জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেছেন, ‘সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে পুনর্গঠিত করা না হলে সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার গঠিত হলেও ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা ফিরে আসতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘সংস্কার শুধু সরকারের ইচ্ছার বিষয় নয়; এটি রাজনৈতিক দল এবং নাগরিকদের বহুল আকাক্সিক্ষত বিষয়। তাই সংস্কারের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা ও নাগরিক সনদ প্রণয়ন করতে হলে নাগরিকদের সোচ্চার হতে হবে।’
বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) উদ্যোগে ‘রাষ্ট্র সংস্কারে রাজনৈতিক ঐকমত্য ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে কথা বলছিলেন তিনি।
আলী রীয়াজ বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নটি ওঠার কারণ হলো-বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশে ভঙ্গুর প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও ভঙ্গুর করে ফেলা হয়েছে। স্বাধীনতার পর গত ৫৪ বছরে কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আমরা দেখেছি, বিগত ১৫ বছরে বিচার বিভাগকে কীভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ভবিষ্যতে স্বৈরতন্ত্রের পুনরুত্থানের ঠেকাতে হলে কাঠামোগত পরিবর্তন করতে হবে, জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হলে সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে।’
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে কারণে শেখ হাসিনার পলায়নের পর আমাদের রাষ্ট্র কাঠামোকে নতুন করে গড়ে তোলার জন্য এক অপূর্ব সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ করছে, যাতে একটি ‘নাগরিক সনদ’ তৈরি করা যায়।’
বর্তমান সরকারের তিনটি ম্যান্ডেটের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচারী ব্যবস্থা যাতে আবার ফিরে আসতে না পারে সেজন্য কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করা; মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষীদের বিচারের আওতায় আনা; একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজন করা। এগুলো একইসঙ্গে হতে পারে, কোনোটি অপরের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক বলেন, ‘বিচার বিভাগ নিয়ে অতীতে বিভিন্ন প্রশ্ন ও বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন তার প্রতিবেদনে এসব বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করেছে এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ তুলে ধরেছে। আমি মনে করি, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। কিন্তু এখন সময় এসেছে সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনেক সমস্যা থাকলেও রাজনৈতিক দলের মাধ্যমেই রাষ্ট্র পরিচালিত হতে হবে। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার ও দলের অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আসিফ মোহাম্মদ সাহান বলেন, ‘সংস্কারের ব্যাপারে বর্তমানে দেশে একটি জাতীয় ঐকমত্য রয়েছে। সংস্কারের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কিছু কাঠামো পরিবর্তন করা দরকার। শুধু ভোট দেয়ার মধ্যে নাগরিকদের সীমাবদ্ধ না রেখে রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের যুক্ত করা দরকার।’
বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপ্সথাপন করেন সুজন এর কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কারের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বিশ্বাস জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোসহ সব অংশীজনের সঙ্গে বসে স্বল্প সময়ের মধ্যেই সংস্কারের ব্যাপারে ঐকমত্যে আসতে পারবে এবং সেই ঐকমত্যের সূত্র ধরেই আমরা সংস্কার প্রক্রিয়া প্রত্যক্ষ করব।’
বৈঠকে বক্তব্য দেন সাবেক সচিব আবদুল আউয়াল মজুমদার, সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দিন।
বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেছেন, ‘সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে পুনর্গঠিত করা না হলে সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার গঠিত হলেও ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা ফিরে আসতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘সংস্কার শুধু সরকারের ইচ্ছার বিষয় নয়; এটি রাজনৈতিক দল এবং নাগরিকদের বহুল আকাক্সিক্ষত বিষয়। তাই সংস্কারের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা ও নাগরিক সনদ প্রণয়ন করতে হলে নাগরিকদের সোচ্চার হতে হবে।’
বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) উদ্যোগে ‘রাষ্ট্র সংস্কারে রাজনৈতিক ঐকমত্য ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে কথা বলছিলেন তিনি।
আলী রীয়াজ বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নটি ওঠার কারণ হলো-বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশে ভঙ্গুর প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও ভঙ্গুর করে ফেলা হয়েছে। স্বাধীনতার পর গত ৫৪ বছরে কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আমরা দেখেছি, বিগত ১৫ বছরে বিচার বিভাগকে কীভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ভবিষ্যতে স্বৈরতন্ত্রের পুনরুত্থানের ঠেকাতে হলে কাঠামোগত পরিবর্তন করতে হবে, জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হলে সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে।’
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে কারণে শেখ হাসিনার পলায়নের পর আমাদের রাষ্ট্র কাঠামোকে নতুন করে গড়ে তোলার জন্য এক অপূর্ব সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ করছে, যাতে একটি ‘নাগরিক সনদ’ তৈরি করা যায়।’
বর্তমান সরকারের তিনটি ম্যান্ডেটের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচারী ব্যবস্থা যাতে আবার ফিরে আসতে না পারে সেজন্য কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করা; মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষীদের বিচারের আওতায় আনা; একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজন করা। এগুলো একইসঙ্গে হতে পারে, কোনোটি অপরের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক বলেন, ‘বিচার বিভাগ নিয়ে অতীতে বিভিন্ন প্রশ্ন ও বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন তার প্রতিবেদনে এসব বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করেছে এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ তুলে ধরেছে। আমি মনে করি, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। কিন্তু এখন সময় এসেছে সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনেক সমস্যা থাকলেও রাজনৈতিক দলের মাধ্যমেই রাষ্ট্র পরিচালিত হতে হবে। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার ও দলের অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আসিফ মোহাম্মদ সাহান বলেন, ‘সংস্কারের ব্যাপারে বর্তমানে দেশে একটি জাতীয় ঐকমত্য রয়েছে। সংস্কারের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কিছু কাঠামো পরিবর্তন করা দরকার। শুধু ভোট দেয়ার মধ্যে নাগরিকদের সীমাবদ্ধ না রেখে রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের যুক্ত করা দরকার।’
বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপ্সথাপন করেন সুজন এর কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কারের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বিশ্বাস জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোসহ সব অংশীজনের সঙ্গে বসে স্বল্প সময়ের মধ্যেই সংস্কারের ব্যাপারে ঐকমত্যে আসতে পারবে এবং সেই ঐকমত্যের সূত্র ধরেই আমরা সংস্কার প্রক্রিয়া প্রত্যক্ষ করব।’
বৈঠকে বক্তব্য দেন সাবেক সচিব আবদুল আউয়াল মজুমদার, সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দিন।