পুরোদস্তুর মেয়রের কাজে নেমে পড়েছেন ইশরাক -সংবাদ
সরকারের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সেবা কার্যক্রম ব্যাহত করার অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) আমরা জানতে পেরেছি, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা ও সচিব করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের জন্মনিবন্ধন ও নাগরিকত্ব সনদে স্বাক্ষর না করার নির্দেশ দিয়েছেন। এটা অত্যন্ত নিন্দনীয়। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে সেবায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছেন ও দায়ভার আমাদের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছেন।’
‘আমরা লক্ষ্য করছি, সবার দাবি তাদের কানে পৌঁছায়, কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটিবাসীর দাবি কেন জানি তাদের কানে পৌঁছাচ্ছে না।’
‘আজ যা কিছু ঘটছে, এর দায় সরকারকেই নিতে হবে। সরকার তার মনোনীত কিছু লোককে সামনে এনে আমাদের ছোট করার অপচেষ্টা করছে।’
বুধবার,(১৮ জুন ২০২৫) দুপুরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে ডিএসসিসির কর্মচারী ও সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তৃতায় এ অভিযোগ করেন ইশরাক হোসেন।
সেবা কার্যক্রম শুরু করলেও এক্ষেত্রে আন্দোলন থেকে সরে আসার কোনো ‘সুযোগ নেই’ বলে জানিয়েছেন ইশরাক। তিনি বলেছেন, নগর ভবনের ফটকে ‘তালা ঝুলবেই’। কারণ বিষয়টিকে আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে দেখছেন তারা। সংকট সুরাহায় মেয়র হিসেবে শপথ পড়ার অনুমতি দিতে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ইশরাক; না হলে বিরতিহীনভাবে অবস্থান কর্মসূচি চলবে বলেও হুঁশিয়ার করেছেন তিনি।
ইশরাক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গণঅভ্যুত্থানের সরকার হিসেবে দাবি করলেও তারা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে আপিল নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ার পরও ‘জনগণের দাবির প্রতি কোনো ধরনের তোয়াক্কা করছেন না’। ‘তারা আমাদের মানুষ বলে মনে করছে না। ঈদের আগে থেকে ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। ঢাকাবাসী তাদের যৌক্তিক দাবিতে যে আন্দোলন করে যাচ্ছে। আমরা লক্ষ্য করছি, বাংলাদেশের সবার দাবি তাদের কানে পৌঁছায়, কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটিবাসীর দাবি কেন জানি তাদের কানে পৌঁছাচ্ছে না। তারা দেখেও দেখছে না, শুনেও শুনছে না।’
তিনি অভিযোগ করেন, মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর বিষয়টি নিয়ে সরকারও ‘স্বৈরাচারী’ আচরণ করছে। ‘তারা প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র করে চলেছে কীভাবে আমাদের এই আন্দোলনকে দমানো যায়। কীভাবে আমাদের আন্দোলনকে বিতর্কিত করা যায়। কীভাবে জনগণের সামনে আমাদের কার্যক্রমকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে আমাদের মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা যায়।’
ইশরাক হোসেন বলেন, ‘নাগরিকদের সেবা দিতে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি, কিন্তু সরকার বিভিন্নভাবে বাধা সৃষ্টি করছে। আমাদের এই আন্দোলনের মধ্যেও জরুরি সেবা কার্যক্রম সচল রেখেছি। কিন্তু আমরা খবর পেয়েছি, সরকার, বিশেষ করে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া করপোরেশনের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন না করার নির্দেশ দিয়েছেন।’
উপদেষ্টার এক বক্তব্যের জবাবে ইশরাক বলেন, ‘বুধবার আসিফ মাহমুদ বলেছেন, আমি নাকি আইন ভেঙেছি, ফৌজদারি অপরাধ করেছি। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, আমি যদি সত্যিই কোনো অপরাধ করে থাকি, তাহলে সরকারে থেকেও আপনারা কেন আমার বিরুদ্ধে মামলা করেননি? কেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেননি?’
