শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমিশন প্রধান কামাল আহমেদের নেতৃত্বে প্রধান উপদেষ্টার কাছে গণমাধ্যম সংস্কার প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয় -সংবাদ
সাংবাদিকদের সুরক্ষায় আইন প্রণয়ন করাসহ গণমাধ্যম সংস্কারে ২০টি সুপারিশ করেছে ‘গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন’। কমিশন একই মালিকের একাধিক সংবাদ মাধ্যম না রাখা, সংবাদকর্মীদের বেতন কাঠামো ও ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণেরও সুপারিশ করেছে।
শনিবার দুপুর ১২টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদের নেতৃত্বে অন্য সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেন। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ।
সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ‘হুমকি আসে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এসব থেকে সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। প্রয়োজনে আইন করে তাদের সুরক্ষা দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।’
গণমাধ্যম সংকটে রয়েছে মন্তব্য করে কামাল আহমেদ বলেন, ‘গণমাধ্যমের বাস্তব যে অবস্থা, এই অবস্থা এক দিনের সৃষ্টি না, গণমাধ্যম দীর্ঘদিনের প্রক্রিয়ার পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এসেছে। দীর্ঘদিনের চর্চাগুলোর মধ্যে দিয়ে এসেছে। সেই চর্চাগুলোর ক্রমাবনতির ফলে গণমাধ্যম এক ধরনের সংকটের মধ্যে, সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা সংকটের মধ্যে পড়ে গিয়েছিল।’
কমিশন ‘সেই বাস্তবতায়’ ইতিহাস পর্যালোচনা করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইতিহাস পর্যালোচনা করে সেই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়ার চেষ্টা করেছি। কোথায় কোথায় ত্রুটি ছিল, কী কী ত্রুটি ছিল এবং সেই ত্রুটি দূর করার জন্য সেরা উপায় কী হতে পারে, সেগুলো খোঁজার চেষ্টা করেছি।’
একই মালিকের একাধিক সংবাদ মাধ্যম নয়:
গণমাধ্যমের মালিকানায় ‘সমস্যা’ রয়েছে দাবি করে কমিশন প্রধান বলেন, ‘অনেক সংবাদমাধ্যমের নেতৃত্বে পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু মালিকানায় কোনো পরিবর্তন আসেনি। আমরা বলেছি ক্রস ওনারশিপ বাতিল করতে হবে। একই মালিকের একাধিক সংবাদমাধ্যম থাকতে পারবে না। একটিকে বেছে নিতে হবে মালিককে।’ এজন্য তারা ‘ওয়ান হাউস, ওয়ান মিডিয়া’ সুপারিশ করেছেন।
সেক্ষেত্রে অন্যগুলোর মালিকানা ‘হস্তান্তর’ করতে হবে অথবা যেটি সবচেয়ে ‘শক্তিশালী’ তার সঙ্গে একীভূত করতে হবে মন্তব্য করে কামাল আহমেদ বলেন, ‘এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরাও যাতে কোনো সমস্যায় না পড়েন সেটিও বলা হয়েছে। একই ব্যক্তি টেলিভিশন এবং সংবাদপত্রের মালিকানা নিতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে এমন বিধান আছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘গণমাধ্যমের মালিকানা একক হাতে কেন্দ্রীভূত থাকলে সেটাকে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহারের চেষ্টা হয়, পারিবারিক স্বার্থে, নিজস্ব গোষ্ঠীর স্বার্থে ব্যবহারের চেষ্টা হয়। সেটা থেকে বেরিয়ে আসার প্রতিকার হচ্ছে, সেটা যদি পাবলিক লিস্টেড কোম্পানি হয়। সুতরাং, আমরা সুপারিশ করেছি বড় এবং মধ্যম আকারের যত গণমাধ্যম আছে, তাদের উচিত হবে পাবলিক লিস্টেড কোম্পানি করা।’
