alt

এলাকার কলেজে পড়লেই পারতে, গেটআউট: জবি শিক্ষার্থীকে রেজিস্ট্রার

রেজিস্ট্রারের পদত্যাগের আল্টিমেটাম শিক্ষার্থীদের, কুশপুত্তলিকা দাহ

প্রতিনিধি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) রেজিস্ট্রার অফিসে লিখিত অভিযোগ জানাতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। সাইকেল চুরির ঘটনায় নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানাতে গেলে রেজিস্ট্রার উত্তেজিত হয়ে শিক্ষার্থীকে তাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার শিকার সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, জবি শাখার সভাপতি ইভান তাহসীব।

গতকাল বুধবার শহীদ সাজিদ অ্যাকাডেমিক ভবনের গ্যারেজ থেকে সাইকেল চুরির ঘটনায় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে কয়েকজন শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ নিয়ে রেজিস্ট্রারের কক্ষে গেলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘গেট আউট, বের করে দাও ওকে!’ এমন অভিযোগ ইভান তাহসীবের।

এ দিকে রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার,(২৪ এপ্রিল) ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে এমন আল্টিমেটাম দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। মিছিল শেষে রেজিস্ট্রারের কুশপুত্তলিকাও দাহ করেন তারা।

গতকাল বুধবার রেজিস্ট্রার অফিসে লিখিত অভিযোগ জানাতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হওয়া শিক্ষার্থী ইভান তাহসীব জানান, ‘আমার এক ছোট ভাইয়ের সাইকেল চুরি হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের কাছে যাই। রেজিস্ট্রার শুরুতেই বলেন শহীদ সাজিদ ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ড গ্যারেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় নয়। অথচ অনেক শিক্ষার্থী টিউশনির টাকা দিয়ে সাইকেল কেনে এবং তা দিয়েই টিউশনি করে। নিরাপত্তা না দিতে চাইলে গ্যারেজ বন্ধ করে দেয়া হোক, অথবা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হোক যে বিশ্ববিদ্যালয় কোনো মালামালের দায়িত্ব নেবে না।’

এই প্রতিবেদকের হাতে আসা একটি অডিও ক্লিপে রেজিস্ট্রারকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের মালামালের নিরাপত্তা দিতে পারবো না। শিক্ষার্থীরা কী খাবে, কোথায় থাকবে এটা প্রশাসনের দায়িত্ব না।’ এমনকি তিনি বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন পড়তে আসো? এলাকায় কলেজে পড়লেই তো পারতে।’

রেজিস্ট্রারে এই মন্তব্য এবং আচরণ ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। রাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একের পর এক ফেইসবুক পোস্টে তারা রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ দাবি করেন। একই রাতে একটি ঝটিকা মিছিলও অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেন ‘রেজিস্ট্রারের গদিতে, আগুন জ্বালো একসাঙ্গে’, ‘স্বৈরাচারের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘এক দুই তিন চার, রেজিস্ট্রার গদি ছাড়’।

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তৌসিব মাহমুদ সোহান ফেইসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব যে রেজিস্ট্রার নিতে চায় না, সেই রেজিস্ট্রার শিক্ষার্থীদেরও প্রয়োজন নাই। জবি রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ চাই।’

নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী তাকরিম আহমেদ মন্তব্য করেন, ‘এরকম আচরণের একজন মানুষ কীভাবে প্রশাসনে আছে, বুঝে পাই না। সব সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে আসছে। এরকম একজনকে আমাদের গার্ডিয়ান হিসেবে চাই না।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র নওশীন নওয়ার জয়া জানান, ‘ছয় মাস আগে হল ও আবাসন সংক্রান্ত বিষয়ে রেজিস্ট্রারের কাছে গিয়ে একই রকম অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছি। তার অস্বাভাবিক আচরণে রেজিস্ট্রার অফিসে আর যেতে ইচ্ছা করে না।’

ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি এ কে এম রাকিব বলেন, ‘রেজিস্ট্রার মহোদয়ের দাম্ভিকতার পরিচয় আমরা আগেই পেয়েছি। আজ তিনি শিক্ষার্থীদের হেনস্তা করে নিজের ক্ষমতার দম্ভ দেখিয়েছেন।’

জবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক মাসুদ রানা লিখেছেন, ‘রেজিস্ট্রার সাহেব, শেখ হাসিনা হয়ে উঠার চেষ্টা করবেন না। আপনি যা করেছেন এটা ক্ষমার অযোগ্য। আপনাকে আর প্রশাসনে দেখতে চাই না।’

