দেশের বিভিন্ন খাত ডিজিটাইজ করা হলেও নাগরিকদের ভোগান্তি পুরোপুরি লাঘব হয়নি উল্লেখ করে সেই বাস্তবতা মাথায় রেখে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ডিসিদের সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি ডিসিদের উদ্দেশে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বা শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা মস্তবড় ইস্যু। এটা আমাদের এখন এক নম্বর বিবেচ্য বিষয়। এখানে যেন আমরা বিফল না হই, কারণ এটাতেই আমাদের সমস্ত অর্জন।’
রবিবার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে তিন দিনের ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। সব নাগরিকের সুরক্ষা বিধান করা সরকারের দায়িত্ব উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এখন থেকে যেসব কর্মসূচি গ্রহণ করবো, সেখানে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থাকবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও দেশের সব মানুষকে সুরক্ষা প্রদান করা। নারী ও শিশু এবং সংখ্যালঘুসহ সব নাগরিকের সুরক্ষা দেয়া আমাদের দায়িত্ব। কে কোন মতবাদে বা রাজনৈতিক চেতনায় বিশ্বাসী সেটা বিবেচ্য নয়। কারণ সরকার দেশের সব মানুষের সরকার। তাই তাকে সুরক্ষা দেয়া আমার কাজ’।
সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা ‘মস্তবড়’ দায়িত্ব:
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার যেন ক্ষুণ্য না হয় সেদিকে মাঠপর্যায়ের প্রশাসনকে সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দেয়া মস্তবড় দায়িত্ব। এই ইস্যুতে সারা দুনিয়া নজর রাখছে আমাদের ওপরে। একটা ছোট ঘটনা সারা দুনিয়ায় চাউর হয়ে যায়।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে বলেছি আপনারা সংখ্যালঘু হিসেবে কোনোকিছু দাবি করবেন না, দেশের নাগরিক হিসেবে দাবি করবেন। কারণ দেশের নাগরিক হিসেবে সংবিধান আপনাকে যে অধিকার দিয়েছে সেই অধিকার রাষ্ট্রের কাছে আপনার প্রাপ্য। এটা দাবি নয়, আপনার পাওনা।’
বাজারদর নিয়ন্ত্রণ ও চাঁদাবাজি দূর করা :
ডিসিদের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারদর নিয়ন্ত্রণে রাখতে মাঠপর্যায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাজার দর নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এটা নিয়ে জেলা প্রশাসকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হতে পারে কার জেলায় বাজারদর কতটা ভালো নিয়ন্ত্রণে আছে। কোনো চাঁদাবাজি বা অন্য যেসব অসুবিধা থাকে সেগুলো দূর করতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা ডিসিদের ভয়-ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে নিজের মতো করে মাঠ প্রশাসন পরিচালনা করার আহ্বান জানান। তিনি সরকার প্রধান বা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অহেতুক স্তুতি বা প্রশংসা করার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম ও পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক ছাবেদ আলী বক্তব্য দেন।
পাসপোর্ট ও জন্মনিবন্ধনে হয়রানি বন্ধের নির্দেশ :
ডিসিদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘শেষ বয়সে কোথাও কোথাও যেতে... একটা পাসপোর্ট দরকার। পাসপোর্ট করা হয়নি জন্ম নিবন্ধন নেই বলে, জন্ম নিবন্ধন লাগবে, আমার আমলে জন্মনিবন্ধন কে করতো জানিও না ইত্যাদি। কিন্তু পাওয়া যায় পয়সা দিলে ঠিকই চলে আসে; পয়সা দিলে যখন ঠিকই চলে আসে- তাহলে পয়সা না দিলেও আসার কথা।’
এই ‘সিস্টেমটা’ কেন করা যাচ্ছে না- এমন প্রশ্ন রেখে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা তো একজন নাগরিকের অবশ্য প্রাপ্য- আমার জন্মসনদ। সরকার ব্যবস্থা করতে পারেনি, এই বলে অজুহাত দিয়ে তো চলবে না। নিশ্চয়ই ব্যবস্থা আছে- কিছু একটা করতে হবে।’ পাসপোর্টের বিষয়ে ডিসিদের উদ্দেশে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা আইন করে দিয়েছি, এখন থেকে পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে না; সে কথাটা গ্রামেগঞ্জে গিয়েছে কিনা?’