বড় বড় গণমাধ্যমগুলোর মালিকদের জবাবদিহিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কামাল আহমেদ বলেন, ‘যারা টেলিভিশন, বড় বড় সংবাদপত্রের মালিকানায় আছেন; তাদের মালিকানার মধ্যে জনগণের স্বার্থ কতটুকু প্রতিফলিত হচ্ছে, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। কারণ, তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা গণমাধ্যম থেকে রাজনীতিকদের জবাবদিহিতা চাইছি, আমলাদের জবাবদিহিতা চাইছি, কিন্তু গণমাধ্যমের জবাবদিহিতা কোথায়? একটা পত্রিকা আরেকটা পত্রিকার মালিকের বিরুদ্ধে বলছে, তার জবাবদিহিতা কোথায়? এটা কি জনস্বার্থ সম্পর্কিত, নাকি একেবারেই ব্যক্তিগত স্বার্থ সম্পর্কিত? এসব প্রশ্ন আমরা বিবেচনা করে দেখেছি।’
গণমাধ্যমের সমস্যা ভিন্ন ভিন্ন, সাংবাদিকের সমস্যা এক:
চার শ্রেণীর গণমাধ্যমের প্রতিটির ভিন্ন ভিন্ন ‘সমস্যা’ রয়েছে জানিয়ে কমিশন প্রধান বলেন, ‘আমরা সংবাদমাধ্যম বলতে পত্রিকা, টেলিভিশন, অনলাইন পোর্টাল, রেডিও সবগুলোই বিবেচনা করে দেখেছি। এদের প্রত্যেকটির সমস্যা একরকম নয়, একেকজনের একেক রকম সমস্যা। কিন্তু সাংবাদিকতার সমস্যা সবক্ষেত্রেই একরকম। টেলিভিশন সাংবাদিকের যে সমস্যা, পত্রিকার সাংবাদিকেরও সেই সমস্যা। সুতরাং, সাংবাদিকতার কী সমস্যা, সেটা আমরা চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি। সেটা মোকাবিলার কী উপায় হতে পারে, সেটি চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি।’
কমিশন সাংবাদিকদের ন্যূনতম বেতন স্কেল বিদ্যমান সরকারি প্রথম শ্রেণীর (নবম গ্রেড) করার সুপারিশ করেছে জানিয়ে কামাল আহমেদ বলেন, এক বছর শিক্ষানবিশকাল করার কথাও বলেছে কমিশন। আর সাংবাদিকতায় প্রবেশের ন্যূনতম যোগ্যতা স্নাতক করার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।
কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘কোনো গণমাধ্যম নিয়োগপত্র ও ছবিসহ পরিচয়পত্র ছাড়া এবং বিনা বেতনে কোনো সাংবাদিককে অস্থায়ী, স্থায়ী কিংবা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করতে পারবে না।’
বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বেতারের স্বায়ত্তশাসনের সুপারিশ করা হয়েছে জানিয়ে কামাল আহমেদ বলেন, ‘স্বাধীন একটি প্রতিষ্ঠান এই দুটি মাধ্যম চালাবে, একটি সম্প্রচার সংস্থা করার কথা বলেছি। বাসসকে (বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা) এই দুটির নিউজরুম হিসেবে ব্যবহার করলে সরকারি সম্পদের অপচয় কমানো যাবে।’
জীবনযাত্রার ব্যয় বেশি হওয়ায় ঢাকার সাংবাদিকদের জন্য ‘ঢাকা-ভাতা’ চালুর সুপারিশ করেছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন। তবে, ঢাকা-ভাতার টাকার পরিমাণ কী হবে তা নির্ধারণ করবেন সরকার ও গণমাধ্যমের নীতিনির্ধারকরা।
মাঝারি ও বড় সংবাদ মাধ্যমকে পুঁজিবাজারে শেয়ার ছাপার প্রস্তাব:
মাঝারি ও বড় সংবাদমাধ্যমকে একটি সময়সীমার মধ্যে পুঁজিবাজারে শেয়ার ছাড়ার প্রস্তাব করে ব্যাংকিং খাতের মতো এসব কোম্পানির মালিকানাতেও সর্বোচ্চ শেয়ার রাখার সীমা বেঁধে দেয়ার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ব্যাংকিং খাতে কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি বা একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালক পারিবারিকভাবে ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করতে পারেন না। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে একই সময়ে পরিবার থেকে থাকতে পারেন সর্বোচ্চ তিনজন। কিন্তু গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এক্ষেত্রে তাই পরিবর্তন প্রয়োজন।’