ইশরাক বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কেন নির্দেশ দিচ্ছেন না আমাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমরা এসব ভয় পাই না। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১৭ বছর আমরা যুদ্ধ করেছি, জেল খেটেছি, গুম হয়েছি। যত ধরনের নির্যাতন আছে সহ্য করে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছি।’
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টাকে ইঙ্গিত করে ইশরাক বলেন, ‘আপনার মতো অপরিপক্ব উপদেষ্টারা আমাদের সঙ্গে কথা বলবেন, এটা ভাবাটাও আমাদের জন্য অপমানজনক।’
সবকিছুর দায় সরকারের ওপর চাপিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আজ যা কিছু ঘটছে, এর দায় সরকারকেই নিতে হবে। সরকার তার মনোনীত কিছু লোককে সামনে এনে আমাদের ছোট করার অপচেষ্টা করছে।’
নগর ভবনে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বাইরের কিছু গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আন্দোলনকে ‘ভুলভাবে’ উপস্থাপন করা হচ্ছে। মানুষের কাছে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করছে। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার উপদেষ্টাও বিষয়টি নিয়ে ক্রমাগত ‘মিথ্যাচার করছেন’। ‘তিনি (স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা) বারেবারে বলেছেন, এখানে আইনি জটিলতা আছে, সাব-জুডিস ম্যাটার আছে। অথচ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে এই বিষয়টি বহু আগেই নিষ্পত্তি হয়েছে। তারপরও যদি তিনি বলেন আইনি ঝামেলা আছে তাহলে আমি বলব এই ধরনের মূর্খ উপদেষ্টা বাংলাদেশের ইতিহাসে কেউ কোনো দিন দেখে নাই।’
গত ১৪ মে থেকে নগর ভবনের সামনে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে ইশরাক সমর্থক ও বিএনপি নেতাকর্মীরা। পরে ডিএসসিসি কর্মচারী ইউনিয়নও তাতে যোগ দেয়।
মাঝে ঈদ ঘিরে ছুটির ক’দিন নগর ভবনে ইশরাক সমর্থকদের আন্দোলনে পাওয়া যায়নি। ঈদের ছুটির শেষে অফিস খোলার প্রথম দিন গত রোববার ফের সেখানে আন্দোলন শুরু করেন ইশরাক সমর্থকরা।
সে সময় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সেবা কার্যক্রমে অচলাবস্থা কাটাতে নিজের তত্ত্বাবধানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেন ইশরাক। জন্ম নিবন্ধন সনদসহ দৈনন্দিন জরুরি সব সেবা চালু থাকার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেছিলেন, অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনা করা কর্মকর্তারা অফিস করতে পারবে না।
গত সোমবার ও মঙ্গলবার দক্ষিণ সিটির ৭০টি ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক, ওয়ার্ড সচিবের সঙ্গে বৈঠক করার পর বুধবার নগর ভবনে মশকনিধন কার্যক্রমের উদ্বোধন করলেন ইশরাক হোসেন। উদ্বোধন শেষে প্রতিটি ওয়ার্ডের মশক সুপারভাইজারদের নিয়ে নগর ভবন মিলনায়তনে বৈঠকে বসেন তিনি।
ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার দাবিতে নগর ভবনে বুধবার ও অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন সংস্থাটির কর্মকর্তা কর্মচারীরা। তাদের সঙ্গে ঢাকাবাসীর ব্যানারে সেখানে একত্র হয়েছেন ইশরাকের অনুসারীরা। এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করার সময় দুপুর ১টার দিকে নগর ভবনে প্রবেশ করেন ইশরাক হোসেন। এরপর আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বক্তব্য দিয়ে নগর ভবন প্রাঙ্গণে মশকনিধন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
মশকনিধন কার্যক্রম উদ্বোধনের আগে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন চলমান থাকলেও নাগরিক জরুরি সেবাগুলোও আমাদের তত্ত্বাবধানে চলমান আছে। আমরা চাই, কোনোভাবেই যেন নাগরিক দুর্ভোগ না হয়। সামনে ডেঙ্গুর মৌসুম আসছে, ফলে মশকনিধন কার্যক্রম আরও জোরদার করতে আমরা আজ (বুধবার) এই কার্যক্রম উদ্বোধন করছি।’
এর আগে কয়েক দিন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নাগরিক সেবা কার্যক্রমের অচলাবস্থা কাটাতে নিজেদের তত্ত্বাবধানে ডিএসসিসির কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়ে আসছেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘আমরা ঢাকা শহরে মশকনিধন কর্মসূচিকে বেগবান ও সেটি যাতে চলমান থাকে, তা নিশ্চিত করার জন্য ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করছি।’
