চার দফা দাবি চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনায় সিদ্ধান্ত আসেনি
বুধবার সচিবালয়ের সামনে চিকিৎসকদের লংমার্চ আটকে দেয় পুলিশ -সংবাদ
দাবি আদায়ে বিভিন্ন জেলায় সরকারি হাসপাতালে কর্মবিরতি পালন করেছেন চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচি চলাকালে হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগের সেবা কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল।
তবে ঢাকার ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটাল, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান এবং শিশু হাসপাতালসহ আরও কয়েকটিতে দেরিতে হলেও কোনো কোনো বিভাগের বহির্বিভাগে রোগী দেখা হয়। এছাড়া আইসিইউ, সিসিইউসহ জরুরি চিকিৎসা বিভাগ চালু ছিল।
রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে বহির্বিভাগ পুরোপুরি বন্ধ থাকে। চিকিৎসকদের কর্মসূচির কথা জানা না থাকায় সেখানে সকাল থেকে রোগীদের ভিড় দেখা গেছে। অনেকে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে চলে যাচ্ছেন, অনেকে আবার সেখানেই ঘোরাঘুরি করছেন।
ঢাকার ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে সকাল ৯টা থেকে বহির্বিভাগে রোগী দেখা শুরু করার কথা থাকলেও সেখানে পৌনে ১০টা থেকে রোগী দেখতে শুরু করেন চিকিৎসকরা। এতে বহির্বিভাগের সামনে রোগীদের ভিড় দেখা যায়।
ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে শরীফুল ইসলাম নামে এক রোগী বলেন, তিনি সোয়া নয়টায় সেখানে যান। আধা ঘণ্টা অপেক্ষার পর পৌনে ১০টায় তিনি চিকিৎসকের সাক্ষাৎ পান।
হাসপাতালটির বহির্বিভাগের একটি কক্ষের সামনে দায়িত্বরত এক কর্মচারী বলেন, ‘স্যারেরা (ডাক্তাররা) সকালে আসলেও রোগী দেখেননি। পরে সবাই পরিচালক স্যারের রুমে যান; এরপর আউটডোরে রোগী দেখা শুরু হয়।’
এর আগে মঙ্গলবার ‘সর্বস্তরের চিকিৎসক ও চিকিৎসা শিক্ষার্থীদের’ ব্যানারে দিনভর কর্মসূচি পালনের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলনে বুধবার কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়া হয়। পাঁচ দাবিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসক নাদিম হোসাইন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বুধবার সারাদেশের মেডিকেল ও ডেন্টাল শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন কর্মসূচি পালন করবে। সরকারি, বেসরকারি সব হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোর সেবা এবং বৈকালিক চেম্বার বন্ধ থাকবে। মানবিক বিবেচনায় আইসিইউ, সিসিইউ, ক্যাজুয়ালটি, লেবার রুমের কার্যক্রম চলমান থাকবে।
নাদিম হোসাইন ওইদিন আরও বলেন, ‘বুধবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মহাসমাবেশের ডাক দেয়া হলো। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের সব শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হবেন। সেখান থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অভিমুখে লংমার্চ করবেন তারা।’
চিকিৎসকরা জানান, ম্যাটস (মেডিকেল অ্যাসিন্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল) শিক্ষার্থীদের অনেক দাবির একটা তাদের নামের আগে ‘ডাক্তার’ লেখার বৈধতা দেয়া। বিষয়টি নিয়ে আদালতে এটি রিট আবেদন করা হয়েছে। এদিন ওই রিটের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে হাইকোর্ট বুধবার এ সংক্রান্ত এক রায়ে বলেছে, এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিপ্রাপ্ত ছাড়া অন্য কেউ তাদের নামের আগে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না। এই রায়ে মেডিকেল শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকদের পাঁচ দাবির প্রথমটিই পূরণ হলো। এরপর বাকি চার দফা আদায়েই কর্মসূচি পালন করেন চিকিৎসকরা।
পাশাপাশি ‘ডিএমএফ’ ডিগ্রিধারীদের (ডিপ্লোমাধারী হিসেবে নিবন্ধিত) ক্ষেত্রে যথাযথ প্রিফিক্স (নামের আগে ব্যবহার করা সম্মানসূচক শব্দ) নির্ধারণে ছয় মাসের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫০০ শয্যার মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের বহির্বিভাগে রোগী দেখেছেন চিকিৎসকরা। জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান নিটোরে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে স্বাভাবিকভাবে বহির্বিভাগে রোগী দেখছেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালের আউটডোর খোলা ছিল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনায় সিদ্ধান্ত আসেনি:
পুলিশের বাধায় চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের লংমার্চ আটকে যাওয়ার পর চার দফা দাবি নিয়ে তাদের একটি প্রতিনিধিদল সচিবালয়ে যান। ১৫ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন ‘ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিসের’ সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সোহাগ।
তারা বেলা আড়াইটার দিকে শিক্ষাভবন মোড় থেকে সচিবালয়ের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। এর আগে দুপুর সোয়া একটায় শহীদ মিনার থেকে কয়েকশ’ চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের দিকে রওনা হন।
মিছিলটি শিক্ষা ভবনের সামনে পৌঁছালে পুলিশ আটকে দেয়। সেখানেই ব্যারিকেডের সামনে দাঁড়িয়ে নানা ধরনের স্লোগান দেন আন্দোলনকারীরা। অনেকে সড়কের ওপর বসে পড়েন। এ সময় সেখানে বিপুলসংখ্যক পুলিশ দেখা যায়।
এ সময় পুলিশের কর্মকর্তারা চিকিৎসকদের কাছে তাদের একটি প্রতিনিধিদলকে সচিবালয়ে পাঠানোর অনুরোধ করেন। তবে চিকিৎসকদের দাবি ছিল মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা যেন চিকিৎসকদের কাছে আসেন। একপর্যায়ে বেলা আড়াইটার দিকে সচিবালয়ে যান চিকিৎসকদের প্রতিনিধিদলটি।
সচিবালয় থেকে বের হয়ে শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের চার দফা দাবি আদায়ে স্বাস্থ্য ক্যাডার ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বৈঠকে ডেকে বাইরে থাকা আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ ‘লাঠিপেটা’ করেছে।
হাইকোর্টের রায়ে একটি দাবি পূরণ হলেও বাকি চার আদায়ে চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীরা সচিবালয় অভিমুখে যাত্রার সিদ্ধান্ত নেন।
পাঁচ দফা দাবি আদায়ে গঠিত ন্যাশনাল স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য চিকিৎসক তাওহিদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের একটা দাবি পূরণ করা হয়েছে। আরও চারটা দাবি রয়েছে। তবে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা সচিবালয়ে যাব। চার দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত রাস্তা ছাড়ব না।’
মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জনসহ নানা দাবিতে সংহতি প্রকাশ করে তাদের কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা।
শিক্ষার্থী, ইন্টার্ন চিকিৎসক এবং চিকিৎসক পেশাজীবীদের ১৭ সংগঠন নিয়ে ‘সর্বস্তরের চিকিৎসক ও চিকিৎসা শিক্ষার্থীদের’ ব্যানারে এ ঐক্য গড়ে তোলা হয়েছে। এর অধীনে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন এবং ইন্টার্নরা প্রতিদিন তিন ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন।
বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করে আসছেন ম্যাটস শিক্ষার্থীরা। তারা সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নতুন পদ তৈরি, অবিলম্বে দশম গ্রেডে শূন্যপদে নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছেন।
পাশাপাশি ম্যাটস শিক্ষার্থীরা চার বছরের অ্যাকাডেমিক কোর্স বহাল রেখে কারিকুলাম সংশোধন ও ভাতাসহ এক বছরের ইন্টার্নশিপ, প্রস্তাবিত ‘অ্যালায়েড হেলথ প্রফেশনাল বোর্ড’ বাতিল করে ‘মেডিকেল এডুকেশন বোর্ড অব বাংলাদেশ’ নামে বোর্ড গঠন এবং আন্তর্জাতিক মানদ- ও বিএমঅ্যান্ডডিসি স্বীকৃত ক্লিনিক্যাল বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষার সুযোগের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন।
তাদের এই আন্দোলনের পাল্টা কর্মসূচি পালন করছেন চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীরা।
চিকিৎসকদের বাকি চার দফা:
১ ‘রেজিস্টার্ড চিকিৎসক (এমবিবিএস বা বিডিএস) ছাড়া অন্য কেউ স্বাধীনভাবে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারবে না’ এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।
২. আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট কোর্স কারিকুলাম সংস্কার কমিটি গঠন করে তাদের কোর্স কারিকুলাম পুনঃনির্ধারণ এবং মানহীন সকল ম্যাটস (মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল) বন্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে।
৩. জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের জন্য শূন্যপদে পর্যাপ্তসংখ্যক চিকিৎসক নিয়োগ এবং চিকিৎসকদের বিসিএসের বয়সসীমা ৩৪ বছরে উন্নীত করতে হবে।
৪. অবিলম্বে চিকিৎসক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং বেসরকারি চিকিৎসকদের জন্য সুনির্দিষ্ট বেতন কাঠামো (পে-স্কেল) তৈরি করতে হবে।
তাদের প্রথম দাবির মধ্যে ছিল এমবিবিএস ও বিডিএস ব্যতীত কেউ চিকিৎসক লিখতে পারবেন না। মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) বিরুদ্ধে করা রিট ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে। বিএমডিসি নিবন্ধন শুধু এমবিবিএস বা বিডিএস ডিগ্রিধারীদের দিতে হবে। ২০১০ সাল থেকে হাসিনা সরকার ম্যাটসদের বিএমডিসি থেকে নিবন্ধন দেয়া শুরু করেছে। এ ম্যাটসদের বিএমডিসি থেকে নিবন্ধন দেয়া অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
সারাদেশে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি, বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা বন্ধ
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। জরুরি বিভাগেও স্বাভাবিক সেবা মিলছে না। এতে দূর-দূরান্ত থেকে শত শত রোগী ও তাদের স্বজনদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তবে হাসপাতালের অন্যান্য চিকিৎসা কার্যক্রম সীমিতভাবে চালু আছে। সেখানে ইন্টার্ন চিকিৎসক ছাড়া অন্যরা রোগীদের সেবা দিচ্ছেন।
বুধবার ভোর থেকে প্রতিদিনের মতো রোগীরা চমেক হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসতে থাকেন। সকাল গড়াতেই শত শত রোগীর ভিড় জমে যায়। কিন্তু বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টার থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে প্রথমে অনেক রোগী হকচকিত হয়ে পড়েন। পরে আস্তে আস্তে জানা যায়, চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। এরপরও চিকিৎসার আশায় রোগী ও তাদের স্বজনরা বহির্বিভাগের সামনে জড়ো ছিলেন।
জানা গেছে, এমবিবিএস-বিডিএস ডিগ্রিপ্রাপ্ত ছাড়া কাউকে নামের আগে ‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহার করতে না দেয়াসহ পাঁচ দফা দাবিতে সারাদেশে একযোগে কর্মবিরতি শুরু করেছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, হাসপাতালের বহির্বিভাগে সমস্যা হচ্ছে। সেখানে রোগীদের পুরোপুরি চিকিৎসাসেবা দেয়া যাচ্ছে না। তবে জরুরি বিভাগ, বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটে সেবা চালু আছে। সিনিয়র ডাক্তাররা সেবা দিচ্ছেন স্বাভাবিকভাবে। আইসিইউ সেবাও চালু আছে।
বরিশাল প্রতিনিধি জানান, কোনো প্রকারের নোটিশ ছাড়াই বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুধবার হঠাৎ ধর্মঘট শুরু করায় বহির্বিভাগের শত শত রোগীকে দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে। এমনকি ধর্মঘটের কারণে হাসপাতালের টিকিট কাউন্টার বন্ধ করে রাখা হয়।
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন বলেন, জানামতে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা পাঁচ দফা দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। কিন্তু তারা তাদের দাবির সমর্থনে কিছুই জানায়নি। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ডাকা হয়েছিল। কিন্তু তারা নিজেরাও জানেন না কর্মবিরতি কিনা।
উল্লেখ্য, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পাঁচ দফার মধ্যে আছে মেডিকেলের অ্যাসিসটেন্টদের রেজিস্ট্রেশন বন্ধ করা, ডাক্তার পদবি ব্যবহার বন্ধ করা, রেজিস্টার্ড চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ফার্মেসিতে ওষুধ বিক্রয় বন্ধ করা, স্বাস্থ্য খাতের চিকিৎসক সংকট দূর করার জন্য ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ, প্রতি বছর পাঁচ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ করা, ৬ষ্ঠ গ্রেডে চাকরির প্রবেশপথ তৈরি করা, চিকিৎসকদের বিসিএস পরীক্ষার বয়সসীমা ৩৪ করা, ম্যাটস ও ডিএমএফদের প্যারামেডিক হিসেবে পদায়ন করা প্রভৃতি।