সুপারিশে বলা হয়, ‘কমিশন প্রথম পর্যায়ে মাঝারি ও বৃহৎ মিডিয়া কোম্পানিগুলোকে সর্বসাধারণের জন্য শেয়ার ছাড়া ও স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেয়া সমীচীন মনে করছে। উদ্যোক্তা পরিচালক ও ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি বা একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শেয়ার ধারণের সীমা ২৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত করা ও প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মধ্যে শেয়ার বণ্টন বাধ্যতামূলক করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে।’
এ বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কর্মীদের শেয়ার ধারণের সর্বোচ্চ সীমা ৫ শতাংশেই সীমিত রাখতে হবে, যেন উদ্যোক্তারা কর্মীদের সঙ্গে মিলে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে না পারেন।’
দেশে অনেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় একাধিক গণমাধ্যম রয়েছে। সে বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক দেশে ‘ক্রস-ওনারশিপ’ নিষিদ্ধ রয়েছে।
ভারতেও এ ধরনের একটি বিল পার্লামেন্টে আলোচনার অপেক্ষায় আছে তুলে ধরে সংস্কার কমিশন বলেছে, ‘আমাদের দেশেও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমোদনে এ ধরনের সিদ্ধান্ত ও প্রজ্ঞাপন হয়েছিল বলে তৎকালীন তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ গণমাধ্যম কমিশনের কাছে লিখিত বক্তব্যে জানিয়েছিলেন। তবে সেই প্রজ্ঞাপন মন্ত্রণালয়ে খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্পষ্টতই সরকারগুলো ওই নীতি অনুসরণ করেনি।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কমিশন মনে করে, আমাদেরও অচিরেই অনুরূপ পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। ক্রস-ওনারশিপ নিষিদ্ধ করে অর্ডিন্যান্স জারি করা যায়। যেসব ক্ষেত্রে এটি বিদ্যমান, সেগুলোয় পরিবর্তন আনার নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়ে তাদের ব্যবসা পুনর্গঠনের লক্ষ্য ঠিক করে দেয়া প্রয়োজন। এগুলো নানা পদ্ধতিতে হতে পারে। যেসব কোম্পানি/গোষ্ঠী/প্রতিষ্ঠান/ব্যক্তি/পরিবার একই সঙ্গে টেলিভিশন ও পত্রিকার মালিক, তারা যে কোনো একটি গণমাধ্যম রেখে অন্যগুলোর মালিকানা বিক্রির মাধ্যমে হস্তান্তর করে দিতে পারে। অথবা দুইটি মিডিয়ার (টেলিভিশন ও পত্রিকাকে) সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীকে একত্রিত করে আরও শক্তিশালী ও বড় আকারের একটি মিডিয়া (টেলিভিশন অথবা দৈনিক পত্রিকা) পরিচালনা করতে পারে।’
আওয়ামী লীগ আমলে ‘স্বেচ্ছাচারী’ ক্ষমতায় অনলাইন নিবন্ধন:
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের এক দশকে অনলাইন সংবাদ পোর্টালগুলোর নিবন্ধন দেয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছ ও সুনির্দিষ্ট নীতি না মেনে স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতায় নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। সে কারণে অনলাইন পোর্টালগুলোর নিবন্ধনগুলো পর্যালোচনাসহ সাতটি সুপারিশ করেছে কমিশন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বিগত সরকারের অনলাইন নীতিমালার শর্তাবলি ঠিক করার দায়িত্ব প্রস্তাবিত সম্প্রচার কমিশনের ওপর অর্পিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সম্প্রচার কমিশন গঠন না করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় তাদের মর্জি অনুযায়ী নিবন্ধন দিয়েছে, যাতে রাজনৈতিক বিবেচনাই প্রাধান্য পেয়েছে।’
গণঅভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার অক্টোবরে প্রথম ধাপে রাষ্ট্রের ছয়টি খাত সংস্কারে কমিশন গঠন করে।
