বঙ্গোপসাগরে দেশের জলসীমায় ৬৫ দিনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা পুনর্বিন্যাস করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে সময়সীমা কমিয়ে ৫৮ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে নিষেধাজ্ঞার সময় ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রায় একই সময়ে করা হয়েছে।
রোববার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন মৎস্য গবেষক, জেলে ও ব্যবসায়ীরা।
দেশের মৎস্য গবেষক, জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিন্যাসের দাবি করে আসছিলেন। তারা ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজন রয়েছে কিনা, তার ওপর কারিগরি গবেষণার তাগিদ দিয়ে আসছিলেন।
মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মাছের বংশবিস্তার, বেড়ে ওঠা ও টেকসই আহরণের জন্য বঙ্গোপসাগরে ভারত ও বাংলাদেশ সরকার বছরের নির্দিষ্ট একটি সময়ে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেয়। প্রতিবছর দেশের জলসীমায় এই নিষেধাজ্ঞা থাকে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিন। আর ভারতের জলসীমায় তা থাকে ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন (৬১ দিন)।
দেশের জেলেদের অভিযোগ, নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকার মধ্যে প্রায় ৩৯ দিন ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ ধরে নিয়ে যায়। এতে দেশের জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে দেশের সমুদ্র ও অভ্যন্তরীণ উৎসে মাছের মজুতও হুমকিতে পড়ে।
মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞায় সরকারের নতুন সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, তারা প্রথম থেকেই এই নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনার দাবি করে আসছিলেন। কারণ এতে সাগর-নদী মাছশূন্য হয়ে পড়েছিল।
জেলেরা খুব কষ্টে আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যও ধ্বংস হওয়ার অবস্থায় পৌঁছেছিল। বর্তমান সরকার নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত নেয়ায় তারা খুব খুশি।
এবিষয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, এটা দেশের সামুদ্রিক মৎস্য খাতের জন্য সরকারের একটি ‘যুগান্তকারী’ পদক্ষেপ। এর কারণ, আগে সরকার যে উদ্দেশে এই নিষেধাজ্ঞা দিত, তা দুই দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য না থাকায় প্রতিবেশী দেশকে ‘লাভবান’ করতো। এটা দেশের মৎস্যসম্পদের জন্য একটি ‘বড় ক্ষতির’ কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা পুনর্বিন্যাস করে যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, তাতে প্রতিবছর ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সময়ে নিষেধাজ্ঞা থাকবে বঙ্গোপসাগরের ভারতের জলসীমায়ও। এ ক্ষেত্রে ভারতের নিষেধাজ্ঞো বলবৎ থাকার দুদিন আগে বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ সরকার ২০১৫ সাল থেকে প্রতিবছর ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আসছে। প্রথম দিকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলারগুলো এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকলেও ২০১৯ সাল থেকে সব ধরনের
নৌযানকে এর আওতায় আনা হয়। ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে উপকূলের কয়েক লাখ জেলে দুর্বিষহ অবস্থার মুখোমুখি হন।
নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা পুনর্বিন্যাস করার জন্য বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চল এবং দেশের উপকূলীয় এলাকার জেলেরা নৌ অবরোধ, মানববন্ধনসহ নানা আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের দাবি তুলে ধরে আসছিলেন। দেশের মৎস্যবিজ্ঞানীদেরও বিষয়টি নিয়ে গবেষণার তাগিদ ছিল।
জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের মা ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা, ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা ধরায় ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা, মার্চ-এপ্রিলের দুই মাসের অভয়ারণ্যের নিষেধাজ্ঞা এবং সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা, সব মিলিয়ে বছরে ১৪৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা পালন করতে হয়। এখন তা আট দিন কমে গেল।
মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫
বঙ্গোপসাগরে দেশের জলসীমায় ৬৫ দিনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা পুনর্বিন্যাস করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে সময়সীমা কমিয়ে ৫৮ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে নিষেধাজ্ঞার সময় ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রায় একই সময়ে করা হয়েছে।
রোববার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন মৎস্য গবেষক, জেলে ও ব্যবসায়ীরা।
দেশের মৎস্য গবেষক, জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিন্যাসের দাবি করে আসছিলেন। তারা ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজন রয়েছে কিনা, তার ওপর কারিগরি গবেষণার তাগিদ দিয়ে আসছিলেন।
মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মাছের বংশবিস্তার, বেড়ে ওঠা ও টেকসই আহরণের জন্য বঙ্গোপসাগরে ভারত ও বাংলাদেশ সরকার বছরের নির্দিষ্ট একটি সময়ে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেয়। প্রতিবছর দেশের জলসীমায় এই নিষেধাজ্ঞা থাকে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিন। আর ভারতের জলসীমায় তা থাকে ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন (৬১ দিন)।
দেশের জেলেদের অভিযোগ, নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকার মধ্যে প্রায় ৩৯ দিন ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ ধরে নিয়ে যায়। এতে দেশের জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে দেশের সমুদ্র ও অভ্যন্তরীণ উৎসে মাছের মজুতও হুমকিতে পড়ে।
মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞায় সরকারের নতুন সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, তারা প্রথম থেকেই এই নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনার দাবি করে আসছিলেন। কারণ এতে সাগর-নদী মাছশূন্য হয়ে পড়েছিল।
জেলেরা খুব কষ্টে আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যও ধ্বংস হওয়ার অবস্থায় পৌঁছেছিল। বর্তমান সরকার নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত নেয়ায় তারা খুব খুশি।
এবিষয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, এটা দেশের সামুদ্রিক মৎস্য খাতের জন্য সরকারের একটি ‘যুগান্তকারী’ পদক্ষেপ। এর কারণ, আগে সরকার যে উদ্দেশে এই নিষেধাজ্ঞা দিত, তা দুই দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য না থাকায় প্রতিবেশী দেশকে ‘লাভবান’ করতো। এটা দেশের মৎস্যসম্পদের জন্য একটি ‘বড় ক্ষতির’ কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা পুনর্বিন্যাস করে যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, তাতে প্রতিবছর ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সময়ে নিষেধাজ্ঞা থাকবে বঙ্গোপসাগরের ভারতের জলসীমায়ও। এ ক্ষেত্রে ভারতের নিষেধাজ্ঞো বলবৎ থাকার দুদিন আগে বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ সরকার ২০১৫ সাল থেকে প্রতিবছর ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আসছে। প্রথম দিকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলারগুলো এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকলেও ২০১৯ সাল থেকে সব ধরনের
নৌযানকে এর আওতায় আনা হয়। ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে উপকূলের কয়েক লাখ জেলে দুর্বিষহ অবস্থার মুখোমুখি হন।
নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা পুনর্বিন্যাস করার জন্য বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চল এবং দেশের উপকূলীয় এলাকার জেলেরা নৌ অবরোধ, মানববন্ধনসহ নানা আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের দাবি তুলে ধরে আসছিলেন। দেশের মৎস্যবিজ্ঞানীদেরও বিষয়টি নিয়ে গবেষণার তাগিদ ছিল।
জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের মা ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা, ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা ধরায় ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা, মার্চ-এপ্রিলের দুই মাসের অভয়ারণ্যের নিষেধাজ্ঞা এবং সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা, সব মিলিয়ে বছরে ১৪৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা পালন করতে হয়। এখন তা আট দিন কমে গেল।