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘ওই যে বললাম যে- টাকা দিলে করে দিতে পারে, সেটা সরকার কেন পারবে না? কাজেই আমাদের সেই ব্যবস্থা করতে হবে; জন্মসনদ তার প্রাপ্য- যেকোনো সময়, যে বয়সেই চায়- তাকে দেবার ব্যবস্থা করতে হবে।’
কী করতে হবে এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘ওই যে বললাম সৃজনশীল হতে হবে। এটা থেকে নিয়ম বের করতে হবে; কারণ ওইটার ওপরে সমস্ত কিছু নির্ভর; সেই জন্মসনদ জন্মসূত্রে আমি বাংলাদেশি এটার একটা প্রমাণ, দালিলিক প্রমাণ- এই দলিল দিয়ে আমি ভবিষ্যতে যা কিছু করি।’
নাগরিক সেবাকে কীভাবে পুরোপুরি অনলাইনভিত্তিক করা যায়, সেদিকে ডিসিদের নজর দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ওইটা (জন্মসনদ) না হলে এনআইডি পাওয়া যাচ্ছে না, এনআইডি না হলে পাসপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে না, সব আটকে গেল- সবকিছু। আমি বলছি যে- এটা সবার একইসঙ্গে তার সমস্ত কিছু হতে হবে, যদি আমার জন্মসনদ থেকে থাকে, তাহলে আমি এনআইডি পাব।’
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এখন অনলাইনে পাওয়ার কথা- আমরা অনলাইনে পাচ্ছি কিনা, অনলাইনে এখন ই-পাসপোর্ট হচ্ছে কিনা, এখনও দেখি ওই এমআরপি এমআরপি করছে। কেন হচ্ছে না? আইন তো আছে, আমি বলছি রাতারাতি সব হয়ে গেছে- এটাও আমি আশা করি না; শুরু তো করতে হবে।’
সবকিছু ডিজিটাল হওয়ার কথা বলা হলেও প্রান্তিক পর্যায়ের চিত্র যে তা নয় সেটিই ডিসিদের মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
অনলাইন সেবায় ভোগান্তি কেন প্রশ্ন রেখে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন জমি রেজিস্ট্রি করতে পারছে না অমুক করতে পারছে না, কর দিতে পারছে না। এখানে আমরা শুনছি যে সব অনলাইনের ব্যবস্থা হয়ে গেছে, হয়েই যদি যায়- সেটা বাস্তবায়ন হচ্ছে না? কিসে আটকে গেলাম? কেন এখনও জমির রেকর্ডপত্র আমরা অনলাইনে পাই না, করতে পারি না? জমি বেচা-কেনা আমরা করতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘ভূমি মন্ত্রণালয় বলছে যে আমরা সব করে ফেলছি, কিন্তু ইমপ্লিমেন্ট করতে পারছি না; ধীরে সুস্থে হচ্ছে না, কেন করছি না- এটাই হলো আমাদের অপারগতা। খেলোয়াড় হিসেবে আমরা সেই কাজটা করতে পারছি না, সেই খেলোয়াড়ের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে যে অনলাইন মানে অনলাইন; আর কিচ্ছু থাকবে না।’
নাগরিক সেবাকে দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে ডিসিদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চেয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘অনলাইনের জন্য এক জেলা ফার্স্ট হবে, ‘আমি সবটা করে ফেলেছি অথবা আমি ই-পাসপোর্ট করে ফেলেছি, এটা হান্ড্রেড পার্সেন্ট আমার, আমি জমির যত কাজ আছে সব অনলাইন করে ফেলেছি, ফার্স্ট হয়েছি আমি’- এটা তো হতে পারে।’
ছোট ছোট কাজের মাধ্যমেই সমাজের বড় সংকটের সমাধান করা যায় মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘শিক্ষা, শিক্ষার ব্যাপারে বহু স্তর আছে, আমি ওর মধ্যে যাব না। শুধু তোমাদের কাছে এটুকু বলার- প্রাথমিক শিক্ষা, একটু গিয়ে দেখা- কী করা যায় এটাকে। .....একটু দেখা দিলে, স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বললে- অনেক অনিয়ম-বেনিয়ম আছে- সেগুলো তো আছেই, তার মধ্যেও যদি একটি নিয়ম সৃষ্টি করা যায়; একজন জেলা প্রশাসক বললে তা সৃষ্টি করা যায়, তার সেই ক্ষমতা আছে। শুধু একটু নজর দেয়ার ব্যাপার।’