এ ঘটনায় রেজিস্ট্রারের বক্তব্য জানতে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সে ঘটনার জের হিসেবে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্ত চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক ঘুরে রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে অবস্থান নিয়ে তারা কুশপুত্তলিকায় আগুন দেন এবং ‘দালালের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘এক দুই তিন চার, রেজিস্ট্রার গদি ছাড়’, ‘জ্বালো রে জালো, আগুন জ্বালো’, ‘রেজিস্ট্রারের গদিতে আগুন জ্বালো একসাঙ্গে’, ‘কুয়েট থেকে শিক্ষা নে, রেজিস্ট্রার পদ ছাইড়া দে’- এরকম বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

বিক্ষোভ সমাবেশে শাহীন মিয়া নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, তিনি শুধু বৃহস্পতিবারই না, এই রকম অসংখ্য ঘটনা ঘটিয়েছেন। তার প্রমাণ আমরা নিজে। আপনি ক্লাসরুমে ছিলেন, সম্মান নিয়ে ফিরে যান, যদি সম্মান নিয়ে ফিরে না যান তাহলে আমরা টেনে হিঁচড়ে নামাবো।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জবি শাখার আহ্বায়ক মাসুদ রানা বলেন, ‘৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত ক্যাম্পাস চেয়েছি। কিন্তু এখন আবারও কিছু শিক্ষকরা ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠছেন। ....আমার মনে হচ্ছে, শেখ হাসিনা ভারত থেকে শিক্ষকদের মদদ দিচ্ছেন। তেমনই একজন শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন। ওনার অফিসে গেলে উনি অসন্তুষ্ট হয়ে যান। সময় থাকতে সাবধান হোন। আপনি তাড়াতাড়ি ক্লাসে ফিরে যান। ....আমরা এই রকম বদমেজাজি রেজিস্ট্রার পদে কাউকেই চাই না।’

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম সদস্য সচিব কিশোর সাম্য বলেন, প্রশাসনের কাছে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা প্রত্যাশা থাকে। কিন্তু যখন কোনো শিক্ষার্থী প্রশাসনের কাছে এই সহযোগিতা পায় না, তখন তার আর ওই পদে থাকা মানায় না। আমরা কলোনিয়ানিস বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে চাই না। মেরুদ- সম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় চাই। এত সময় পার হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ক্ষমা চায় নাই। তাতেই প্রকাশ পায় এই প্রশাসন মেরদন্ডহীন।’

শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি একেএম রাকিব বলেন, ‘বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অযোগ্য ব্যক্তিদের বসানো। উনি ভুলে গেছেন এই বাংলাদেশে ক্ষমতা দেখানোর কিছু নাই।’

তিনি হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রেজিস্ট্রারকে অব্যাহতি দিতে হবে। যদি এর মধ্যে যদি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে এবং এর মধ্যে কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে তাহলে এর দায় প্রশাসনকেই নিতে হবে।’

ছবি

ট্রাইব্যুনালে তাজুল ইসলাম: হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা

ছবি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ: চট্টগ্রামের সাবেক পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলামকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ

ছবি

জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান ঘিরে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক

ছবি

হজ নিবন্ধনের সময়সীমা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে

ছবি

মানবতাবিরোধী অপরাধ: ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন ৮ জানুয়ারি

ছবি

ইতালি সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

দুর্নীতিবাজদের নির্বাচনে মনোনয়ন না দেয়ার আহ্বান দুদক চেয়ারম্যানের

ছবি

ডেঙ্গু: আরও ৮৪১ জন হাসপাতালে ভর্তি, মৃত্যু ৫ জনের

ছবি

অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের সেনা হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত ‘বৈষম্যমূলক ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী’: টিআইবি

ছবি

পদ্মায় মা ইলিশ শিকারের মহোৎসব

ছবি

বুধবার থেকে অনলাইনে জামিননামা, এক ক্লিকে পৌঁছে যাবে জেলখানায়

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা: ৫ মাসের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল

ছবি

ট্রাইব্যুনাল: হানিফসহ চারজনকে হাজির হতে বিজ্ঞপ্তির নির্দেশ

ছবি

মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় শেখ হাসিনার ‘কমান্ড রেসনসিবিলিটি’ প্রমাণিত হয়েছে দাবি প্রসিকিউশনের

ছবি

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২৬১ জনকে আদালতে হাজিরের নির্দেশ

ছবি

এক দিনে ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, এ বছর প্রাণহানি ২৩৮

ছবি

অনলাইনে বেলবন্ড গ্রহণপ্রক্রিয়া পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হচ্ছে বুধবার

ছবি

বেতনভাতার দাবিতে শিক্ষকদের অবস্থান তৃতীয় দিনে, দুপুরে ‘মার্চ টু সচিবালয়’

