alt

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপ: আলোচনা, আঞ্চলিক সহযোগিতা, মুক্তবাণিজ্য চুক্তি ও রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণের সুপারিশ সিপিডির

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপের পর করণীয় ঠিক করতে একাধিক পরামর্শ দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলছে, পালটা শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। আলোচনার ওপর নির্ভর করবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কী সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। সমস্যা সমাধানে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানো এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সইয়ের ওপর জোর দিতে হবে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক চীনের ওপর অধিক শুল্কারোপের কারণে বাংলাদেশ যে খুব বেশি উপকৃত হবে, বিষয়টি এমন নয়।

ট্যারিফের প্রভাব একেক দেশের ক্ষেত্রে একেক রকম হবে

বাংলাদেশ কোন একটি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড় দিলে অন্য দেশকেও দিতে হবে

৯০ দিন পর কী হয়, সেটার ওপর নির্ভর করে ব্যবস্থা নিতে হবে

বাংলাদেশের উচিত হবে আগামী ৫ বছর বিকল্প বাজার খোঁজা

বৃহস্পতিবার,(১৭ এপ্রিল) রাজধানীর লেকশোর হোটেলে আয়োজিত ‘ট্রাম্প রেসিপ্রোকাল ট্যারিফস অ্যান্ড বাংলাদেশ কমপ্লিকেশনস অ্যান্ড রেসপন্স’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি। সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। আলোচনা সভায় সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান, বাংলাদেশ ট্যারিফ অ্যান্ড ট্রেড কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তফা আবিদ খান, এইচএসবিসির চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার মাহবুব উর রহমান, বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ট্যারিফের প্রভাব একেক দেশের ক্ষেত্রে একেক রকম হবে। যারা মনে করেন, চীনের ওপর বেশি হারে ট্যারিফ আরোপ করায় বাংলাদেশ বেশি উপকৃত হবে, বিষয়টি ঠিক নয়। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে চীন ম্যান মেইড ফাইবার দিয়ে তৈরি পোশাক রফতানি করে। আর বাংলাদেশের রফতানির ৭০ ভাগ কটন। ফলে বাংলাদেশ খুব বেশি উপকৃত হবে না।’

তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানির বিপরীতে বাংলাদেশ ১৮০ মিলিয়ন ডলার শুল্ক আদায় করেছে। এর বিপরীতে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে রফতানি হওয়া পণ্যের ওপর ১২৭ কোটি ডলার শুল্ক আদায় করেছে। বাংলাদেশ কোন একটি আইটেমে যদি যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড় দেয়, অন্য দেশকেও সেই সুবিধা দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করতে হবে। আলোচনার ওপর নির্ভর করবে আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে কী ধরনের সুবিধা নিতে পারি। যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ খুব কম, সেটি কীভাবে বাড়ানো যায়, তা নির্ভর করবে সামগ্রিক পলিসির ওপর।’

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে। আর ট্রাম্পের এই ট্যারিফ পলিসি আমাদের এলডিসি থেকে বের হওয়াতে সহায়তা করবে। ৯০ দিন পর কী হয়, সেটার ওপর নির্ভর করে ব্যবস্থা নিতে হবে। এখন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে, দেখতে হবে ও এরপর পদক্ষেপ নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে যদি আমদানি ২০০ শতাংশ ও রপ্তানি ৫০ শতাংশ বাড়ানো যায়, তবেই শুল্ক শূন্য হতে পারে। বাস্তবে এটি আসলে সম্ভব নয়।’

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রধান লক্ষ্য চীন। তাদের সম্পর্ক এখনও নির্ধারিত হয়নি। ফলে আমেরিকা নিয়ে বাংলাদেশের করণীয় এখনও নির্ধারিত নয়। বাংলাদেশের উচিত হবে আগামী ৫ বছর বিকল্প বাজার খোঁজা। ইউরোপীয় ইউনিয়নে রফতানি বাজার বড় করতে হবে। এশিয়ার বাজারে নজর দিতে হবে। এশিয়াই হবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বড় জায়গা।’

