দেশে ৩ হাজারেরও বেশি কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়কে ডাকাতি ও ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়িত থাকার ঘটনায় সন্দেহ এক হাজার ৪৪৩ ডাকাতকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বুধবার পর্যন্ত ১৯ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি অপারেশন শফিকুল ইসলাম। পলাতক অন্য ডাকাতসহ অপরাধীদের ধরতে চলছে হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতা।

হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি (অপারেশন) শফিকুল ইসলাম সংবাদকে জানান, ঈদ নিরাপত্তায় আগামী ২৫শে মার্চ মঙ্গলবার থেকে ঢাকা চট্টগ্রাম, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে বাড়তি নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হবে। এই লক্ষ্যে হাইওয়ে পুলিশ কাজ শুরু করছেন। হাইওয়ে পুলিশকে আরও অতিরিক্ত ৭শ’ ফোর্স পুলিশ সদর দপ্তর থেকে দেয়া হয়েছে।

হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, দেশে ৩ হাজার ৯শ’ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়কে ৩৪০টি অপারেশন টিম কাজ করছে। ঈদে যাত্রা পথে হাইওয়ে পুলিশ হটলাইন চালু করবে। হটলাইনে কল করলে ১৫ মিনিটের মধ্যে পুলিশের সাড়া মিলবে। জেলা পর্যায়ে পুলিশের পেট্রোল টিম রাতে কাজ করছে।

হাইওয়ে পুলিশকে সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশ সহায়তা করবেন। আর ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে অপরাধী চিহ্নিত করতে স্থাপন করা ১৪৭২টি সিসি ক্যামেরার মধ্যে এখন ১৩৩৯টি ক্যামেরা চালু আছে। অন্যগুলো নষ্ট। সেগুলো চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

গাজীপুর হাইওয়ে রিজিয়নের এসপি আ ক ম আকতারুজ্জামান বসুনিয়া সংবাদকে জানান, এইবার ঈদ উপলক্ষ্যে নিরাপত্তাকে চেলেঞ্জ হিসাবে নিয়ে মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট গুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা থাকবে। যেমন- গাজীপুরের চন্দ্র ও টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জের ভূলতা, কাঁচপুর, মোঘরাপাড়া, বিভিন্ন টোল প্লাজা, মাওয়া টোল প্লাজা, আশুগঞ্জ, ভৈরবসহ ঢাকা সিলেট ও ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কগুলোতে নিরাপত্তায় ২৪ মার্চ বিকেল থেকে দায়িত্ব দেয়া শুরু হবে। ২৫ মার্চ থেকে তারা পুরো মাঠে নামবে। চলবে ঈদ পর্যন্ত।

জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোতে জনভোগান্তি কমাতে হাইওয়ে পুলিশ ছাড়াও জেলা কাজ করবেন। এজন্য বাড়তি যানবাহন ও বাড়তি ফোর্সের ব্যবস্থা করছেন পুলিশ সদর দপ্তর। নিরাপত্তায় ২ হাজাল ৯শ’ হাইওয়ে পুলিশ ছাড়াও ৭শ’ ফোর্স বাড়তি থাকবে। জেলা পর্যায়ে জেলা পুলিশ হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গে সম্বনয় করে কাজ করবে।

যে সব ডাকাত আগে মহাসড়কে ডাকাতি ও ছিনতাই করেছে। এমন ডাকাতদের তালিকা সংগ্রহ করে

মহাসড়কে ডাকাত চিহ্নিত করা হয়েছে। তিন থেকে ৪ জন হলে ছিনতাইকারী বা দস্যুতা। ৫ জনের বেশি হলে বা ৭ থেকে ৮ জন হলে ডাকাত। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও আছে। এই সব ডাকাদের তালিকা সংগ্রহ করে তাদের চিহ্নিত ও আইনের আওতায় আনতে হাইওয়ে পুলিশ কাজ করছেন।

এ দিকে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব সম্পতি এক আলোচনা সভায় বলেছেন, রমজানের ঈদে সড়কে ডাকাতি ও সড়ক দুর্ঘটনা উত্তরণ নিয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেছেন, এইবারের ঈদে ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলো থেকে লাখ লাখ মানুষ নাড়ির টানে বাড়ি যাবে। তাই ঈদের সময় সড়ক ও মহাসড়কে দুর্ঘটনা ও যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়তে পারে। তাই আগে থেকে নিরাপত্তা প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

ঈদের সময় যাতে ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধ, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে দেশের ৬৪ জেলায় ভিজিলেন্স টিমের তৎপরতা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। আর ঈদ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিআরটিএর একজন কর্মকর্তা।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঈদযাত্রাবহরে ফিটনেসবিহীন লক্কর-ঝক্কর যানবাহন বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। আর রুট ভিত্তিক যানবাহনের গতি নির্ধারণ, যানজট ও দুর্ঘটনা কমাতে জাতীয় মহাসড়ক থেকে রিকশা, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, নসিমন, করিমন, সিএনজি চালিত অটোরিকশা ঈদের বন্ধের সময় উচ্ছেদ করতে হবে।

মহাসড়ক, রেল ও নৌপথে যাত্রী হয়রানি, অজ্ঞান পার্টি, মলমপার্টি, টিকেট কালোবাজারি বন্ধে গোয়েন্দা পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কার্যক্রম চালু করার দাবি জানান।

এ দিকে পুলিশের একজন ডিআইজি জানান, দেশের মানুষের মধ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে পুলিশ কাজ শুরু করেছেন। এই জন্য এইবার ঈদে চেলেঞ্জ নিয়ে পুলিশ তৎপরতা শুরু করেছেন।

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে পুলিশ প্রধানের সঙ্গে বৈঠক হয়। এরপর পুলিশ কর্মকর্তারা লাকায় ফিরে জনগণের জনমালের নিরাপত্তায় কাজ শুরু করছেন। রেঞ্জ ডিআইজিরা তাই শুরু করেছেন। আর মহাসড়কে যাতে গাছ ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে ডাকাতি না হয় তা বন্ধে পুলিশ হার্ডলাইনে অবস্থান নিয়ে কাজ করছেন বলে ওই ডিআইজি জানিয়েছেন।