ছবি

বাংলাদেশে জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচারে ক্রিকইনফো বন্ধের প্রস্তাব তুললেন তৈয়্যব

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৮৫৭ জন হাসপাতালে, মৃত্যু ৩

ছবি

নভেম্বরেই গণভোট চায় জামায়াত, সরকার সিদ্ধান্ত নিলে বাস্তবায়ন করবে ইসি

ছবি

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল বৃহস্পতিবার

ছবি

সাত কলেজ নিয়ে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’র খসড়া: পক্ষে-বিপক্ষে শিক্ষার্থীরা

ছবি

ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িক কারাগার ঘোষণা করেছে সরকার

ছবি

ঢাকা সেনানিবাসের ভবনকে ‘অস্থায়ী কারাগার’ ঘোষণা

ছবি

একই দিনে একই প্রশ্নে মেডিকেল ও ডেন্টালের ভর্তি পরীক্ষা ১২ ডিসেম্বর

ছবি

শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা রাতে সড়কে অবস্থান করছেন

ছবি

মিরপুর ছেড়ে গুলশানের ভোটার হলেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

রাতের অন্ধকারে ভোট চাই না: সিইসি

ছবি

ঢাবি ছাত্রীকে ‘মারধর’: কারণ জানতে চাইলো আদালত, যা বললেন পরিচালক

ছবি

আগের তিন নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারীদের এবার বিরত রাখা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

বিচারকদেরও জবাবদিহির ব্যবস্থা থাকা দরকার: অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

ছবি

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক শুরু, ফেইসবুক পেইজে সাইবার হামলার ‘অভিযোগ’ তাজুলের

ছবি

আটক বললে অবশ্যই ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে আদালতে আনতে হবে: চিফ প্রসিকিউটর

ছবি

প্রধান উপদেষ্টা রোমে পৌঁছেছেন

ছবি

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা: “আমার ছেলেমেয়েরা সবাই দেশে, আমি একা সেফ এক্সিট নিয়ে কী করব”

tab

এলাকার কলেজে পড়লেই পারতে, গেটআউট: জবি শিক্ষার্থীকে রেজিস্ট্রার

রেজিস্ট্রারের পদত্যাগের আল্টিমেটাম শিক্ষার্থীদের, কুশপুত্তলিকা দাহ

প্রতিনিধি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) রেজিস্ট্রার অফিসে লিখিত অভিযোগ জানাতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। সাইকেল চুরির ঘটনায় নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানাতে গেলে রেজিস্ট্রার উত্তেজিত হয়ে শিক্ষার্থীকে তাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার শিকার সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, জবি শাখার সভাপতি ইভান তাহসীব।

গতকাল বুধবার শহীদ সাজিদ অ্যাকাডেমিক ভবনের গ্যারেজ থেকে সাইকেল চুরির ঘটনায় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে কয়েকজন শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ নিয়ে রেজিস্ট্রারের কক্ষে গেলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘গেট আউট, বের করে দাও ওকে!’ এমন অভিযোগ ইভান তাহসীবের।

এ দিকে রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার,(২৪ এপ্রিল) ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে এমন আল্টিমেটাম দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। মিছিল শেষে রেজিস্ট্রারের কুশপুত্তলিকাও দাহ করেন তারা।

গতকাল বুধবার রেজিস্ট্রার অফিসে লিখিত অভিযোগ জানাতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হওয়া শিক্ষার্থী ইভান তাহসীব জানান, ‘আমার এক ছোট ভাইয়ের সাইকেল চুরি হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের কাছে যাই। রেজিস্ট্রার শুরুতেই বলেন শহীদ সাজিদ ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ড গ্যারেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় নয়। অথচ অনেক শিক্ষার্থী টিউশনির টাকা দিয়ে সাইকেল কেনে এবং তা দিয়েই টিউশনি করে। নিরাপত্তা না দিতে চাইলে গ্যারেজ বন্ধ করে দেয়া হোক, অথবা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হোক যে বিশ্ববিদ্যালয় কোনো মালামালের দায়িত্ব নেবে না।’

এই প্রতিবেদকের হাতে আসা একটি অডিও ক্লিপে রেজিস্ট্রারকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের মালামালের নিরাপত্তা দিতে পারবো না। শিক্ষার্থীরা কী খাবে, কোথায় থাকবে এটা প্রশাসনের দায়িত্ব না।’ এমনকি তিনি বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন পড়তে আসো? এলাকায় কলেজে পড়লেই তো পারতে।’

রেজিস্ট্রারে এই মন্তব্য এবং আচরণ ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। রাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একের পর এক ফেইসবুক পোস্টে তারা রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ দাবি করেন। একই রাতে একটি ঝটিকা মিছিলও অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেন ‘রেজিস্ট্রারের গদিতে, আগুন জ্বালো একসাঙ্গে’, ‘স্বৈরাচারের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘এক দুই তিন চার, রেজিস্ট্রার গদি ছাড়’।

