সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মিছিল -সংবাদ
সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ বাতিল না হলে মঙ্গলবার সচিবালয়ের বাদামতলায় বড় জমায়েতের ডাক দিয়েছেন সচিবালয় কর্মকর্তা কর্মচারী ঐক্য ফোরামের নেতারা। তারা অধ্যাদেশ পর্যালোচনার নামে ‘শাপলুডু’ খেলা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তারা প্রস্তাবিত বাজেটের ‘বিশেষ সুবিধা’কে ‘ফাঁকিবাজি ভাতা’ অভিহিত করে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
কর্মচারী নেতারা সোমবার,(১৬ জুন ২০২৬) জনপ্রশাসন ও মন্ত্রিপরিষদের নতুন ভবনের নিচে আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে এ কথা বলেন।
অধ্যাদেশ পর্যালোচনার নামে ‘শাপলুডু খেলা’ বন্ধের দাবি
বাজেটের ‘বিশেষ সুবিধা’কে ‘ফাঁকিবাজি ভাতা’ অভিহিত করে তা প্রত্যাখ্যান
কিছু ক্ষেত্রে চাকরি অধ্যাদেশ ‘পুনর্বিবেচনার সুযোগ আছে’ আইন উপদেষ্টা
এ সময় ঐক্য ফোরামের কো-মহাসচিব মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘আগামীকাল (আজ) থেকে প্রতিটি মন্ত্রণালয় থেকে পৃথক মিছিল নিয়ে আসবেন। উপদেষ্টা দপ্তর, সচিবের দপ্তর এবং প্রশাসন শাখা থেকে পৃথক পৃথক মিছিল নিয়ে আসবেন। দরকার হলে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে আসবেন। বলবেন- এখানে আয় ব্যাটা। বাদাম তলায় বেলা ১১টায় মিলিত হবেন।’
এ ব্যাপারে আইন উপদেষ্টার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘আইন উপদেষ্টা মন্তব্য করলেন যে, আইন পাস হওয়ার সময় তিনি দেশের বাইরে ছিলেন। এমনভাবে মন্তব্য করলেন যে, আমি যদি থাকতাম এই আইন বাস্তবায়ন হতো না। চেয়ারে বসে বড় বড় কথা বলেন, উল্টাপাল্টা কথা বলেন। দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করেন। আপনাদের উদ্দেশ্য কী?’
আইন উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম আরও বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকার চলে যাওয়ার পর গত ১০ মাসে আমাদের মাঝে কোনো অনিয়ম খুঁজে পায়নি। তার পরেও আমাদের মনে আগুন জ্বালানোর অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে?’
অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরেও ‘ফ্যাসিস্ট’ রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা মস্তান নই। রাজপথে গলা ফাটানোর লোক আমরা নই। আমাদের কেন অশান্ত করলেন? আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার এক দিনে ফ্যাসিস্ট হয় নাই। এই সরকারের ভেতরেও ফ্যাসিস্ট আছে, আমরা কিন্তু চিনি। শুধু এসবি, এনএসআই, ডিজিএফআই চেনে, ব্যাপারটি এমন নয়। আমরাও কিন্তু চিনি। আপনাদের মন-মানসিকতা আমরা বুঝি।’
কোরবানির ঈদ উদযাপন করা হয়েছে গত ৭ জুন। ঈদের আগে ৫ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত টানা ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করে সরকার। ছুটির পর গতকাল রোববার কর্মচারীদের কোনো কর্মসূচি ছিল না। ওইদিন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম জানিয়েছিলেন সবার সঙ্গে আলোচনা করে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করা হবে।
উপদেষ্টা পরিষদ গত ২২ মে সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ আকারে জারি করার প্রস্তাব অনুমোদন করে। এর প্রতিবাদে ২৪ মে থেকে দিনভর সচিবালয়ে বিক্ষোভ করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের আপত্তির মধ্যেই গত ২৫ মে রাতে অধ্যাদেশ জারি করা হয়। নতুন ধারায় কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে দুই দফায় সাত দিন করে নোটিসের পর, দায়ী হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা রাখার বিধান রাখা হয়েছে।
‘লাপলুডু খেলা’ বন্ধের দাবি:
‘বিভিন্ন ক্যাডার সার্ভিস’ ইতোমধ্যেই আন্দোলনে নেমে গেছে দাবি করে ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার আমাদের সঙ্গে সাপলুডু খেলা খেলতেছে। আমরা মহার্ঘ্য ভাতা, পদবি পরিবর্তন, সচিবালয় ভাতা চেয়েছিলাম। এর উত্তরে এলো অভিন্ন নিয়োগবিধি। সেটা আমরা থামাইলাম। এর মাঝে আবার গোপনে গোপনে নিয়ে এলো কালো অধ্যাদেশ।’