গত ১৫ জুন নগর ভবনের কনফারেন্স রুমে একটি সভা করেন ইশরাক হোসেন। নগর ভবনে এটিই ছিল তার প্রথম সভা। সভার ব্যানারে ইশরাক হোসেনের নামের সঙ্গে ‘মাননীয় মেয়র’ লেখা ছিল। সভার প্রধান অতিথি ছিলেন ইশরাক।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে। এরপর গত ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু আইনি জটিলতার কথা বলে ইশরাকের শপথের আয়োজন থেকে বিরত থাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এমন পরিস্থিতিতে ইশরাক সমর্থকরা আন্দোলনে নামলে নগর ভবন কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
পুরোদস্তুর মেয়রের কাজে নেমে পড়েছেন ইশরাক -সংবাদ
বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
সরকারের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সেবা কার্যক্রম ব্যাহত করার অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) আমরা জানতে পেরেছি, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা ও সচিব করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের জন্মনিবন্ধন ও নাগরিকত্ব সনদে স্বাক্ষর না করার নির্দেশ দিয়েছেন। এটা অত্যন্ত নিন্দনীয়। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে সেবায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছেন ও দায়ভার আমাদের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছেন।’
‘আমরা লক্ষ্য করছি, সবার দাবি তাদের কানে পৌঁছায়, কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটিবাসীর দাবি কেন জানি তাদের কানে পৌঁছাচ্ছে না।’
‘আজ যা কিছু ঘটছে, এর দায় সরকারকেই নিতে হবে। সরকার তার মনোনীত কিছু লোককে সামনে এনে আমাদের ছোট করার অপচেষ্টা করছে।’
বুধবার,(১৮ জুন ২০২৫) দুপুরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে ডিএসসিসির কর্মচারী ও সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তৃতায় এ অভিযোগ করেন ইশরাক হোসেন।
সেবা কার্যক্রম শুরু করলেও এক্ষেত্রে আন্দোলন থেকে সরে আসার কোনো ‘সুযোগ নেই’ বলে জানিয়েছেন ইশরাক। তিনি বলেছেন, নগর ভবনের ফটকে ‘তালা ঝুলবেই’। কারণ বিষয়টিকে আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে দেখছেন তারা। সংকট সুরাহায় মেয়র হিসেবে শপথ পড়ার অনুমতি দিতে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ইশরাক; না হলে বিরতিহীনভাবে অবস্থান কর্মসূচি চলবে বলেও হুঁশিয়ার করেছেন তিনি।
ইশরাক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গণঅভ্যুত্থানের সরকার হিসেবে দাবি করলেও তারা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে আপিল নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ার পরও ‘জনগণের দাবির প্রতি কোনো ধরনের তোয়াক্কা করছেন না’। ‘তারা আমাদের মানুষ বলে মনে করছে না। ঈদের আগে থেকে ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। ঢাকাবাসী তাদের যৌক্তিক দাবিতে যে আন্দোলন করে যাচ্ছে। আমরা লক্ষ্য করছি, বাংলাদেশের সবার দাবি তাদের কানে পৌঁছায়, কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটিবাসীর দাবি কেন জানি তাদের কানে পৌঁছাচ্ছে না। তারা দেখেও দেখছে না, শুনেও শুনছে না।’
তিনি অভিযোগ করেন, মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর বিষয়টি নিয়ে সরকারও ‘স্বৈরাচারী’ আচরণ করছে। ‘তারা প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র করে চলেছে কীভাবে আমাদের এই আন্দোলনকে দমানো যায়। কীভাবে আমাদের আন্দোলনকে বিতর্কিত করা যায়। কীভাবে জনগণের সামনে আমাদের কার্যক্রমকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে আমাদের মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা যায়।’
ইশরাক হোসেন বলেন, ‘নাগরিকদের সেবা দিতে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি, কিন্তু সরকার বিভিন্নভাবে বাধা সৃষ্টি করছে। আমাদের এই আন্দোলনের মধ্যেও জরুরি সেবা কার্যক্রম সচল রেখেছি। কিন্তু আমরা খবর পেয়েছি, সরকার, বিশেষ করে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া করপোরেশনের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন না করার নির্দেশ দিয়েছেন।’
উপদেষ্টার এক বক্তব্যের জবাবে ইশরাক বলেন, ‘বুধবার আসিফ মাহমুদ বলেছেন, আমি নাকি আইন ভেঙেছি, ফৌজদারি অপরাধ করেছি। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, আমি যদি সত্যিই কোনো অপরাধ করে থাকি, তাহলে সরকারে থেকেও আপনারা কেন আমার বিরুদ্ধে মামলা করেননি? কেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেননি?’
