সমাজে আগে দেখা না গেলেও এখন কেউ কেউ নৈতিক খবরদারি করার দায়িত্ব নিয়েছেন। তারা সংখ্যায় বেশি না হলেও তাদের কণ্ঠস্বর উচ্চ। এ কণ্ঠস্বরের মোকাবিলায় উদারনৈতিক সমাজের পক্ষের মানুষদের সোচ্চার হতে হবে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও নাগরিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত সিটিজেনস প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
দেবপ্রিয় বলেন, ‘এ সময়কালে আমরা সবচেয়ে বড় আন্দোলন করলাম দেশ বৈষম্যবিরোধী হবে, কিন্তু আমরা কি সব বৈষম্যের কথা বলি? আমরা তো সব বৈষম্যের কথা বলি না। আমরা কোনো বৈষম্যের কথা বলি, কোনো বৈষম্যকে এড়িয়ে যাই। নারী ও পুরুষের বৈষম্যের কথা বলতে গিয়ে আমি তো লিঙ্গবৈচিত্র্যের কথা তো বলি না। আমি যখন জাতীয়তার প্রশ্নে কথা বলি, তখন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী বা তাদের জাতিসত্তার স্বীকৃতির কথা তো বলি না। যে সময়কালে আমরা নতুন আত্মস্বীকৃত জাতীয় সত্তাকে অনুসন্ধানে নেমেছি, তখন আমি বহুত্ব বা বহুধরনের মানুষ নিয়ে যে আমাদের বাংলাদেশ, সেটার কথা তো সেভাবে মনে করি না।’
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘নারীর সব সুরক্ষার কথা কি আমরা বলি? তার আইনি সুরক্ষা বা আইনি উত্তরাধিকার ইত্যাদি বিষয়ে কি আমরা সমানভাবে উচ্চারণ করতে পারি? কারণ হলো যে, জিনিসটা আগে সে রকমভাবে ছিল না, এখন এসেছে। একধরনের নৈতিক খবরদারি করার দায়িত্ব কেউ কেউ নিয়েছেন।’
নৈতিক খবরদারি করতে চাওয়া এসব মানুষের সংখ্যা বেশি নয়, এমন মন্তব্য করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘তারা সংখ্যায় বড় না। কিন্তু তাদের কণ্ঠস্বর উচ্চ। এ কণ্ঠস্বর মোকাবিলা করতে হলে সর্বজনীন মানবাধিকারের ভিত্তিতে যে উদারনৈতিক বহুত্ববাদী সমাজের কথা আমরা বলি, তার পক্ষের মানুষকে সোচ্চার হয়ে দাঁড়াতে হবে।’
ঘরে নিরাপদে বসে থেকে অন্য কেউ পরিবর্তন নিয়ে আসবে, এমন ভাবনাকে বোকামির নামান্তর বলে মন্তব্য করেন তিনি। দেবপ্রিয় বলেন, ‘আমি নিরাপদে থাকব ঘরে আর আমার পক্ষে মানুষ পরিবর্তন করে দেবে, আবার ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থান করবে, এটা মনে করা বোকামি হবে। প্রত্যেক নাগরিককে তার অধিকারের পক্ষে দাঁড়াতে হবে।’
নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপ সদস্য ও সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,
‘এসডিজি বাস্তবায়নে ৬০ ভাগ সময় চলে গেছে। ১৫ বছরের মধ্যে আর মাত্র ৫-৬ বছর আছে। এসডিজিতে বলা হলো কাউকে পিছিয়ে রাখা যাবে না। এর তাৎপর্য হলো এসডিজি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় গড়ে কী উন্নতি হলো সেটা দেখলে হবে না। সমাজে যারা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী আছে তাদের কী উন্নতি, অগ্রগতি হলো সেটা দেখতে হবে। মনে রাখতে হবে, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে গড় ট্রিটমেন্ট দিয়ে কখনোই সমান করা যাবে না। তাদেরকে অসম ট্রিটমেন্ট দিতে হবে। পজিটিভ ডিসক্রিমিনেশন দিয়ে কেবল তাদের সামনে আনতে পারেন।’
সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘এমডিজি (সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) আমরা হয়তো পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারিনি, কিন্তু ২০৩০ সালের পর এসডিজির বিষয়গুলো মিথ্যা হয়ে যাচ্ছে তা কিন্তু নয়। সেই দিক থেকে সামনে যে জাতীয় নির্বাচন আসবে আমি চাইবো বাংলাদেশে যত রাজনৈতিক দল আছে, বর্তমানে যে সংস্কার প্রক্রিয়া আছে তাতে এসডিজি ও বিশেষ করে অন্তর্ভুক্তিমূলক এসডিজি বাস্তবায়ন আমরা যেন সবার উপরে রাখি। ভোটার হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো আমরা যখন ভোট দেবো তখন কারা আমার এসডিজির কথাগুলো, আমাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথাগুলো, আমার কণ্ঠস্বরকে জোরালো করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন সেই বিষয়টি দেখে আমরা ভোট দেবো।’
বাংলাদেশে প্রয়োজনভিত্তিক উন্নয়ন থেকে অধিকারভিত্তিক উন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে বলে অভিমত দেন ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান। তিনি বলেন, ‘আমরা পিছিয়ে আছি এভাবে না ভেবে, আমাদের কোন কোন অধিকার আদায় না হওয়ায় পিছিয়ে থাকার মতো অবস্থা তৈরি হচ্ছে, সেটা চিহ্নিত করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোর্শেদ বলেন, ‘আজকের আলোচনা থেকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যেসব চ্যালেঞ্জ ও ঘাটতির কথা উঠে এসেছে, সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে সরকার পরিকল্পনা সাজাবে।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ঢাকায় নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেটো রেঙলি এবং ইউএনডিপির বাংলাদেশ কার্যালয়ের আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফেন লিলার বক্তব্য দেন।
বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫
সমাজে আগে দেখা না গেলেও এখন কেউ কেউ নৈতিক খবরদারি করার দায়িত্ব নিয়েছেন। তারা সংখ্যায় বেশি না হলেও তাদের কণ্ঠস্বর উচ্চ। এ কণ্ঠস্বরের মোকাবিলায় উদারনৈতিক সমাজের পক্ষের মানুষদের সোচ্চার হতে হবে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও নাগরিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত সিটিজেনস প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
দেবপ্রিয় বলেন, ‘এ সময়কালে আমরা সবচেয়ে বড় আন্দোলন করলাম দেশ বৈষম্যবিরোধী হবে, কিন্তু আমরা কি সব বৈষম্যের কথা বলি? আমরা তো সব বৈষম্যের কথা বলি না। আমরা কোনো বৈষম্যের কথা বলি, কোনো বৈষম্যকে এড়িয়ে যাই। নারী ও পুরুষের বৈষম্যের কথা বলতে গিয়ে আমি তো লিঙ্গবৈচিত্র্যের কথা তো বলি না। আমি যখন জাতীয়তার প্রশ্নে কথা বলি, তখন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী বা তাদের জাতিসত্তার স্বীকৃতির কথা তো বলি না। যে সময়কালে আমরা নতুন আত্মস্বীকৃত জাতীয় সত্তাকে অনুসন্ধানে নেমেছি, তখন আমি বহুত্ব বা বহুধরনের মানুষ নিয়ে যে আমাদের বাংলাদেশ, সেটার কথা তো সেভাবে মনে করি না।’
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘নারীর সব সুরক্ষার কথা কি আমরা বলি? তার আইনি সুরক্ষা বা আইনি উত্তরাধিকার ইত্যাদি বিষয়ে কি আমরা সমানভাবে উচ্চারণ করতে পারি? কারণ হলো যে, জিনিসটা আগে সে রকমভাবে ছিল না, এখন এসেছে। একধরনের নৈতিক খবরদারি করার দায়িত্ব কেউ কেউ নিয়েছেন।’
