alt

জাতীয়

সুধাসদনসহ হাসিনা পরিবারের সম্পত্তি ও ১২৪ ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫

ভারতে পালিয়ে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির বাসভবন সুদাসদনসহ তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা আরও কিছু সম্পত্তি জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন। শেখ হাসিনার স্বামী এম এ ওয়াজেদ মিয়ার ডাক নাম ছিল সুধা মিয়া। তার নামেই এ বাড়ির নামকরণ। এছাড়া শেখ হাসিনা তার বোন শেখ রেহানাসহ পরিবারের চার সদস্যের ১২৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ ও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আদেশ দিয়েছে আদালত। এছাড়া, টিউলিপ সিদ্দিক তার বোনকে গুলশানের একটি ফ্ল্যাট হস্তান্তরে যে নোটারি ব্যবহার করেছেন, তদন্তে তা ‘ভুয়া’ প্রমাণিত হওয়ার তথ্য দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সুধাসদনের সামনের ভবনের একটি অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা জানান, গত তত্ত্বাবধায়ক আমলে শেখ হাসিনা এই বাড়িতে কিছুদিন ছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচন এখান থেকেই করেন তিনি। সেই নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি রাষ্ট্রীয় বাসভবনে থেকেছেন। এই বাড়িতে কিছুদিন আওয়ামী লীগের কিছু অফিস ছিল। পরে সেটি তালাবদ্ধই থাকত।

ফেব্রুয়ারিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও আগুন দেয়ার ঘটনার মধ্যে সুধাসদনেও আগুন দেয়া হয়। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা ছাড়াও তার দুই ছেলেমেয়ে সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানা এবং তার দুই সন্তান টিউলিপ সিদ্দিক ও রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের কিছু সম্পত্তি জব্দেরও আদেশ এসেছে।

জব্দের আদেশ হওয়া সম্পত্তির মধ্যে জয় ও পুতুলের নামে থাকা ধানমন্ডিতে ষোলো কাঠা জমিসহ ‘সুধাসদন’ ও ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের লে আউট প্ল্যানের ০.২৬৪০ একর ভূমির যাবতীয় ইমারত আছে। শেখ রেহানার নামে থাকা গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার মৌচাক ইউনিয়নের দুইটি দলিলে ৯.৬০ শতাংশ জমি ও ঢাকার সেগুনবাগিচার ইস্টার্ন ভিলায় ফ্ল্যাটও জব্দের আদেশ দেয়া হয়েছে।

এছাড়া রেহানার মেয়ে টিউলিপের নামে গুলশান আবাসিক এলাকায় ইস্টার্ন হারমনি ভবনে একটি ফ্ল্যাট ও রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের নামে গুলশানের নিকেতন এলাকায় এ ব্লকে ০২০১.১ শতাংশ ভূমির উপর নির্মিত ৭ তলা ভবন রয়েছে। আবেদনে বলা হয়, অনুসন্ধানকালে দেখা যায়, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তাদের স্থাবর সম্পদ অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার চেষ্টা করছেন। তাই এসব সম্পত্তি জব্দের প্রয়োজন বলে জানিয়েছে দুদক।

হাসিনা পরিবারের ১২৪ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

শেখ হাসিনা তার বোন শেখ রেহানাসহ পরিবারের চার সদস্যের ১২৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছে আদালত। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত এ আদেশ দিয়েছে। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা ও তার বোন ছাড়াও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদেরও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। আকতারুল ইসলাম জানিয়েছেন দুদকের উপ পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম এ আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়েছে, অভিযোগ সংশ্লিষ্টরা তাদের অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর বা স্থানান্তর করার চেষ্টা করছেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে, অ্যাকাউন্টগুলো অবরুদ্ধ করা জরুরি বলে মনে করছে দুদক। শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের এই ১২৪টি অ্যাকাউন্টে থাকা ৬৩৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা অবরুদ্ধ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটও (বিএফআইইউ)। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধবিষয়ক সভায় বাংলাদেশ ব্যাংক এ তথ্য দিয়েছে।

এর পরে প্রেস বিফ্রিংয়ে সাংবাদিকদের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং ও কেম্যান দ্বীপপুঞ্জে সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রাশিয়ান ‘স্লাশ ফান্ড’ এর অস্তিত্বও চিহ্নিত হয়েছে।

হাসিনা পরিবারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে বিপুল অর্থ লোপাটের অভিযোগ থাকায় গণঅভ্যুত্থানে ভারতে পালিয়ে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছে আদালত। নিষেধাজ্ঞার আদেশ পাওয়া অন্যরা হলেন, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, তার ছোট বোন শেখ রেহানা ও তার তিন ছেলেমেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক ও রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক।

মঙ্গলবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত এ আদেশ দেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম বলেছেন, সংস্থাটির উপ পরিচালক মনিরুল ইসলাম তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা লোপাটের একটি অভিযোগ দুদকে অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। এই অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে ৫ সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়েছে। ‘তদন্ত দল জানতে পেরেছে, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সপরিবারে গোপনে দেশত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিদেশ পালিয়ে গেলে তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’ তাই অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন দুদক।

‘ভুয়া’ নোটারিতে বোনকে গুলশানের ফ্ল্যাট দেন টিউলিপ

ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক তার বোনকে গুলশানের একটি ফ্ল্যাট হস্তান্তরে যে নোটারি ব্যবহার করেছেন, তদন্তে তা ‘ভুয়া’ প্রমাণিত হওয়ার তথ্য দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক বলছে, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে করা একটি মামলার তদন্তে নেমে তারা এ তথ্য পেয়েছে। গত ১৩ জানুয়ারি টিউলিপের মা শেখ রেহানা, ভাই রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও বোন আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর বিরুদ্ধে আলাদা মামলা করে দুদক। এসব মামলায় শেখ হাসিনা এবং যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককেও আসামি করা হয়।

এর মধ্যে রূপন্তীর বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্তে নেমে ‘ভুয়া নোটারি’ ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়ার কথা বলছে দুদক। এ মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে আছেন দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া। দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে, হেবা দলিলটি হয় ২০১৫ সালের ৯ জুন। সেখানে দাতা ছিলেন রিজওয়ানা সিদ্দিক (টিউলিপ সিদ্দিক), গ্রহীতা ছিলেন আজমিনা সিদ্দিক।

দলিলে বলা হয়, ‘বোনের প্রতি ভালোবাসা ও স্নেহ’ থেকে সম্পত্তি হেবা দিতে চান দাতা। দলিল অনুযায়ী, ২৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকায় কেনা গুলশানের ফ্ল্যাটটি আজমিনা সিদ্দিককে দেয়া হয়। দলিলে ফ্ল্যাটের সম্পূর্ণ মালিকানা, স্বত্ব, অধিকার এবং একটি পার্কিং স্পেস হস্তান্তরের কথা বলা রয়েছে। দলিল অনুযায়ী ফ্ল্যাটের অবস্থান, গুলশান রেসিডেন্সিয়াল মডেল টাউনের ১১ নম্বর প্লটে। এটি ভবনের দ্বিতীয় তলার দক্ষিণ-পূর্ব পাশের একটি ফ্ল্যাট। দুজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে দলিল সম্পন্ন হয়।

হেবা দলিলে সই রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী সিরাজুল ইসলামের। প্লট মামলার অভিযোগ তদন্তে দুদক ওই আইনজীবীরও সাক্ষ্য নেয়। দুদককে তিনি বলেছেন, ২০১২ সালে তিনি নোটারি লাইসেন্স পান। শুরু থেকেই তিনি শুধু নিজের চেম্বারের কাগজ নোটারি করেন। তার নোটারির নামে যে হেবা দলিলটি দেখানো হয়েছে, সেখানে সিলটি তার মতই, কিন্তু সইটি ‘তার নয়’। হেবা দলিলের এক সাক্ষীকে চিনলেও দাতাসহ অন্যদের চেনেন না বলে দুদকের কাছে দাবি করেছেন ওই আইনজীবী।

