকে আরও কার্যকরভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
রোববার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে তিন দিনের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “শেষ বয়সে কোথাও যেতে হলে পাসপোর্ট দরকার হয়। কিন্তু জন্ম নিবন্ধন না থাকলে পাসপোর্ট পাওয়া যায় না। অথচ টাকা দিলে ঠিকই ব্যবস্থা হয়ে যায়। টাকা দিলে যদি পাওয়া যায়, তাহলে টাকা ছাড়া কেন পাওয়া যাবে না? এটা তো নাগরিকের অধিকার।”
তিনি বলেন, “এই সিস্টেম আমরা চালু করতে পারছি না কেন? নাগরিকের জন্মসনদ তার অবশ্যই প্রাপ্য। সরকার যদি এটি দিতে ব্যর্থ হয়, তবে সেটি কোনো অজুহাত হতে পারে না। এটি নিশ্চিত করতে হবে এবং এজন্য সৃজনশীল হতে হবে।”
প্রধান উপদেষ্টা ডিজিটাল সেবাকে বাস্তবে কার্যকর করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, “জন্মসনদ না থাকলে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পাওয়া যায় না, এনআইডি না থাকলে পাসপোর্ট মেলে না—এভাবে সব কিছু আটকে যাচ্ছে। অথচ এসব সেবা অনলাইনে পাওয়ার কথা ছিল। আমরা এখনো পুরোপুরি ই-পাসপোর্ট বাস্তবায়ন করতে পারিনি, এখনো মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) দেওয়া হচ্ছে। এটি দ্রুত করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “অনলাইনে সেবা চালু হয়েছে বললেই তো হবে না, সেটি বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, সেটাই দেখার বিষয়। ভূমি মন্ত্রণালয় বলছে, সব অনলাইনে হয়েছে, কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। কেন এখনো জমির কাগজ অনলাইনে পাওয়া যায় না? কেন মানুষ এখনো হয়রানির শিকার হয়? ডিসিদের এসব বিষয়ে নজর দিতে হবে।”
মুহাম্মদ ইউনূস ডিসিদের মধ্যে নাগরিক সেবার প্রতিযোগিতা চান, যাতে তারা সেবাগুলো আরও দ্রুত ও কার্যকরভাবে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারেন। তিনি বলেন, “এক জেলা প্রথম হবে, কেউ দ্বিতীয়, কেউ তৃতীয়। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়ন আরও গতিশীল হবে। এক জেলা ঘোষণা দিতে পারে যে তারা এমআরপি বন্ধ করে পুরোপুরি ই-পাসপোর্টে চলে গেছে। এ ধরনের উদাহরণ তৈরি করতে হবে।”
তিনি বলেন, “অনলাইনের জন্য এক জেলা যদি সবার আগে ভূমি রেকর্ড ডিজিটাইজ করে, তাহলে অন্য জেলাগুলোও অনুসরণ করবে। একজন ডিসি চাইলে এসব পরিবর্তন আনতে পারেন।”
প্রধান উপদেষ্টা ডিসিদের জনগণের জন্য কাজ করার মানসিকতা গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “ছোট ছোট কাজ দিয়েই বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব। জেলা প্রশাসকরা যদি শুধু কয়েকটি স্কুলে গিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন, তাহলে অনেক অনিয়ম দূর করা সম্ভব। এ ধরনের উদ্যোগ অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করবে।”
তিনি আরও বলেন, “একজন ডিসির ব্যক্তিগত উদ্যোগেও সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে, যা মানুষ কখনো ভোলে না। নাগরিকরা মনে রাখে, কোনো একজন ডিসি তার জেলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছিলেন। এটি সরকারি নির্দেশনার বাইরেও একজন কর্মকর্তার ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতার পরিচয় দেয়।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমরা এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে আছি। এটি আমাদের জন্য একটি বড় সুযোগ। আমাদের হাতে অনেক কাজ আছে, যা কঠিন কিছু নয়, বরং সহজেই করা সম্ভব। আমি বলছি না, শতভাগ করতে হবে। কিন্তু অন্তত ১০-২০ শতাংশ হলেও পরিবর্তন আনতে হবে।”
তিনি ডিসিদের উদ্দেশে বলেন, “নিজেদের উদ্যোগে পরিবর্তন আনার আনন্দ আছে। ‘আমি এটি সবার আগে করে ফেলেছি’—এই তৃপ্তি যেন কেউ হাতছাড়া না করেন।”
নাগরিক ভোগান্তি কমাতে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশ
রোববার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