চার দফা দাবি চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনায় সিদ্ধান্ত আসেনি
বুধবার সচিবালয়ের সামনে চিকিৎসকদের লংমার্চ আটকে দেয় পুলিশ -সংবাদ
বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫
দাবি আদায়ে বিভিন্ন জেলায় সরকারি হাসপাতালে কর্মবিরতি পালন করেছেন চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচি চলাকালে হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগের সেবা কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল।
তবে ঢাকার ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটাল, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান এবং শিশু হাসপাতালসহ আরও কয়েকটিতে দেরিতে হলেও কোনো কোনো বিভাগের বহির্বিভাগে রোগী দেখা হয়। এছাড়া আইসিইউ, সিসিইউসহ জরুরি চিকিৎসা বিভাগ চালু ছিল।
রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে বহির্বিভাগ পুরোপুরি বন্ধ থাকে। চিকিৎসকদের কর্মসূচির কথা জানা না থাকায় সেখানে সকাল থেকে রোগীদের ভিড় দেখা গেছে। অনেকে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে চলে যাচ্ছেন, অনেকে আবার সেখানেই ঘোরাঘুরি করছেন।
ঢাকার ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে সকাল ৯টা থেকে বহির্বিভাগে রোগী দেখা শুরু করার কথা থাকলেও সেখানে পৌনে ১০টা থেকে রোগী দেখতে শুরু করেন চিকিৎসকরা। এতে বহির্বিভাগের সামনে রোগীদের ভিড় দেখা যায়।
ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে শরীফুল ইসলাম নামে এক রোগী বলেন, তিনি সোয়া নয়টায় সেখানে যান। আধা ঘণ্টা অপেক্ষার পর পৌনে ১০টায় তিনি চিকিৎসকের সাক্ষাৎ পান।
হাসপাতালটির বহির্বিভাগের একটি কক্ষের সামনে দায়িত্বরত এক কর্মচারী বলেন, ‘স্যারেরা (ডাক্তাররা) সকালে আসলেও রোগী দেখেননি। পরে সবাই পরিচালক স্যারের রুমে যান; এরপর আউটডোরে রোগী দেখা শুরু হয়।’
এর আগে মঙ্গলবার ‘সর্বস্তরের চিকিৎসক ও চিকিৎসা শিক্ষার্থীদের’ ব্যানারে দিনভর কর্মসূচি পালনের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলনে বুধবার কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়া হয়। পাঁচ দাবিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসক নাদিম হোসাইন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বুধবার সারাদেশের মেডিকেল ও ডেন্টাল শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন কর্মসূচি পালন করবে। সরকারি, বেসরকারি সব হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোর সেবা এবং বৈকালিক চেম্বার বন্ধ থাকবে। মানবিক বিবেচনায় আইসিইউ, সিসিইউ, ক্যাজুয়ালটি, লেবার রুমের কার্যক্রম চলমান থাকবে।
নাদিম হোসাইন ওইদিন আরও বলেন, ‘বুধবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মহাসমাবেশের ডাক দেয়া হলো। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের সব শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হবেন। সেখান থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অভিমুখে লংমার্চ করবেন তারা।’
চিকিৎসকরা জানান, ম্যাটস (মেডিকেল অ্যাসিন্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল) শিক্ষার্থীদের অনেক দাবির একটা তাদের নামের আগে ‘ডাক্তার’ লেখার বৈধতা দেয়া। বিষয়টি নিয়ে আদালতে এটি রিট আবেদন করা হয়েছে। এদিন ওই রিটের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে হাইকোর্ট বুধবার এ সংক্রান্ত এক রায়ে বলেছে, এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিপ্রাপ্ত ছাড়া অন্য কেউ তাদের নামের আগে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না। এই রায়ে মেডিকেল শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকদের পাঁচ দাবির প্রথমটিই পূরণ হলো। এরপর বাকি চার দফা আদায়েই কর্মসূচি পালন করেন চিকিৎসকরা।
পাশাপাশি ‘ডিএমএফ’ ডিগ্রিধারীদের (ডিপ্লোমাধারী হিসেবে নিবন্ধিত) ক্ষেত্রে যথাযথ প্রিফিক্স (নামের আগে ব্যবহার করা সম্মানসূচক শব্দ) নির্ধারণে ছয় মাসের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫০০ শয্যার মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের বহির্বিভাগে রোগী দেখেছেন চিকিৎসকরা। জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান নিটোরে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে স্বাভাবিকভাবে বহির্বিভাগে রোগী দেখছেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালের আউটডোর খোলা ছিল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনায় সিদ্ধান্ত আসেনি:
পুলিশের বাধায় চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের লংমার্চ আটকে যাওয়ার পর চার দফা দাবি নিয়ে তাদের একটি প্রতিনিধিদল সচিবালয়ে যান। ১৫ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন ‘ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিসের’ সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সোহাগ।
তারা বেলা আড়াইটার দিকে শিক্ষাভবন মোড় থেকে সচিবালয়ের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। এর আগে দুপুর সোয়া একটায় শহীদ মিনার থেকে কয়েকশ’ চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের দিকে রওনা হন।
মিছিলটি শিক্ষা ভবনের সামনে পৌঁছালে পুলিশ আটকে দেয়। সেখানেই ব্যারিকেডের সামনে দাঁড়িয়ে নানা ধরনের স্লোগান দেন আন্দোলনকারীরা। অনেকে সড়কের ওপর বসে পড়েন। এ সময় সেখানে বিপুলসংখ্যক পুলিশ দেখা যায়।
এ সময় পুলিশের কর্মকর্তারা চিকিৎসকদের কাছে তাদের একটি প্রতিনিধিদলকে সচিবালয়ে পাঠানোর অনুরোধ করেন। তবে চিকিৎসকদের দাবি ছিল মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা যেন চিকিৎসকদের কাছে আসেন। একপর্যায়ে বেলা আড়াইটার দিকে সচিবালয়ে যান চিকিৎসকদের প্রতিনিধিদলটি।
সচিবালয় থেকে বের হয়ে শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের চার দফা দাবি আদায়ে স্বাস্থ্য ক্যাডার ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বৈঠকে ডেকে বাইরে থাকা আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ ‘লাঠিপেটা’ করেছে।
হাইকোর্টের রায়ে একটি দাবি পূরণ হলেও বাকি চার আদায়ে চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীরা সচিবালয় অভিমুখে যাত্রার সিদ্ধান্ত নেন।
পাঁচ দফা দাবি আদায়ে গঠিত ন্যাশনাল স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য চিকিৎসক তাওহিদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের একটা দাবি পূরণ করা হয়েছে। আরও চারটা দাবি রয়েছে। তবে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা সচিবালয়ে যাব। চার দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত রাস্তা ছাড়ব না।’
মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জনসহ নানা দাবিতে সংহতি প্রকাশ করে তাদের কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা।
শিক্ষার্থী, ইন্টার্ন চিকিৎসক এবং চিকিৎসক পেশাজীবীদের ১৭ সংগঠন নিয়ে ‘সর্বস্তরের চিকিৎসক ও চিকিৎসা শিক্ষার্থীদের’ ব্যানারে এ ঐক্য গড়ে তোলা হয়েছে। এর অধীনে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন এবং ইন্টার্নরা প্রতিদিন তিন ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন।
বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করে আসছেন ম্যাটস শিক্ষার্থীরা। তারা সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নতুন পদ তৈরি, অবিলম্বে দশম গ্রেডে শূন্যপদে নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছেন।
পাশাপাশি ম্যাটস শিক্ষার্থীরা চার বছরের অ্যাকাডেমিক কোর্স বহাল রেখে কারিকুলাম সংশোধন ও ভাতাসহ এক বছরের ইন্টার্নশিপ, প্রস্তাবিত ‘অ্যালায়েড হেলথ প্রফেশনাল বোর্ড’ বাতিল করে ‘মেডিকেল এডুকেশন বোর্ড অব বাংলাদেশ’ নামে বোর্ড গঠন এবং আন্তর্জাতিক মানদ- ও বিএমঅ্যান্ডডিসি স্বীকৃত ক্লিনিক্যাল বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষার সুযোগের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন।
তাদের এই আন্দোলনের পাল্টা কর্মসূচি পালন করছেন চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীরা।
চিকিৎসকদের বাকি চার দফা:
১ ‘রেজিস্টার্ড চিকিৎসক (এমবিবিএস বা বিডিএস) ছাড়া অন্য কেউ স্বাধীনভাবে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারবে না’ এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।
২. আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট কোর্স কারিকুলাম সংস্কার কমিটি গঠন করে তাদের কোর্স কারিকুলাম পুনঃনির্ধারণ এবং মানহীন সকল ম্যাটস (মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল) বন্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে।
৩. জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের জন্য শূন্যপদে পর্যাপ্তসংখ্যক চিকিৎসক নিয়োগ এবং চিকিৎসকদের বিসিএসের বয়সসীমা ৩৪ বছরে উন্নীত করতে হবে।
৪. অবিলম্বে চিকিৎসক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং বেসরকারি চিকিৎসকদের জন্য সুনির্দিষ্ট বেতন কাঠামো (পে-স্কেল) তৈরি করতে হবে।
তাদের প্রথম দাবির মধ্যে ছিল এমবিবিএস ও বিডিএস ব্যতীত কেউ চিকিৎসক লিখতে পারবেন না। মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) বিরুদ্ধে করা রিট ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে। বিএমডিসি নিবন্ধন শুধু এমবিবিএস বা বিডিএস ডিগ্রিধারীদের দিতে হবে। ২০১০ সাল থেকে হাসিনা সরকার ম্যাটসদের বিএমডিসি থেকে নিবন্ধন দেয়া শুরু করেছে। এ ম্যাটসদের বিএমডিসি থেকে নিবন্ধন দেয়া অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
সারাদেশে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি, বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা বন্ধ
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। জরুরি বিভাগেও স্বাভাবিক সেবা মিলছে না। এতে দূর-দূরান্ত থেকে শত শত রোগী ও তাদের স্বজনদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তবে হাসপাতালের অন্যান্য চিকিৎসা কার্যক্রম সীমিতভাবে চালু আছে। সেখানে ইন্টার্ন চিকিৎসক ছাড়া অন্যরা রোগীদের সেবা দিচ্ছেন।
বুধবার ভোর থেকে প্রতিদিনের মতো রোগীরা চমেক হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসতে থাকেন। সকাল গড়াতেই শত শত রোগীর ভিড় জমে যায়। কিন্তু বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টার থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে প্রথমে অনেক রোগী হকচকিত হয়ে পড়েন। পরে আস্তে আস্তে জানা যায়, চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। এরপরও চিকিৎসার আশায় রোগী ও তাদের স্বজনরা বহির্বিভাগের সামনে জড়ো ছিলেন।
জানা গেছে, এমবিবিএস-বিডিএস ডিগ্রিপ্রাপ্ত ছাড়া কাউকে নামের আগে ‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহার করতে না দেয়াসহ পাঁচ দফা দাবিতে সারাদেশে একযোগে কর্মবিরতি শুরু করেছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, হাসপাতালের বহির্বিভাগে সমস্যা হচ্ছে। সেখানে রোগীদের পুরোপুরি চিকিৎসাসেবা দেয়া যাচ্ছে না। তবে জরুরি বিভাগ, বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটে সেবা চালু আছে। সিনিয়র ডাক্তাররা সেবা দিচ্ছেন স্বাভাবিকভাবে। আইসিইউ সেবাও চালু আছে।
বরিশাল প্রতিনিধি জানান, কোনো প্রকারের নোটিশ ছাড়াই বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুধবার হঠাৎ ধর্মঘট শুরু করায় বহির্বিভাগের শত শত রোগীকে দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে। এমনকি ধর্মঘটের কারণে হাসপাতালের টিকিট কাউন্টার বন্ধ করে রাখা হয়।
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন বলেন, জানামতে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা পাঁচ দফা দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। কিন্তু তারা তাদের দাবির সমর্থনে কিছুই জানায়নি। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ডাকা হয়েছিল। কিন্তু তারা নিজেরাও জানেন না কর্মবিরতি কিনা।
উল্লেখ্য, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পাঁচ দফার মধ্যে আছে মেডিকেলের অ্যাসিসটেন্টদের রেজিস্ট্রেশন বন্ধ করা, ডাক্তার পদবি ব্যবহার বন্ধ করা, রেজিস্টার্ড চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ফার্মেসিতে ওষুধ বিক্রয় বন্ধ করা, স্বাস্থ্য খাতের চিকিৎসক সংকট দূর করার জন্য ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ, প্রতি বছর পাঁচ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ করা, ৬ষ্ঠ গ্রেডে চাকরির প্রবেশপথ তৈরি করা, চিকিৎসকদের বিসিএস পরীক্ষার বয়সসীমা ৩৪ করা, ম্যাটস ও ডিএমএফদের প্যারামেডিক হিসেবে পদায়ন করা প্রভৃতি।