ডিসিদের ভালো কাজ দিয়ে নাগরিকদের মন জয় করার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বড় কাজ তো আছেই, করবোই- এই ছোট কাজগুলো দিয়েই কিন্তু বড় কাজটা হয়। মানুষ বলে যে- ‘হ্যাঁ, আমাদের সময় উনি যখন ডিসি ছিলেন, আমাদের এখানে উনি এই কাজটা করে গেছেন’। এরকম স্মৃতি আমরা নাগরিকদের কাছ থেকে শুনি, ‘উনি যখন, অমুক যখন ডিসি ছিল- উনি এই কাজটা করে দিয়েছেন।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বলেন, ‘অবদানটা মানুষ স্মরণ করে, মানুষ ভোলে না- ওই যে অবদানটা হয়েছে, সেটা ব্যক্তিগত ইচ্ছাই। এটা সরকারের হুকুমে হয় নাই, সরকার সবাইকে হুকুম দিছে- কিন্তু একজন ব্যক্তিগতভাবে সেটাকে অন্য রকমভাবে, অন্য ভঙ্গিতে নিয়ে এসছে এবং মানুষের মন জয় করেছে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বপালনকে মানুষের সেবা করার বড় সুযোগ উল্লেখ করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমাদের সুযোগ এই যে- আমরা অর্ন্তবর্তীকালীন সময়ে আছি, এটা একটা মস্তবড় সুযোগ, আমাদের হাতে অনেকগুলো কাজ এবং খুব সহজ কাজ, কঠিন কাজ না এবং আমি বলছিলাম যে হান্ড্রেড পার্সেন্ট করতে হবে না। আমি বললাম যে টেন পার্সেন্ট করো, ২০ পার্সেন্ট করো, ৩০ পার্সেন্ট করো, এক নম্বর হও- এক নম্বর হওয়ার চেষ্টা করো; কারণ তোমরা তো সবাই একই লাইনের মধ্যে একই পরিস্থিতিতে আছো।’
রোববার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
দেশের বিভিন্ন খাত ডিজিটাইজ করা হলেও নাগরিকদের ভোগান্তি পুরোপুরি লাঘব হয়নি উল্লেখ করে সেই বাস্তবতা মাথায় রেখে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ডিসিদের সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি ডিসিদের উদ্দেশে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বা শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা মস্তবড় ইস্যু। এটা আমাদের এখন এক নম্বর বিবেচ্য বিষয়। এখানে যেন আমরা বিফল না হই, কারণ এটাতেই আমাদের সমস্ত অর্জন।’
রবিবার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে তিন দিনের ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। সব নাগরিকের সুরক্ষা বিধান করা সরকারের দায়িত্ব উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এখন থেকে যেসব কর্মসূচি গ্রহণ করবো, সেখানে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থাকবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও দেশের সব মানুষকে সুরক্ষা প্রদান করা। নারী ও শিশু এবং সংখ্যালঘুসহ সব নাগরিকের সুরক্ষা দেয়া আমাদের দায়িত্ব। কে কোন মতবাদে বা রাজনৈতিক চেতনায় বিশ্বাসী সেটা বিবেচ্য নয়। কারণ সরকার দেশের সব মানুষের সরকার। তাই তাকে সুরক্ষা দেয়া আমার কাজ’।
সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা ‘মস্তবড়’ দায়িত্ব:
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার যেন ক্ষুণ্য না হয় সেদিকে মাঠপর্যায়ের প্রশাসনকে সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দেয়া মস্তবড় দায়িত্ব। এই ইস্যুতে সারা দুনিয়া নজর রাখছে আমাদের ওপরে। একটা ছোট ঘটনা সারা দুনিয়ায় চাউর হয়ে যায়।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে বলেছি আপনারা সংখ্যালঘু হিসেবে কোনোকিছু দাবি করবেন না, দেশের নাগরিক হিসেবে দাবি করবেন। কারণ দেশের নাগরিক হিসেবে সংবিধান আপনাকে যে অধিকার দিয়েছে সেই অধিকার রাষ্ট্রের কাছে আপনার প্রাপ্য। এটা দাবি নয়, আপনার পাওনা।’