এর মধ্যে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ সংস্কার ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদন ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কাছে দেয়া হয়। জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন দেয়া হয় ৫ গত ফেব্রুয়ারি।
দ্বিতীয় ধাপে গত ১৮ নভেম্বর গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, শ্রম, নারীবিষয়ক এবং স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনসহ আরও পাঁচটি সংস্কার কমিশন গঠন করে সরকার।
সেগুলোর মধ্যে ‘স্থানীয় সরকার সংস্কার’ কমিশনের প্রাথমিক সুপারিশের প্রতিবেদন জমা পড়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি। শনিবার জমা দেয়া হলো গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন। এখন স্বাস্থ্য, শ্রম, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন বাকি রইল।
সাংবাদিক কামাল আহমেদের নেতৃত্বাধীন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিসহ সদস্য করা হয়েছে নয়জনকে।
সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতিআরা নাসরীন, সম্পাদক পরিষদের প্রতিনিধি দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সচিব আখতার হোসেন খান, অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন ওনার্স (অ্যাটকো) এর প্রতিনিধি এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের ট্রাস্টি ফাহিম আহমেদ, মিডিয়া সাপোর্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক জিমি আমির, দ্য ডেইলি স্টারের বগুড়া জেলা প্রতিনিধি মোস্তফা সবুজ, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ডেপুটি এডিটর টিটু দত্ত গুপ্ত, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মামুন।
শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমিশন প্রধান কামাল আহমেদের নেতৃত্বে প্রধান উপদেষ্টার কাছে গণমাধ্যম সংস্কার প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয় -সংবাদ
শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫
সাংবাদিকদের সুরক্ষায় আইন প্রণয়ন করাসহ গণমাধ্যম সংস্কারে ২০টি সুপারিশ করেছে ‘গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন’। কমিশন একই মালিকের একাধিক সংবাদ মাধ্যম না রাখা, সংবাদকর্মীদের বেতন কাঠামো ও ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণেরও সুপারিশ করেছে।
শনিবার দুপুর ১২টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদের নেতৃত্বে অন্য সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেন। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ।
সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ‘হুমকি আসে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এসব থেকে সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। প্রয়োজনে আইন করে তাদের সুরক্ষা দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।’
গণমাধ্যম সংকটে রয়েছে মন্তব্য করে কামাল আহমেদ বলেন, ‘গণমাধ্যমের বাস্তব যে অবস্থা, এই অবস্থা এক দিনের সৃষ্টি না, গণমাধ্যম দীর্ঘদিনের প্রক্রিয়ার পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এসেছে। দীর্ঘদিনের চর্চাগুলোর মধ্যে দিয়ে এসেছে। সেই চর্চাগুলোর ক্রমাবনতির ফলে গণমাধ্যম এক ধরনের সংকটের মধ্যে, সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা সংকটের মধ্যে পড়ে গিয়েছিল।’
