সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আগ্রহী দুই দেশই
পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিতে ঢাকায় এসেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ। ১৫ বছর পর পাকিস্তানের কোনো সচিব ঢাকায় এলেন। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। ১৫ বছর পর বৃহস্পতিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিবদের বৈঠক।
বুধবার, ১৬ এপ্রিল দুপুরের দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমনা বালুচকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগ) ইশরাত জাহান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক ও মধ্যাহ্নভোজ শেষে
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
২০১০ সালে সর্বশেষ ইসলামাবাদে বৈঠকে বসেছিল দুই দেশের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব। এছাড়া, অর্থমন্ত্রী পর্যায়ের অর্থনৈতিক কমিশনের সর্বশেষ বৈঠক হয় ২০০৫ সালে। আওয়ামী লীগের টানা প্রায় ১৫ বছরের শাসনামলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, আঞ্চলিক রাজনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে ইসলামাবাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্তিমিত ছিল ঢাকার। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আসা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক ও গভীর করার উদ্যোগ নিয়েছে। দীর্ঘদিনের জট খোলার পর আশা করা হচ্ছে, এবারের আলোচনায় পরবর্তী অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠক নিয়ে কথা হবে।
অতীতের ‘টানাপোড়েন’ পেরিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের ‘স্বাভাবিক সম্পর্ক’ চাওয়ার কথা ইতোমধ্যে বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের বৈঠকও হয়েছে। সেখানে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন তারা।
ইসলামাবাদের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আলোচনায় একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের ক্ষমা প্রার্থনা এবং আটকেপড়া সম্পত্তি ফেরত ও ক্ষতিপূরণের প্রশ্ন সব সময় সামনে আসে। মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্ন বাদ রেখে সম্পর্কোন্নয়নের কোনো বার্তা পাকিস্তানকে না দেয়ার কথা বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। ইউনূস-শাহবাজ বৈঠকের পর দেশে ফিরে তিনি বলেছেন, দেশের স্বার্থ রক্ষা করে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেয়া হবে।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পর ঢাকার সঙ্গে স্থবির দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্বাভাবিক করে তা এগিয়ে নিতে আগ্রহ প্রকাশ করছে পাকিস্তান। এজন্য প্রথমে পররাষ্ট্র সচিব এবং পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় আসছেন। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে তাদের আগ্রহের বার্তা দিচ্ছে পাকিস্তান।
অন্যদিকে বাংলাদেশ দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সহযোগিতার নানা ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্ক চায়। ইতোমধ্যে পাকিস্তানের নিজস্ব জাহাজে পণ্য সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে আনার অনুমতি দেয়াসহ বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে ইউনূস সরকার। তারই অংশ হিসেবে ১৫ বছর পর আজ ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিবদের বৈঠক।
পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, প্রায় ১৫ বছরের বিরতিতে অনুষ্ঠেয় এই বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। বৈঠকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্কের নানা বিষয় আলোচনার সময় ঐতিহাসিক অনিষ্পন্ন বিষয়গুলোও আলোচনায় আসবে।
জানা গেছে, দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিবদের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিসরে সহায়তা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হবে। বিশেষ করে বিগত দিনগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের টানাপোড়েনের মনোভাব থেকে বেরিয়ে এক দেশ অন্য দেশকে সহযোগিতার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছার বিষয়ে আলোচনা হবে। এছাড়াও দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিবরা বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা, কৃষি, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, সংযুক্তিসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করবেন।
ঢাকায় বৈঠক করে পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ ফিরে যাওয়ার পর ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসার কথা রয়েছে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের। তবে প্রধান উপদেষ্টার বিদেশ সফরের একটি কর্মসূচি থাকার কারণে ইসহাক দারের সফর কয়েক দিন পিছিয়ে যেতে পারে।