‘উদ্বৃত্ত’ ৬২ লাখ বই ফেরত এসেছে
এবার সারাদেশের অন্তত ২৯টি উপজেলা থেকে প্রায় ৬২ লাখ পাঠ্যবই ফেরত এসেছে। উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কেউ কেউ দ্বিগুণ ও তিনগুণ বেশি বইয়ের চাহিদাপত্র পাঠানোর কারণে এসব বই বেশি ছাপানো হয়েছে বলে এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
উদ্বৃত্ত বইগুলো রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের’ (এনসিটিবি) গুদামে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে ‘প্রয়োজন ও চাহিদার’ ভিত্তিতে অন্যান্য জেলা ও উপজেলায় পাঠানো হচ্ছে বলে সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির বিতরণ নিয়ন্ত্রক হাফিজুর রহমান সংবাদকে বলেছেন, ‘কিছু কিছু উপজেলা থেকে অতিরিক্ত চাহিদা দিয়েছিল, সেসব বই সংগ্রহ করে আমরা গুদামে রেখেছি। এগুলো এখন রি-অ্যারেজ করা হচ্ছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর বাড্ডা, কাফরুল ও সাভারের দোহার; নরসিংদীর পলাশ ও রায়পুরা, কুড়িগ্রাম সদর, যশোরের মনিরামপুর, চাঁদপুরের কচুয়াসহ বিভিন্ন জেলার অন্তত ২৯টি উপজেলা থেকে ৬২ থেকে ৬৩ লাখ বই ফেরত এসেছে। এগুলোর সবই মাধ্যমিক স্তরের বই। এসব বই নিয়ে এনসিটিবি কিছুটা সমস্যায়ও পড়েছে। এখন বইগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সরবরাহ করতে হচ্ছে।
একটি বই ছাপতে কত টাকা খরচ হচ্ছে জানতে চাইলে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, ‘মাধ্যমিকের প্রতিটি বই ছাপার খরচ পড়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকার মতো।’
জানতে চাইলে কাফরুল থানার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জহুরা খাতুন সংবাদকে বলেন, ‘থানায় উদ্বৃত্ত কোনো বই নেই। আমাদের প্রতিটি ক্লাসে ৫/৬ সেট বইয়ের বেশি চাহিদা দেয়া লাগে। এটা দেয়া লাগে, কারণ হুট করে নতুন একটি প্রতিষ্ঠান খুলে বসে; তারা এসে বইয়ের চাহিদা দেয়। তখন আমাদের কিছু বই দিতেই হয়।’
স্কুলগুলোও বইয়ের ‘অতিরিক্ত চাহিদা’ দিয়ে থাকে জানিয়ে এই শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘এবার হয়তো ১৫ থেকে ২০ সেট বই অতিরিক্ত হতে পারে। এছাড়া বিগত কয়েক বছরের ৫/৬ সেট করে উদ্বৃত্ত বই গুদামে রয়েছে।’
বাড্ডা থানার এক শিক্ষা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, তারা ‘ভুলবশত’ বেশি বইয়ের চাহিদাপত্র এনসিটিবিকে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তারা একাধিকবার সংশোধিত তালিকা পাঠিয়েছিল এনসিটিবিতে। এরপরও বইয়ের চাহিদাপত্র সংশোধন হয়নি।
উদ্বৃত্ত বইগুলো কাজে লাগানো হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে হাফিজুর রহমান বলেন, ‘কিছু প্রতিষ্ঠান (ছাপাখানা) ঠিকমতো কাজ করতে পারছিল না, তাদের কাজ কমিয়ে দিয়েছি; ১৫টি টেন্ডার ক্যানসেল করেছি; সেসব উপজেলার গুদাম থেকে বই পাঠাচ্ছি।’
এখনও স্কুলপর্যায়ে পৌঁছেনি এক কোটি বই:
এনসিটিবির তথ্যানুযায়ী, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রায় এক কোটি পাঠ্যবই এখনও সরবরাহের বাকি রয়েছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রায় ২৫ লাখ বই ছাপা হয়নি। বাকি বইগুলো ছাপার কাজ শেষ হলেও বাঁধাইয়ের অপেক্ষায় রয়েছে। এসব বই বাঁধাইয়ের পর স্কুলপর্যায়ে পাঠানো হবে।
বর্তমানে বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ঈদের পর খুলবে সব
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর আগে চলতি সপ্তাহেই পাঠ্যবই ছাপার কাজ পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে বলে বই ছাপার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা আশা করছেন। উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছালেও এসব বই স্কুলপর্যায়ে বিতরণ হবে ঈদের ছুটির পর।
এনসিটিবির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মঙ্গলবার সংবাদকে জানিয়েছেন, মাধ্যমিকের মোট বইয়ের সংখ্যা ৩০ কোটি ১৯ লাখের মতো। এর মধ্যে মঙ্গলবার পর্যন্ত পিডিআই (প্রি-ডেলিভারি ইন্সপেকশন) হয়েছে ২৯ কোটি ৪০ লাখ বই। সেই হিসাবে এখনও প্রায় ৮০ লাখ বই পিডিআইয়ের বাকি রয়েছে।