কমিশন ‘সেই বাস্তবতায়’ ইতিহাস পর্যালোচনা করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইতিহাস পর্যালোচনা করে সেই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়ার চেষ্টা করেছি। কোথায় কোথায় ত্রুটি ছিল, কী কী ত্রুটি ছিল এবং সেই ত্রুটি দূর করার জন্য সেরা উপায় কী হতে পারে, সেগুলো খোঁজার চেষ্টা করেছি।’
একই মালিকের একাধিক সংবাদ মাধ্যম নয়:
গণমাধ্যমের মালিকানায় ‘সমস্যা’ রয়েছে দাবি করে কমিশন প্রধান বলেন, ‘অনেক সংবাদমাধ্যমের নেতৃত্বে পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু মালিকানায় কোনো পরিবর্তন আসেনি। আমরা বলেছি ক্রস ওনারশিপ বাতিল করতে হবে। একই মালিকের একাধিক সংবাদমাধ্যম থাকতে পারবে না। একটিকে বেছে নিতে হবে মালিককে।’ এজন্য তারা ‘ওয়ান হাউস, ওয়ান মিডিয়া’ সুপারিশ করেছেন।
সেক্ষেত্রে অন্যগুলোর মালিকানা ‘হস্তান্তর’ করতে হবে অথবা যেটি সবচেয়ে ‘শক্তিশালী’ তার সঙ্গে একীভূত করতে হবে মন্তব্য করে কামাল আহমেদ বলেন, ‘এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরাও যাতে কোনো সমস্যায় না পড়েন সেটিও বলা হয়েছে। একই ব্যক্তি টেলিভিশন এবং সংবাদপত্রের মালিকানা নিতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে এমন বিধান আছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘গণমাধ্যমের মালিকানা একক হাতে কেন্দ্রীভূত থাকলে সেটাকে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহারের চেষ্টা হয়, পারিবারিক স্বার্থে, নিজস্ব গোষ্ঠীর স্বার্থে ব্যবহারের চেষ্টা হয়। সেটা থেকে বেরিয়ে আসার প্রতিকার হচ্ছে, সেটা যদি পাবলিক লিস্টেড কোম্পানি হয়। সুতরাং, আমরা সুপারিশ করেছি বড় এবং মধ্যম আকারের যত গণমাধ্যম আছে, তাদের উচিত হবে পাবলিক লিস্টেড কোম্পানি করা।’
বড় বড় গণমাধ্যমগুলোর মালিকদের জবাবদিহিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কামাল আহমেদ বলেন, ‘যারা টেলিভিশন, বড় বড় সংবাদপত্রের মালিকানায় আছেন; তাদের মালিকানার মধ্যে জনগণের স্বার্থ কতটুকু প্রতিফলিত হচ্ছে, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। কারণ, তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা গণমাধ্যম থেকে রাজনীতিকদের জবাবদিহিতা চাইছি, আমলাদের জবাবদিহিতা চাইছি, কিন্তু গণমাধ্যমের জবাবদিহিতা কোথায়? একটা পত্রিকা আরেকটা পত্রিকার মালিকের বিরুদ্ধে বলছে, তার জবাবদিহিতা কোথায়? এটা কি জনস্বার্থ সম্পর্কিত, নাকি একেবারেই ব্যক্তিগত স্বার্থ সম্পর্কিত? এসব প্রশ্ন আমরা বিবেচনা করে দেখেছি।’
গণমাধ্যমের সমস্যা ভিন্ন ভিন্ন, সাংবাদিকের সমস্যা এক:
চার শ্রেণীর গণমাধ্যমের প্রতিটির ভিন্ন ভিন্ন ‘সমস্যা’ রয়েছে জানিয়ে কমিশন প্রধান বলেন, ‘আমরা সংবাদমাধ্যম বলতে পত্রিকা, টেলিভিশন, অনলাইন পোর্টাল, রেডিও সবগুলোই বিবেচনা করে দেখেছি। এদের প্রত্যেকটির সমস্যা একরকম নয়, একেকজনের একেক রকম সমস্যা। কিন্তু সাংবাদিকতার সমস্যা সবক্ষেত্রেই একরকম। টেলিভিশন সাংবাদিকের যে সমস্যা, পত্রিকার সাংবাদিকেরও সেই সমস্যা। সুতরাং, সাংবাদিকতার কী সমস্যা, সেটা আমরা চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি। সেটা মোকাবিলার কী উপায় হতে পারে, সেটি চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি।’
কমিশন সাংবাদিকদের ন্যূনতম বেতন স্কেল বিদ্যমান সরকারি প্রথম শ্রেণীর (নবম গ্রেড) করার সুপারিশ করেছে জানিয়ে কামাল আহমেদ বলেন, এক বছর শিক্ষানবিশকাল করার কথাও বলেছে কমিশন। আর সাংবাদিকতায় প্রবেশের ন্যূনতম যোগ্যতা স্নাতক করার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।
কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘কোনো গণমাধ্যম নিয়োগপত্র ও ছবিসহ পরিচয়পত্র ছাড়া এবং বিনা বেতনে কোনো সাংবাদিককে অস্থায়ী, স্থায়ী কিংবা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করতে পারবে না।’
বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বেতারের স্বায়ত্তশাসনের সুপারিশ করা হয়েছে জানিয়ে কামাল আহমেদ বলেন, ‘স্বাধীন একটি প্রতিষ্ঠান এই দুটি মাধ্যম চালাবে, একটি সম্প্রচার সংস্থা করার কথা বলেছি। বাসসকে (বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা) এই দুটির নিউজরুম হিসেবে ব্যবহার করলে সরকারি সম্পদের অপচয় কমানো যাবে।’
জীবনযাত্রার ব্যয় বেশি হওয়ায় ঢাকার সাংবাদিকদের জন্য ‘ঢাকা-ভাতা’ চালুর সুপারিশ করেছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন। তবে, ঢাকা-ভাতার টাকার পরিমাণ কী হবে তা নির্ধারণ করবেন সরকার ও গণমাধ্যমের নীতিনির্ধারকরা।
মাঝারি ও বড় সংবাদ মাধ্যমকে পুঁজিবাজারে শেয়ার ছাপার প্রস্তাব:
মাঝারি ও বড় সংবাদমাধ্যমকে একটি সময়সীমার মধ্যে পুঁজিবাজারে শেয়ার ছাড়ার প্রস্তাব করে ব্যাংকিং খাতের মতো এসব কোম্পানির মালিকানাতেও সর্বোচ্চ শেয়ার রাখার সীমা বেঁধে দেয়ার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ব্যাংকিং খাতে কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি বা একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালক পারিবারিকভাবে ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করতে পারেন না। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে একই সময়ে পরিবার থেকে থাকতে পারেন সর্বোচ্চ তিনজন। কিন্তু গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এক্ষেত্রে তাই পরিবর্তন প্রয়োজন।’
সুপারিশে বলা হয়, ‘কমিশন প্রথম পর্যায়ে মাঝারি ও বৃহৎ মিডিয়া কোম্পানিগুলোকে সর্বসাধারণের জন্য শেয়ার ছাড়া ও স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেয়া সমীচীন মনে করছে। উদ্যোক্তা পরিচালক ও ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি বা একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শেয়ার ধারণের সীমা ২৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত করা ও প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মধ্যে শেয়ার বণ্টন বাধ্যতামূলক করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে।’
এ বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কর্মীদের শেয়ার ধারণের সর্বোচ্চ সীমা ৫ শতাংশেই সীমিত রাখতে হবে, যেন উদ্যোক্তারা কর্মীদের সঙ্গে মিলে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে না পারেন।’
দেশে অনেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় একাধিক গণমাধ্যম রয়েছে। সে বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক দেশে ‘ক্রস-ওনারশিপ’ নিষিদ্ধ রয়েছে।
ভারতেও এ ধরনের একটি বিল পার্লামেন্টে আলোচনার অপেক্ষায় আছে তুলে ধরে সংস্কার কমিশন বলেছে, ‘আমাদের দেশেও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমোদনে এ ধরনের সিদ্ধান্ত ও প্রজ্ঞাপন হয়েছিল বলে তৎকালীন তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ গণমাধ্যম কমিশনের কাছে লিখিত বক্তব্যে জানিয়েছিলেন। তবে সেই প্রজ্ঞাপন মন্ত্রণালয়ে খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্পষ্টতই সরকারগুলো ওই নীতি অনুসরণ করেনি।