alt

জাতীয়

সীতাকুণ্ডে শিক্ষককে পদত্যাগে বাধ্য করানোর অভিযোগ, তদন্ত শুরু প্রশাসনের

প্রতিনিধি, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) : শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী হাজী তোবারক আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আচার্য্যকে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই করানোর দৃশ্য -সংবাদ

‘দুর্নীতির’ অভিযোগ তুলে সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী হাজী তোবারক আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আচার্য্যকে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই করানোর ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে প্রশাসন। কান্তি লাল অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মীদের ‘চাপে’ জোর করে পদত্যাগপত্রে তার সই নেয়া হয়। পরে তিনি বিচার চেয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেন।

শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) কান্তি লাল বলেন, ‘দুর্নীতি নয়, স্কুল পরিচালনায় অ্যাডহক কমিটি করা নিয়ে বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। মাইনরিটি হওয়ায় তারা আমার এ অবস্থা করতে পেরেছে।’ ঘটনার বর্ণনায় কান্তি লাল বলেন, ‘গত বুধবার কয়েকশ লোক মিছিল নিয়ে স্কুলে এসে আমার পদত্যাগ দাবি করে। তারা ককটেল ফাটিয়ে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে। এরপর জোর করে পদত্যাগপত্রে সই নেয় এবং গাড়িতে তুলে আমাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।

‘সেদিন স্কুল কমিটির সভাপতি মহিউদ্দিনও উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় বিএনপির সভাপতি নুরুল আনোয়ারও তখন ছিলেন এবং তার লোকজনই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমার এক ছাত্রও তাদের হামলায় আহত হন।’ এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।

ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আনোয়ার বলেন, ‘ওই শিক্ষক ও তার লোকজন ১৭ বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী এ স্কুল লুটেপুটে খাচ্ছে। সেজন্য এলাকাবাসী উনার পদত্যাগ চাইছে। ভাটিয়ারী এলাকার লোকজন সেখানে মিছিল নিয়ে গিয়েছিল, আমরাও তাদের সঙ্গে গিয়েছিলাম।’ কেউ জোর করে পদত্যাগ করায়নি দাবি করে তিনি বলেন, ‘উনি জনগণের চাপে পদত্যাগ করেছেন। ওনার দুর্নীতির বিচার করতে হবে।’

কান্তি লাল আচার্য্য বলেন, ‘গত ৬ এপ্রিল স্কুলের অ্যাডহক কমিটি বোর্ড থেকে অনুমোদন নেয়। কমিটির সভাপতি করা হয় মহিউদ্দিন

আহমেদকে। এটা নিয়ে স্থানীয় বিএনপির লোকজনের মধ্যে প্রতিক্রিয়া হয়। গত পহেলা বৈশাখে স্কুলের অনুষ্ঠান পণ্ড করে দেয়া হয়। বিষয়টি স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনও অবগত।

অ্যাডহক কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ থেকেই জোর করে পদত্যাগপত্রে সই নেয়া হয় দাবি করে তিনি বলেন, ‘সাধারণত কমিটির সভাপতি হিসেবে তিনজনের তালিকা দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে পাঠাই। পরে সেটি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে শিক্ষাবোর্ড কার্যালয়ে পাঠানো হয়। বোর্ড থেকে একজনকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এখানে আমার করার কিছুই নাই।’

৩৫ বছর ধরে ওই স্কুলে শিক্ষকতা করে আসা বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষক কান্তি লাল বলেন, এভাবে জোর করে সই নিয়ে পদত্যাগ করানো দুঃখজনক। সংখ্যালঘু হওয়ায় সমস্যা বেশি করেছে এবং একই কারণে আমার এ অবস্থা করতে পেরেছে। আমি বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

স্কুলের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি ওই স্কুল এবং ওই শিক্ষকের সরাসরি ছাত্র। কী কারণে তারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, আমার বোধগম্য নয়। তারা তা-ব চালিয়ে এসব করেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি পরিচালনা কমিটির সভাপতি হয়েছি সেটা তারা হয়তো মানতে পারছে না। এটি অনেক পুরাতন স্কুল। আমি এখানকার প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের সদস্য সচিবও। তারা আমাকে বললে ওই শিক্ষকের সম্মান রক্ষার্থে আমি পদ ছেড়ে দিতাম।’