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তৌসিব মাহমুদ সোহান ফেইসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব যে রেজিস্ট্রার নিতে চায় না, সেই রেজিস্ট্রার শিক্ষার্থীদেরও প্রয়োজন নাই। জবি রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ চাই।’

নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী তাকরিম আহমেদ মন্তব্য করেন, ‘এরকম আচরণের একজন মানুষ কীভাবে প্রশাসনে আছে, বুঝে পাই না। সব সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে আসছে। এরকম একজনকে আমাদের গার্ডিয়ান হিসেবে চাই না।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র নওশীন নওয়ার জয়া জানান, ‘ছয় মাস আগে হল ও আবাসন সংক্রান্ত বিষয়ে রেজিস্ট্রারের কাছে গিয়ে একই রকম অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছি। তার অস্বাভাবিক আচরণে রেজিস্ট্রার অফিসে আর যেতে ইচ্ছা করে না।’

ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি এ কে এম রাকিব বলেন, ‘রেজিস্ট্রার মহোদয়ের দাম্ভিকতার পরিচয় আমরা আগেই পেয়েছি। আজ তিনি শিক্ষার্থীদের হেনস্তা করে নিজের ক্ষমতার দম্ভ দেখিয়েছেন।’

জবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক মাসুদ রানা লিখেছেন, ‘রেজিস্ট্রার সাহেব, শেখ হাসিনা হয়ে উঠার চেষ্টা করবেন না। আপনি যা করেছেন এটা ক্ষমার অযোগ্য। আপনাকে আর প্রশাসনে দেখতে চাই না।’

এ ঘটনায় রেজিস্ট্রারের বক্তব্য জানতে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সে ঘটনার জের হিসেবে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্ত চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক ঘুরে রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে অবস্থান নিয়ে তারা কুশপুত্তলিকায় আগুন দেন এবং ‘দালালের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘এক দুই তিন চার, রেজিস্ট্রার গদি ছাড়’, ‘জ্বালো রে জালো, আগুন জ্বালো’, ‘রেজিস্ট্রারের গদিতে আগুন জ্বালো একসাঙ্গে’, ‘কুয়েট থেকে শিক্ষা নে, রেজিস্ট্রার পদ ছাইড়া দে’- এরকম বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

বিক্ষোভ সমাবেশে শাহীন মিয়া নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, তিনি শুধু বৃহস্পতিবারই না, এই রকম অসংখ্য ঘটনা ঘটিয়েছেন। তার প্রমাণ আমরা নিজে। আপনি ক্লাসরুমে ছিলেন, সম্মান নিয়ে ফিরে যান, যদি সম্মান নিয়ে ফিরে না যান তাহলে আমরা টেনে হিঁচড়ে নামাবো।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জবি শাখার আহ্বায়ক মাসুদ রানা বলেন, ‘৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত ক্যাম্পাস চেয়েছি। কিন্তু এখন আবারও কিছু শিক্ষকরা ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠছেন। ....আমার মনে হচ্ছে, শেখ হাসিনা ভারত থেকে শিক্ষকদের মদদ দিচ্ছেন। তেমনই একজন শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন। ওনার অফিসে গেলে উনি অসন্তুষ্ট হয়ে যান। সময় থাকতে সাবধান হোন। আপনি তাড়াতাড়ি ক্লাসে ফিরে যান। ....আমরা এই রকম বদমেজাজি রেজিস্ট্রার পদে কাউকেই চাই না।’

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম সদস্য সচিব কিশোর সাম্য বলেন, প্রশাসনের কাছে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা প্রত্যাশা থাকে। কিন্তু যখন কোনো শিক্ষার্থী প্রশাসনের কাছে এই সহযোগিতা পায় না, তখন তার আর ওই পদে থাকা মানায় না। আমরা কলোনিয়ানিস বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে চাই না। মেরুদ- সম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় চাই। এত সময় পার হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ক্ষমা চায় নাই। তাতেই প্রকাশ পায় এই প্রশাসন মেরদন্ডহীন।’

শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি একেএম রাকিব বলেন, ‘বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অযোগ্য ব্যক্তিদের বসানো। উনি ভুলে গেছেন এই বাংলাদেশে ক্ষমতা দেখানোর কিছু নাই।’

তিনি হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রেজিস্ট্রারকে অব্যাহতি দিতে হবে। যদি এর মধ্যে যদি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে এবং এর মধ্যে কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে তাহলে এর দায় প্রশাসনকেই নিতে হবে।’

back to top