alt

আগামী মাসেই ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই ছাপার ‘টেন্ডার প্রক্রিয়া’

রাকিব উদ্দিন : মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫

২০২৬ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই ছাপার ‘টেন্ডার প্রক্রিয়া’ আগামী মাসেই শুরু হচ্ছে। আগামী শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিক স্তরে অন্তত তিন কোটি বই কমছে। এরপরও প্রতিযোগিতা বাড়াতে ছাপাখানাগুলোর ‘সক্ষমতার’ ৮০ শতাংশ ধরে নিয়ে দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।

এর ফলে কোনো ছাপাখানা এককভাবে বেশি বইয়ের কাজ পাবে না বলে এনসিটিবির কর্মকর্তারা মনে করছেন। সবাই নিজস্ব সক্ষমতার চেয়ে কম বই ছাপার কাজ পাবে। এতে নভেম্বরের শুরুর দিকেই আগামী শিক্ষাবর্ষের সববই ছাপা ও সরবরাহের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হবে বলে আশা করছেন এনসিটিবি কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, চলতি শিক্ষাবর্ষে বিতরণ করা মাধ্যমিক পাঠ্যবই ছাপা হয়েছে মোট ৭৫১টি লটে। এবার এই লটের সংখ্যা ১০০টির মতো কমতে পারে বলে কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।

প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের বই ছাপার কার্যক্রম বা দরপত্রে খুব একটা পরিবর্তন আসছে না। এবারও এই স্তরের বই ৯৮টি লটেই ছাপার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

চলতি শিক্ষাবর্ষে মোট সারাদেশে মোট ৪০ কোটি ২০ লাখের মতো পাঠ্যবই বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩০ কোটি ২০ লাখ বই মাধ্যমিক স্তরের।

মাধ্যমিকে বই কমার কারণ:

এনসিটিবি থেকে জানা গেছে, চলতি শিক্ষাবর্ষে ৬ষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীতে বাধ্যতামূলক থাকা তিনটি করে বই আগামী শিক্ষাবর্ষে ‘অপশনাল’ হয়ে যাচ্ছে। এই তিন শ্রেণীতে তিনটি বিষয়ের পরিবর্তে যে কোনো একটি বিষয় পড়লেই হবে। এর ফলে তিন শ্রেণীতেই বইয়ের সংখ্যা কমছে।

আগামী শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই ছাপার পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির বিতরণ নিয়ন্ত্রণ হাফিজুর রহমান সংবাদকে বলেছেন, ‘৬ষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীতে চারু-কারু, শারিরীক শিক্ষা এবং কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা; এই তিনটি বই বাধ্যতামূলক ছিল। আগামী বছর এসব বই অপশনাল হয়ে যাবে। এর সঙ্গে কয়েকটি সাবজেক্ট (বিষয়) আছে যেমন- কৃষি শিক্ষা, গার্হস্থ, সংস্কৃত ও পালি, আরবি ও সংগীতসহ মোট ৯টি সাবজেক্টের মধ্যে যে কোনো একটি পড়তে হবে। অর্থাৎ প্রতি শ্রেণীতে তিনটি করে বই কমবে।’

এ ছাড়া চলতি শিক্ষাবর্ষের বই ছাপার শুরুর আগে গত বছর মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা ‘অতিরিক্ত চাহিদা’ দিয়েছিল। এতে এবার এখন পর্যন্ত এনসিটিবিতে ৬০ থেকে ৬৩ লাখের বই ফেরত এসেছে। এসব বই রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এনসিটিবির গুদামে রাখা হয়েছে বলে হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন।

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে এনসিটিবির চেয়ারম্যান একেএম রিয়াজুল হাসান বলেন, চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত বই পেয়েছেন কিছু উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা। তাদের শাস্তি পেতে হবে।

নভেম্বরের মধ্যে বই ছাপা শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা:

২০২৬ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন), ইবতেদায়ি, দাখিল এবং এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল, কারিগরি (ট্রেড বই) এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহ এবং ইন্সপেকশন এজেন্ট নিয়োগের বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা (এপিপি) ও সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা (টিএপি) অনুমোদনবিষয়ক এক সভা গত ৫ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের সভাপতিত্ব করেন।

ওই সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে ইবতেদায়ি স্তরের জন্য আলাদা একটি প্যাকেজ তৈরি করা হবে। আর কোনো শ্রেণীর বই কখন ছাপা শেষ করতে হবে সেই লক্ষ্যমাত্রাও ঠিক করা হয়।

এতে বলা হয়, ৬ষ্ঠ শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে, ৭ম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক ৮ অক্টোবরের মধ্যে, ৮ম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক ১৫ অক্টোবরের মধ্যে, ৯ম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক ২৭ অক্টোবরের মধ্যে এবং ইবতেদায়ি সব শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক ৫ নভেম্বরের মধ্যে সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য একটি প্যাকেজে ব্রেইল পাঠ্যপুস্তক

সরবরাহ করা হবে। আর ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রি ডেলিভারি ইন্সপেকশন (পিডিআই) এবং পোস্ট ল্যান্ডিং ইন্সপেকশন (পিএলআই) একসঙ্গে করা হয়েছিল। এ বছর আলাদা প্যাকেজ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

এবার বিগত বছরের চাহিদার উপর ৩ শতাংশ বৃদ্ধি ধরে পাঠ্যপুস্তকের সংখ্যা নিরূপণ এবং বিগত বছরের উদ্বৃত্ত দরের ১০ শতাংশ ধরে বাজেট প্রাক্কলন করা হয়েছে। সরবরাহযোগ্য সব পাঠ্যপুস্তকের তালিকার আলোকে পাঠ্যপুস্তকসমূহ ৫ নভেম্বর ২০২৫ এর মধ্যে মুদ্রণ ও সরবরাহের লক্ষ্যে ৫টি প্যাকেজে ভাগ করে দরপত্র আহ্বানের ক্রয় পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে হাফিজুর রহমান বলেন, তারা ইতোমধ্যে আগামী শিক্ষাবর্ষের বই ছাপার একটি কর্মপরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন। সেটি অনুমোদন হলে এপ্রিলেই ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের বই ছাপার ‘টেন্ডার প্রক্রিয়া’ শুরু হয়ে যাবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মাধ্যমে সারাদেশের থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও পরিসংখ্যা চাওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ বেশি চাহিদা দিচ্ছে কিনা, সেটি যাচাই-বাছাই করার জন্য ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের (আন্তঃশিক্ষা বোর্ড) কাছেও রেজিস্ট্রেশনকৃত শিক্ষার্থীর তথ্য চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।

সক্ষমতার ৮০ শতাংশ ধরে কাজ:

এনসিটিবি জানিয়েছে, ‘লটের সাইজ’ পূর্বের অভিজ্ঞতার আলোকে পুনঃনির্ধারণ করা যায় কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে। মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের মোট সক্ষমতার ৮০ শতাংশকে প্রকৃত সক্ষমতা ধরে দরপত্র মূল্যায়ন করতে হবে। ওয়েব মেশিনগুলোর অটো বাইন্ডিং সক্ষমতা থাকতে হবে। আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনার ক্ষেত্রে ‘সিআইবি রিপোর্ট’ দেখতে হবে।

প্রতি লটের বই ছাপার জন্য ছাপাখানাগুলোর ‘ব্যাংক কমিটমেন্ট লেটার’ থাকতে হবে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো দুর্বল ব্যাংক থেকে লেটার অব ক্রেডিট নেয়া যাবে না। পেপার মিলগুলোর সঙ্গে ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি থাকতে হবে, যাতে কাগজের সরবরাহ ও কাগজের গুণগত মান নিশ্চিত করা যায়। পেপার মিলকর্তৃক এনসিটিবির চাহিদা অনুযায়ী জলছাপযুক্ত ও অফ হোয়াউট কাগজ সরবরাহ করার বিষয়টি ফ্রেম ওয়ার্ক চুক্তিতে থাকবে। টেন্ডার ডকুমেন্ট বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