বাজারদর নিয়ন্ত্রণ ও চাঁদাবাজি দূর করা :
ডিসিদের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারদর নিয়ন্ত্রণে রাখতে মাঠপর্যায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাজার দর নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এটা নিয়ে জেলা প্রশাসকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হতে পারে কার জেলায় বাজারদর কতটা ভালো নিয়ন্ত্রণে আছে। কোনো চাঁদাবাজি বা অন্য যেসব অসুবিধা থাকে সেগুলো দূর করতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা ডিসিদের ভয়-ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে নিজের মতো করে মাঠ প্রশাসন পরিচালনা করার আহ্বান জানান। তিনি সরকার প্রধান বা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অহেতুক স্তুতি বা প্রশংসা করার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম ও পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক ছাবেদ আলী বক্তব্য দেন।
পাসপোর্ট ও জন্মনিবন্ধনে হয়রানি বন্ধের নির্দেশ :
ডিসিদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘শেষ বয়সে কোথাও কোথাও যেতে... একটা পাসপোর্ট দরকার। পাসপোর্ট করা হয়নি জন্ম নিবন্ধন নেই বলে, জন্ম নিবন্ধন লাগবে, আমার আমলে জন্মনিবন্ধন কে করতো জানিও না ইত্যাদি। কিন্তু পাওয়া যায় পয়সা দিলে ঠিকই চলে আসে; পয়সা দিলে যখন ঠিকই চলে আসে- তাহলে পয়সা না দিলেও আসার কথা।’
এই ‘সিস্টেমটা’ কেন করা যাচ্ছে না- এমন প্রশ্ন রেখে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা তো একজন নাগরিকের অবশ্য প্রাপ্য- আমার জন্মসনদ। সরকার ব্যবস্থা করতে পারেনি, এই বলে অজুহাত দিয়ে তো চলবে না। নিশ্চয়ই ব্যবস্থা আছে- কিছু একটা করতে হবে।’ পাসপোর্টের বিষয়ে ডিসিদের উদ্দেশে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা আইন করে দিয়েছি, এখন থেকে পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে না; সে কথাটা গ্রামেগঞ্জে গিয়েছে কিনা?’
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘ওই যে বললাম যে- টাকা দিলে করে দিতে পারে, সেটা সরকার কেন পারবে না? কাজেই আমাদের সেই ব্যবস্থা করতে হবে; জন্মসনদ তার প্রাপ্য- যেকোনো সময়, যে বয়সেই চায়- তাকে দেবার ব্যবস্থা করতে হবে।’
কী করতে হবে এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘ওই যে বললাম সৃজনশীল হতে হবে। এটা থেকে নিয়ম বের করতে হবে; কারণ ওইটার ওপরে সমস্ত কিছু নির্ভর; সেই জন্মসনদ জন্মসূত্রে আমি বাংলাদেশি এটার একটা প্রমাণ, দালিলিক প্রমাণ- এই দলিল দিয়ে আমি ভবিষ্যতে যা কিছু করি।’
নাগরিক সেবাকে কীভাবে পুরোপুরি অনলাইনভিত্তিক করা যায়, সেদিকে ডিসিদের নজর দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ওইটা (জন্মসনদ) না হলে এনআইডি পাওয়া যাচ্ছে না, এনআইডি না হলে পাসপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে না, সব আটকে গেল- সবকিছু। আমি বলছি যে- এটা সবার একইসঙ্গে তার সমস্ত কিছু হতে হবে, যদি আমার জন্মসনদ থেকে থাকে, তাহলে আমি এনআইডি পাব।’
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এখন অনলাইনে পাওয়ার কথা- আমরা অনলাইনে পাচ্ছি কিনা, অনলাইনে এখন ই-পাসপোর্ট হচ্ছে কিনা, এখনও দেখি ওই এমআরপি এমআরপি করছে। কেন হচ্ছে না? আইন তো আছে, আমি বলছি রাতারাতি সব হয়ে গেছে- এটাও আমি আশা করি না; শুরু তো করতে হবে।’
