নদীর বিপন্নতার জন্য তিন কারণকে দায়ী করলেন আনু মুহাম্মদ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বাংলাদেশের নদ-নদীর মরণদশার পেছনে তিনটি কারণ উল্লেখ করে বলেছেন, উজানে দেয়া ভারতের বাঁধ, দেশের শক্তিশালী ব্যক্তিবর্গ ও কোম্পানির দখল আর সরকারের নেয়া উন্নয়ন প্রকল্প এ তিন কারণে বাংলাদেশের নদ-–নদী ভয়ংকর বিপদের মধ্যে রয়েছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘বাংলাদেশের নদ-নদীর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস- ২০২৫ উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, যদি নদী বাঁচাতে হয়, তাহলে নদী বিনাশী প্রকল্প বাতিল করতে হবে। নদী ধ্বংস করে কর্মসংস্থান হয় না। নদী নিজে কর্মসংস্থান তৈরি করে। এছাড়া দেশের মানুষের ক্যানসারসহ বিভিন্ন অসুখ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ নদীগুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে। নদী যে পরিবেশ তৈরি করে, যে পরিবেশগত ভারসাম্য তৈরি করে, যে জীববৈচিত্র রক্ষা করে, সেটি অন্যান্য প্রাণীর জন্য যেমন দরকার, তেমনি মানুষের জন্যও দরকার। অন্য প্রাণ যদি ভালো না থাকে, তাহলে মানুষও ভালো থাকবে না। সেজন্য সর্বপ্রাণের নিরাপত্তা বিধান করতে হলে নদীকে রক্ষা করতে হবে। নদী বিনাশী কোনও প্রকল্পই আমরা উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করতে পারি না।
তিনি বলেন, সাত মাস পার হয়েছে নতুন সরকার এসেছে। বিগত স্বৈরশাসনের যারা প্রধান ব্যক্তি ছিল, তারা বর্তমানে দেশে নেই, তারা পালিয়েছে, তারা পরাজিত। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশ হবে, স্বাধীন বাংলাদেশ হবে আমরা শুনি। কিন্তু তার প্রতিফলন অনেক ক্ষেত্রেই আমরা পাচ্ছি না। নদীর ক্ষেত্রে একেবারেই পাওয়া যাচ্ছে না। দেশে নদীর যে বিপন্ন দশা, নদীর বিপদ মানে দেশের বিপদ। নদী যদি না থাকে তাহলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলি বা স্বাধীন বাংলাদেশ, নতুন বাংলাদেশ বলি সবই অর্থহীন কথায় পরিণত হবে।
নদী ধ্বংস হওয়ার বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, নদীর বিপন্ন দশার কারণগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ভারত। ভারতের যেসব নদী আমাদের দেশের ওপর দিয়ে গেছে, সেগুলোতে তারা বাঁধ দিচ্ছে। এজন্য দেশের নদীগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। তাই নদীকৃত্য দিবসে এ সরকারের প্রধান করণীয় হচ্ছে, জাতিসংঘের পানি আইনে অনুস্বাক্ষরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দ্বিতীয়ত, সরকারের অনেক উন্নয়ন প্রকল্প নদীর বিনাশ করছে। নদী দখলে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও বাহিনী জড়িয়েছে।
ধরার সহ-আহ্বায়ক এম এস সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব শরীফ জামিলের সঞ্চালনায় সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার।
মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে নদীরক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার গত সাত মাসেও
কমিশনে কোনও চেয়ারম্যান নিয়োগ না দেয়ায় সরকারের সমালোচনা করে আনু মুহাম্মদ বলেন, এটা যারা করেছেন, তারা অপরাধ করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা হয়তো বিষয়টি জানেন না। তার তিনটা ভিশনের একটা জিরো কার্বন। জিরো কার্বন মানে পৃথিবীকে দূষণমুক্ত রাখা। নদী না থাকলে দূষণমুক্ত কীভাবে হবে।
মন্ত্রণালয়ে যারা বসে আছেন, তারা দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন বলেন মুজিবুর রহমান। ৫ আগস্টের পরে নদী দখল অপ্রতিরোধ্য গতিতে চলছে বলেন তিনি। নদী রক্ষায় নিয়োজিত সব সংগঠন মিলে ছায়া নদী রক্ষা কমিশন গঠনের আহ্বান জানান তিনি।
সভায় আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি ড. আদিল মোহাম্মদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোশাহিদা সুলতানা, বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মনির হোসেন, খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপারের তোফাজ্জল সোহেল।