সাধারণত ছাপাখানায় কাগজ ও কালির মান পরীক্ষা করে পিডিআই রিপোর্ট দিয়ে থাকেন এনসিটিবি নিযুক্ত তদারকি সংস্থা। এরপর তা বাঁধাই করে উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহ করেন ছাপাখানার মালিকরা। সেই কারণে পিডিআই হলেও সব বই সরবরাহ হয়ে গেছে সেটি বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
এনসিটিবি জানিয়েছে, চলতি ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য মোট ৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২ কপি বই ছাপার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল। এ ছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য কিছু ব্রেইল বই এবং শিক্ষকদের জন্য প্রায় ৪১ লাখ সহায়িকা বই ছাপার কথা ছিল। পরবর্তীতে বইয়ের সংখ্যা কিছু কমেছে।
তবে এ বিষয়ে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান মঙ্গলবার সংবাদকে বলেছেন, ‘আমাদের কাছে যে হিসাব এসেছে, তাতে এখনও এক কোটির বেশি বই ছাপার বাকি রয়েছে। আর পিডিআই’র বরাত দিয়ে যে তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে সেটি নিয়েও প্রশ্ন আছে। কারণ তারা এনসিটিবির চাহিদা অনুযায়ী রিপোর্ট দেয়। ছাপা শেষ করতে কয়েকটি ছাপাখানা আরও সময় চেয়ে এনসিটিবির কাছে আবেদন করছে।’
মোট বইয়ের মধ্যে এবার প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিকের দুই কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৯ শিক্ষার্থীর জন্য ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫৫টি বই ছেপেছে এনসিটিবি।
আর ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিকের ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর দুই কোটি ২৪ লাখ ৫৮ হাজার ৮০৪ শিক্ষার্থীর জন্য প্রায় ৩১ কোটি বই ছাপা হচ্ছে।
‘উদ্বৃত্ত’ ৬২ লাখ বই ফেরত এসেছে
মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫
এবার সারাদেশের অন্তত ২৯টি উপজেলা থেকে প্রায় ৬২ লাখ পাঠ্যবই ফেরত এসেছে। উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কেউ কেউ দ্বিগুণ ও তিনগুণ বেশি বইয়ের চাহিদাপত্র পাঠানোর কারণে এসব বই বেশি ছাপানো হয়েছে বলে এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
উদ্বৃত্ত বইগুলো রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের’ (এনসিটিবি) গুদামে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে ‘প্রয়োজন ও চাহিদার’ ভিত্তিতে অন্যান্য জেলা ও উপজেলায় পাঠানো হচ্ছে বলে সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির বিতরণ নিয়ন্ত্রক হাফিজুর রহমান সংবাদকে বলেছেন, ‘কিছু কিছু উপজেলা থেকে অতিরিক্ত চাহিদা দিয়েছিল, সেসব বই সংগ্রহ করে আমরা গুদামে রেখেছি। এগুলো এখন রি-অ্যারেজ করা হচ্ছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর বাড্ডা, কাফরুল ও সাভারের দোহার; নরসিংদীর পলাশ ও রায়পুরা, কুড়িগ্রাম সদর, যশোরের মনিরামপুর, চাঁদপুরের কচুয়াসহ বিভিন্ন জেলার অন্তত ২৯টি উপজেলা থেকে ৬২ থেকে ৬৩ লাখ বই ফেরত এসেছে। এগুলোর সবই মাধ্যমিক স্তরের বই। এসব বই নিয়ে এনসিটিবি কিছুটা সমস্যায়ও পড়েছে। এখন বইগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সরবরাহ করতে হচ্ছে।
একটি বই ছাপতে কত টাকা খরচ হচ্ছে জানতে চাইলে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, ‘মাধ্যমিকের প্রতিটি বই ছাপার খরচ পড়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকার মতো।’
জানতে চাইলে কাফরুল থানার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জহুরা খাতুন সংবাদকে বলেন, ‘থানায় উদ্বৃত্ত কোনো বই নেই। আমাদের প্রতিটি ক্লাসে ৫/৬ সেট বইয়ের বেশি চাহিদা দেয়া লাগে। এটা দেয়া লাগে, কারণ হুট করে নতুন একটি প্রতিষ্ঠান খুলে বসে; তারা এসে বইয়ের চাহিদা দেয়। তখন আমাদের কিছু বই দিতেই হয়।’