ছবি

ধর্মীয় উৎসবে অতিরিক্ত নিরাপত্তা নয়, সমান নাগরিক অধিকারের বাংলাদেশ চান প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস

ছবি

ভুয়া প্রমাণিত হলে জুলাই যোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ

ছবি

মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলায় নাহিদ ইসলামের সাক্ষ্য বুধবার

ছবি

জুলাই আন্দোলন: ইনু-নূরসহ ৯ আসামির ভার্চুয়াল হাজিরা

ছবি

বাংলাদেশে উষ্ণায়নের প্রভাব: কর্মদিবস নষ্ট, অর্থনীতি ও স্বাস্থ্যে বড় ক্ষতি

ছবি

এলডিসি থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দিতে কাজ করছে সরকার: বাণিজ্য সচিব

ছবি

ডেঙ্গু মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১২ দফা জরুরি নির্দেশনা

ছবি

দুর্গাপূজা প্রস্তুতি নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক

ছবি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অতিরিক্ত মহাপরিচালকদের দপ্তর বদল, একজনকে ওএসডি

ছবি

ফিলিস্তিনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাল বাংলাদেশ

ছবি

আরও ১ মাস বাড়লো ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ

ছবি

দেশে ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ছাড়াল ৩৮ হাজার

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সম্পর্ক আরও গভীর করতে অঙ্গীকার ইউনূসের

ছবি

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে সংস্কার সম্পন্ন করা জরুরি : মাইকেল মিলার

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার হাতে ১২ তরুণ পেলেন ‘ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড’

ছবি

ইসিতে নিবন্ধন: নতুন দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ চলছে

ছবি

সেপ্টেম্বরের শেষে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপে বসবে ইসি

ছবি

দ্বিমতের কোনো জায়গা নাই, এই সুযোগ আর আসবে না: ইউনূস

ছবি

নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারিত সময়ের আগেই

ছবি

মালয়েশিয়া কর্মী পাঠানোতে ১১৫৯ কোটি টাকা আত্মসাত: ১৩ রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা সিদ্ধান্ত

ছবি

টাইফয়েড টিকা কর্মসূচি: দেড় মাসে নিবন্ধন প্রায় ৮৯ লাখ শিশু

ছবি

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস যোগদান

ছবি

মানুষের জন্ম উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

আসামের ভূমিকম্পে কাঁপলো বাংলাদেশ

ছবি

নারীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ২০ বছর করার ভাবনা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

সাগরে লঘুচাপ, ছয় বিভাগে ভারি বর্ষণের আভাস

ছবি

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই: উপদেষ্টা

ছবি

মরমী সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন মারা গেছেন

ছবি

দেশে ডেঙ্গুতে হাসপাতালে ভর্তি ৩৭ হাজার ছাড়াল, চলতি বছর মৃতের সংখ্যা ১৪৭

ছবি

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক ডিআইজি ও মেহেরপুরের সাবেক পুলিশ সুপার এ কে এম নাহিদুল ইসলাম কারাগারে

ছবি

সরকারি হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের প্রবেশে নতুন নিয়ম

ছবি

লন্ডনে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজের গাড়িতে ছুঁড়ে মারা হলে ডিম

ছবি

নেপালের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কিকে প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন

ছবি

কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ভোটার নিবন্ধন ও এনআইডি সেবা চালু

ছবি

পল্লী বিদ্যুতের ‘গণছুটি’ কর্মসূচি স্থগিত, কর্মস্থলে ফেরার আহ্বান

ছবি

ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখের মধ্যেই নির্বাচন, এটি আমাদের কমিটমেন্ট: প্রেস সচিব

tab

আগামী মাসেই ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই ছাপার ‘টেন্ডার প্রক্রিয়া’