দেশের বিভিন্ন খাত ডিজিটাইজ করা হলেও এখনো নাগরিক সেবা পেতে ভোগান্তির শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষকে। এই বাস্তবতা মাথায় রেখে মাঠ প্রশাসনকে আরও কার্যকরভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
রোববার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে তিন দিনের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “শেষ বয়সে কোথাও যেতে হলে পাসপোর্ট দরকার হয়। কিন্তু জন্ম নিবন্ধন না থাকলে পাসপোর্ট পাওয়া যায় না। অথচ টাকা দিলে ঠিকই ব্যবস্থা হয়ে যায়। টাকা দিলে যদি পাওয়া যায়, তাহলে টাকা ছাড়া কেন পাওয়া যাবে না? এটা তো নাগরিকের অধিকার।”
তিনি বলেন, “এই সিস্টেম আমরা চালু করতে পারছি না কেন? নাগরিকের জন্মসনদ তার অবশ্যই প্রাপ্য। সরকার যদি এটি দিতে ব্যর্থ হয়, তবে সেটি কোনো অজুহাত হতে পারে না। এটি নিশ্চিত করতে হবে এবং এজন্য সৃজনশীল হতে হবে।”
প্রধান উপদেষ্টা ডিজিটাল সেবাকে বাস্তবে কার্যকর করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, “জন্মসনদ না থাকলে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পাওয়া যায় না, এনআইডি না থাকলে পাসপোর্ট মেলে না—এভাবে সব কিছু আটকে যাচ্ছে। অথচ এসব সেবা অনলাইনে পাওয়ার কথা ছিল। আমরা এখনো পুরোপুরি ই-পাসপোর্ট বাস্তবায়ন করতে পারিনি, এখনো মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) দেওয়া হচ্ছে। এটি দ্রুত করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “অনলাইনে সেবা চালু হয়েছে বললেই তো হবে না, সেটি বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, সেটাই দেখার বিষয়। ভূমি মন্ত্রণালয় বলছে, সব অনলাইনে হয়েছে, কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। কেন এখনো জমির কাগজ অনলাইনে পাওয়া যায় না? কেন মানুষ এখনো হয়রানির শিকার হয়? ডিসিদের এসব বিষয়ে নজর দিতে হবে।”
মুহাম্মদ ইউনূস ডিসিদের মধ্যে নাগরিক সেবার প্রতিযোগিতা চান, যাতে তারা সেবাগুলো আরও দ্রুত ও কার্যকরভাবে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারেন। তিনি বলেন, “এক জেলা প্রথম হবে, কেউ দ্বিতীয়, কেউ তৃতীয়। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়ন আরও গতিশীল হবে। এক জেলা ঘোষণা দিতে পারে যে তারা এমআরপি বন্ধ করে পুরোপুরি ই-পাসপোর্টে চলে গেছে। এ ধরনের উদাহরণ তৈরি করতে হবে।”
তিনি বলেন, “অনলাইনের জন্য এক জেলা যদি সবার আগে ভূমি রেকর্ড ডিজিটাইজ করে, তাহলে অন্য জেলাগুলোও অনুসরণ করবে। একজন ডিসি চাইলে এসব পরিবর্তন আনতে পারেন।”
প্রধান উপদেষ্টা ডিসিদের জনগণের জন্য কাজ করার মানসিকতা গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “ছোট ছোট কাজ দিয়েই বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব। জেলা প্রশাসকরা যদি শুধু কয়েকটি স্কুলে গিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন, তাহলে অনেক অনিয়ম দূর করা সম্ভব। এ ধরনের উদ্যোগ অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করবে।”
তিনি আরও বলেন, “একজন ডিসির ব্যক্তিগত উদ্যোগেও সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে, যা মানুষ কখনো ভোলে না। নাগরিকরা মনে রাখে, কোনো একজন ডিসি তার জেলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছিলেন। এটি সরকারি নির্দেশনার বাইরেও একজন কর্মকর্তার ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতার পরিচয় দেয়।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমরা এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে আছি। এটি আমাদের জন্য একটি বড় সুযোগ। আমাদের হাতে অনেক কাজ আছে, যা কঠিন কিছু নয়, বরং সহজেই করা সম্ভব। আমি বলছি না, শতভাগ করতে হবে। কিন্তু অন্তত ১০-২০ শতাংশ হলেও পরিবর্তন আনতে হবে।”
তিনি ডিসিদের উদ্দেশে বলেন, “নিজেদের উদ্যোগে পরিবর্তন আনার আনন্দ আছে। ‘আমি এটি সবার আগে করে ফেলেছি’—এই তৃপ্তি যেন কেউ হাতছাড়া না করেন।”