তদন্ত শুরু

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইলিয়াছ উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, ‘ওই শিক্ষক আমাকে অভিযোগ দিয়েছেন। ঘটনাটি তদন্ত করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ সীতাকু- উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো শিক্ষককে এভাবে যেন হ্যারাস করে পদত্যাগ করানো না হয়, সে ব্যাপারে সরকারি নির্দেশনা আছে। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সেটা প্রয়োজনে তদন্ত করে বিচার হবে। তিনি বলেন, ‘ওই স্কুলের ঘটনা জেনেছি। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এ ঘটনায় আইনগতভাবে যেটা করা দরকার, সেটা করা হবে।’

‘বাবার অপদস্ত দেখে ঘুমাতে পারছি না’

জোর করে পদত্যাগ করানো এবং তাকে ‘হেনস্তার’ ভিডিওর একটি অংশ ফেইসবুকে দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শিক্ষকের মেয়ে ভাবনা আচার্য্য। তিনি লিখেছেন, ‘জানেন, আমরা মেয়েরা বাবার অপদস্ত হওয়ার ভিডিও দেখে রাতে ঘুমাতে পারছিনা। ভাবুন উনি শিক্ষক নয় শুধু, উনি আমাদের বাবা। আপনার বাবার সঙ্গে এমন হলে আপনার কেমন লাগবে বলুন!’

ভাবনা আচার্য্য লিখেন, ‘স্কুলে ঝামেলা হওয়ার আগে বাবাকে মানা করা হয় যেতে। বলছিল, স্কুলে গেলে অপমান হতে হবে। বাবা সেই কথার উত্তরে বলেন, ‘আমি কোনো অন্যায় করিনি, আমার কোনো অপরাধ নেই। আমাকে পদ থেকে সরে যেতে বললে নির্দ্বিধায় আমি সরে যাবো। তবুও আমি স্কুলে যাব। আমি কেন পালিয়ে বেড়াবো। কেউ আমার অপরাধের প্রমাণ আনতে পারলে আনুক।’

হতাশার সুরে ভাবনা লেখেন, ‘কি সুন্দর তাই না! আমার বাবা কত মানুষকে ঘরে রেখে পড়িয়েছেন, কত মানুষকে টাকা ছাড়া পড়িয়েছেন, কত মানুষের ফি মওকুফ করেছেন। একজন শিক্ষকের এই পরিণতি! আমার বাবা অসুস্থ হয়ে গেছে বিশ্বাস করেন। আমার বাবা এবং আমরা কেউ মানতে পারছিনা যে একজন মানুষ ৩৫ বছর চাকরিরত থাকার পর তার এই পরিণতি। ভাবনা লেখেন, ‘একজন শিক্ষকের এই অপমান! পৃথিবীতে একমাত্র হীন জাতি আমরা, যারা পদে পদে শিক্ষকদের টার্গেট করে এই অপমানজনক পরিস্থিতি উপহার দিচ্ছি।’

সিলেটে আইনজীবী বাবাকে খুন: ছেলেসহ ৩ জনের ফাঁসি

রাজশাহীতে এনজিওর ‘ঋণের চাপে’ আত্মহত্যার চেষ্টা

চয়নিকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

আরও ৪ মামলায় চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ

আরও ৪ মামলায় চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ

‘মিথ্যাচার’ ও ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ নানা অভিযোগের ব্যাখ্যা দিলো আটাব

‘কোটি কোটি’ টাকা নিয়ে ‘লাপাত্তা’ সাউথইস্ট ব্যাংকের কর্মকর্তা, উৎকণ্ঠায় গ্রাহক

কোরবানির জন্য খামারিদের কাছে প্রস্তুত এক কোটি ২৪ লাখ গবাদিপশু

কুয়েটে এখনও ক্লাসে ফেরেননি শিক্ষকরা, বাড়ছে সেশনজট

ছবি

নির্বাচনী সীমানা নির্ধারণ-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ চূড়ান্ত অনুমোদন

মোরেলগঞ্জে ওয়ারেন্টি আসামি ধরতে গিয়ে একজন নিহত

ছবি

‘শিরক ও বিদআত’ আখ্যা দিয়ে শতবর্ষী বটগাছ কেটে ফেলা হলো মাদারীপুরে

দুই বক্তার ‘আপত্তিকর’ শব্দচয়ন: হেফাজতের দুঃখ প্রকাশ

চট্টগ্রাম ওয়াসার অপরিকল্পিত পানি শোধনাগার, গ্রাহক ভোগান্তি চরমে

অবমাননাকর প্রতিক্রিয়া আশা করি না: আইন উপদেষ্টা

রাষ্ট্র সংস্কারে নিজস্ব ‘রূপরেখা’ দিলো এনসিপি

ছবি

আইএমএফের ঋণ: বাজারভিত্তিক ডলারের দামের প্রশ্নে টানাপোড়েন

ভোটাধিকার ফেরাতে নির্বাচন ব্যবস্থা, প্রতিষ্ঠানের সংস্কার জরুরি: ইউনূস

সাইবার সুরক্ষা আইন সংশোধন করে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’ হচ্ছে