সবকিছু ডিজিটাল হওয়ার কথা বলা হলেও প্রান্তিক পর্যায়ের চিত্র যে তা নয় সেটিই ডিসিদের মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
অনলাইন সেবায় ভোগান্তি কেন প্রশ্ন রেখে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন জমি রেজিস্ট্রি করতে পারছে না অমুক করতে পারছে না, কর দিতে পারছে না। এখানে আমরা শুনছি যে সব অনলাইনের ব্যবস্থা হয়ে গেছে, হয়েই যদি যায়- সেটা বাস্তবায়ন হচ্ছে না? কিসে আটকে গেলাম? কেন এখনও জমির রেকর্ডপত্র আমরা অনলাইনে পাই না, করতে পারি না? জমি বেচা-কেনা আমরা করতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘ভূমি মন্ত্রণালয় বলছে যে আমরা সব করে ফেলছি, কিন্তু ইমপ্লিমেন্ট করতে পারছি না; ধীরে সুস্থে হচ্ছে না, কেন করছি না- এটাই হলো আমাদের অপারগতা। খেলোয়াড় হিসেবে আমরা সেই কাজটা করতে পারছি না, সেই খেলোয়াড়ের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে যে অনলাইন মানে অনলাইন; আর কিচ্ছু থাকবে না।’
নাগরিক সেবাকে দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে ডিসিদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চেয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘অনলাইনের জন্য এক জেলা ফার্স্ট হবে, ‘আমি সবটা করে ফেলেছি অথবা আমি ই-পাসপোর্ট করে ফেলেছি, এটা হান্ড্রেড পার্সেন্ট আমার, আমি জমির যত কাজ আছে সব অনলাইন করে ফেলেছি, ফার্স্ট হয়েছি আমি’- এটা তো হতে পারে।’
ছোট ছোট কাজের মাধ্যমেই সমাজের বড় সংকটের সমাধান করা যায় মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘শিক্ষা, শিক্ষার ব্যাপারে বহু স্তর আছে, আমি ওর মধ্যে যাব না। শুধু তোমাদের কাছে এটুকু বলার- প্রাথমিক শিক্ষা, একটু গিয়ে দেখা- কী করা যায় এটাকে। .....একটু দেখা দিলে, স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বললে- অনেক অনিয়ম-বেনিয়ম আছে- সেগুলো তো আছেই, তার মধ্যেও যদি একটি নিয়ম সৃষ্টি করা যায়; একজন জেলা প্রশাসক বললে তা সৃষ্টি করা যায়, তার সেই ক্ষমতা আছে। শুধু একটু নজর দেয়ার ব্যাপার।’
ডিসিদের ভালো কাজ দিয়ে নাগরিকদের মন জয় করার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বড় কাজ তো আছেই, করবোই- এই ছোট কাজগুলো দিয়েই কিন্তু বড় কাজটা হয়। মানুষ বলে যে- ‘হ্যাঁ, আমাদের সময় উনি যখন ডিসি ছিলেন, আমাদের এখানে উনি এই কাজটা করে গেছেন’। এরকম স্মৃতি আমরা নাগরিকদের কাছ থেকে শুনি, ‘উনি যখন, অমুক যখন ডিসি ছিল- উনি এই কাজটা করে দিয়েছেন।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বলেন, ‘অবদানটা মানুষ স্মরণ করে, মানুষ ভোলে না- ওই যে অবদানটা হয়েছে, সেটা ব্যক্তিগত ইচ্ছাই। এটা সরকারের হুকুমে হয় নাই, সরকার সবাইকে হুকুম দিছে- কিন্তু একজন ব্যক্তিগতভাবে সেটাকে অন্য রকমভাবে, অন্য ভঙ্গিতে নিয়ে এসছে এবং মানুষের মন জয় করেছে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বপালনকে মানুষের সেবা করার বড় সুযোগ উল্লেখ করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমাদের সুযোগ এই যে- আমরা অর্ন্তবর্তীকালীন সময়ে আছি, এটা একটা মস্তবড় সুযোগ, আমাদের হাতে অনেকগুলো কাজ এবং খুব সহজ কাজ, কঠিন কাজ না এবং আমি বলছিলাম যে হান্ড্রেড পার্সেন্ট করতে হবে না। আমি বললাম যে টেন পার্সেন্ট করো, ২০ পার্সেন্ট করো, ৩০ পার্সেন্ট করো, এক নম্বর হও- এক নম্বর হওয়ার চেষ্টা করো; কারণ তোমরা তো সবাই একই লাইনের মধ্যে একই পরিস্থিতিতে আছো।’