সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান বলেছেন, ‘এ দেশে গবেষকদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করে রাজনীতি। রাজনীতিবিদেরা নিজেরা নিজেদের স্বার্থে বয়ান তৈরি করেন। ফলে মুক্তিযুদ্ধের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রশ্নাতীত প্রসঙ্গগুলো জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে ওঠে গবেষকদের জন্য। লেখা হয় না ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য।’
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ২৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও স্বাধীনতা উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত স্মারক বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।
শনিবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে এ অনুষ্ঠান হয়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর স্মারক বক্তৃতা করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান। ‘আমাদের স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ : রাজনীতি ও গবেষণার চ্যালেঞ্জ’ শিরোনামে বক্তৃতা করেন তিনি।
রওনক জাহান বলেন, ‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক তথ্য সংগ্রহে অনেক রকম ভয়। এ জন্যই রাজনৈতিক কোন্দল। এটা যেমন নিজের গবেষণাকাজের সময় দেখেছি। আজও তাই দেখছি।’
মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, ‘রাজনীতি এ দেশের গবেষণায় তিনভাবে প্রভাবিত করেছে। প্রথমত, রাজনীতির জন্য অনেক সময় গবেষণার কারণে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ জটিল হচ্ছে। ফলে রাজনীতি তথ্যের সংকট তৈরি করেছে। দ্বিতীয়ত, রাজনীতি গবেষকদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। যেকোনো গবেষকেরই নিজের দৃষ্টিভঙ্গি থাকে। ফলে মুক্তিযুদ্ধের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রশ্নাতীত তথ্য বা প্রসঙ্গগুলোও (আনকনটেস্টেড ফ্যাক্টস) জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে ওঠে গবেষকদের জন্য। তৃতীয়ত, রাজনীতিবিদেরা নিজেরা বয়ান তৈরি করছেন নিজেদের স্বার্থে। যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, তারা বিভিন্ন বয়ান পড়ে বিভ্রান্ত হচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে রওনক জাহানের সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করে শোনান নাট্যজন ত্রপা মজুমদার। আন্তর্জাতিক পরিম-লে বাংলাদেশের গণহত্যা প্রসঙ্গ তুলে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা অধ্যাপক রওনক জাহান ১৯৭২ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি সারওয়ার আলী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের যা কিছু অর্জন, এর সবটাই সম্ভব হয়েছে দেশের সাধারণ জনগণের সহযোগিতায়’। তিনি বলেন, ‘যে শিশুকে মুক্তিযুদ্ধের সময় পিষে মারা হয়েছিল, তার কাছেও দায় আছে। জাদুঘরের দায় হচ্ছে অতীতকে মানুষের হাতে তুলে দেয়া। এই কাজটির মধ্য দিয়ে আমরা অতীতকে সক্রিয় করতে চাই।’
ট্রাস্টি ও সদস্যসচিব সারা যাকের বিগত এক বছরের বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। তিনি জানন, ২৯তম বর্ষে পদার্পণ করল জাদুঘর। তিনি ৫৫ হাজার প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান সংরক্ষণ থেকে শুরু করে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের সুলতানার স্বপ্ন ইউনেসকোর বিশ্বজনের স্মৃতি বা মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড অর্জন প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি জানান, চার বছর ধরে বার্ষিক ৬ কোটি টাকা করে অনুদান পাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। তবে পরিচালন ব্যয় অনেক বেশি, তাই তহবিল সংগ্রহে মনোযোগ দিতে হয়।
অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি মফিদুল হক। তিনি বলেন, ‘এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠার ২৯ বছর পর বলতে হয়, আমাদের এই যাবতীয় আয়োজনে আমাদের ভাবনায় গুরুত্ব পায় তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সম্পর্ক তৈরি করা।’ এ সময় মফিদুল হক বাংলাদেশের গণহত্যা নিয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন বইয়ের উদাহরণ তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে তৃতীয় গবেষণা পদ্ধতি প্রশিক্ষণ কোর্সের সনদ তুলে দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের হাতে। শিল্পী শারমিন সাথী ইসলামের সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় আয়োজন।
শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান বলেছেন, ‘এ দেশে গবেষকদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করে রাজনীতি। রাজনীতিবিদেরা নিজেরা নিজেদের স্বার্থে বয়ান তৈরি করেন। ফলে মুক্তিযুদ্ধের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রশ্নাতীত প্রসঙ্গগুলো জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে ওঠে গবেষকদের জন্য। লেখা হয় না ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য।’
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ২৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও স্বাধীনতা উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত স্মারক বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।
শনিবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে এ অনুষ্ঠান হয়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর স্মারক বক্তৃতা করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান। ‘আমাদের স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ : রাজনীতি ও গবেষণার চ্যালেঞ্জ’ শিরোনামে বক্তৃতা করেন তিনি।
রওনক জাহান বলেন, ‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক তথ্য সংগ্রহে অনেক রকম ভয়। এ জন্যই রাজনৈতিক কোন্দল। এটা যেমন নিজের গবেষণাকাজের সময় দেখেছি। আজও তাই দেখছি।’
মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, ‘রাজনীতি এ দেশের গবেষণায় তিনভাবে প্রভাবিত করেছে। প্রথমত, রাজনীতির জন্য অনেক সময় গবেষণার কারণে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ জটিল হচ্ছে। ফলে রাজনীতি তথ্যের সংকট তৈরি করেছে। দ্বিতীয়ত, রাজনীতি গবেষকদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। যেকোনো গবেষকেরই নিজের দৃষ্টিভঙ্গি থাকে। ফলে মুক্তিযুদ্ধের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রশ্নাতীত তথ্য বা প্রসঙ্গগুলোও (আনকনটেস্টেড ফ্যাক্টস) জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে ওঠে গবেষকদের জন্য। তৃতীয়ত, রাজনীতিবিদেরা নিজেরা বয়ান তৈরি করছেন নিজেদের স্বার্থে। যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, তারা বিভিন্ন বয়ান পড়ে বিভ্রান্ত হচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে রওনক জাহানের সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করে শোনান নাট্যজন ত্রপা মজুমদার। আন্তর্জাতিক পরিম-লে বাংলাদেশের গণহত্যা প্রসঙ্গ তুলে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা অধ্যাপক রওনক জাহান ১৯৭২ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি সারওয়ার আলী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের যা কিছু অর্জন, এর সবটাই সম্ভব হয়েছে দেশের সাধারণ জনগণের সহযোগিতায়’। তিনি বলেন, ‘যে শিশুকে মুক্তিযুদ্ধের সময় পিষে মারা হয়েছিল, তার কাছেও দায় আছে। জাদুঘরের দায় হচ্ছে অতীতকে মানুষের হাতে তুলে দেয়া। এই কাজটির মধ্য দিয়ে আমরা অতীতকে সক্রিয় করতে চাই।’
ট্রাস্টি ও সদস্যসচিব সারা যাকের বিগত এক বছরের বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। তিনি জানন, ২৯তম বর্ষে পদার্পণ করল জাদুঘর। তিনি ৫৫ হাজার প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান সংরক্ষণ থেকে শুরু করে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের সুলতানার স্বপ্ন ইউনেসকোর বিশ্বজনের স্মৃতি বা মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড অর্জন প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি জানান, চার বছর ধরে বার্ষিক ৬ কোটি টাকা করে অনুদান পাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। তবে পরিচালন ব্যয় অনেক বেশি, তাই তহবিল সংগ্রহে মনোযোগ দিতে হয়।
অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি মফিদুল হক। তিনি বলেন, ‘এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠার ২৯ বছর পর বলতে হয়, আমাদের এই যাবতীয় আয়োজনে আমাদের ভাবনায় গুরুত্ব পায় তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সম্পর্ক তৈরি করা।’ এ সময় মফিদুল হক বাংলাদেশের গণহত্যা নিয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন বইয়ের উদাহরণ তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে তৃতীয় গবেষণা পদ্ধতি প্রশিক্ষণ কোর্সের সনদ তুলে দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের হাতে। শিল্পী শারমিন সাথী ইসলামের সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় আয়োজন।