ছবি

দেশে ফিরলেন খালেদা জিয়া

ছবি

আরাকানের নতুন প্রশাসনে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব দেখতে চায় বাংলাদেশ : খলিলুর রহমান

ছবি

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোনো সহায়তা চাননি: তৌহিদ হোসেন

ছবি

তরুণদের রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের

ছবি

নারী সংস্কার কমিশন নিয়ে বিদ্বেষমূলক প্রতিক্রিয়া জাতির প্রতি অবমাননাকর: আইন উপদেষ্টা

ছবি

বিতর্কিত আইন বাতিল করে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’ অনুমোদন, ৯টি ধারা বাতিল

ছবি

ঈদুল আজহায় টানা ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা

ছবি

আরো ৪ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো চিন্ময় দাসকে

ছবি

অযত্নে বিকল হচ্ছে বিএমডিএ কার্যালয়ের অত্যাধুনিক কৃষিযন্ত্র

চিন্ময় দাসকে আলিফ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ

সরকারি পরিসংখ্যান মারাত্মক ফ্যাসাদ তৈরি করছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

‘বিনা নোটিশে সাংবাদিককে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুযোগ নেই’

ছবি

রোহিঙ্গাদের ডাটাবেজ ব্যবহারের সুযোগ চায় নির্বাচন কমিশন

ছবি

দেশ ও শ্রমিকের স্বার্থে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার দাবি বায়রার

এপ্রিলে রপ্তানি আয়ে সামান্য উন্নতি, মূল্যস্ফীতিও কমেছে

ছবি

পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ কেন ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চান না?

পাকিস্তানের আরও একটি ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণ

tab

জাতীয়

সীতাকুণ্ডে শিক্ষককে পদত্যাগে বাধ্য করানোর অভিযোগ, তদন্ত শুরু প্রশাসনের

প্রতিনিধি, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম)

সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী হাজী তোবারক আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আচার্য্যকে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই করানোর দৃশ্য -সংবাদ

শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

‘দুর্নীতির’ অভিযোগ তুলে সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী হাজী তোবারক আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আচার্য্যকে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই করানোর ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে প্রশাসন। কান্তি লাল অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মীদের ‘চাপে’ জোর করে পদত্যাগপত্রে তার সই নেয়া হয়। পরে তিনি বিচার চেয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেন।

শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) কান্তি লাল বলেন, ‘দুর্নীতি নয়, স্কুল পরিচালনায় অ্যাডহক কমিটি করা নিয়ে বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। মাইনরিটি হওয়ায় তারা আমার এ অবস্থা করতে পেরেছে।’ ঘটনার বর্ণনায় কান্তি লাল বলেন, ‘গত বুধবার কয়েকশ লোক মিছিল নিয়ে স্কুলে এসে আমার পদত্যাগ দাবি করে। তারা ককটেল ফাটিয়ে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে। এরপর জোর করে পদত্যাগপত্রে সই নেয় এবং গাড়িতে তুলে আমাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।

‘সেদিন স্কুল কমিটির সভাপতি মহিউদ্দিনও উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় বিএনপির সভাপতি নুরুল আনোয়ারও তখন ছিলেন এবং তার লোকজনই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমার এক ছাত্রও তাদের হামলায় আহত হন।’ এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।

ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আনোয়ার বলেন, ‘ওই শিক্ষক ও তার লোকজন ১৭ বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী এ স্কুল লুটেপুটে খাচ্ছে। সেজন্য এলাকাবাসী উনার পদত্যাগ চাইছে। ভাটিয়ারী এলাকার লোকজন সেখানে মিছিল নিয়ে গিয়েছিল, আমরাও তাদের সঙ্গে গিয়েছিলাম।’ কেউ জোর করে পদত্যাগ করায়নি দাবি করে তিনি বলেন, ‘উনি জনগণের চাপে পদত্যাগ করেছেন। ওনার দুর্নীতির বিচার করতে হবে।’

কান্তি লাল আচার্য্য বলেন, ‘গত ৬ এপ্রিল স্কুলের অ্যাডহক কমিটি বোর্ড থেকে অনুমোদন নেয়। কমিটির সভাপতি করা হয় মহিউদ্দিন