নদীর বিপন্নতার জন্য তিন কারণকে দায়ী করলেন আনু মুহাম্মদ
বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বাংলাদেশের নদ-নদীর মরণদশার পেছনে তিনটি কারণ উল্লেখ করে বলেছেন, উজানে দেয়া ভারতের বাঁধ, দেশের শক্তিশালী ব্যক্তিবর্গ ও কোম্পানির দখল আর সরকারের নেয়া উন্নয়ন প্রকল্প এ তিন কারণে বাংলাদেশের নদ-–নদী ভয়ংকর বিপদের মধ্যে রয়েছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘বাংলাদেশের নদ-নদীর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস- ২০২৫ উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, যদি নদী বাঁচাতে হয়, তাহলে নদী বিনাশী প্রকল্প বাতিল করতে হবে। নদী ধ্বংস করে কর্মসংস্থান হয় না। নদী নিজে কর্মসংস্থান তৈরি করে। এছাড়া দেশের মানুষের ক্যানসারসহ বিভিন্ন অসুখ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ নদীগুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে। নদী যে পরিবেশ তৈরি করে, যে পরিবেশগত ভারসাম্য তৈরি করে, যে জীববৈচিত্র রক্ষা করে, সেটি অন্যান্য প্রাণীর জন্য যেমন দরকার, তেমনি মানুষের জন্যও দরকার। অন্য প্রাণ যদি ভালো না থাকে, তাহলে মানুষও ভালো থাকবে না। সেজন্য সর্বপ্রাণের নিরাপত্তা বিধান করতে হলে নদীকে রক্ষা করতে হবে। নদী বিনাশী কোনও প্রকল্পই আমরা উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করতে পারি না।
তিনি বলেন, সাত মাস পার হয়েছে নতুন সরকার এসেছে। বিগত স্বৈরশাসনের যারা প্রধান ব্যক্তি ছিল, তারা বর্তমানে দেশে নেই, তারা পালিয়েছে, তারা পরাজিত। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশ হবে, স্বাধীন বাংলাদেশ হবে আমরা শুনি। কিন্তু তার প্রতিফলন অনেক ক্ষেত্রেই আমরা পাচ্ছি না। নদীর ক্ষেত্রে একেবারেই পাওয়া যাচ্ছে না। দেশে নদীর যে বিপন্ন দশা, নদীর বিপদ মানে দেশের বিপদ। নদী যদি না থাকে তাহলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলি বা স্বাধীন বাংলাদেশ, নতুন বাংলাদেশ বলি সবই অর্থহীন কথায় পরিণত হবে।
নদী ধ্বংস হওয়ার বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, নদীর বিপন্ন দশার কারণগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ভারত। ভারতের যেসব নদী আমাদের দেশের ওপর দিয়ে গেছে, সেগুলোতে তারা বাঁধ দিচ্ছে। এজন্য দেশের নদীগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। তাই নদীকৃত্য দিবসে এ সরকারের প্রধান করণীয় হচ্ছে, জাতিসংঘের পানি আইনে অনুস্বাক্ষরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দ্বিতীয়ত, সরকারের অনেক উন্নয়ন প্রকল্প নদীর বিনাশ করছে। নদী দখলে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও বাহিনী জড়িয়েছে।
ধরার সহ-আহ্বায়ক এম এস সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব শরীফ জামিলের সঞ্চালনায় সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার।
মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে নদীরক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার গত সাত মাসেও
কমিশনে কোনও চেয়ারম্যান নিয়োগ না দেয়ায় সরকারের সমালোচনা করে আনু মুহাম্মদ বলেন, এটা যারা করেছেন, তারা অপরাধ করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা হয়তো বিষয়টি জানেন না। তার তিনটা ভিশনের একটা জিরো কার্বন। জিরো কার্বন মানে পৃথিবীকে দূষণমুক্ত রাখা। নদী না থাকলে দূষণমুক্ত কীভাবে হবে।
মন্ত্রণালয়ে যারা বসে আছেন, তারা দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন বলেন মুজিবুর রহমান। ৫ আগস্টের পরে নদী দখল অপ্রতিরোধ্য গতিতে চলছে বলেন তিনি। নদী রক্ষায় নিয়োজিত সব সংগঠন মিলে ছায়া নদী রক্ষা কমিশন গঠনের আহ্বান জানান তিনি।
সভায় আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি ড. আদিল মোহাম্মদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোশাহিদা সুলতানা, বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মনির হোসেন, খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপারের তোফাজ্জল সোহেল।