অন্তর্বর্তী সরকারের ‘এই ধরনের’ অধ্যাদেশ করার কোনো অধিকার নেই জানিয়ে নুরুল ইসলাম বলেন, ‘এই মুহূর্তে এই ধরনের অধ্যাদেশের অধিকার তাদের নেই। আমরা ধিক্কার জানাই। যারা এর সঙ্গে যুক্ত ছিল আমরা তাদের ধিক্কার জানাই। এই সাপলুডুর খেলা বন্ধ করতে হবে।’
এই অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি জানিয়ে কর্মকর্তা কর্মচারী ঐক্য ফোরামের আরেক কো-চেয়ারম্যান বাদিউল কবীর বলেন, ‘সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আচরণ খুবই পরিশীলিত এবং তারা খুবই আনুগত্যপরায়ণ। তাদের অহেতুক, অন্যায় ও নিবর্তনমূলক অধ্যাদেশের মাধ্যমে খেপিয়ে তোলার ব্যবস্থা করছেন। আপানারা কোনো টালবাহানা না করে এই আইন প্রত্যাহার করুণ।’
বাজেটের ‘বিশেষ সুবিধা’ প্রত্যাখ্যান:
কর্মচারীদের আন্দোলন চলার মধ্যে গত ২ জুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ‘বিশেষ সুবিধার’ ঘোষণা আসে। কর্মচারীদের মূল বেতনের ওপর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ‘বিশেষ সুবিধা’ দিয়ে পরের দিন অর্থ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করে।
এই ‘বিশেষ সুবিধা’ প্রত্যাখ্যান করে কর্মচারী নেতা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বিশেষ সুবিধা ভাতার নামে একটা ফাঁকিবাজি ভাতা দিয়েছে সরকার। এটা বিশেষ সুবিধা নয়, এটা বিশেষ প্রতারণা। আমরা এই বিশেষ প্রতারণা মেনে নেব না। আমাদের কথায় গুরুত্ব না দিলে বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ ডাকতে বাধ্য হব।’
মন্ত্রিপরিষদ ভবনের নিচে মিছিল ও সমাবেশ শেষে কর্মচারীরা গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের দপ্তরে স্মারকলিপি দেন।
কিছু ক্ষেত্রে চাকরি অধ্যাদেশ ‘পুনর্বিবেচনার সুযোগ আছে’: আইন উপদেষ্টা
যেসব ধারায় সরকারি চাকরিজীবীরা ‘বিড়ম্বনা বা হয়রানির শিকার’ হতে পারেন, সে জায়গাগুলোতে সরকারি চাকরি আইন সংশোধন অধ্যাদেশ পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
তিনি সোমবার সচিবালয়ে একটি বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানিয়ে বলেন, এদিন মন্ত্রিপরিষদ গঠিত কমিটি বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বসছে, সেখানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া উপদেষ্টা আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘সরকারি কর্মচারী আইনের অবশ্যই পুনর্বিবেচনার অবকাশ রয়েছে। আমি তখন বিদেশে ছিলাম। আইনটা প্রণয়নের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলাম না। পরবর্তীতে যখন আইনটা দেখেছি, আমার কাছে মনে হয়েছে কিছু কিছু জায়গাকে পুনর্বিবেচনার স্কোপ রয়েছে।’
সরকার কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে আইনটি করেনি দাবি করে তিনি বলেন, ‘তবুও আইন যাদের জন্য তারা হয়তো এই আইন দ্বারা বিড়ম্বনা বা হয়রানির শিকার হতে পারে। এ রকম সম্ভাবনা থাকতে পারে বলে স্বীকার করি। এটা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটা আইন। যে কোনো অধ্যাদেশ আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জারি হয়। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয় এটা করেনি।’
আন্দোলনরতদের সরকারি কাজে বিঘ্ন না ঘটানোর অনুরোধ জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘একটা রিপোর্ট উপদেষ্টা পরিষদে সুপারিশ আকারে তুলবো। কর্মচারী ভাইদের কাছে অনুরোধ করবো আপনারা একটু ধৈর্য ধরে কর্মসূচি দিন। আমাদের কাজ যদি আপনাদের পছন্দ না হয় তখন কর্মসূচি দিয়েন। সচিবালয়ের কাজে যাতে বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়। আপনারা বিবৃতি দিতে চাইলে বিবৃতি দেন। চাইলে আমাদের সঙ্গে মিটিং করেন। কিন্তু সরকারি কাজে যেন ব্যাঘাত সৃষ্টি না হয়।’