স্কুলগুলোও বইয়ের ‘অতিরিক্ত চাহিদা’ দিয়ে থাকে জানিয়ে এই শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘এবার হয়তো ১৫ থেকে ২০ সেট বই অতিরিক্ত হতে পারে। এছাড়া বিগত কয়েক বছরের ৫/৬ সেট করে উদ্বৃত্ত বই গুদামে রয়েছে।’
বাড্ডা থানার এক শিক্ষা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, তারা ‘ভুলবশত’ বেশি বইয়ের চাহিদাপত্র এনসিটিবিকে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তারা একাধিকবার সংশোধিত তালিকা পাঠিয়েছিল এনসিটিবিতে। এরপরও বইয়ের চাহিদাপত্র সংশোধন হয়নি।
উদ্বৃত্ত বইগুলো কাজে লাগানো হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে হাফিজুর রহমান বলেন, ‘কিছু প্রতিষ্ঠান (ছাপাখানা) ঠিকমতো কাজ করতে পারছিল না, তাদের কাজ কমিয়ে দিয়েছি; ১৫টি টেন্ডার ক্যানসেল করেছি; সেসব উপজেলার গুদাম থেকে বই পাঠাচ্ছি।’
এখনও স্কুলপর্যায়ে পৌঁছেনি এক কোটি বই:
এনসিটিবির তথ্যানুযায়ী, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রায় এক কোটি পাঠ্যবই এখনও সরবরাহের বাকি রয়েছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রায় ২৫ লাখ বই ছাপা হয়নি। বাকি বইগুলো ছাপার কাজ শেষ হলেও বাঁধাইয়ের অপেক্ষায় রয়েছে। এসব বই বাঁধাইয়ের পর স্কুলপর্যায়ে পাঠানো হবে।
বর্তমানে বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ঈদের পর খুলবে সব
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর আগে চলতি সপ্তাহেই পাঠ্যবই ছাপার কাজ পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে বলে বই ছাপার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা আশা করছেন। উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছালেও এসব বই স্কুলপর্যায়ে বিতরণ হবে ঈদের ছুটির পর।
এনসিটিবির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মঙ্গলবার সংবাদকে জানিয়েছেন, মাধ্যমিকের মোট বইয়ের সংখ্যা ৩০ কোটি ১৯ লাখের মতো। এর মধ্যে মঙ্গলবার পর্যন্ত পিডিআই (প্রি-ডেলিভারি ইন্সপেকশন) হয়েছে ২৯ কোটি ৪০ লাখ বই। সেই হিসাবে এখনও প্রায় ৮০ লাখ বই পিডিআইয়ের বাকি রয়েছে।
সাধারণত ছাপাখানায় কাগজ ও কালির মান পরীক্ষা করে পিডিআই রিপোর্ট দিয়ে থাকেন এনসিটিবি নিযুক্ত তদারকি সংস্থা। এরপর তা বাঁধাই করে উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহ করেন ছাপাখানার মালিকরা। সেই কারণে পিডিআই হলেও সব বই সরবরাহ হয়ে গেছে সেটি বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
এনসিটিবি জানিয়েছে, চলতি ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য মোট ৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২ কপি বই ছাপার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল। এ ছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য কিছু ব্রেইল বই এবং শিক্ষকদের জন্য প্রায় ৪১ লাখ সহায়িকা বই ছাপার কথা ছিল। পরবর্তীতে বইয়ের সংখ্যা কিছু কমেছে।
তবে এ বিষয়ে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান মঙ্গলবার সংবাদকে বলেছেন, ‘আমাদের কাছে যে হিসাব এসেছে, তাতে এখনও এক কোটির বেশি বই ছাপার বাকি রয়েছে। আর পিডিআই’র বরাত দিয়ে যে তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে সেটি নিয়েও প্রশ্ন আছে। কারণ তারা এনসিটিবির চাহিদা অনুযায়ী রিপোর্ট দেয়। ছাপা শেষ করতে কয়েকটি ছাপাখানা আরও সময় চেয়ে এনসিটিবির কাছে আবেদন করছে।’
মোট বইয়ের মধ্যে এবার প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিকের দুই কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৯ শিক্ষার্থীর জন্য ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫৫টি বই ছেপেছে এনসিটিবি।
আর ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিকের ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর দুই কোটি ২৪ লাখ ৫৮ হাজার ৮০৪ শিক্ষার্থীর জন্য প্রায় ৩১ কোটি বই ছাপা হচ্ছে।