ছবি

নিরাপত্তা নির্দেশিকা বাতিল: হাইকোর্টের রুলের আগেই পিছু হটল সরকার

ছবি

ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের লাঠিচার্জ : ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এসি আবদুল্লাহ আল মামুনের অপসারণের দাবি, মশাল মিছিলের ঘোষণা

ছবি

ধর্ষণবিরোধী পদযাত্রায় পুলিশের বাধা, ধাক্কাধাক্কি, লাঠিপেটা

ছবি

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককে নেতিবাচক মনে করছেন ৫৮ শতাংশ, চিনের সঙ্গে সম্পর্ককে ইতিবাচক মনে করেন ৭৫ শতাংশ মানুষ

ছবি

নাগরিক সেবার বেহাল দশা: ঘুষ ও হয়রানির অভিযোগে গণশুনানিতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন এক ব্যক্তি

ছবি

পাঠ্যবইয়ের কাগজ কেনায় রাখাল রাহার সংশ্লিষ্টতা নেই: এনসিটিবি চেয়ারম্যান

ছবি

অর্থনীতির ভঙ্গুর দশা উত্তরণের প্রতিশ্রুতি আনিসুজ্জামান চৌধুরীর

ছবি

এলডিসি থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করছে সরকার

ছবি

জুলাই আন্দোলনে আহতদের চোখের চিকিৎসা দিচ্ছেন যুক্তরাজ্যের দুই বিশেষজ্ঞ

ছবি

স্পিকার রাষ্ট্রপতিকে শপথ পড়ানোর বৈধতা জানতে চায় হাই কোর্ট

ছবি

শেখ হাসিনা ও পরিবারের সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ

ছবি

বায়ুদূষণে বিশ্বের দ্বিতীয় বাংলাদেশ, ঢাকার অবস্থান তৃতীয়

ছবি

‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ এর গণপদযাত্রায় পুলিশের লাঠিপেটা, বাধা প্রদান

ছবি

জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পুরস্কার পুনর্বহাল

ছবি

শাহবাগে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, দ্রুত বিচার ও ধর্ষকদের ফাঁসি দাবি

ছবি

শেখ হাসিনা ও পরিবারের ১২৪ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

ছবি

ফিতরা জনপ্রতি সর্বনিম্ন ১১০ টাকা নির্ধারণ

ছবি

আন্তোনিও গুতেরেসের বাংলাদেশ সফর: গুরুত্ব পাবে রোহিঙ্গা সংকট ও মানবাধিকার প্রসঙ্গ

ছবি

গার্ডিয়ানকে ইউনূস: ‘হাসিনা রেখে গেছেন গাজার মতো বিধ্বস্ত বাংলাদেশ’

ছবি

রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে শেখ হাসিনা ও পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

এবার ঈদে মিলবে না নতুন নোট

ছবি

ধর্ষণ, নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে দেশজুড়ে মানববন্ধন

কারাগারে অনিয়ম, ১২ জনকে চাকরিচ্যুতসহ ৮২৩ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

ছবি

সড়ক দুর্ঘটনায় পোশাক শ্রমিক নিহত, ৭ ঘণ্টা অবরোধ, চরম ভোগান্তিতে নগরবাসী

চোখের পাতা নেড়েছে মাগুরার সেই শিশুটি: প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব

জাতিসংঘের ফলকার টুর্কের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া আইএসপিআরের

প্রধান উপদেষ্টার এক বিশেষ সহকারীর পদত্যাগ, নতুন আরেকজনের নিয়োগ

বিচার, সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচন আদায়ে দ্রুতই রাজপথে নামার ঘোষণা নাহিদের

ছবি

পঙ্গু হাসপাতালের কর্মীদের সঙ্গে ‘জুলাই-যোদ্ধাদের’ মারামারি, ভোগান্তিতে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষজন

কম সময়ের মধ্যে ‘জুলাই সনদ’ করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার

ছবি

বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরাতে বিশেষ আইন আনছে সরকার

ছবি

ফলকার টুর্কের মন্তব্যের বিষয়ে সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়া