আহমেদকে। এটা নিয়ে স্থানীয় বিএনপির লোকজনের মধ্যে প্রতিক্রিয়া হয়। গত পহেলা বৈশাখে স্কুলের অনুষ্ঠান পণ্ড করে দেয়া হয়। বিষয়টি স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনও অবগত।

অ্যাডহক কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ থেকেই জোর করে পদত্যাগপত্রে সই নেয়া হয় দাবি করে তিনি বলেন, ‘সাধারণত কমিটির সভাপতি হিসেবে তিনজনের তালিকা দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে পাঠাই। পরে সেটি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে শিক্ষাবোর্ড কার্যালয়ে পাঠানো হয়। বোর্ড থেকে একজনকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এখানে আমার করার কিছুই নাই।’

৩৫ বছর ধরে ওই স্কুলে শিক্ষকতা করে আসা বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষক কান্তি লাল বলেন, এভাবে জোর করে সই নিয়ে পদত্যাগ করানো দুঃখজনক। সংখ্যালঘু হওয়ায় সমস্যা বেশি করেছে এবং একই কারণে আমার এ অবস্থা করতে পেরেছে। আমি বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

স্কুলের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি ওই স্কুল এবং ওই শিক্ষকের সরাসরি ছাত্র। কী কারণে তারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, আমার বোধগম্য নয়। তারা তা-ব চালিয়ে এসব করেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি পরিচালনা কমিটির সভাপতি হয়েছি সেটা তারা হয়তো মানতে পারছে না। এটি অনেক পুরাতন স্কুল। আমি এখানকার প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের সদস্য সচিবও। তারা আমাকে বললে ওই শিক্ষকের সম্মান রক্ষার্থে আমি পদ ছেড়ে দিতাম।’

তদন্ত শুরু

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইলিয়াছ উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, ‘ওই শিক্ষক আমাকে অভিযোগ দিয়েছেন। ঘটনাটি তদন্ত করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ সীতাকু- উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো শিক্ষককে এভাবে যেন হ্যারাস করে পদত্যাগ করানো না হয়, সে ব্যাপারে সরকারি নির্দেশনা আছে। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সেটা প্রয়োজনে তদন্ত করে বিচার হবে। তিনি বলেন, ‘ওই স্কুলের ঘটনা জেনেছি। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এ ঘটনায় আইনগতভাবে যেটা করা দরকার, সেটা করা হবে।’

‘বাবার অপদস্ত দেখে ঘুমাতে পারছি না’

জোর করে পদত্যাগ করানো এবং তাকে ‘হেনস্তার’ ভিডিওর একটি অংশ ফেইসবুকে দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শিক্ষকের মেয়ে ভাবনা আচার্য্য। তিনি লিখেছেন, ‘জানেন, আমরা মেয়েরা বাবার অপদস্ত হওয়ার ভিডিও দেখে রাতে ঘুমাতে পারছিনা। ভাবুন উনি শিক্ষক নয় শুধু, উনি আমাদের বাবা। আপনার বাবার সঙ্গে এমন হলে আপনার কেমন লাগবে বলুন!’

ভাবনা আচার্য্য লিখেন, ‘স্কুলে ঝামেলা হওয়ার আগে বাবাকে মানা করা হয় যেতে। বলছিল, স্কুলে গেলে অপমান হতে হবে। বাবা সেই কথার উত্তরে বলেন, ‘আমি কোনো অন্যায় করিনি, আমার কোনো অপরাধ নেই। আমাকে পদ থেকে সরে যেতে বললে নির্দ্বিধায় আমি সরে যাবো। তবুও আমি স্কুলে যাব। আমি কেন পালিয়ে বেড়াবো। কেউ আমার অপরাধের প্রমাণ আনতে পারলে আনুক।’

হতাশার সুরে ভাবনা লেখেন, ‘কি সুন্দর তাই না! আমার বাবা কত মানুষকে ঘরে রেখে পড়িয়েছেন, কত মানুষকে টাকা ছাড়া পড়িয়েছেন, কত মানুষের ফি মওকুফ করেছেন। একজন শিক্ষকের এই পরিণতি! আমার বাবা অসুস্থ হয়ে গেছে বিশ্বাস করেন। আমার বাবা এবং আমরা কেউ মানতে পারছিনা যে একজন মানুষ ৩৫ বছর চাকরিরত থাকার পর তার এই পরিণতি। ভাবনা লেখেন, ‘একজন শিক্ষকের এই অপমান! পৃথিবীতে একমাত্র হীন জাতি আমরা, যারা পদে পদে শিক্ষকদের টার্গেট করে এই অপমানজনক পরিস্থিতি উপহার দিচ্ছি।’

back to top