অস্ত্র মামলায় ১৭ বছরের দণ্ড বাতিল করে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে খালাস দিয়েছে হাইকোর্ট। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরীন আক্তারের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ বাবরের আপিল গ্রহণ করে বুধবার এ রায় দেন।
বাবরের বাসায় লাইসেন্সবিহীন রিভলভার পাওয়ার অভিযোগে ২০০৭ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার মেট্রোপলিটন স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল নং-৯ বাবরকে ১৭ বছরের সাজা দিয়েছিল। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালের ২৮ মে লুৎফুজ্জামান বাবরকে তার বাসা থেকে আটক করা হয়। পরদিন তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গ্রেপ্তারের ৫ মাস পরে জরুরি অবস্থার ওই বছরেই অস্ত্র মামলায় বাবরকে ১৭ বছরের সাজা ঘোষণা করে রায় দেয় আদালত।
বাবরের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেছেন আইনজীবী মো. শিশির মনির। তিনি বলেন, ‘যৌথবাহিনী উনাকে গ্রেপ্তারের ৭ দিন পর উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই মামলা দায়ের করে। এজাহারে বলা হয়েছিল একটি লালকালো ব্যাগ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়, কিন্তু জব্দ তালিকায় সেই ব্যাগ ছিল না। যেই জিডিমূলে উনাকে গ্রেপ্তার করা হয় আদালতে দরখাস্ত দেয়া সত্ত্বেও সেই জিডি বিচারিক আদালতে প্রদর্শন করা হয়নি।’
শিশির মনির বলেছেন, আসামি পক্ষ থেকে ঘটনার দিনে ওই বাসার ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও সংগ্রহ করে আদালতে উপস্থাপনের জন্য বারবার আবেদন করা হলেও তা মঞ্জুর হয়নি। তিনি বলেন, ‘মূলত যৌথবাহিনীর কয়েক সদস্য ওই লালকালো ব্যাগ হাতে নিয়েই বাসায় প্রবেশ করেছিলেন। মামলায় দারোয়ান ও ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি নিরপেক্ষ সাক্ষী থাকলেও তারা সাক্ষ্য দেয়ার সময়ে বলেন, তাদের সামনে কিছু জব্দ করা হয়নি শুধু সই নেয়া হয়েছে। হাইকোর্ট আমাদের শুনানি গ্রহণ করে বাবরকে খালাস দিয়েছে।’
মামলার বিবরণীতে বলা হয়েছে, ‘গ্রেপ্তারের পর ৩ জুন বাবরের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় অস্ত্র আইনের ১৯ (ক) ও ১৯ (চ) ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন গুলশান থানার এস আই হেলাল উদ্দিন।’ মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ‘গ্রেপ্তারের
দিন রাত সাড়ে ৯টায় যৌথবাহিনী ও গুলশান থানা পুলিশ বাবরের বাসায় তল্লাশি চালায়। ওই তল্লাশি অভিযানে রিভলভার, পিস্তল, রাইফেল ও শটগান জব্দ করা হয়। এসব অস্ত্রের লাইসেন্সের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তার স্ত্রী ৩টি অস্ত্রের লাইসেন্স দেখালেও রিভলভারেরটি দেখাতে পারেননি।’
এর ২০ দিন পর ২০০৭ সালের ২৩ জুন তদন্তকারী কর্মকর্তা বাবরের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। শুনানি শুরু হলে রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণে ১৪ জন সাক্ষীরও সাক্ষ্যগ্রহণ করে। সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ২০০৭ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার মেট্রোপলিটন স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৯ অস্ত্র আইনের ১৯ (ক) ধারায় বাবরকে ১০ বছর এবং ১৯ (চ) ধারায় ৭ বছর অর্থাৎ সর্বমোট ১৭ বছরের সাজা ঘোষণা করে রায় দেন।
এই রায় বাতিল চেয়ে বাবর যে আপিল করেছিলেন, সেটির শুনানি শেষে তাকে খালাস দিলো হাইকোর্ট। বিভিন্ন মামলার দণ্ড মাথায় নিয়ে টানা ১৭ বছর কারাবাসের পর গত ১৬ জানুয়ারি মুক্তি পেয়েছেন বাবর। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালের ২৮ মে লুৎফুজ্জামান বাবরকে গ্রেপ্তার করা হয়। জরুরি অবস্থার সেই দুই বছর এবং পরে আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে কয়েকটি মামলায় তাকে সাজা দেয়া হয়।
এর মধ্যে দুটি মামলায় তার মৃত্যুদণ্ড হয়, একটিতে হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আপিল শুনানি শেষে একে একে এসব মামলায় খালাস পান বাবর। গত ২৩ অক্টোবর দুর্নীতির এক মামলায় ৮ বছরের দণ্ড থেকে খালাস পান তিনি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় মৃত্যুদণ্ডর আসামি বাবরসহ সব আসামিকে গত ১ ডিসেম্বর খালাস দেয় হাইকোর্ট।
১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলাতেও বাবরের মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল। আর অস্ত্র আইনের পৃথক মামলায় হয়েছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। গত ১৮ ডিসেম্বর ও ১৪ জানুয়ারি আপিলের রায়ে হাইকোর্ট দুই মামলাতেই বাবরকে খালাস দিলে তার মুক্তির পথ খোলে। বাবর নেত্রকোণা-৪ আসন থেকে (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরী) ১৯৯১-১৯৯৬ ও ২০০১-২০০৬ সময়ে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভার সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে তিনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন।
বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫
অস্ত্র মামলায় ১৭ বছরের দণ্ড বাতিল করে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে খালাস দিয়েছে হাইকোর্ট। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরীন আক্তারের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ বাবরের আপিল গ্রহণ করে বুধবার এ রায় দেন।
বাবরের বাসায় লাইসেন্সবিহীন রিভলভার পাওয়ার অভিযোগে ২০০৭ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার মেট্রোপলিটন স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল নং-৯ বাবরকে ১৭ বছরের সাজা দিয়েছিল। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালের ২৮ মে লুৎফুজ্জামান বাবরকে তার বাসা থেকে আটক করা হয়। পরদিন তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গ্রেপ্তারের ৫ মাস পরে জরুরি অবস্থার ওই বছরেই অস্ত্র মামলায় বাবরকে ১৭ বছরের সাজা ঘোষণা করে রায় দেয় আদালত।
বাবরের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেছেন আইনজীবী মো. শিশির মনির। তিনি বলেন, ‘যৌথবাহিনী উনাকে গ্রেপ্তারের ৭ দিন পর উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই মামলা দায়ের করে। এজাহারে বলা হয়েছিল একটি লালকালো ব্যাগ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়, কিন্তু জব্দ তালিকায় সেই ব্যাগ ছিল না। যেই জিডিমূলে উনাকে গ্রেপ্তার করা হয় আদালতে দরখাস্ত দেয়া সত্ত্বেও সেই জিডি বিচারিক আদালতে প্রদর্শন করা হয়নি।’
শিশির মনির বলেছেন, আসামি পক্ষ থেকে ঘটনার দিনে ওই বাসার ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও সংগ্রহ করে আদালতে উপস্থাপনের জন্য বারবার আবেদন করা হলেও তা মঞ্জুর হয়নি। তিনি বলেন, ‘মূলত যৌথবাহিনীর কয়েক সদস্য ওই লালকালো ব্যাগ হাতে নিয়েই বাসায় প্রবেশ করেছিলেন। মামলায় দারোয়ান ও ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি নিরপেক্ষ সাক্ষী থাকলেও তারা সাক্ষ্য দেয়ার সময়ে বলেন, তাদের সামনে কিছু জব্দ করা হয়নি শুধু সই নেয়া হয়েছে। হাইকোর্ট আমাদের শুনানি গ্রহণ করে বাবরকে খালাস দিয়েছে।’
মামলার বিবরণীতে বলা হয়েছে, ‘গ্রেপ্তারের পর ৩ জুন বাবরের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় অস্ত্র আইনের ১৯ (ক) ও ১৯ (চ) ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন গুলশান থানার এস আই হেলাল উদ্দিন।’ মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ‘গ্রেপ্তারের
দিন রাত সাড়ে ৯টায় যৌথবাহিনী ও গুলশান থানা পুলিশ বাবরের বাসায় তল্লাশি চালায়। ওই তল্লাশি অভিযানে রিভলভার, পিস্তল, রাইফেল ও শটগান জব্দ করা হয়। এসব অস্ত্রের লাইসেন্সের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তার স্ত্রী ৩টি অস্ত্রের লাইসেন্স দেখালেও রিভলভারেরটি দেখাতে পারেননি।’
এর ২০ দিন পর ২০০৭ সালের ২৩ জুন তদন্তকারী কর্মকর্তা বাবরের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। শুনানি শুরু হলে রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণে ১৪ জন সাক্ষীরও সাক্ষ্যগ্রহণ করে। সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ২০০৭ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার মেট্রোপলিটন স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৯ অস্ত্র আইনের ১৯ (ক) ধারায় বাবরকে ১০ বছর এবং ১৯ (চ) ধারায় ৭ বছর অর্থাৎ সর্বমোট ১৭ বছরের সাজা ঘোষণা করে রায় দেন।
এই রায় বাতিল চেয়ে বাবর যে আপিল করেছিলেন, সেটির শুনানি শেষে তাকে খালাস দিলো হাইকোর্ট। বিভিন্ন মামলার দণ্ড মাথায় নিয়ে টানা ১৭ বছর কারাবাসের পর গত ১৬ জানুয়ারি মুক্তি পেয়েছেন বাবর। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালের ২৮ মে লুৎফুজ্জামান বাবরকে গ্রেপ্তার করা হয়। জরুরি অবস্থার সেই দুই বছর এবং পরে আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে কয়েকটি মামলায় তাকে সাজা দেয়া হয়।
এর মধ্যে দুটি মামলায় তার মৃত্যুদণ্ড হয়, একটিতে হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আপিল শুনানি শেষে একে একে এসব মামলায় খালাস পান বাবর। গত ২৩ অক্টোবর দুর্নীতির এক মামলায় ৮ বছরের দণ্ড থেকে খালাস পান তিনি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় মৃত্যুদণ্ডর আসামি বাবরসহ সব আসামিকে গত ১ ডিসেম্বর খালাস দেয় হাইকোর্ট।
১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলাতেও বাবরের মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল। আর অস্ত্র আইনের পৃথক মামলায় হয়েছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। গত ১৮ ডিসেম্বর ও ১৪ জানুয়ারি আপিলের রায়ে হাইকোর্ট দুই মামলাতেই বাবরকে খালাস দিলে তার মুক্তির পথ খোলে। বাবর নেত্রকোণা-৪ আসন থেকে (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরী) ১৯৯১-১৯৯৬ ও ২০০১-২০০৬ সময়ে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভার সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে তিনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন।