আইনের সংশোধনী অনুমোদন উপদেষ্টা পরিষদে
বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক -পিআইডি
বিয়ের আশ্বাসে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে পরে প্রতারণা করলে সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ডের বিধান রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের সংশোধনীতে অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
বিদ্যমান আইনে বিষয়টি ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করে সে অনুযায়ী শাস্তির বিধান রয়েছে; এই আইন সংশোধনের পর তা ভিন্ন ধরনের অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।
‘কেবিনেট’ নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের সংশোধনী পাস হয়েছে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘এটা নিয়ে আমাদের আইন উপদেষ্টা গত সপ্তাহে বিস্তারিত বলেছেন। উনার ব্রিফিংয়ের পরে আমরা অনেক উইমেন গ্রুপের মতামত নিয়েছি।’
তাদের ‘মতামতগুলোকে অ্যাকোমোডেট করার যথাসাধ্য চেষ্টা’ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তার আলোকে আজকে প্রায় ঘণ্টাখানেক এই ল’টা ডিবেট হয়েছিল, তারপর এ অ্যামেন্ডমেন্ট পাস হয়েছে।’
আইনের খসড়া সংশোধনী অনুযায়ী, প্রেমের সম্পর্ক থাকার সময় বিয়ের প্রতিশ্রুতি বা প্রতারণার মাধ্যমে কারও সঙ্গে যৌনকর্ম করলে তা আর ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হবে না। এ ধরনের প্রতারণাকে আলাদা অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে, যার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে সাত বছর কারাদণ্ড।
শফিকুল আলম বলেন, ‘বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে যে রেইপ কেসগুলো, সেই জায়গাটায়ও নতুন করে অনেক মেজার নেয়া হয়েছে। আগের ল’য়ে নতুন একটা সেকশন নিয়ে এসে সেখানে সর্বোচ্চ শাস্তি ৭ বছর করা হয়েছে এবং সেটার ক্ষেত্রে আরও যা সেইফগার্ড নেয়া যায়, সেগুলোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’
বিভিন্ন অংশীজন ও শ্রেণী-পেশার মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে ২০২০ সালের ১৩ অক্টোবর অধ্যাদেশ জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী তার আগে বাংলাদেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তবে ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে বা দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, ‘না, এটা নারী ও শিশু নির্যাতনের কেসের মধ্যেই থাকবে, কিন্তু আলাদা একটা সেকশনে হবে। এটা আলাদা অপরাধ না, একই অপরাধ, মানে একই আইনের আওতায়। আগে যে রকম এ, বি, সি, ডি- এ রকম ছিল, সেটাকে আলাদাভাবে ইয়ে হইসে।’
এ বিষয়ে আইন উপদেষ্টা পরে বিস্তারিত বলবেন বলে জানান শফিকুল আলম।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল গত ১৩ মার্চ বলেছিলেন, ‘নতুন আইনে শুধু একটা বিষয় অ্যাড করতে চাই। শিশু ধর্ষণ ও বলাৎকারের দ্রুত বিচার নিশ্চিতে আমরা স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে যাচ্ছি।’
স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান নতুন আইনে থাকবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘এ ট্রাইব্যুনালের
কাজ হবে শুধু শিশু ধর্ষণ ও বলাৎকারের ঘটনা দ্রুত বিচার করা। যেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মনোযোগ দেয়া যায়।’
আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ধর্ষণ মামলার তদন্ত ও বিচারের সময় কমিয়ে আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন আসিফ নজরুল।
প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে বলাৎকারের নতুন সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে জানিয়ে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘এ মামলাগুলোর (বিচার) ডিলে হওয়ার পেছনে ডিএনএ টেস্টের একটা বড় ভূমিকা ছিল। সে জায়গাগুলো কীভাবে অ্যাড্রেস করা যায়, সেগুলোর মেজার নেয়া হয়েছে। আমরা নতুন দুইটা ডিএনএ ল্যাবও করতে যাচ্ছি।’
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আরও দুই সিদ্ধান্ত:
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বৃহস্পতিবার আরও দুটি সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
এতে বলা হয়, সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা বাড়াতে এবং সিন্ডিকেট ভাঙতে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অধ্যাদেশের সংশোধনী আনা হয়েছে। প্রাক্কলিত মূল্যের ১০ পার্সেন্টের কম হলে টেন্ডার প্রস্তাব বাতিলের যে বিধান তা বাতিল করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আগের কাজের মূল্যায়নের জন্য যে ম্যাট্রিক্স ছিল, যা থাকার কারণে একই প্রতিষ্ঠান বার বার কাজ পেত, তা বদলে নতুন সক্ষমতা ম্যাট্রিক্স করা হবে। তাতে সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব হবে। বর্তমানে ৬৫ শতাংশ কাজের দরপত্র বা টেন্ডার অনলাইনে হচ্ছে। এটিতে শতভাগে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।’
পরিত্যক্ত বাড়ি বরাদ্দপ্রাপ্তরা আগে নিজ নামে নামজারি করতে পারতেন না। সেই অসুবিধা নিরসন করতেও আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে।
এছাড়া ৩ এপ্রিল এক দিন ঈদের ছুটি বাড়ানো হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী সব জনগোষ্ঠীর সামাজিক দিবসে ঐচ্ছিক ছুটি ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়েছে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে।
আইনের সংশোধনী অনুমোদন উপদেষ্টা পরিষদে
বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক -পিআইডি
বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫
বিয়ের আশ্বাসে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে পরে প্রতারণা করলে সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ডের বিধান রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের সংশোধনীতে অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
বিদ্যমান আইনে বিষয়টি ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করে সে অনুযায়ী শাস্তির বিধান রয়েছে; এই আইন সংশোধনের পর তা ভিন্ন ধরনের অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।
‘কেবিনেট’ নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের সংশোধনী পাস হয়েছে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘এটা নিয়ে আমাদের আইন উপদেষ্টা গত সপ্তাহে বিস্তারিত বলেছেন। উনার ব্রিফিংয়ের পরে আমরা অনেক উইমেন গ্রুপের মতামত নিয়েছি।’
তাদের ‘মতামতগুলোকে অ্যাকোমোডেট করার যথাসাধ্য চেষ্টা’ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তার আলোকে আজকে প্রায় ঘণ্টাখানেক এই ল’টা ডিবেট হয়েছিল, তারপর এ অ্যামেন্ডমেন্ট পাস হয়েছে।’
আইনের খসড়া সংশোধনী অনুযায়ী, প্রেমের সম্পর্ক থাকার সময় বিয়ের প্রতিশ্রুতি বা প্রতারণার মাধ্যমে কারও সঙ্গে যৌনকর্ম করলে তা আর ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হবে না। এ ধরনের প্রতারণাকে আলাদা অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে, যার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে সাত বছর কারাদণ্ড।
শফিকুল আলম বলেন, ‘বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে যে রেইপ কেসগুলো, সেই জায়গাটায়ও নতুন করে অনেক মেজার নেয়া হয়েছে। আগের ল’য়ে নতুন একটা সেকশন নিয়ে এসে সেখানে সর্বোচ্চ শাস্তি ৭ বছর করা হয়েছে এবং সেটার ক্ষেত্রে আরও যা সেইফগার্ড নেয়া যায়, সেগুলোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’
বিভিন্ন অংশীজন ও শ্রেণী-পেশার মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে ২০২০ সালের ১৩ অক্টোবর অধ্যাদেশ জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী তার আগে বাংলাদেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তবে ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে বা দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, ‘না, এটা নারী ও শিশু নির্যাতনের কেসের মধ্যেই থাকবে, কিন্তু আলাদা একটা সেকশনে হবে। এটা আলাদা অপরাধ না, একই অপরাধ, মানে একই আইনের আওতায়। আগে যে রকম এ, বি, সি, ডি- এ রকম ছিল, সেটাকে আলাদাভাবে ইয়ে হইসে।’
এ বিষয়ে আইন উপদেষ্টা পরে বিস্তারিত বলবেন বলে জানান শফিকুল আলম।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল গত ১৩ মার্চ বলেছিলেন, ‘নতুন আইনে শুধু একটা বিষয় অ্যাড করতে চাই। শিশু ধর্ষণ ও বলাৎকারের দ্রুত বিচার নিশ্চিতে আমরা স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে যাচ্ছি।’
স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান নতুন আইনে থাকবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘এ ট্রাইব্যুনালের
কাজ হবে শুধু শিশু ধর্ষণ ও বলাৎকারের ঘটনা দ্রুত বিচার করা। যেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মনোযোগ দেয়া যায়।’
আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ধর্ষণ মামলার তদন্ত ও বিচারের সময় কমিয়ে আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন আসিফ নজরুল।
প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে বলাৎকারের নতুন সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে জানিয়ে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘এ মামলাগুলোর (বিচার) ডিলে হওয়ার পেছনে ডিএনএ টেস্টের একটা বড় ভূমিকা ছিল। সে জায়গাগুলো কীভাবে অ্যাড্রেস করা যায়, সেগুলোর মেজার নেয়া হয়েছে। আমরা নতুন দুইটা ডিএনএ ল্যাবও করতে যাচ্ছি।’
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আরও দুই সিদ্ধান্ত:
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বৃহস্পতিবার আরও দুটি সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
এতে বলা হয়, সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা বাড়াতে এবং সিন্ডিকেট ভাঙতে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অধ্যাদেশের সংশোধনী আনা হয়েছে। প্রাক্কলিত মূল্যের ১০ পার্সেন্টের কম হলে টেন্ডার প্রস্তাব বাতিলের যে বিধান তা বাতিল করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আগের কাজের মূল্যায়নের জন্য যে ম্যাট্রিক্স ছিল, যা থাকার কারণে একই প্রতিষ্ঠান বার বার কাজ পেত, তা বদলে নতুন সক্ষমতা ম্যাট্রিক্স করা হবে। তাতে সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব হবে। বর্তমানে ৬৫ শতাংশ কাজের দরপত্র বা টেন্ডার অনলাইনে হচ্ছে। এটিতে শতভাগে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।’
পরিত্যক্ত বাড়ি বরাদ্দপ্রাপ্তরা আগে নিজ নামে নামজারি করতে পারতেন না। সেই অসুবিধা নিরসন করতেও আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে।
এছাড়া ৩ এপ্রিল এক দিন ঈদের ছুটি বাড়ানো হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী সব জনগোষ্ঠীর সামাজিক দিবসে ঐচ্ছিক ছুটি ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়েছে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে।