alt

সেনাসদর জানিয়েছে হাসনাতের বক্তব্য ‘অত্যন্ত হাস্যকর ও অপরিপক্ক গল্পের সম্ভার’ : নেত্র নিউজের প্রতিবেদন

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : রোববার, ২৩ মার্চ ২০২৫

https://sangbad.net.bd/images/2025/March/23Mar25/news/Screenshot%202025-03-23%20at%2016.37.20.png

নেত্র নিউজের প্রতিবেদন

‘রিফাইন্ড’ আওয়ামী লীগ বা ওই দলের ‘সংশোধিত’ একটি অংশের পুনর্বাসনে রাজি হতে সেনানিবাস থেকে ‘চাপ’ দেওয়া নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির অন্যতম মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ যে দাবি করেছেন, সেনাবাহিনী সদর দপ্তর থেকে তার প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।

সুইডেনভিত্তিক নেত্র নিউজের এক প্রতিবেদনে এ প্রতিক্রিয়ার কথা জানানো হয়। গতকাল শনিবার এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে সেনাসদরকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, হাসনাত আবদুল্লাহর পোস্ট ‘সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি বৈ অন্য কিছু নয়’।

শনিবার নেত্র নিউজকে দেয়া সেনা সদরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে সেনানিবাসে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গেই ১১ মার্চ বৈঠকটি হয়েছিল। তবে হাসনাত আব্দুল্লাহকে “ডেকে নিয়ে যাওয়া এবং আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের বিষয় নিয়ে তাদেরকে প্রস্তাব বা চাপ প্রয়োগে”র অভিযোগ নাকচ করা হয়েছে। বরং হাসনাত আব্দুল্লাহ ও তার দলের আরেক মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলমের আগ্রহেই ওই বৈঠকটি হয়েছিল বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

যা আছে নেত্র নিউজের প্রতিবেদনে

বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে নতুন রূপে পুনর্বাসনের বিষয়ে সেনানিবাসের কাছ থেকে ‘ভারতের পরিকল্পনা’ উপস্থাপন করা হয়েছে — শুক্রবার হাসনাত আব্দুল্লাহর এমন ফেইসবুক পোস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তুমুল আলোচনার সৃষ্টি হয়।

এরই প্রেক্ষিতে নেত্র নিউজ যোগাযোগ করলে একজন মুখপাত্রের মাধ্যমে বক্তব্য দেয় সেনা সদর। হাসনাত আব্দুল্লাহর পোস্টকে “সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি বৈ অন্য কিছু নয়” বলেও মন্তব্য করা হয়েছে সেনা সদরের বিবৃতিতে। এছাড়া ২৭ বছর বয়সী এই ছাত্রনেতার বক্তব্যকে “অত্যন্ত হাস্যকর ও অপরিপক্ক গল্পের সম্ভার” হিসেবেও আখ্যা দিয়েছে সেনাবাহিনী।

বাংলাদেশে আগস্টে যেই গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল, তার সূচনা ঘটেছিল সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালে আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে ছাত্রদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মাধ্যমে। পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠিত হলে হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গঠিত নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মন্ত্রীসভায় ওই আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্তত তিন জন ছাত্রনেতা দায়িত্ব পালন করেন। তাদেরই একজন নাহিদ ইসলাম সম্প্রতি মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি নামে একটি নতুন দলের আহবায়কের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ওই দলে দুই আঞ্চলিক মুখ্য সমন্বয়কের পদ পান হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম।

শুক্রবার এক ফেইসবুক পোস্টে হাসনাত আব্দুল্লাহ দাবি করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার শিরিন শারমিন ও ঢাকার মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে সামনে রেখে “‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে।”

সুনির্দিষ্টভাবে তিনি বলেন, সেনানিবাস থেকে ১১ই মার্চ দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে এক বৈঠকে তাদেরকে এই নয়া আওয়ামী লীগকে মেনে নিতে সমঝোতা ও সংসদের আসন ভাগাভাগির প্রস্তাব দেয়া হয়।

তার পোস্টের পর ওই রাতেই জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।

সেখানে নেত্র নিউজের একজন প্রতিবেদক হাসনাত আব্দুল্লাহকে প্রশ্ন করেন, সেনানিবাসে তিনি যে বৈঠকটির কথা বলছেন, তা কি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে হয়েছিল কিনা। কিন্তু এই বিষয়ে তিনি সরাসরি জবাব দিতে অস্বীকৃতি জানান।

তিনি বলেন, “আমিতো সেখানে ‘ক্যান্টমেন্ট’ উল্লেখ করেছি, আপনারা কথা বলতে পারেন সেখানে।”

আরেকজন সাংবাদিক তাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করেন কার উদ্যোগে বৈঠকটি হয়েছিল। জবাবে হাসনাত বলেন, সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা ও বিদ্যমান আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তাদের মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্ন ছিল। এসব বিষয়ে “কথা বলার জন্য আমাদেরকে আহ্বান জানানো হয়েছিল।”

সংবাদ সম্মেলনের পর নেত্র নিউজের একজন প্রতিবেদক আবারও বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি “বাইনারি” বা হ্যাঁ-না জবাব দিতে রাজি হননি।

অপরদিকে নেত্র নিউজকে পাঠানো বিবৃতিতে সেনাসদর নিশ্চিত করে জানিয়েছে যে সেনাপ্রধানের সঙ্গেই ওই বৈঠকটি হয়েছিল; তবে ওই বৈঠক ছাত্র নেতাদের আগ্রহেই হয়েছিল বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, “হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সারজিস আলম দীর্ঘদিন যাবৎ সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য ইচ্ছা পোষণ করছিলেন। পরবর্তীতে সারজিস আলম ১১ই মার্চ ২০২৫ তারিখে সেনাপ্রধানের মিলিটারি এডভাইজারকে ফোন দিয়ে সেনাপ্রধানের সাথে সাক্ষাতের জন্য সময় চান। এর প্রেক্ষিতে মিলিটারি এডভাইজার তাদেরকে সেনাসদরে আসার জন্য বলেন।”

“অতঃপর ১১ই মার্চ দুপুরে সারজিস আলম এবং হাসনাত আব্দুল্লাহ সেনাসদরে না এসে সরাসরি সেনাভবনে সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করেন। পরবর্তীতে সেনাপ্রধান অফিস কার্যক্রম শেষ করে সেনা ভবনে এসে তাদের সঙ্গে দেখা করেন।”

সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে ছাত্রনেতাদের বৈঠকে কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল, তা নেত্র নিউজ স্বতন্ত্রভাবে নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ ইউনিটের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পৃথকভাবে নেত্র নিউজকে বলেছেন যে, ছাত্রনেতাদের আগ্রহ ও উদ্যোগেই ওই বৈঠকটি হয়েছিল।

সেক্ষেত্রে হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমের এই বৈঠক তাদের ব্যক্তিগত কারণে নাকি জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে পুর্বানোমোদিত ছিল, তা স্পষ্ট নয়।

https://sangbad.net.bd/images/2025/March/23Mar25/news/Screenshot%202025-03-23%20at%2016.43.15.png

হাসনাত আবদুল্লাহর সাম্প্রতিক ফেইসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট

তবে শনিবার সিলেটে এক ইফতার মাহফিলে দলটির আরেক নেতা নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী হাসনাতের ওই ফেইসবুক পোস্টকে “শিষ্টাচার বর্জিত” হিসেবে উল্লেখ করেন।

এই বিষয়ে দলটির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম ও সরজিস আলমের বক্তব্য চেয়েছে নেত্র নিউজ। তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাদের জবাব পাওয়া যায়নি।

হাসনাত, সারজিস ও নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী — সকলেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধানের সঙ্গে দূরত্ব বা রেষারেষির নেই উল্লেখ করে বক্তব্য দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের “পুনর্বাসন”

প্রায় ৯ লক্ষ বারের মতো প্রতিক্রিয়া, মন্তব্য ও শেয়ার পাওয়া ওই ফেইসবুক পোস্টে হাসনাত আব্দুল্লাহ সেনানিবাসে ১১ মার্চের বৈঠকে হওয়া কিছু কথোপকথনকে উদ্ধৃত করে লিখেন যে অন্যান্য রাজনৈতিক দল এই কথিত সংশোধিত আওয়ামী লীগকে মেনে নিয়েছে।

“আমাদেরকে প্রস্তাব দেওয়া হয় আসন [সমঝোতার] বিনিময়ে আমরা যেন এই প্রস্তাব মেনে নিই। আমাদেরকে বলা হয় - ইতোমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলকেও এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে - তারা শর্তসাপেক্ষে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে রাজি হয়েছে। একটি বিরোধী দল থাকার চেয়ে একটি দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধী দল থাকা না-কি ভালো।”

“আমাদেরকে আরো বলা হয় - রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ যাদের দিয়ে করা হবে, তারা এপ্রিল-মে থেকে শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করবে, হাসিনাকে অস্বীকার করবে এবং তারা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করবে এমন প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবে।”

আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে আলোচনা হওয়ার বিষয়টি সেনা সদরের বক্তব্যে অস্বীকার করা হয়নি। সেখানে বলা হয় আলোচনায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার প্রসঙ্গ উঠে আসলে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান নিজের অভিমতের কথা ছাত্রনেতাদের জানান।

বিবৃতিতে সেনাপ্রধানের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, “আওয়ামী লীগের যেসব নেতারা ফৌজদারি মামলায় জড়িত নয় ও ক্লিন ইমেজের অধিকারী তাদের সমন্বয়ে নতুন আওয়ামী লীগ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক, ফলপ্রসু ও আন্তর্জাতিক মহলে অধিকতর গ্রহণযোগ্যতা পাবে। কিন্তু এ ব্যাপারে সরকার ও সব রাজনৈতিক দল মিলে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।”

আওয়ামী লীগের প্রসঙ্গে দেয়া বক্তব্য সেনাপ্রধানের নিজস্ব অভিমত হিসেবে আখ্যা দিয়ে ছাত্রনেতাদের উপর চাপ প্রয়োগের অভিযোগ বিবৃতিতে অস্বীকার করা হয়েছে।

“প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি কোনক্রমেই তাদেরকে ডেকে নিয়ে যাওয়া এবং আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের বিষয় নিয়ে তাদেরকে প্রস্তাব বা চাপ প্রয়োগ করার ঘটনা নয়,” যোগ করা হয় সেনাসদরের বিবৃতিতে। “বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর [মতো] প্রতিষ্ঠিত সুশৃঙ্খল বাহিনীর প্রধান সদ্য প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের যুগ্ম সংগঠকদেরকে ডেকে নিয়ে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের বিষয়ে নির্দেশনা দিচ্ছেন বা চাপ প্রয়োগ করছেন যা অত্যন্ত হাস্যকর ও অপরিপক্ক গল্পের সম্ভার বলে প্রতীয়মান [হয়]।”

নিজের বহুল আলোচিত ফেইসবুক পোস্টে “অপরপক্ষের” সুনির্দিষ্ট বক্তব্যকে উদ্ধৃতি চিহ্ন হাসনাত আব্দুল্লাহ লিখেছিলেন: “আলোচনার এক পর্যায় বলি - যেই দল এখনো ক্ষমা চায় নাই, অপরাধ স্বীকার করে নাই, সেই দলকে আপনারা কিভাবে ক্ষমা করে দিবেন! অপরপক্ষ থেকে রেগে গিয়ে উত্তর আসে, ‘ইউ পিপল নো নাথিং। ইউ ল্যাক উইজডোম এন্ড এক্সপিরিয়েন্স। উই আর ইন দিজ সার্ভিস ফর এটলিস্ট ফোর্টি ইয়ার্স। (তোমরা কিছুই জানো না। তোমাদের প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার অভাব আছে। আমরা চাকরিতে আছি কমপক্ষে ৪০ বছর ধরে।) তোমার বয়সের থেকে বেশি। তাছাড়া আওয়ামী লীগ ছাড়া ‘ইনক্লুসিভ’ (অংশগ্রহণমূলক) ইলেকশন হবে না।”

অপরদিকে সেনাসদরের বক্তব্যে বলা হয়, এই দুই ছাত্র সমন্বয়ককে সেনাবাহিনী প্রধান “অত্যন্ত স্নেহের দৃষ্টিতে ছেলের” মতো দেখতেন। বিবৃতিতে বলা হয়, “তিনি [স্নেহবৎসল] পরিবেশে তাদের সঙ্গে নানা আলাপচারিতা করেন। প্রাসঙ্গিকভাবে তাদের নতুন দল গঠনের শুভকামনা ও পরবর্তী রাজনৈতিক পথ চলার বিষয়ে নানা প্রসঙ্গে আলাপ করেন।”

“এছাড়াও পরবর্তী নির্বাচনের ব্যাপারে তিনি তাদের রাজনৈতিক দলের প্রস্তুতি, অংশগ্রহণ ও অন্যান্য সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত সকল দলের অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে ব্যাখ্যা করেন,” যোগ করা হয় বিবৃতিতে। “সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে দেখা করার ১০ দিন পর ফেইসবুক হাসনাত আব্দুল্লাহর এই ধরনের অনভিপ্রেতকর পোস্ট দেওয়া সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি বৈ অন্য কিছু নয়।”

বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশটির সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের পাদপ্রদীপের আলোয় চলে আসেন। ওই সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ এবং পরবর্তীতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে তার ভূমিকা ছিল। এছাড়া নির্বাচন আয়োজনের সময়সীমা কী হতে পারে এবং বিভিন্ন পক্ষের কাঁদা ছোড়াছুড়িতে দেশের স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্ব ভূলুণ্ঠিত হতে পারে, ইত্যাদি বিষয়ে সতর্কবার্তা ও মতামত প্রকাশ করে আলোচনায় আসেন তিনি।

বাংলাদেশের ইতিহাসে বহু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে সেনাবাহিনী ও এর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের ভূমিকা ছিল। ঐতিহাসিকভাবেই দেশটিতে এখনও রাজনীতি ও বিভিন্ন বেসামরিক কার্যক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর প্রভাব লক্ষ্যনীয়। তবে শেখ হাসিনার পতন পরবর্তী সময়ে বারবার কোনো ধরণের সেনা হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা বা আগ্রহ উড়িয়ে দিয়েছেন সেনাবাহিনীতে মৃদুভাষী হিসেবে পরিচিত জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

কিন্তু তারপরও সেনাবাহিনীর অবস্থান ও ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পক্ষের মধ্যে বিদ্যমান অস্বস্তি চাপা দিয়ে রাখা যায়নি।

আরও পড়ুন:

হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্যে ‘কিছুটা দ্বিমত’ সারজিস আলম

‘রিফাইন্ড’ আওয়ামী লীগ ‘পুনর্বাসন প্রস্তাব’ নিয়ে ফেইসবুকে হাসনাত আবদুল্লাহর পোস্ট

ছবি

পটুয়াখালী ও বরগুনায় জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে আগুন

ছবি

ভারত সফরে যাচ্ছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা

ছবি

নারীদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন চিন্তা করলে ভুল হবে: সেনাপ্রধান

ছবি

আ’লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না, বৃটিশ মন্ত্রীকে ড. ইউনূস

ছবি

বিবিসিকে হাসিনার সাক্ষাৎকার: মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় অস্বীকার

ছবি

নিরাপত্তাসহ দুই দাবি, না মানলে কলম বিরতির হুঁশিয়ারি বিচারকদের

ছবি

জাতীয় নির্বাচনের দিনে গণভোট: ‘আলোচনা করে’ মত জানাবে ইসি

ইসির সংলাপ: আগামী রোববার ডাক পেয়েছে আরও ১২ দল

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার আহ্বান সেনাপ্রধানের

ছবি

মানবতাবিরোধী অপরাধ: শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘোষণা সোমবার

আলী রীয়াজ প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, পেলেন উপদেষ্টার মর্যাদা

ছবি

নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে: ইউনূস

ইসির সংলাপে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ, ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করার তাগিদ

ইসির সংলাপ: জামানত কমানো, ব্যয় মনিটরিং ও প্রশাসন নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ দলগুলোর

ছবি

‘নতুন কুঁড়ির’ মূল উদ্দেশ্য নিজেকে আবিষ্কার করা: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

আলী রীয়াজ প্রধান উপদেষ্টা বিশেষ সহকারী পদে নিযুক্ত

ছবি

নির্বাচনের দিনই গণভোট,   জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি 

ছবি

নিজেদের স্বার্থে ভারতীয় গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার উপস্থিতি বন্ধের অনুরোধ ঢাকার

ছবি

আত্মসমর্পণ, পরে জামিন সাবেক বিচারপতিসহ তিনজনের

ছবি

প্রধান উপদেষ্টা আজ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন

ছবি

বারোটি রাজনৈতিক দল নিয়ে ইসির সংলাপ শুরু বৃহস্পতিবার

ছবি

ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন সরকারের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডার অংশ: প্রসিকিউটর

ছবি

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, জোরদার নিরাপত্তা

ছবি

ভারতীয় দূতকে তলব, গণমাধ্যমের সঙ্গে হাসিনার কথা বলা বন্ধের আহ্বান

ছবি

কানাডীয় পার্লামেন্টারি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সাক্ষাৎ

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন, কোনো শক্তিই ঠেকাতে পারবে না: প্রেস সচিব

ছবি

ট্রাইব্যুনাল ফেইস না করে যানবাহনে আগুন মানুষ ‘ভালোভাবে নিচ্ছে না’: প্রসিকিউটর

কিউকম সিইও রিপন কারাগারে, রিমান্ড শুনানি বুধবার

বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান হান্নানের সহযোগীর দুই ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ

ছবি

১ ফেব্রুয়ারি থেকে একুশে বইমেলার দাবি, প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি

ছবি

পাচারের শিকার শান্তনা দীর্ঘ ১১ বছর পর দেশে ফিরলো

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো: আরও ৪ এজেন্সির বিরুদ্ধে মামলা করছে দুদক

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে আপিলের রায় ২০ নভেম্বর

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৯১২ জন হাসপাতালে, মৃত্যু ৩ জনের

tab

সেনাসদর জানিয়েছে হাসনাতের বক্তব্য ‘অত্যন্ত হাস্যকর ও অপরিপক্ক গল্পের সম্ভার’ : নেত্র নিউজের প্রতিবেদন

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

রোববার, ২৩ মার্চ ২০২৫

https://sangbad.net.bd/images/2025/March/23Mar25/news/Screenshot%202025-03-23%20at%2016.37.20.png

নেত্র নিউজের প্রতিবেদন

‘রিফাইন্ড’ আওয়ামী লীগ বা ওই দলের ‘সংশোধিত’ একটি অংশের পুনর্বাসনে রাজি হতে সেনানিবাস থেকে ‘চাপ’ দেওয়া নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির অন্যতম মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ যে দাবি করেছেন, সেনাবাহিনী সদর দপ্তর থেকে তার প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।

সুইডেনভিত্তিক নেত্র নিউজের এক প্রতিবেদনে এ প্রতিক্রিয়ার কথা জানানো হয়। গতকাল শনিবার এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে সেনাসদরকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, হাসনাত আবদুল্লাহর পোস্ট ‘সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি বৈ অন্য কিছু নয়’।

শনিবার নেত্র নিউজকে দেয়া সেনা সদরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে সেনানিবাসে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গেই ১১ মার্চ বৈঠকটি হয়েছিল। তবে হাসনাত আব্দুল্লাহকে “ডেকে নিয়ে যাওয়া এবং আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের বিষয় নিয়ে তাদেরকে প্রস্তাব বা চাপ প্রয়োগে”র অভিযোগ নাকচ করা হয়েছে। বরং হাসনাত আব্দুল্লাহ ও তার দলের আরেক মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলমের আগ্রহেই ওই বৈঠকটি হয়েছিল বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

যা আছে নেত্র নিউজের প্রতিবেদনে

বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে নতুন রূপে পুনর্বাসনের বিষয়ে সেনানিবাসের কাছ থেকে ‘ভারতের পরিকল্পনা’ উপস্থাপন করা হয়েছে — শুক্রবার হাসনাত আব্দুল্লাহর এমন ফেইসবুক পোস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তুমুল আলোচনার সৃষ্টি হয়।

এরই প্রেক্ষিতে নেত্র নিউজ যোগাযোগ করলে একজন মুখপাত্রের মাধ্যমে বক্তব্য দেয় সেনা সদর। হাসনাত আব্দুল্লাহর পোস্টকে “সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি বৈ অন্য কিছু নয়” বলেও মন্তব্য করা হয়েছে সেনা সদরের বিবৃতিতে। এছাড়া ২৭ বছর বয়সী এই ছাত্রনেতার বক্তব্যকে “অত্যন্ত হাস্যকর ও অপরিপক্ক গল্পের সম্ভার” হিসেবেও আখ্যা দিয়েছে সেনাবাহিনী।

বাংলাদেশে আগস্টে যেই গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল, তার সূচনা ঘটেছিল সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালে আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে ছাত্রদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মাধ্যমে। পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠিত হলে হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গঠিত নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মন্ত্রীসভায় ওই আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্তত তিন জন ছাত্রনেতা দায়িত্ব পালন করেন। তাদেরই একজন নাহিদ ইসলাম সম্প্রতি মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি নামে একটি নতুন দলের আহবায়কের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ওই দলে দুই আঞ্চলিক মুখ্য সমন্বয়কের পদ পান হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম।

শুক্রবার এক ফেইসবুক পোস্টে হাসনাত আব্দুল্লাহ দাবি করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার শিরিন শারমিন ও ঢাকার মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে সামনে রেখে “‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে।”

সুনির্দিষ্টভাবে তিনি বলেন, সেনানিবাস থেকে ১১ই মার্চ দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে এক বৈঠকে তাদেরকে এই নয়া আওয়ামী লীগকে মেনে নিতে সমঝোতা ও সংসদের আসন ভাগাভাগির প্রস্তাব দেয়া হয়।

তার পোস্টের পর ওই রাতেই জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।

সেখানে নেত্র নিউজের একজন প্রতিবেদক হাসনাত আব্দুল্লাহকে প্রশ্ন করেন, সেনানিবাসে তিনি যে বৈঠকটির কথা বলছেন, তা কি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে হয়েছিল কিনা। কিন্তু এই বিষয়ে তিনি সরাসরি জবাব দিতে অস্বীকৃতি জানান।

তিনি বলেন, “আমিতো সেখানে ‘ক্যান্টমেন্ট’ উল্লেখ করেছি, আপনারা কথা বলতে পারেন সেখানে।”

আরেকজন সাংবাদিক তাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করেন কার উদ্যোগে বৈঠকটি হয়েছিল। জবাবে হাসনাত বলেন, সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা ও বিদ্যমান আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তাদের মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্ন ছিল। এসব বিষয়ে “কথা বলার জন্য আমাদেরকে আহ্বান জানানো হয়েছিল।”

সংবাদ সম্মেলনের পর নেত্র নিউজের একজন প্রতিবেদক আবারও বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি “বাইনারি” বা হ্যাঁ-না জবাব দিতে রাজি হননি।

অপরদিকে নেত্র নিউজকে পাঠানো বিবৃতিতে সেনাসদর নিশ্চিত করে জানিয়েছে যে সেনাপ্রধানের সঙ্গেই ওই বৈঠকটি হয়েছিল; তবে ওই বৈঠক ছাত্র নেতাদের আগ্রহেই হয়েছিল বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, “হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সারজিস আলম দীর্ঘদিন যাবৎ সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য ইচ্ছা পোষণ করছিলেন। পরবর্তীতে সারজিস আলম ১১ই মার্চ ২০২৫ তারিখে সেনাপ্রধানের মিলিটারি এডভাইজারকে ফোন দিয়ে সেনাপ্রধানের সাথে সাক্ষাতের জন্য সময় চান। এর প্রেক্ষিতে মিলিটারি এডভাইজার তাদেরকে সেনাসদরে আসার জন্য বলেন।”

“অতঃপর ১১ই মার্চ দুপুরে সারজিস আলম এবং হাসনাত আব্দুল্লাহ সেনাসদরে না এসে সরাসরি সেনাভবনে সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করেন। পরবর্তীতে সেনাপ্রধান অফিস কার্যক্রম শেষ করে সেনা ভবনে এসে তাদের সঙ্গে দেখা করেন।”

সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে ছাত্রনেতাদের বৈঠকে কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল, তা নেত্র নিউজ স্বতন্ত্রভাবে নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ ইউনিটের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পৃথকভাবে নেত্র নিউজকে বলেছেন যে, ছাত্রনেতাদের আগ্রহ ও উদ্যোগেই ওই বৈঠকটি হয়েছিল।

