বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এশীয় দেশগুলোকে উজ্জ্বল ভবিষ্যত ও যৌথ সমৃদ্ধির জন্য একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বৃহস্পতিবার চীনের হাইনানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যে এ আহ্বান জানান। ৪ দিনের চীন সফরে বুধবার প্রধান উপদেষ্টা চীন গেছেন।
বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘পরিবর্তনশীল এই বিশ্বে এশীয় দেশগুলোর ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। আমাদের অবশ্যই একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে যা অভিন্ন ভবিষ্যত এবং যৌথ সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এশিয়াকে অবশ্যই একটি টেকসই অর্থায়ন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) ও অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোর এই প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেয়া উচিত। আমাদের এমন নির্ভরযোগ্য তহবিল দরকার যা আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করবে।’
তিনি বলেন, ‘এশিয়া এখনও বিশ্বের অন্যতম কম সংযুক্ত অঞ্চল। এই দুর্বল সংযুক্তি বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমাদের অবশ্যই বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য দ্রুত কাজ করতে হবে।’
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এশীয় দেশগুলোকে অবশ্যই সম্পদ-সাশ্রয়ী কৃষিকে উৎসাহিত এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে। টেকসই প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষি সমাধান ও জলবায়ু-বান্ধব চাষাবাদের ক্ষেত্রে উদ্ভাবন বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এশিয়াকে অবশ্যই একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে হবে, যা পুনর্গঠনমূলক, সমবন্টনমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।’
চীনে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে সহযোগিতা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা
বাংলাদেশ থেকে চীনে বৃহৎ পরিসরে ফল ও কৃষিপণ্য রপ্তানিতে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)-এর সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার চীনের হাইনানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার (বিএফএ) বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে এফএও’র মহাপরিচালক কু ডংইউর সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এই সহযোগিতা কামনা করেন।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, চীন কৃষি ও জলজ পণ্যের শীর্ষ আমদানিকারক হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে, কিন্তু চীনের বাজার সম্পর্কে না জানার কারণে বাংলাদেশ সেখানে প্রবেশ করতে পারছে না।
ফাও-এর মহাপরিচালক কিউ দংইউ এক সময় চীনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টা তাকে চীনা আমদানিকারক ও বাংলাদেশের কৃষি ও ফল উৎপাদনকারীদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানান।
ফাও-এর মহাপরিচালকে উদ্দেশ্য করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ, সবজি সংরক্ষণ, গুদামজাতকরণ ও প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে আমাদের সহায়তা প্রয়োজন। আপনি আমাদের কৃষক ও রপ্তানিকারকদের সঙ্গে চীনকে সংযুক্ত করতে পারেন।’
তিনি বলেন, ‘চীন শিগগিরই বাংলাদেশ থেকে আম আমদানি করবে এবং ফাও-এর সহায়তায় বাংলাদেশ সহজেই আরও রপ্তানিযোগ্য শাক-সবজি ও ফল উৎপাদন করতে পারবে।’
বাংলাদেশকে সহায়তার আশ্বাস দিয়ে ফাও-এর মহাপরিচালক বলেন, ‘তার সংস্থা চীনে বাংলাদেশের কৃষিপণ্য রপ্তানির লক্ষ্যে একটি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করবে।’ জ্বালানি ও পরিবহন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে চীনা ব্যাংকার উ শিয়াওলিংর সাক্ষাৎ
চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পিপলস ব্যাংক অব চায়নার সাবেক উপ-গভর্নর উ শিয়াওলিং বৃহস্পতিবার চীনের হাইনানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
উ শিয়াওলিং বলেন, যদিও চীন ও বাংলাদেশ দারিদ্রের স্তরে ভিন্ন অবস্থানে রয়েছে, তবুও অধ্যাপক
ইউনূস প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের নীতি চীনা জনগণের জন্য এবং পুরো এশিয়ার উন্নয়নের জন্য মূল্যবান অভিজ্ঞতা এনে দিয়েছে।
সাক্ষাৎকালে উ শিয়াওলিং অধ্যাপক ইউনূসকে তরুণ শিক্ষাবিদ ৎিসংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ঝু সুফেংয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। ঝু সুফেং হলেন ৎিসংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক পলিসি ও ম্যানেজমেন্ট স্কুলের ডিন এবং সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস ইনস্টিটিউটের (টিইউএসডিজি) নির্বাহী পরিচালক।
ঝু সুফেং বলেন, ‘বর্তমানে ৪০টি দেশে ১১১টি ইউনূস সেন্টার রয়েছে, যেগুলো একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। আমরা এই নেটওয়ার্কের অংশ হতে চাই’।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘তিনি ৎিসংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে আগ্রহী। আমরা আপনাকে ঢাকায় জুন মাসে অনুষ্ঠিতব্য বার্ষিক সামাজিক ব্যবসা দিবসে আমন্ত্রণ জানাই’।
জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে কাজ করছে বাংলাদেশ
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা যখন একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে যাচ্ছি, তখন এশিয়ার অন্য দেশের মতো আমরাও একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি।’
বিশ্বব্যাপী আর্থিক বাজারের অস্থিরতা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, কূটনৈতিক উত্তেজনা এবং বাণিজ্য বিঘœতা বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ইউনূস বলেন, ‘সুদের হার বৃদ্ধি ও ঋণ পরিষেবা ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এশিয়ার ঋণ সংকট আরও গভীর হচ্ছে।’
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী ২০৩০ এজেন্ডার প্রতি প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও অগ্রগতি খুব ধীর গতিতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত মাত্র ২৪ শতাংশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, উন্নয়নশীল এশীয় দেশগুলো প্রতি বছর ২.৫ থেকে ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার এসডিজি অর্থায়নের ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এসডিজি অর্থায়নের বাইরেও এশিয়াকে ব্যাপক পরিমাণে অবকাঠামো বিনিয়োগ ও দায়িত্বশীল অর্থায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক বৈচিত্র আনতে হবে।
তিনি বলেন, ‘এশিয়াকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সম্পদ পুনরুদ্ধার ও পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার জন্য একটি বহুপাক্ষিক মধ্যস্থতা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।’
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে এশীয় নেতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন । হাইনানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দেয়ার সময় এ আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ইউনূস উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ গত সাত বছর ধরে ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে, যারা মিয়ানমারের নাগরিক।
তিনি বলেন, ‘আমরা বিপুল সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ব্যয় বহন করে চলেছি।’
তিনি বলেন, ‘যদিও বৈশ্বিক প্রচেষ্টা নাটকীয়ভাবে হ্রাস পাচ্ছে, তবে তা চলমান রয়েছে। এশিয়ার নেতাদের অবশ্যই একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে এবং তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে হবে।’
সম্মেলনে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার মহাসচিব ঝাং জুন, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব ও বোয়াও ফোরামের চেয়ারম্যান বান কি-মুন এবং চীনের স্টেট কাউন্সিলের নির্বাহী ভাইস প্রিমিয়ার ডিং শুয়েশিয়াংও বক্তৃতা করেন।
বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এশীয় দেশগুলোকে উজ্জ্বল ভবিষ্যত ও যৌথ সমৃদ্ধির জন্য একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বৃহস্পতিবার চীনের হাইনানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যে এ আহ্বান জানান। ৪ দিনের চীন সফরে বুধবার প্রধান উপদেষ্টা চীন গেছেন।
বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘পরিবর্তনশীল এই বিশ্বে এশীয় দেশগুলোর ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। আমাদের অবশ্যই একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে যা অভিন্ন ভবিষ্যত এবং যৌথ সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এশিয়াকে অবশ্যই একটি টেকসই অর্থায়ন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) ও অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোর এই প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেয়া উচিত। আমাদের এমন নির্ভরযোগ্য তহবিল দরকার যা আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করবে।’
তিনি বলেন, ‘এশিয়া এখনও বিশ্বের অন্যতম কম সংযুক্ত অঞ্চল। এই দুর্বল সংযুক্তি বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমাদের অবশ্যই বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য দ্রুত কাজ করতে হবে।’
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এশীয় দেশগুলোকে অবশ্যই সম্পদ-সাশ্রয়ী কৃষিকে উৎসাহিত এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে। টেকসই প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষি সমাধান ও জলবায়ু-বান্ধব চাষাবাদের ক্ষেত্রে উদ্ভাবন বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এশিয়াকে অবশ্যই একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে হবে, যা পুনর্গঠনমূলক, সমবন্টনমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।’
চীনে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে সহযোগিতা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা
বাংলাদেশ থেকে চীনে বৃহৎ পরিসরে ফল ও কৃষিপণ্য রপ্তানিতে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)-এর সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার চীনের হাইনানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার (বিএফএ) বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে এফএও’র মহাপরিচালক কু ডংইউর সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এই সহযোগিতা কামনা করেন।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, চীন কৃষি ও জলজ পণ্যের শীর্ষ আমদানিকারক হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে, কিন্তু চীনের বাজার সম্পর্কে না জানার কারণে বাংলাদেশ সেখানে প্রবেশ করতে পারছে না।