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন আনিসুজ্জামান চৌধুরী

ছবি

পাচার হওয়া ২৩৪ বিলিয়ন ডলার ফেরাতে আসছে বিশেষ আইন

ছবি

মাগুরার শিশুর সামান্য উন্নতি, এখনও শঙ্কামুক্ত নয়

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এম আমিনুল ইসলামের পদত্যাগ

tab

জাতীয়

সুধাসদনসহ হাসিনা পরিবারের সম্পত্তি ও ১২৪ ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫

ভারতে পালিয়ে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির বাসভবন সুদাসদনসহ তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা আরও কিছু সম্পত্তি জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন। শেখ হাসিনার স্বামী এম এ ওয়াজেদ মিয়ার ডাক নাম ছিল সুধা মিয়া। তার নামেই এ বাড়ির নামকরণ। এছাড়া শেখ হাসিনা তার বোন শেখ রেহানাসহ পরিবারের চার সদস্যের ১২৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ ও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আদেশ দিয়েছে আদালত। এছাড়া, টিউলিপ সিদ্দিক তার বোনকে গুলশানের একটি ফ্ল্যাট হস্তান্তরে যে নোটারি ব্যবহার করেছেন, তদন্তে তা ‘ভুয়া’ প্রমাণিত হওয়ার তথ্য দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সুধাসদনের সামনের ভবনের একটি অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা জানান, গত তত্ত্বাবধায়ক আমলে শেখ হাসিনা এই বাড়িতে কিছুদিন ছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচন এখান থেকেই করেন তিনি। সেই নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি রাষ্ট্রীয় বাসভবনে থেকেছেন। এই বাড়িতে কিছুদিন আওয়ামী লীগের কিছু অফিস ছিল। পরে সেটি তালাবদ্ধই থাকত।

ফেব্রুয়ারিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও আগুন দেয়ার ঘটনার মধ্যে সুধাসদনেও আগুন দেয়া হয়। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা ছাড়াও তার দুই ছেলেমেয়ে সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানা এবং তার দুই সন্তান টিউলিপ সিদ্দিক ও রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের কিছু সম্পত্তি জব্দেরও আদেশ এসেছে।

জব্দের আদেশ হওয়া সম্পত্তির মধ্যে জয় ও পুতুলের নামে থাকা ধানমন্ডিতে ষোলো কাঠা জমিসহ ‘সুধাসদন’ ও ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের লে আউট প্ল্যানের ০.২৬৪০ একর ভূমির যাবতীয় ইমারত আছে। শেখ রেহানার নামে থাকা গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার মৌচাক ইউনিয়নের দুইটি দলিলে ৯.৬০ শতাংশ জমি ও ঢাকার সেগুনবাগিচার ইস্টার্ন ভিলায় ফ্ল্যাটও জব্দের আদেশ দেয়া হয়েছে।

এছাড়া রেহানার মেয়ে টিউলিপের নামে গুলশান আবাসিক এলাকায় ইস্টার্ন হারমনি ভবনে একটি ফ্ল্যাট ও রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের নামে গুলশানের নিকেতন এলাকায় এ ব্লকে ০২০১.১ শতাংশ ভূমির উপর নির্মিত ৭ তলা ভবন রয়েছে। আবেদনে বলা হয়, অনুসন্ধানকালে দেখা যায়, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তাদের স্থাবর সম্পদ অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার চেষ্টা করছেন। তাই এসব সম্পত্তি জব্দের প্রয়োজন বলে জানিয়েছে দুদক।

হাসিনা পরিবারের ১২৪ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

শেখ হাসিনা তার বোন শেখ রেহানাসহ পরিবারের চার সদস্যের ১২৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছে আদালত। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত এ আদেশ দিয়েছে। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা ও তার বোন ছাড়াও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদেরও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। আকতারুল ইসলাম জানিয়েছেন দুদকের উপ পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম এ আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়েছে, অভিযোগ সংশ্লিষ্টরা তাদের অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর বা স্থানান্তর করার চেষ্টা করছেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে, অ্যাকাউন্টগুলো অবরুদ্ধ করা জরুরি বলে মনে করছে দুদক। শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের এই ১২৪টি অ্যাকাউন্টে থাকা ৬৩৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা অবরুদ্ধ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটও (বিএফআইইউ)। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধবিষয়ক সভায় বাংলাদেশ ব্যাংক এ তথ্য দিয়েছে।