রাকিব উদ্দিন

মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫

২০২৬ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই ছাপার ‘টেন্ডার প্রক্রিয়া’ আগামী মাসেই শুরু হচ্ছে। আগামী শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিক স্তরে অন্তত তিন কোটি বই কমছে। এরপরও প্রতিযোগিতা বাড়াতে ছাপাখানাগুলোর ‘সক্ষমতার’ ৮০ শতাংশ ধরে নিয়ে দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।

এর ফলে কোনো ছাপাখানা এককভাবে বেশি বইয়ের কাজ পাবে না বলে এনসিটিবির কর্মকর্তারা মনে করছেন। সবাই নিজস্ব সক্ষমতার চেয়ে কম বই ছাপার কাজ পাবে। এতে নভেম্বরের শুরুর দিকেই আগামী শিক্ষাবর্ষের সববই ছাপা ও সরবরাহের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হবে বলে আশা করছেন এনসিটিবি কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, চলতি শিক্ষাবর্ষে বিতরণ করা মাধ্যমিক পাঠ্যবই ছাপা হয়েছে মোট ৭৫১টি লটে। এবার এই লটের সংখ্যা ১০০টির মতো কমতে পারে বলে কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।

প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের বই ছাপার কার্যক্রম বা দরপত্রে খুব একটা পরিবর্তন আসছে না। এবারও এই স্তরের বই ৯৮টি লটেই ছাপার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

চলতি শিক্ষাবর্ষে মোট সারাদেশে মোট ৪০ কোটি ২০ লাখের মতো পাঠ্যবই বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩০ কোটি ২০ লাখ বই মাধ্যমিক স্তরের।

মাধ্যমিকে বই কমার কারণ:

এনসিটিবি থেকে জানা গেছে, চলতি শিক্ষাবর্ষে ৬ষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীতে বাধ্যতামূলক থাকা তিনটি করে বই আগামী শিক্ষাবর্ষে ‘অপশনাল’ হয়ে যাচ্ছে। এই তিন শ্রেণীতে তিনটি বিষয়ের পরিবর্তে যে কোনো একটি বিষয় পড়লেই হবে। এর ফলে তিন শ্রেণীতেই বইয়ের সংখ্যা কমছে।

আগামী শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই ছাপার পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির বিতরণ নিয়ন্ত্রণ হাফিজুর রহমান সংবাদকে বলেছেন, ‘৬ষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীতে চারু-কারু, শারিরীক শিক্ষা এবং কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা; এই তিনটি বই বাধ্যতামূলক ছিল। আগামী বছর এসব বই অপশনাল হয়ে যাবে। এর সঙ্গে কয়েকটি সাবজেক্ট (বিষয়) আছে যেমন- কৃষি শিক্ষা, গার্হস্থ, সংস্কৃত ও পালি, আরবি ও সংগীতসহ মোট ৯টি সাবজেক্টের মধ্যে যে কোনো একটি পড়তে হবে। অর্থাৎ প্রতি শ্রেণীতে তিনটি করে বই কমবে।’

এ ছাড়া চলতি শিক্ষাবর্ষের বই ছাপার শুরুর আগে গত বছর মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা ‘অতিরিক্ত চাহিদা’ দিয়েছিল। এতে এবার এখন পর্যন্ত এনসিটিবিতে ৬০ থেকে ৬৩ লাখের বই ফেরত এসেছে। এসব বই রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এনসিটিবির গুদামে রাখা হয়েছে বলে হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন।

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে এনসিটিবির চেয়ারম্যান একেএম রিয়াজুল হাসান বলেন, চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত বই পেয়েছেন কিছু উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা। তাদের শাস্তি পেতে হবে।

নভেম্বরের মধ্যে বই ছাপা শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা:

২০২৬ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন), ইবতেদায়ি, দাখিল এবং এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল, কারিগরি (ট্রেড বই) এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহ এবং ইন্সপেকশন এজেন্ট নিয়োগের বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা (এপিপি) ও সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা (টিএপি) অনুমোদনবিষয়ক এক সভা গত ৫ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের সভাপতিত্ব করেন।