গত ৪ জুন আইন উপদেষ্টাকে প্রধান করে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনায় একটি কমিটি করা হয়। এই কমিটিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদকে সদস্য রাখা হয়েছে। এছাড়া ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব ও পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা সচিব এই কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন।
অধ্যাদেশে যা আছে:
‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ এর ‘আচরণ বা দণ্ড সংক্রান্ত’ বিশেষ বিধানে বলা হয়েছে কেউ যদি এমন কাজ করে যা অনানুগত্যের শামিল এবং যা অন্য কর্মচারীদের মাঝে অনানুগত্য সৃষ্টি করতে পারে বা শৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটাতে পারে বা অন্যের কর্তব্য পালনে বাধার সৃষ্টি করতে পারে;
এককভাবে বা সম্মিলিতভাবে ছুটি ব্যতীত কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে। কাউকে কর্মবিরতিতে বাধ্য বা উস্কানি দেওয়া, অন্য কর্মচারীকে কাজে বাধা দেওয়া হলে;
কোনো কর্মচারীকে তার কর্মস্থলে আসতে বা কাজ করতে বাধা দেওয়া হলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ হবে।
এসব অপরাধের শাস্তি হিসেবে পদাবনতি বা গ্রেড অবনতি, চাকরি থেকে অপসারণ কিংবা চাকরি থেকে বরখাস্ত করার বিধান রাখা হয়েছে।
এসব অসদাচরণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযোগ গঠন, সাত দিনের সময় দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিস, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কারণ জানিয়ে জবাব না দিলে আবার সাত দিনের নোটিস দেওয়ার পর তা বিবেচনা করে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে। তবে অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর আপিল রাখার সুযোগ রয়েছে। দণ্ডের নোটিস হাতে পাওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করা যাবে। এই অধ্যাদেশকে আন্দোলনকারীরা বলছেন ‘নিবর্তনমূলক কালো আইন’।
সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মিছিল -সংবাদ
সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫
সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ বাতিল না হলে মঙ্গলবার সচিবালয়ের বাদামতলায় বড় জমায়েতের ডাক দিয়েছেন সচিবালয় কর্মকর্তা কর্মচারী ঐক্য ফোরামের নেতারা। তারা অধ্যাদেশ পর্যালোচনার নামে ‘শাপলুডু’ খেলা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তারা প্রস্তাবিত বাজেটের ‘বিশেষ সুবিধা’কে ‘ফাঁকিবাজি ভাতা’ অভিহিত করে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
কর্মচারী নেতারা সোমবার,(১৬ জুন ২০২৬) জনপ্রশাসন ও মন্ত্রিপরিষদের নতুন ভবনের নিচে আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে এ কথা বলেন।
অধ্যাদেশ পর্যালোচনার নামে ‘শাপলুডু খেলা’ বন্ধের দাবি
বাজেটের ‘বিশেষ সুবিধা’কে ‘ফাঁকিবাজি ভাতা’ অভিহিত করে তা প্রত্যাখ্যান
কিছু ক্ষেত্রে চাকরি অধ্যাদেশ ‘পুনর্বিবেচনার সুযোগ আছে’ আইন উপদেষ্টা
এ সময় ঐক্য ফোরামের কো-মহাসচিব মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘আগামীকাল (আজ) থেকে প্রতিটি মন্ত্রণালয় থেকে পৃথক মিছিল নিয়ে আসবেন। উপদেষ্টা দপ্তর, সচিবের দপ্তর এবং প্রশাসন শাখা থেকে পৃথক পৃথক মিছিল নিয়ে আসবেন। দরকার হলে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে আসবেন। বলবেন- এখানে আয় ব্যাটা। বাদাম তলায় বেলা ১১টায় মিলিত হবেন।’
এ ব্যাপারে আইন উপদেষ্টার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘আইন উপদেষ্টা মন্তব্য করলেন যে, আইন পাস হওয়ার সময় তিনি দেশের বাইরে ছিলেন। এমনভাবে মন্তব্য করলেন যে, আমি যদি থাকতাম এই আইন বাস্তবায়ন হতো না। চেয়ারে বসে বড় বড় কথা বলেন, উল্টাপাল্টা কথা বলেন। দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করেন। আপনাদের উদ্দেশ্য কী?’
আইন উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম আরও বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকার চলে যাওয়ার পর গত ১০ মাসে আমাদের মাঝে কোনো অনিয়ম খুঁজে পায়নি। তার পরেও আমাদের মনে আগুন জ্বালানোর অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে?’
অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরেও ‘ফ্যাসিস্ট’ রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা মস্তান নই। রাজপথে গলা ফাটানোর লোক আমরা নই। আমাদের কেন অশান্ত করলেন? আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার এক দিনে ফ্যাসিস্ট হয় নাই। এই সরকারের ভেতরেও ফ্যাসিস্ট আছে, আমরা কিন্তু চিনি। শুধু এসবি, এনএসআই, ডিজিএফআই চেনে, ব্যাপারটি এমন নয়। আমরাও কিন্তু চিনি। আপনাদের মন-মানসিকতা আমরা বুঝি।’
কোরবানির ঈদ উদযাপন করা হয়েছে গত ৭ জুন। ঈদের আগে ৫ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত টানা ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করে সরকার। ছুটির পর গতকাল রোববার কর্মচারীদের কোনো কর্মসূচি ছিল না। ওইদিন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম জানিয়েছিলেন সবার সঙ্গে আলোচনা করে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করা হবে।
উপদেষ্টা পরিষদ গত ২২ মে সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ আকারে জারি করার প্রস্তাব অনুমোদন করে। এর প্রতিবাদে ২৪ মে থেকে দিনভর সচিবালয়ে বিক্ষোভ করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের আপত্তির মধ্যেই গত ২৫ মে রাতে অধ্যাদেশ জারি করা হয়। নতুন ধারায় কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে দুই দফায় সাত দিন করে নোটিসের পর, দায়ী হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা রাখার বিধান রাখা হয়েছে।
‘লাপলুডু খেলা’ বন্ধের দাবি:
‘বিভিন্ন ক্যাডার সার্ভিস’ ইতোমধ্যেই আন্দোলনে নেমে গেছে দাবি করে ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার আমাদের সঙ্গে সাপলুডু খেলা খেলতেছে। আমরা মহার্ঘ্য ভাতা, পদবি পরিবর্তন, সচিবালয় ভাতা চেয়েছিলাম। এর উত্তরে এলো অভিন্ন নিয়োগবিধি। সেটা আমরা থামাইলাম। এর মাঝে আবার গোপনে গোপনে নিয়ে এলো কালো অধ্যাদেশ।’
অন্তর্বর্তী সরকারের ‘এই ধরনের’ অধ্যাদেশ করার কোনো অধিকার নেই জানিয়ে নুরুল ইসলাম বলেন, ‘এই মুহূর্তে এই ধরনের অধ্যাদেশের অধিকার তাদের নেই। আমরা ধিক্কার জানাই। যারা এর সঙ্গে যুক্ত ছিল আমরা তাদের ধিক্কার জানাই। এই সাপলুডুর খেলা বন্ধ করতে হবে।’
এই অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি জানিয়ে কর্মকর্তা কর্মচারী ঐক্য ফোরামের আরেক কো-চেয়ারম্যান বাদিউল কবীর বলেন, ‘সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আচরণ খুবই পরিশীলিত এবং তারা খুবই আনুগত্যপরায়ণ। তাদের অহেতুক, অন্যায় ও নিবর্তনমূলক অধ্যাদেশের মাধ্যমে খেপিয়ে তোলার ব্যবস্থা করছেন। আপানারা কোনো টালবাহানা না করে এই আইন প্রত্যাহার করুণ।’
বাজেটের ‘বিশেষ সুবিধা’ প্রত্যাখ্যান:
কর্মচারীদের আন্দোলন চলার মধ্যে গত ২ জুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ‘বিশেষ সুবিধার’ ঘোষণা আসে। কর্মচারীদের মূল বেতনের ওপর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ‘বিশেষ সুবিধা’ দিয়ে পরের দিন অর্থ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করে।
এই ‘বিশেষ সুবিধা’ প্রত্যাখ্যান করে কর্মচারী নেতা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বিশেষ সুবিধা ভাতার নামে একটা ফাঁকিবাজি ভাতা দিয়েছে সরকার। এটা বিশেষ সুবিধা নয়, এটা বিশেষ প্রতারণা। আমরা এই বিশেষ প্রতারণা মেনে নেব না। আমাদের কথায় গুরুত্ব না দিলে বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ ডাকতে বাধ্য হব।’
মন্ত্রিপরিষদ ভবনের নিচে মিছিল ও সমাবেশ শেষে কর্মচারীরা গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের দপ্তরে স্মারকলিপি দেন।