এর পরে প্রেস বিফ্রিংয়ে সাংবাদিকদের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং ও কেম্যান দ্বীপপুঞ্জে সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রাশিয়ান ‘স্লাশ ফান্ড’ এর অস্তিত্বও চিহ্নিত হয়েছে।

হাসিনা পরিবারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে বিপুল অর্থ লোপাটের অভিযোগ থাকায় গণঅভ্যুত্থানে ভারতে পালিয়ে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছে আদালত। নিষেধাজ্ঞার আদেশ পাওয়া অন্যরা হলেন, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, তার ছোট বোন শেখ রেহানা ও তার তিন ছেলেমেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক ও রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক।

মঙ্গলবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত এ আদেশ দেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম বলেছেন, সংস্থাটির উপ পরিচালক মনিরুল ইসলাম তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা লোপাটের একটি অভিযোগ দুদকে অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। এই অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে ৫ সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়েছে। ‘তদন্ত দল জানতে পেরেছে, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সপরিবারে গোপনে দেশত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিদেশ পালিয়ে গেলে তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’ তাই অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন দুদক।

‘ভুয়া’ নোটারিতে বোনকে গুলশানের ফ্ল্যাট দেন টিউলিপ

ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক তার বোনকে গুলশানের একটি ফ্ল্যাট হস্তান্তরে যে নোটারি ব্যবহার করেছেন, তদন্তে তা ‘ভুয়া’ প্রমাণিত হওয়ার তথ্য দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক বলছে, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে করা একটি মামলার তদন্তে নেমে তারা এ তথ্য পেয়েছে। গত ১৩ জানুয়ারি টিউলিপের মা শেখ রেহানা, ভাই রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও বোন আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর বিরুদ্ধে আলাদা মামলা করে দুদক। এসব মামলায় শেখ হাসিনা এবং যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককেও আসামি করা হয়।

এর মধ্যে রূপন্তীর বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্তে নেমে ‘ভুয়া নোটারি’ ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়ার কথা বলছে দুদক। এ মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে আছেন দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া। দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে, হেবা দলিলটি হয় ২০১৫ সালের ৯ জুন। সেখানে দাতা ছিলেন রিজওয়ানা সিদ্দিক (টিউলিপ সিদ্দিক), গ্রহীতা ছিলেন আজমিনা সিদ্দিক।

দলিলে বলা হয়, ‘বোনের প্রতি ভালোবাসা ও স্নেহ’ থেকে সম্পত্তি হেবা দিতে চান দাতা। দলিল অনুযায়ী, ২৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকায় কেনা গুলশানের ফ্ল্যাটটি আজমিনা সিদ্দিককে দেয়া হয়। দলিলে ফ্ল্যাটের সম্পূর্ণ মালিকানা, স্বত্ব, অধিকার এবং একটি পার্কিং স্পেস হস্তান্তরের কথা বলা রয়েছে। দলিল অনুযায়ী ফ্ল্যাটের অবস্থান, গুলশান রেসিডেন্সিয়াল মডেল টাউনের ১১ নম্বর প্লটে। এটি ভবনের দ্বিতীয় তলার দক্ষিণ-পূর্ব পাশের একটি ফ্ল্যাট। দুজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে দলিল সম্পন্ন হয়।

হেবা দলিলে সই রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী সিরাজুল ইসলামের। প্লট মামলার অভিযোগ তদন্তে দুদক ওই আইনজীবীরও সাক্ষ্য নেয়। দুদককে তিনি বলেছেন, ২০১২ সালে তিনি নোটারি লাইসেন্স পান। শুরু থেকেই তিনি শুধু নিজের চেম্বারের কাগজ নোটারি করেন। তার নোটারির নামে যে হেবা দলিলটি দেখানো হয়েছে, সেখানে সিলটি তার মতই, কিন্তু সইটি ‘তার নয়’। হেবা দলিলের এক সাক্ষীকে চিনলেও দাতাসহ অন্যদের চেনেন না বলে দুদকের কাছে দাবি করেছেন ওই আইনজীবী।

back to top