নৈতিক খবরদারি করতে চাওয়া এসব মানুষের সংখ্যা বেশি নয়, এমন মন্তব্য করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘তারা সংখ্যায় বড় না। কিন্তু তাদের কণ্ঠস্বর উচ্চ। এ কণ্ঠস্বর মোকাবিলা করতে হলে সর্বজনীন মানবাধিকারের ভিত্তিতে যে উদারনৈতিক বহুত্ববাদী সমাজের কথা আমরা বলি, তার পক্ষের মানুষকে সোচ্চার হয়ে দাঁড়াতে হবে।’
ঘরে নিরাপদে বসে থেকে অন্য কেউ পরিবর্তন নিয়ে আসবে, এমন ভাবনাকে বোকামির নামান্তর বলে মন্তব্য করেন তিনি। দেবপ্রিয় বলেন, ‘আমি নিরাপদে থাকব ঘরে আর আমার পক্ষে মানুষ পরিবর্তন করে দেবে, আবার ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থান করবে, এটা মনে করা বোকামি হবে। প্রত্যেক নাগরিককে তার অধিকারের পক্ষে দাঁড়াতে হবে।’
নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপ সদস্য ও সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,
‘এসডিজি বাস্তবায়নে ৬০ ভাগ সময় চলে গেছে। ১৫ বছরের মধ্যে আর মাত্র ৫-৬ বছর আছে। এসডিজিতে বলা হলো কাউকে পিছিয়ে রাখা যাবে না। এর তাৎপর্য হলো এসডিজি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় গড়ে কী উন্নতি হলো সেটা দেখলে হবে না। সমাজে যারা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী আছে তাদের কী উন্নতি, অগ্রগতি হলো সেটা দেখতে হবে। মনে রাখতে হবে, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে গড় ট্রিটমেন্ট দিয়ে কখনোই সমান করা যাবে না। তাদেরকে অসম ট্রিটমেন্ট দিতে হবে। পজিটিভ ডিসক্রিমিনেশন দিয়ে কেবল তাদের সামনে আনতে পারেন।’
সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘এমডিজি (সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) আমরা হয়তো পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারিনি, কিন্তু ২০৩০ সালের পর এসডিজির বিষয়গুলো মিথ্যা হয়ে যাচ্ছে তা কিন্তু নয়। সেই দিক থেকে সামনে যে জাতীয় নির্বাচন আসবে আমি চাইবো বাংলাদেশে যত রাজনৈতিক দল আছে, বর্তমানে যে সংস্কার প্রক্রিয়া আছে তাতে এসডিজি ও বিশেষ করে অন্তর্ভুক্তিমূলক এসডিজি বাস্তবায়ন আমরা যেন সবার উপরে রাখি। ভোটার হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো আমরা যখন ভোট দেবো তখন কারা আমার এসডিজির কথাগুলো, আমাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথাগুলো, আমার কণ্ঠস্বরকে জোরালো করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন সেই বিষয়টি দেখে আমরা ভোট দেবো।’
বাংলাদেশে প্রয়োজনভিত্তিক উন্নয়ন থেকে অধিকারভিত্তিক উন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে বলে অভিমত দেন ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান। তিনি বলেন, ‘আমরা পিছিয়ে আছি এভাবে না ভেবে, আমাদের কোন কোন অধিকার আদায় না হওয়ায় পিছিয়ে থাকার মতো অবস্থা তৈরি হচ্ছে, সেটা চিহ্নিত করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোর্শেদ বলেন, ‘আজকের আলোচনা থেকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যেসব চ্যালেঞ্জ ও ঘাটতির কথা উঠে এসেছে, সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে সরকার পরিকল্পনা সাজাবে।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ঢাকায় নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেটো রেঙলি এবং ইউএনডিপির বাংলাদেশ কার্যালয়ের আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফেন লিলার বক্তব্য দেন।