তুরাগতীরে আখেরি মোনাজাতে মুসল্লিরা -সংবাদ
একসঙ্গে লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দিল্লী নিজামউদ্দিন মারকাযের তত্ত্বাবধানে রবিবার শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমার ৫৮তম আসর। রবিবার এই আখেরি মোনাজাত ছিল এবারের ইজতেমার তৃতীয় মোনাজাত।
মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় মিলন মেলা বিশ্ব তাবলীগ জামাত আয়োজিত ইজতেমার এ মোনাজাতে সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের নাজাত, ঐক্য, মুক্তি, সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি, নিরাপত্তা, আত্মশুদ্ধি, ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ কামনা করে ফরিয়াদ জানানো হয়। এ সময় ‘আমীন, আল্লাহুম্মা আমীন’ ধ্বনিতে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীর মুখরিত হয়ে উঠে।
রবিবার ৩০ মিনিটের এই আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন বিশ্ব তাবলীগ জামায়াতের দিল্লী মারকাজের মুরুব্বী মাওলানা সাদের বড় ছেলে ইউসুফ বিন সাদ। সকাল থেকে দিক নির্দেশনামূলক বয়ানের পর লাখো মানুষের প্রতীক্ষার শেষ হয় বেলা ১২টা ৩৭ মিনিটে। যে যেখানে ছিলেন সেখানে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে হাত তুলেন আল্লাহর দরবারে।
রবিবার আখেরি মোনাজাতকে ঘিরে লাখ লাখ মুসলমানের ঢল ছিল টঙ্গীতে। সব পথের মোহনা হয়ে ওঠে তুরাগ তীরের ইজতেমা ময়দান। ১২টা ৩৭ মিনিট থেকে ১টা ৭ মিনিট পর্যন্ত ৩০ মিনিটের মোনাজাতে মূলত প্রথম পবিত্র কোরআনে বর্ণিত দোয়ার আয়াতগুলো উচ্চারণ মাধ্যমে ও পরে উর্দু ভাষায় দোয়া করা হয়।
এরপর যোহরের নামাজ ময়দানে আদায় করে মুসল্লিরা বাড়ি ফেরা শুরু করেন। তবে তিন দিনের জামাত ও চিল্লায় আসা মুসল্লিরা এখনও ময়দানে আছেন। আজ ও কালের মধ্যে তারা ময়দান ছাড়বেন বলে জানা গেছে।
বিশ্ব ইজতেমায় দিতীয় পর্বে ৩ মুসল্লি মারা যান। এরা হলেন- শরিয়তপুরের আব্দুল আজিজ শেখ (৬২), বগুড়ার নাজমুল হোসেন (৭৫) ও খুলনার দিদার তরফদার (৫৫)। ইজতেমার প্রথম পর্বের দুই ধাপে ১১ মুসল্লি মারা গেছেন।
চলমান বিশ্ব ইজতেমাকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হামলার হুমকি দেয়ার অভিযোগে রনি সরকার (৩৮) নামে এক যুবলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মো. রনি সরকার গাজীপুর সদর জয়দেবপুর থানার বাড়িয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সহ-সভাপতি।
যেসব কারণে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করল ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা
ইজতেমা শুরুর পর থেকে এবারের ৫৮তম ইজতেমা একাধিক কারণে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এসব ইতিহাসের মধ্যে ইজতেমা শুরুর আগেই চারজন মুসল্লি নিহত হয়েছেন। ইজতেমায় এই প্রথম তিনটি আখেরি মোনাজাতের জন্ম হল। তিনটি আখেরি মোনাজাতের কারণে এবারই প্রথম শবে বরাত পড়ে গেলো ইজতেমায়। আর বিশ্ব ইজতেমায় শবে বরাত পালনের মাধ্যমে আরেকটি নতুন ইতিহাসের জন্ম দিল।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার বিশ্ব ইজতেমাকে দুইভাগে ভাগ করে প্রথম বিভক্তির জন্ম দেয়। ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর মাওলানা সাদের আগমন ঠেকাতে সৃষ্ট সংঘর্ষে দুই জন মুসল্লি নিহত হয়। এরপর থেকে দুই বছর করোনার জন্য ইজতেমা হয়নি। ২০২৩ সাল পর্যন্ত সাদ ও জুবায়ের গ্রুপ পৃথকভাবে দুই পর্বে ইজতেমা করে।
২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাতে ইজতেমা ময়দানে সংঘর্ষ হয় ও এতে ৪ জন মুসল্লি নিহত হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এবার বিশ্ব ইজতেমায় তিনটি আখেরী মোনাজাতের সৃষ্টি হয়। প্রথম পর্বে দুই ধাপে দুটি আখেরী মোনাজাত করেন শূরায়ি নেজাম বা জুবায়ের পন্থীরা। দ্বিতীয় পর্বে রবিবার অনুষ্ঠিত হয় আরেকটি আখেরী মোনাজাত।
সাধারণ মুসল্লিরা বলছেন, তিনটি নয়, আমরা একটি আখেরী মোনাজাত করতে চাই। এভাবে যদি আখেরী মোনাজাত বাড়তে থাকে তবে এমন সময়ও আসতে পারে যে, অনেক আখেরী মোনাজাত সৃষ্টি হয়ে ইজতেমার প্রতি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আগ্রহই কমে যাবে। তাই আর সংখ্যায় না বাড়িয়ে একটি আখেরী মোনাজাতের ব্যবস্থা করা উচিত। তা না পারলে বাংলাদেশে ইজতেমা বিতর্কিত হয়ে দেশান্তরতও হতে পারে বলে আশংকা মুসল্লিদের।
তুরাগতীরে আখেরি মোনাজাতে মুসল্লিরা -সংবাদ