ওই সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে ইবতেদায়ি স্তরের জন্য আলাদা একটি প্যাকেজ তৈরি করা হবে। আর কোনো শ্রেণীর বই কখন ছাপা শেষ করতে হবে সেই লক্ষ্যমাত্রাও ঠিক করা হয়।

এতে বলা হয়, ৬ষ্ঠ শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে, ৭ম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক ৮ অক্টোবরের মধ্যে, ৮ম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক ১৫ অক্টোবরের মধ্যে, ৯ম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক ২৭ অক্টোবরের মধ্যে এবং ইবতেদায়ি সব শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক ৫ নভেম্বরের মধ্যে সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য একটি প্যাকেজে ব্রেইল পাঠ্যপুস্তক

সরবরাহ করা হবে। আর ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রি ডেলিভারি ইন্সপেকশন (পিডিআই) এবং পোস্ট ল্যান্ডিং ইন্সপেকশন (পিএলআই) একসঙ্গে করা হয়েছিল। এ বছর আলাদা প্যাকেজ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

এবার বিগত বছরের চাহিদার উপর ৩ শতাংশ বৃদ্ধি ধরে পাঠ্যপুস্তকের সংখ্যা নিরূপণ এবং বিগত বছরের উদ্বৃত্ত দরের ১০ শতাংশ ধরে বাজেট প্রাক্কলন করা হয়েছে। সরবরাহযোগ্য সব পাঠ্যপুস্তকের তালিকার আলোকে পাঠ্যপুস্তকসমূহ ৫ নভেম্বর ২০২৫ এর মধ্যে মুদ্রণ ও সরবরাহের লক্ষ্যে ৫টি প্যাকেজে ভাগ করে দরপত্র আহ্বানের ক্রয় পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে হাফিজুর রহমান বলেন, তারা ইতোমধ্যে আগামী শিক্ষাবর্ষের বই ছাপার একটি কর্মপরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন। সেটি অনুমোদন হলে এপ্রিলেই ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের বই ছাপার ‘টেন্ডার প্রক্রিয়া’ শুরু হয়ে যাবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মাধ্যমে সারাদেশের থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও পরিসংখ্যা চাওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ বেশি চাহিদা দিচ্ছে কিনা, সেটি যাচাই-বাছাই করার জন্য ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের (আন্তঃশিক্ষা বোর্ড) কাছেও রেজিস্ট্রেশনকৃত শিক্ষার্থীর তথ্য চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।

সক্ষমতার ৮০ শতাংশ ধরে কাজ:

এনসিটিবি জানিয়েছে, ‘লটের সাইজ’ পূর্বের অভিজ্ঞতার আলোকে পুনঃনির্ধারণ করা যায় কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে। মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের মোট সক্ষমতার ৮০ শতাংশকে প্রকৃত সক্ষমতা ধরে দরপত্র মূল্যায়ন করতে হবে। ওয়েব মেশিনগুলোর অটো বাইন্ডিং সক্ষমতা থাকতে হবে। আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনার ক্ষেত্রে ‘সিআইবি রিপোর্ট’ দেখতে হবে।

প্রতি লটের বই ছাপার জন্য ছাপাখানাগুলোর ‘ব্যাংক কমিটমেন্ট লেটার’ থাকতে হবে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো দুর্বল ব্যাংক থেকে লেটার অব ক্রেডিট নেয়া যাবে না। পেপার মিলগুলোর সঙ্গে ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি থাকতে হবে, যাতে কাগজের সরবরাহ ও কাগজের গুণগত মান নিশ্চিত করা যায়। পেপার মিলকর্তৃক এনসিটিবির চাহিদা অনুযায়ী জলছাপযুক্ত ও অফ হোয়াউট কাগজ সরবরাহ করার বিষয়টি ফ্রেম ওয়ার্ক চুক্তিতে থাকবে। টেন্ডার ডকুমেন্ট বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

back to top