সেক্ষেত্রে হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমের এই বৈঠক তাদের ব্যক্তিগত কারণে নাকি জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে পুর্বানোমোদিত ছিল, তা স্পষ্ট নয়।

https://sangbad.net.bd/images/2025/March/23Mar25/news/Screenshot%202025-03-23%20at%2016.43.15.png

হাসনাত আবদুল্লাহর সাম্প্রতিক ফেইসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট

তবে শনিবার সিলেটে এক ইফতার মাহফিলে দলটির আরেক নেতা নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী হাসনাতের ওই ফেইসবুক পোস্টকে “শিষ্টাচার বর্জিত” হিসেবে উল্লেখ করেন।

এই বিষয়ে দলটির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম ও সরজিস আলমের বক্তব্য চেয়েছে নেত্র নিউজ। তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাদের জবাব পাওয়া যায়নি।

হাসনাত, সারজিস ও নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী — সকলেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধানের সঙ্গে দূরত্ব বা রেষারেষির নেই উল্লেখ করে বক্তব্য দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের “পুনর্বাসন”

প্রায় ৯ লক্ষ বারের মতো প্রতিক্রিয়া, মন্তব্য ও শেয়ার পাওয়া ওই ফেইসবুক পোস্টে হাসনাত আব্দুল্লাহ সেনানিবাসে ১১ মার্চের বৈঠকে হওয়া কিছু কথোপকথনকে উদ্ধৃত করে লিখেন যে অন্যান্য রাজনৈতিক দল এই কথিত সংশোধিত আওয়ামী লীগকে মেনে নিয়েছে।

“আমাদেরকে প্রস্তাব দেওয়া হয় আসন [সমঝোতার] বিনিময়ে আমরা যেন এই প্রস্তাব মেনে নিই। আমাদেরকে বলা হয় - ইতোমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলকেও এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে - তারা শর্তসাপেক্ষে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে রাজি হয়েছে। একটি বিরোধী দল থাকার চেয়ে একটি দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধী দল থাকা না-কি ভালো।”

“আমাদেরকে আরো বলা হয় - রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ যাদের দিয়ে করা হবে, তারা এপ্রিল-মে থেকে শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করবে, হাসিনাকে অস্বীকার করবে এবং তারা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করবে এমন প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবে।”

আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে আলোচনা হওয়ার বিষয়টি সেনা সদরের বক্তব্যে অস্বীকার করা হয়নি। সেখানে বলা হয় আলোচনায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার প্রসঙ্গ উঠে আসলে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান নিজের অভিমতের কথা ছাত্রনেতাদের জানান।

বিবৃতিতে সেনাপ্রধানের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, “আওয়ামী লীগের যেসব নেতারা ফৌজদারি মামলায় জড়িত নয় ও ক্লিন ইমেজের অধিকারী তাদের সমন্বয়ে নতুন আওয়ামী লীগ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক, ফলপ্রসু ও আন্তর্জাতিক মহলে অধিকতর গ্রহণযোগ্যতা পাবে। কিন্তু এ ব্যাপারে সরকার ও সব রাজনৈতিক দল মিলে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।”

আওয়ামী লীগের প্রসঙ্গে দেয়া বক্তব্য সেনাপ্রধানের নিজস্ব অভিমত হিসেবে আখ্যা দিয়ে ছাত্রনেতাদের উপর চাপ প্রয়োগের অভিযোগ বিবৃতিতে অস্বীকার করা হয়েছে।

“প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি কোনক্রমেই তাদেরকে ডেকে নিয়ে যাওয়া এবং আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের বিষয় নিয়ে তাদেরকে প্রস্তাব বা চাপ প্রয়োগ করার ঘটনা নয়,” যোগ করা হয় সেনাসদরের বিবৃতিতে। “বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর [মতো] প্রতিষ্ঠিত সুশৃঙ্খল বাহিনীর প্রধান সদ্য প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের যুগ্ম সংগঠকদেরকে ডেকে নিয়ে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের বিষয়ে নির্দেশনা দিচ্ছেন বা চাপ প্রয়োগ করছেন যা অত্যন্ত হাস্যকর ও অপরিপক্ক গল্পের সম্ভার বলে প্রতীয়মান [হয়]।”

নিজের বহুল আলোচিত ফেইসবুক পোস্টে “অপরপক্ষের” সুনির্দিষ্ট বক্তব্যকে উদ্ধৃতি চিহ্ন হাসনাত আব্দুল্লাহ লিখেছিলেন: “আলোচনার এক পর্যায় বলি - যেই দল এখনো ক্ষমা চায় নাই, অপরাধ স্বীকার করে নাই, সেই দলকে আপনারা কিভাবে ক্ষমা করে দিবেন! অপরপক্ষ থেকে রেগে গিয়ে উত্তর আসে, ‘ইউ পিপল নো নাথিং। ইউ ল্যাক উইজডোম এন্ড এক্সপিরিয়েন্স। উই আর ইন দিজ সার্ভিস ফর এটলিস্ট ফোর্টি ইয়ার্স। (তোমরা কিছুই জানো না। তোমাদের প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার অভাব আছে। আমরা চাকরিতে আছি কমপক্ষে ৪০ বছর ধরে।) তোমার বয়সের থেকে বেশি। তাছাড়া আওয়ামী লীগ ছাড়া ‘ইনক্লুসিভ’ (অংশগ্রহণমূলক) ইলেকশন হবে না।”

অপরদিকে সেনাসদরের বক্তব্যে বলা হয়, এই দুই ছাত্র সমন্বয়ককে সেনাবাহিনী প্রধান “অত্যন্ত স্নেহের দৃষ্টিতে ছেলের” মতো দেখতেন। বিবৃতিতে বলা হয়, “তিনি [স্নেহবৎসল] পরিবেশে তাদের সঙ্গে নানা আলাপচারিতা করেন। প্রাসঙ্গিকভাবে তাদের নতুন দল গঠনের শুভকামনা ও পরবর্তী রাজনৈতিক পথ চলার বিষয়ে নানা প্রসঙ্গে আলাপ করেন।”

“এছাড়াও পরবর্তী নির্বাচনের ব্যাপারে তিনি তাদের রাজনৈতিক দলের প্রস্তুতি, অংশগ্রহণ ও অন্যান্য সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত সকল দলের অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে ব্যাখ্যা করেন,” যোগ করা হয় বিবৃতিতে। “সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে দেখা করার ১০ দিন পর ফেইসবুক হাসনাত আব্দুল্লাহর এই ধরনের অনভিপ্রেতকর পোস্ট দেওয়া সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি বৈ অন্য কিছু নয়।”

বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশটির সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের পাদপ্রদীপের আলোয় চলে আসেন। ওই সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ এবং পরবর্তীতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে তার ভূমিকা ছিল। এছাড়া নির্বাচন আয়োজনের সময়সীমা কী হতে পারে এবং বিভিন্ন পক্ষের কাঁদা ছোড়াছুড়িতে দেশের স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্ব ভূলুণ্ঠিত হতে পারে, ইত্যাদি বিষয়ে সতর্কবার্তা ও মতামত প্রকাশ করে আলোচনায় আসেন তিনি।

বাংলাদেশের ইতিহাসে বহু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে সেনাবাহিনী ও এর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের ভূমিকা ছিল। ঐতিহাসিকভাবেই দেশটিতে এখনও রাজনীতি ও বিভিন্ন বেসামরিক কার্যক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর প্রভাব লক্ষ্যনীয়। তবে শেখ হাসিনার পতন পরবর্তী সময়ে বারবার কোনো ধরণের সেনা হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা বা আগ্রহ উড়িয়ে দিয়েছেন সেনাবাহিনীতে মৃদুভাষী হিসেবে পরিচিত জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

কিন্তু তারপরও সেনাবাহিনীর অবস্থান ও ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পক্ষের মধ্যে বিদ্যমান অস্বস্তি চাপা দিয়ে রাখা যায়নি।

আরও পড়ুন:

হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্যে ‘কিছুটা দ্বিমত’ সারজিস আলম

‘রিফাইন্ড’ আওয়ামী লীগ ‘পুনর্বাসন প্রস্তাব’ নিয়ে ফেইসবুকে হাসনাত আবদুল্লাহর পোস্ট

back to top