রোববার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
একসঙ্গে লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দিল্লী নিজামউদ্দিন মারকাযের তত্ত্বাবধানে রবিবার শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমার ৫৮তম আসর। রবিবার এই আখেরি মোনাজাত ছিল এবারের ইজতেমার তৃতীয় মোনাজাত।
মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় মিলন মেলা বিশ্ব তাবলীগ জামাত আয়োজিত ইজতেমার এ মোনাজাতে সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের নাজাত, ঐক্য, মুক্তি, সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি, নিরাপত্তা, আত্মশুদ্ধি, ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ কামনা করে ফরিয়াদ জানানো হয়। এ সময় ‘আমীন, আল্লাহুম্মা আমীন’ ধ্বনিতে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীর মুখরিত হয়ে উঠে।
রবিবার ৩০ মিনিটের এই আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন বিশ্ব তাবলীগ জামায়াতের দিল্লী মারকাজের মুরুব্বী মাওলানা সাদের বড় ছেলে ইউসুফ বিন সাদ। সকাল থেকে দিক নির্দেশনামূলক বয়ানের পর লাখো মানুষের প্রতীক্ষার শেষ হয় বেলা ১২টা ৩৭ মিনিটে। যে যেখানে ছিলেন সেখানে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে হাত তুলেন আল্লাহর দরবারে।
রবিবার আখেরি মোনাজাতকে ঘিরে লাখ লাখ মুসলমানের ঢল ছিল টঙ্গীতে। সব পথের মোহনা হয়ে ওঠে তুরাগ তীরের ইজতেমা ময়দান। ১২টা ৩৭ মিনিট থেকে ১টা ৭ মিনিট পর্যন্ত ৩০ মিনিটের মোনাজাতে মূলত প্রথম পবিত্র কোরআনে বর্ণিত দোয়ার আয়াতগুলো উচ্চারণ মাধ্যমে ও পরে উর্দু ভাষায় দোয়া করা হয়।
এরপর যোহরের নামাজ ময়দানে আদায় করে মুসল্লিরা বাড়ি ফেরা শুরু করেন। তবে তিন দিনের জামাত ও চিল্লায় আসা মুসল্লিরা এখনও ময়দানে আছেন। আজ ও কালের মধ্যে তারা ময়দান ছাড়বেন বলে জানা গেছে।
বিশ্ব ইজতেমায় দিতীয় পর্বে ৩ মুসল্লি মারা যান। এরা হলেন- শরিয়তপুরের আব্দুল আজিজ শেখ (৬২), বগুড়ার নাজমুল হোসেন (৭৫) ও খুলনার দিদার তরফদার (৫৫)। ইজতেমার প্রথম পর্বের দুই ধাপে ১১ মুসল্লি মারা গেছেন।
চলমান বিশ্ব ইজতেমাকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হামলার হুমকি দেয়ার অভিযোগে রনি সরকার (৩৮) নামে এক যুবলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মো. রনি সরকার গাজীপুর সদর জয়দেবপুর থানার বাড়িয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সহ-সভাপতি।
যেসব কারণে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করল ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা
ইজতেমা শুরুর পর থেকে এবারের ৫৮তম ইজতেমা একাধিক কারণে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এসব ইতিহাসের মধ্যে ইজতেমা শুরুর আগেই চারজন মুসল্লি নিহত হয়েছেন। ইজতেমায় এই প্রথম তিনটি আখেরি মোনাজাতের জন্ম হল। তিনটি আখেরি মোনাজাতের কারণে এবারই প্রথম শবে বরাত পড়ে গেলো ইজতেমায়। আর বিশ্ব ইজতেমায় শবে বরাত পালনের মাধ্যমে আরেকটি নতুন ইতিহাসের জন্ম দিল।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার বিশ্ব ইজতেমাকে দুইভাগে ভাগ করে প্রথম বিভক্তির জন্ম দেয়। ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর মাওলানা সাদের আগমন ঠেকাতে সৃষ্ট সংঘর্ষে দুই জন মুসল্লি নিহত হয়। এরপর থেকে দুই বছর করোনার জন্য ইজতেমা হয়নি। ২০২৩ সাল পর্যন্ত সাদ ও জুবায়ের গ্রুপ পৃথকভাবে দুই পর্বে ইজতেমা করে।
২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাতে ইজতেমা ময়দানে সংঘর্ষ হয় ও এতে ৪ জন মুসল্লি নিহত হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এবার বিশ্ব ইজতেমায় তিনটি আখেরী মোনাজাতের সৃষ্টি হয়। প্রথম পর্বে দুই ধাপে দুটি আখেরী মোনাজাত করেন শূরায়ি নেজাম বা জুবায়ের পন্থীরা। দ্বিতীয় পর্বে রবিবার অনুষ্ঠিত হয় আরেকটি আখেরী মোনাজাত।
সাধারণ মুসল্লিরা বলছেন, তিনটি নয়, আমরা একটি আখেরী মোনাজাত করতে চাই। এভাবে যদি আখেরী মোনাজাত বাড়তে থাকে তবে এমন সময়ও আসতে পারে যে, অনেক আখেরী মোনাজাত সৃষ্টি হয়ে ইজতেমার প্রতি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আগ্রহই কমে যাবে। তাই আর সংখ্যায় না বাড়িয়ে একটি আখেরী মোনাজাতের ব্যবস্থা করা উচিত। তা না পারলে বাংলাদেশে ইজতেমা বিতর্কিত হয়ে দেশান্তরতও হতে পারে বলে আশংকা মুসল্লিদের।