বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমিতে ফেরাতে কাতারকে জোরালো ভূমিকায় দেখতে চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ওআইসিকে সক্রিয় করতে কাতার তাদের কূটনৈতিক প্রভাব কাজে লাগাতে পারে।
“আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-কৌশলগত বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে, কাতার জোরালোভাবে তাদের সংহতি প্রকাশ করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংকট সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে,” বলেন ইউনূস। তিনি আরও বলেন, “কাতার ওআইসি দেশগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তহবিল সংগ্রহ জোরদার ও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পক্ষে মত প্রকাশের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।”
বুধবার কাতারের দোহায় আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে এক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি। ‘বাধ্যতামূলকভাবে বাস্তুচ্যুত জনগণের সামাজিক ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ-রোহিঙ্গা ইস্যু’ শীর্ষক এই বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী অবস্থান বাংলাদেশের জন্য ব্যাপক চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। ক্যাম্পগুলোতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি ও অবৈধ অভিবাসনের চেষ্টায় তাদের হতাশার স্পষ্ট চিহ্ন রয়েছে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, এই সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে তা পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়ন কার্যক্রমের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশ্বের অন্যান্য সংকটের কারণে রোহিঙ্গা ইস্যু থেকে আন্তর্জাতিক মনোযোগ ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে বলেও আক্ষেপ জানান তিনি।
বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১৯ মার্চ পর্যন্ত ৮ লাখ ২৯ হাজার ৩৬ জন রোহিঙ্গার তালিকা দাখিল করা হয়েছে, যার মধ্যে মিয়ানমার সরকার ২ লাখ ৩৯ হাজার ৫৬ জনকে যাচাই করেছে এবং ১ লাখ ৭৬ হাজার ১৯৮ জনকে ‘মিয়ানমারে বসবাসকারী ব্যক্তি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশ টেকসই প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে। এ বছরের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নিউ ইয়র্কে রোহিঙ্গা ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন হবে, যেখানে কাতারের উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ।
তিনি কাতার ফাউন্ডেশনকে এই বৈঠকের আয়োজন এবং নীতিগত বিবৃতির বাইরে গিয়ে বাস্তবসম্মত সমাধান, জবাবদিহিতা ও সংহতির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান।
ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নৃশংসতার বিষয়ে আইসিজে, আইসিসি ও আইআইএমএম-এর চলমান উদ্যোগগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “জাতিসংঘ এবং রোম সংবিধির সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের কোনোভাবেই শাস্তি এড়ানো উচিত নয়।”
মানবতা, স্থিতিশীলতা ও ন্যায়বিচারের জন্য বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আসুন আমরা নিশ্চিত করি, আজকের আলোচনা শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে একটি অর্থবহ অংশীদারিত্বের সূচনা করে যা রোহিঙ্গা সংকটকে আমাদের যৌথ মানবিক অগ্রাধিকারগুলোর শীর্ষে রাখে এবং একটি স্থায়ী সমাধানের দিকে একযোগে কাজ করে।”
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমিতে ফেরাতে কাতারকে জোরালো ভূমিকায় দেখতে চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ওআইসিকে সক্রিয় করতে কাতার তাদের কূটনৈতিক প্রভাব কাজে লাগাতে পারে।
“আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-কৌশলগত বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে, কাতার জোরালোভাবে তাদের সংহতি প্রকাশ করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংকট সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে,” বলেন ইউনূস। তিনি আরও বলেন, “কাতার ওআইসি দেশগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তহবিল সংগ্রহ জোরদার ও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পক্ষে মত প্রকাশের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।”
বুধবার কাতারের দোহায় আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে এক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি। ‘বাধ্যতামূলকভাবে বাস্তুচ্যুত জনগণের সামাজিক ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ-রোহিঙ্গা ইস্যু’ শীর্ষক এই বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী অবস্থান বাংলাদেশের জন্য ব্যাপক চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। ক্যাম্পগুলোতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি ও অবৈধ অভিবাসনের চেষ্টায় তাদের হতাশার স্পষ্ট চিহ্ন রয়েছে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, এই সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে তা পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়ন কার্যক্রমের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশ্বের অন্যান্য সংকটের কারণে রোহিঙ্গা ইস্যু থেকে আন্তর্জাতিক মনোযোগ ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে বলেও আক্ষেপ জানান তিনি।
বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১৯ মার্চ পর্যন্ত ৮ লাখ ২৯ হাজার ৩৬ জন রোহিঙ্গার তালিকা দাখিল করা হয়েছে, যার মধ্যে মিয়ানমার সরকার ২ লাখ ৩৯ হাজার ৫৬ জনকে যাচাই করেছে এবং ১ লাখ ৭৬ হাজার ১৯৮ জনকে ‘মিয়ানমারে বসবাসকারী ব্যক্তি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশ টেকসই প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে। এ বছরের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নিউ ইয়র্কে রোহিঙ্গা ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন হবে, যেখানে কাতারের উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ।
তিনি কাতার ফাউন্ডেশনকে এই বৈঠকের আয়োজন এবং নীতিগত বিবৃতির বাইরে গিয়ে বাস্তবসম্মত সমাধান, জবাবদিহিতা ও সংহতির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান।
ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নৃশংসতার বিষয়ে আইসিজে, আইসিসি ও আইআইএমএম-এর চলমান উদ্যোগগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “জাতিসংঘ এবং রোম সংবিধির সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের কোনোভাবেই শাস্তি এড়ানো উচিত নয়।”
মানবতা, স্থিতিশীলতা ও ন্যায়বিচারের জন্য বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আসুন আমরা নিশ্চিত করি, আজকের আলোচনা শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে একটি অর্থবহ অংশীদারিত্বের সূচনা করে যা রোহিঙ্গা সংকটকে আমাদের যৌথ মানবিক অগ্রাধিকারগুলোর শীর্ষে রাখে এবং একটি স্থায়ী সমাধানের দিকে একযোগে কাজ করে।”