কিছু ক্ষেত্রে চাকরি অধ্যাদেশ ‘পুনর্বিবেচনার সুযোগ আছে’: আইন উপদেষ্টা
যেসব ধারায় সরকারি চাকরিজীবীরা ‘বিড়ম্বনা বা হয়রানির শিকার’ হতে পারেন, সে জায়গাগুলোতে সরকারি চাকরি আইন সংশোধন অধ্যাদেশ পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
তিনি সোমবার সচিবালয়ে একটি বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানিয়ে বলেন, এদিন মন্ত্রিপরিষদ গঠিত কমিটি বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বসছে, সেখানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া উপদেষ্টা আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘সরকারি কর্মচারী আইনের অবশ্যই পুনর্বিবেচনার অবকাশ রয়েছে। আমি তখন বিদেশে ছিলাম। আইনটা প্রণয়নের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলাম না। পরবর্তীতে যখন আইনটা দেখেছি, আমার কাছে মনে হয়েছে কিছু কিছু জায়গাকে পুনর্বিবেচনার স্কোপ রয়েছে।’
সরকার কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে আইনটি করেনি দাবি করে তিনি বলেন, ‘তবুও আইন যাদের জন্য তারা হয়তো এই আইন দ্বারা বিড়ম্বনা বা হয়রানির শিকার হতে পারে। এ রকম সম্ভাবনা থাকতে পারে বলে স্বীকার করি। এটা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটা আইন। যে কোনো অধ্যাদেশ আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জারি হয়। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয় এটা করেনি।’
আন্দোলনরতদের সরকারি কাজে বিঘ্ন না ঘটানোর অনুরোধ জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘একটা রিপোর্ট উপদেষ্টা পরিষদে সুপারিশ আকারে তুলবো। কর্মচারী ভাইদের কাছে অনুরোধ করবো আপনারা একটু ধৈর্য ধরে কর্মসূচি দিন। আমাদের কাজ যদি আপনাদের পছন্দ না হয় তখন কর্মসূচি দিয়েন। সচিবালয়ের কাজে যাতে বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়। আপনারা বিবৃতি দিতে চাইলে বিবৃতি দেন। চাইলে আমাদের সঙ্গে মিটিং করেন। কিন্তু সরকারি কাজে যেন ব্যাঘাত সৃষ্টি না হয়।’
গত ৪ জুন আইন উপদেষ্টাকে প্রধান করে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনায় একটি কমিটি করা হয়। এই কমিটিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদকে সদস্য রাখা হয়েছে। এছাড়া ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব ও পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা সচিব এই কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন।
অধ্যাদেশে যা আছে:
‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ এর ‘আচরণ বা দণ্ড সংক্রান্ত’ বিশেষ বিধানে বলা হয়েছে কেউ যদি এমন কাজ করে যা অনানুগত্যের শামিল এবং যা অন্য কর্মচারীদের মাঝে অনানুগত্য সৃষ্টি করতে পারে বা শৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটাতে পারে বা অন্যের কর্তব্য পালনে বাধার সৃষ্টি করতে পারে;
এককভাবে বা সম্মিলিতভাবে ছুটি ব্যতীত কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে। কাউকে কর্মবিরতিতে বাধ্য বা উস্কানি দেওয়া, অন্য কর্মচারীকে কাজে বাধা দেওয়া হলে;
কোনো কর্মচারীকে তার কর্মস্থলে আসতে বা কাজ করতে বাধা দেওয়া হলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ হবে।
এসব অপরাধের শাস্তি হিসেবে পদাবনতি বা গ্রেড অবনতি, চাকরি থেকে অপসারণ কিংবা চাকরি থেকে বরখাস্ত করার বিধান রাখা হয়েছে।
এসব অসদাচরণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযোগ গঠন, সাত দিনের সময় দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিস, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কারণ জানিয়ে জবাব না দিলে আবার সাত দিনের নোটিস দেওয়ার পর তা বিবেচনা করে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে। তবে অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর আপিল রাখার সুযোগ রয়েছে। দণ্ডের নোটিস হাতে পাওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করা যাবে। এই অধ্যাদেশকে আন্দোলনকারীরা বলছেন ‘নিবর্তনমূলক কালো আইন’।