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কমিশন মনে করে, আমাদেরও অচিরেই অনুরূপ পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। ক্রস-ওনারশিপ নিষিদ্ধ করে অর্ডিন্যান্স জারি করা যায়। যেসব ক্ষেত্রে এটি বিদ্যমান, সেগুলোয় পরিবর্তন আনার নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়ে তাদের ব্যবসা পুনর্গঠনের লক্ষ্য ঠিক করে দেয়া প্রয়োজন। এগুলো নানা পদ্ধতিতে হতে পারে। যেসব কোম্পানি/গোষ্ঠী/প্রতিষ্ঠান/ব্যক্তি/পরিবার একই সঙ্গে টেলিভিশন ও পত্রিকার মালিক, তারা যে কোনো একটি গণমাধ্যম রেখে অন্যগুলোর মালিকানা বিক্রির মাধ্যমে হস্তান্তর করে দিতে পারে। অথবা দুইটি মিডিয়ার (টেলিভিশন ও পত্রিকাকে) সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীকে একত্রিত করে আরও শক্তিশালী ও বড় আকারের একটি মিডিয়া (টেলিভিশন অথবা দৈনিক পত্রিকা) পরিচালনা করতে পারে।’
আওয়ামী লীগ আমলে ‘স্বেচ্ছাচারী’ ক্ষমতায় অনলাইন নিবন্ধন:
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের এক দশকে অনলাইন সংবাদ পোর্টালগুলোর নিবন্ধন দেয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছ ও সুনির্দিষ্ট নীতি না মেনে স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতায় নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। সে কারণে অনলাইন পোর্টালগুলোর নিবন্ধনগুলো পর্যালোচনাসহ সাতটি সুপারিশ করেছে কমিশন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বিগত সরকারের অনলাইন নীতিমালার শর্তাবলি ঠিক করার দায়িত্ব প্রস্তাবিত সম্প্রচার কমিশনের ওপর অর্পিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সম্প্রচার কমিশন গঠন না করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় তাদের মর্জি অনুযায়ী নিবন্ধন দিয়েছে, যাতে রাজনৈতিক বিবেচনাই প্রাধান্য পেয়েছে।’
গণঅভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার অক্টোবরে প্রথম ধাপে রাষ্ট্রের ছয়টি খাত সংস্কারে কমিশন গঠন করে।
এর মধ্যে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ সংস্কার ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদন ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কাছে দেয়া হয়। জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন দেয়া হয় ৫ গত ফেব্রুয়ারি।
দ্বিতীয় ধাপে গত ১৮ নভেম্বর গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, শ্রম, নারীবিষয়ক এবং স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনসহ আরও পাঁচটি সংস্কার কমিশন গঠন করে সরকার।
সেগুলোর মধ্যে ‘স্থানীয় সরকার সংস্কার’ কমিশনের প্রাথমিক সুপারিশের প্রতিবেদন জমা পড়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি। শনিবার জমা দেয়া হলো গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন। এখন স্বাস্থ্য, শ্রম, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন বাকি রইল।
সাংবাদিক কামাল আহমেদের নেতৃত্বাধীন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিসহ সদস্য করা হয়েছে নয়জনকে।
সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতিআরা নাসরীন, সম্পাদক পরিষদের প্রতিনিধি দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সচিব আখতার হোসেন খান, অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন ওনার্স (অ্যাটকো) এর প্রতিনিধি এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের ট্রাস্টি ফাহিম আহমেদ, মিডিয়া সাপোর্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক জিমি আমির, দ্য ডেইলি স্টারের বগুড়া জেলা প্রতিনিধি মোস্তফা সবুজ, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ডেপুটি এডিটর টিটু দত্ত গুপ্ত, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মামুন।