ট্রাম্প প্রশাসনকে একটি অনিশ্চিত প্রক্রিয়ার তুলনা করে বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি মো. ফজলুল হক বলেন, ‘ট্রাম্পের শুল্ক নীতি পুরোটা অনিশ্চিত প্রক্রিয়া। তবে মোটা দাগে ধরা যেতে পারে এই শুল্ক নীতিতে চীন তাদের মূল টার্গেট। তবে নির্ধারিত সময় শেষে বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশগুলোর ওপর শুল্ক কিছুটা কমতে পারে। কিন্তু আমাদের মার্কেটের অবস্থার ওপর ভিত্তি করে ক্রেতাদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের ৫০ শতাংশ নেগোসিয়েশন করতে হবে। এর জন্য কারখানাগুলোকে ব্যাংকের সাপোর্ট দিতে হবে। তবে এই প্রক্রিয়াটা কেবল একটা পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যাওয়া জরুরি। যা আগামী ৯০ দিনের জন্য কার্যকর হবে। তবে আগামীতে আমাদের রফতানি কিছুটা কমতে পারে। এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। তবে আগামী ৯০ দিন পরে পরিস্থিতি যাই হোক, এতে সরকারের সহযোগিতা থাকতে হবে।’

বাংলাদেশ ট্যারিফ অ্যান্ড ট্রেড কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তফা আবিদ খান বলেন, ‘প্রথমেই বুঝতে হবে, এটা পারস্পরিক শুল্ক নয়। ফলে আমরা যতই সাড়া দিই না কেন, লাভ নেই। আমাদের বুঝতে হবে, যুক্তরাষ্ট্র কী চায়। সে জন্য আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।’

আবিদ খান আরও বলেন, ‘কোনো পণ্যে শুল্ক কমালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আমদানি বাড়বে, তা নিশ্চিত নয়। আরেকটি উপায় হলো, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করা যায়। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এফটিএ করা সহজ নয়। যতবারই আমরা এফটিএ করতে চেয়েছি, যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশ এখনও প্রস্তুত নয়।’

সংলাপে আলোচকরা আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে যেসব পণ্যের ওপর শুল্কমুক্ত বা হ্রাস সুবিধা পেতে চায়, তার একটি তালিকা চেয়ে অনুরোধ করতে পারে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ যদি নির্দিষ্ট কিছু পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে শুল্ক ছাড় দেয়, তবে মোস্ট ফেভারড নেশন নীতির আওতায় সব বাণিজ্য অংশীদারের মতো একই সুবিধা দিতে বাধ্য হবে তারা।’

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এ ধরনের উদ্বেগের সমাধান করতে পারে বলেও উল্লেখ করেন আলোচকরা।

ছবি

তত্ত্বাবধায়ক ফিরলে সংসদের ক্ষমতাকে খর্ব করবে কিনা, প্রশ্ন প্রধান বিচারপতির

ছবি

১২ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় ১ লাখ ১৬ হাজার মৃত্যু

ছবি

সেন্টমার্টিন দ্বীপে নৌযান চলাচলে পরিবেশ মন্ত্রণালয়েরও অনুমোদন লাগবে

ছবি

হেফাজতে থাকা ১৫ সেনা কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে, কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে ধোঁয়াশা, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকে ঐকমত্য কমিশন

ছবি

বাংলাদেশের ঐতিহাসিক পদক্ষেপ: আইএলওর তিনটি কনভেনশনে সই করল অন্তর্বর্তী সরকার

ছবি

ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে বাধ্যতামূলক ৬০ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ

ছবি

বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়নি, বললেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল

ছবি

এক দিনে ডেঙ্গুতে দুইজনের মৃত্যু, চলতি বছর প্রাণহানি ২৫৫

ছবি

কোনো চাপের কাছে ইসি নতি স্বীকার করবে না: সিইসি নাসির

ছবি

আত্মসমর্পণকারী সেনা কর্মকর্তারা নির্দোষ, অপরাধীরা ভারতে পালিয়েছেন: আইনজীবী

ছবি

১৫ সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের

ছবি

নির্বাচনে এআইয়ের অপব্যবহার রোধে সহযোগিতা চাইলেন সিইসি

ছবি

১০ চুক্তি বাতিলের বিষয়ে জানেনা ভারতীয় হাইকমিশন

ছবি

ইউনূসকে চিঠি দিয়ে ‘উদ্বেগ’: একগুচ্ছ আহ্বান আন্তর্জাতিক ৬ মানবাধিকার সংস্থার

ছবি

‘টার্গেট’ করে হত্যার অভিযোগ সঠিক নয়: যুক্তিতর্কে রাষ্ট্রনিযুক্ত হাসিনার আইনজীবী

ছবি

ভারতের সঙ্গে চুক্তি ‘বাতিলের তালিকা সঠিক নয়’: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

অভিযুক্ত ২৫ সেনা কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে বুধবার হাজির না হলে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি: প্রসিকিউশন

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৪ মৃত্যু, হাসপাতালে ৮১৪ জন

ছবি

জোবায়েদ হত্যা: ফাঁসির দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণে জবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ছবি

শিক্ষকদের আন্দোলন স্থগিত, প্রধান উপদেষ্টার বিবৃতি

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ছে ১৫ শতাংশ, কার্যকর দুই ধাপে

ছবি

জবির জোবায়েদ হত্যা: ৪১ ঘন্টা পর মামলা, ৩জন গ্রেপ্তার

ছবি

২৫ সেপ্টেম্বর থেকে জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী ও তার প্রেমিক: পুলিশ

ছবি

জুলাই গণঅভ্যুত্থান: ‘হত্যা’ মামলার বিচার হবে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে

ছবি

নতুন হ্যাকার গ্রুপ ‘মিস্টিরিয়াস এলিফ্যান্ট’: টার্গেটে বাংলাদেশও

ছবি

ডেঙ্গু: একদিনে মৃত্যু ৪, হাসপাতালে ভর্তি ৯৪২ জন

ছবি

ট্রাইব্যুনাল আইনে বিচার মানে ‘হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে আসামিকে বলা সাঁতার কাটো’: রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী

ছবি

নির্বাচনের ‘সহায়ক পরিবেশ আছে’, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে ‘উদ্বেগ নেই’: ইসি সচিব

ছবি

শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন: ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

ছবি

জুলাই যোদ্ধারা আইডি কার্ড ও আইনি সুরক্ষা চায়, বৈঠকে গুরুত্বারোপ

ছবি

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সীমাবদ্ধতা নিয়ে যুক্তিতর্ক শুরু করলেন আসামিপক্ষের আইনজীবী

ছবি

নির্বাচন নিয়ে সংশয় দেখছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের হত্যাকাণ্ডের মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে

বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে শহীদ মিনারে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সমাবেশ, একশজনের অনশন চলছে

বাংলাদেশে একদিনে ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু; চলতি বছর মৃতের সংখ্যা ২৪৫

tab

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপ: আলোচনা, আঞ্চলিক সহযোগিতা, মুক্তবাণিজ্য চুক্তি ও রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণের সুপারিশ সিপিডির

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপের পর করণীয় ঠিক করতে একাধিক পরামর্শ দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলছে, পালটা শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। আলোচনার ওপর নির্ভর করবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কী সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। সমস্যা সমাধানে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানো এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সইয়ের ওপর জোর দিতে হবে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক চীনের ওপর অধিক শুল্কারোপের কারণে বাংলাদেশ যে খুব বেশি উপকৃত হবে, বিষয়টি এমন নয়।

ট্যারিফের প্রভাব একেক দেশের ক্ষেত্রে একেক রকম হবে

বাংলাদেশ কোন একটি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড় দিলে অন্য দেশকেও দিতে হবে

৯০ দিন পর কী হয়, সেটার ওপর নির্ভর করে ব্যবস্থা নিতে হবে

বাংলাদেশের উচিত হবে আগামী ৫ বছর বিকল্প বাজার খোঁজা

বৃহস্পতিবার,(১৭ এপ্রিল) রাজধানীর লেকশোর হোটেলে আয়োজিত ‘ট্রাম্প রেসিপ্রোকাল ট্যারিফস অ্যান্ড বাংলাদেশ কমপ্লিকেশনস অ্যান্ড রেসপন্স’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি। সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। আলোচনা সভায় সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান, বাংলাদেশ ট্যারিফ অ্যান্ড ট্রেড কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তফা আবিদ খান, এইচএসবিসির চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার মাহবুব উর রহমান, বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ট্যারিফের প্রভাব একেক দেশের ক্ষেত্রে একেক রকম হবে। যারা মনে করেন, চীনের ওপর বেশি হারে ট্যারিফ আরোপ করায় বাংলাদেশ বেশি উপকৃত হবে, বিষয়টি ঠিক নয়। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে চীন ম্যান মেইড ফাইবার দিয়ে তৈরি পোশাক রফতানি করে। আর বাংলাদেশের রফতানির ৭০ ভাগ কটন। ফলে বাংলাদেশ খুব বেশি উপকৃত হবে না।’

তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানির বিপরীতে বাংলাদেশ ১৮০ মিলিয়ন ডলার শুল্ক আদায় করেছে। এর বিপরীতে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে রফতানি হওয়া পণ্যের ওপর ১২৭ কোটি ডলার শুল্ক আদায় করেছে। বাংলাদেশ কোন একটি আইটেমে যদি যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড় দেয়, অন্য দেশকেও সেই সুবিধা দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করতে হবে। আলোচনার ওপর নির্ভর করবে আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে কী ধরনের সুবিধা নিতে পারি। যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ খুব কম, সেটি কীভাবে বাড়ানো যায়, তা নির্ভর করবে সামগ্রিক পলিসির ওপর।’

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে। আর ট্রাম্পের এই ট্যারিফ পলিসি আমাদের এলডিসি থেকে বের হওয়াতে সহায়তা করবে। ৯০ দিন পর কী হয়, সেটার ওপর নির্ভর করে ব্যবস্থা নিতে হবে। এখন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে, দেখতে হবে ও এরপর পদক্ষেপ নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে যদি আমদানি ২০০ শতাংশ ও রপ্তানি ৫০ শতাংশ বাড়ানো যায়, তবেই শুল্ক শূন্য হতে পারে। বাস্তবে এটি আসলে সম্ভব নয়।’

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রধান লক্ষ্য চীন। তাদের সম্পর্ক এখনও নির্ধারিত হয়নি। ফলে আমেরিকা নিয়ে বাংলাদেশের করণীয় এখনও নির্ধারিত নয়। বাংলাদেশের উচিত হবে আগামী ৫ বছর বিকল্প বাজার খোঁজা। ইউরোপীয় ইউনিয়নে রফতানি বাজার বড় করতে হবে। এশিয়ার বাজারে নজর দিতে হবে। এশিয়াই হবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বড় জায়গা।’

ট্রাম্প প্রশাসনকে একটি অনিশ্চিত প্রক্রিয়ার তুলনা করে বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি মো. ফজলুল হক বলেন, ‘ট্রাম্পের শুল্ক নীতি পুরোটা অনিশ্চিত প্রক্রিয়া। তবে মোটা দাগে ধরা যেতে পারে এই শুল্ক নীতিতে চীন তাদের মূল টার্গেট। তবে নির্ধারিত সময় শেষে বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশগুলোর ওপর শুল্ক কিছুটা কমতে পারে। কিন্তু আমাদের মার্কেটের অবস্থার ওপর ভিত্তি করে ক্রেতাদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের ৫০ শতাংশ নেগোসিয়েশন করতে হবে। এর জন্য কারখানাগুলোকে ব্যাংকের সাপোর্ট দিতে হবে। তবে এই প্রক্রিয়াটা কেবল একটা পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যাওয়া জরুরি। যা আগামী ৯০ দিনের জন্য কার্যকর হবে। তবে আগামীতে আমাদের রফতানি কিছুটা কমতে পারে। এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। তবে আগামী ৯০ দিন পরে পরিস্থিতি যাই হোক, এতে সরকারের সহযোগিতা থাকতে হবে।’

বাংলাদেশ ট্যারিফ অ্যান্ড ট্রেড কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তফা আবিদ খান বলেন, ‘প্রথমেই বুঝতে হবে, এটা পারস্পরিক শুল্ক নয়। ফলে আমরা যতই সাড়া দিই না কেন, লাভ নেই। আমাদের বুঝতে হবে, যুক্তরাষ্ট্র কী চায়। সে জন্য আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।’

আবিদ খান আরও বলেন, ‘কোনো পণ্যে শুল্ক কমালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আমদানি বাড়বে, তা নিশ্চিত নয়। আরেকটি উপায় হলো, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করা যায়। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এফটিএ করা সহজ নয়। যতবারই আমরা এফটিএ করতে চেয়েছি, যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশ এখনও প্রস্তুত নয়।’

সংলাপে আলোচকরা আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে যেসব পণ্যের ওপর শুল্কমুক্ত বা হ্রাস সুবিধা পেতে চায়, তার একটি তালিকা চেয়ে অনুরোধ করতে পারে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ যদি নির্দিষ্ট কিছু পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে শুল্ক ছাড় দেয়, তবে মোস্ট ফেভারড নেশন নীতির আওতায় সব বাণিজ্য অংশীদারের মতো একই সুবিধা দিতে বাধ্য হবে তারা।’

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এ ধরনের উদ্বেগের সমাধান করতে পারে বলেও উল্লেখ করেন আলোচকরা।

back to top