ফাও-এর মহাপরিচালক কিউ দংইউ এক সময় চীনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টা তাকে চীনা আমদানিকারক ও বাংলাদেশের কৃষি ও ফল উৎপাদনকারীদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানান।
ফাও-এর মহাপরিচালকে উদ্দেশ্য করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ, সবজি সংরক্ষণ, গুদামজাতকরণ ও প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে আমাদের সহায়তা প্রয়োজন। আপনি আমাদের কৃষক ও রপ্তানিকারকদের সঙ্গে চীনকে সংযুক্ত করতে পারেন।’
তিনি বলেন, ‘চীন শিগগিরই বাংলাদেশ থেকে আম আমদানি করবে এবং ফাও-এর সহায়তায় বাংলাদেশ সহজেই আরও রপ্তানিযোগ্য শাক-সবজি ও ফল উৎপাদন করতে পারবে।’
বাংলাদেশকে সহায়তার আশ্বাস দিয়ে ফাও-এর মহাপরিচালক বলেন, ‘তার সংস্থা চীনে বাংলাদেশের কৃষিপণ্য রপ্তানির লক্ষ্যে একটি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করবে।’ জ্বালানি ও পরিবহন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে চীনা ব্যাংকার উ শিয়াওলিংর সাক্ষাৎ
চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পিপলস ব্যাংক অব চায়নার সাবেক উপ-গভর্নর উ শিয়াওলিং বৃহস্পতিবার চীনের হাইনানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
উ শিয়াওলিং বলেন, যদিও চীন ও বাংলাদেশ দারিদ্রের স্তরে ভিন্ন অবস্থানে রয়েছে, তবুও অধ্যাপক
ইউনূস প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের নীতি চীনা জনগণের জন্য এবং পুরো এশিয়ার উন্নয়নের জন্য মূল্যবান অভিজ্ঞতা এনে দিয়েছে।
সাক্ষাৎকালে উ শিয়াওলিং অধ্যাপক ইউনূসকে তরুণ শিক্ষাবিদ ৎিসংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ঝু সুফেংয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। ঝু সুফেং হলেন ৎিসংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক পলিসি ও ম্যানেজমেন্ট স্কুলের ডিন এবং সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস ইনস্টিটিউটের (টিইউএসডিজি) নির্বাহী পরিচালক।
ঝু সুফেং বলেন, ‘বর্তমানে ৪০টি দেশে ১১১টি ইউনূস সেন্টার রয়েছে, যেগুলো একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। আমরা এই নেটওয়ার্কের অংশ হতে চাই’।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘তিনি ৎিসংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে আগ্রহী। আমরা আপনাকে ঢাকায় জুন মাসে অনুষ্ঠিতব্য বার্ষিক সামাজিক ব্যবসা দিবসে আমন্ত্রণ জানাই’।
জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে কাজ করছে বাংলাদেশ
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা যখন একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে যাচ্ছি, তখন এশিয়ার অন্য দেশের মতো আমরাও একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি।’
বিশ্বব্যাপী আর্থিক বাজারের অস্থিরতা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, কূটনৈতিক উত্তেজনা এবং বাণিজ্য বিঘœতা বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ইউনূস বলেন, ‘সুদের হার বৃদ্ধি ও ঋণ পরিষেবা ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এশিয়ার ঋণ সংকট আরও গভীর হচ্ছে।’
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী ২০৩০ এজেন্ডার প্রতি প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও অগ্রগতি খুব ধীর গতিতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত মাত্র ২৪ শতাংশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, উন্নয়নশীল এশীয় দেশগুলো প্রতি বছর ২.৫ থেকে ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার এসডিজি অর্থায়নের ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এসডিজি অর্থায়নের বাইরেও এশিয়াকে ব্যাপক পরিমাণে অবকাঠামো বিনিয়োগ ও দায়িত্বশীল অর্থায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক বৈচিত্র আনতে হবে।
তিনি বলেন, ‘এশিয়াকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সম্পদ পুনরুদ্ধার ও পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার জন্য একটি বহুপাক্ষিক মধ্যস্থতা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।’
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে এশীয় নেতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন । হাইনানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দেয়ার সময় এ আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ইউনূস উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ গত সাত বছর ধরে ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে, যারা মিয়ানমারের নাগরিক।
তিনি বলেন, ‘আমরা বিপুল সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ব্যয় বহন করে চলেছি।’
তিনি বলেন, ‘যদিও বৈশ্বিক প্রচেষ্টা নাটকীয়ভাবে হ্রাস পাচ্ছে, তবে তা চলমান রয়েছে। এশিয়ার নেতাদের অবশ্যই একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে এবং তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে হবে।’
সম্মেলনে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার মহাসচিব ঝাং জুন, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব ও বোয়াও ফোরামের চেয়ারম্যান বান কি-মুন এবং চীনের স্টেট কাউন্সিলের নির্বাহী ভাইস প্রিমিয়ার ডিং শুয়েশিয়াংও বক্তৃতা করেন।