ইশরাক বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কেন নির্দেশ দিচ্ছেন না আমাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমরা এসব ভয় পাই না। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১৭ বছর আমরা যুদ্ধ করেছি, জেল খেটেছি, গুম হয়েছি। যত ধরনের নির্যাতন আছে সহ্য করে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছি।’
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টাকে ইঙ্গিত করে ইশরাক বলেন, ‘আপনার মতো অপরিপক্ব উপদেষ্টারা আমাদের সঙ্গে কথা বলবেন, এটা ভাবাটাও আমাদের জন্য অপমানজনক।’
সবকিছুর দায় সরকারের ওপর চাপিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আজ যা কিছু ঘটছে, এর দায় সরকারকেই নিতে হবে। সরকার তার মনোনীত কিছু লোককে সামনে এনে আমাদের ছোট করার অপচেষ্টা করছে।’
নগর ভবনে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বাইরের কিছু গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আন্দোলনকে ‘ভুলভাবে’ উপস্থাপন করা হচ্ছে। মানুষের কাছে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করছে। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার উপদেষ্টাও বিষয়টি নিয়ে ক্রমাগত ‘মিথ্যাচার করছেন’। ‘তিনি (স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা) বারেবারে বলেছেন, এখানে আইনি জটিলতা আছে, সাব-জুডিস ম্যাটার আছে। অথচ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে এই বিষয়টি বহু আগেই নিষ্পত্তি হয়েছে। তারপরও যদি তিনি বলেন আইনি ঝামেলা আছে তাহলে আমি বলব এই ধরনের মূর্খ উপদেষ্টা বাংলাদেশের ইতিহাসে কেউ কোনো দিন দেখে নাই।’
গত ১৪ মে থেকে নগর ভবনের সামনে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে ইশরাক সমর্থক ও বিএনপি নেতাকর্মীরা। পরে ডিএসসিসি কর্মচারী ইউনিয়নও তাতে যোগ দেয়।
মাঝে ঈদ ঘিরে ছুটির ক’দিন নগর ভবনে ইশরাক সমর্থকদের আন্দোলনে পাওয়া যায়নি। ঈদের ছুটির শেষে অফিস খোলার প্রথম দিন গত রোববার ফের সেখানে আন্দোলন শুরু করেন ইশরাক সমর্থকরা।
সে সময় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সেবা কার্যক্রমে অচলাবস্থা কাটাতে নিজের তত্ত্বাবধানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেন ইশরাক। জন্ম নিবন্ধন সনদসহ দৈনন্দিন জরুরি সব সেবা চালু থাকার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেছিলেন, অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনা করা কর্মকর্তারা অফিস করতে পারবে না।
গত সোমবার ও মঙ্গলবার দক্ষিণ সিটির ৭০টি ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক, ওয়ার্ড সচিবের সঙ্গে বৈঠক করার পর বুধবার নগর ভবনে মশকনিধন কার্যক্রমের উদ্বোধন করলেন ইশরাক হোসেন। উদ্বোধন শেষে প্রতিটি ওয়ার্ডের মশক সুপারভাইজারদের নিয়ে নগর ভবন মিলনায়তনে বৈঠকে বসেন তিনি।
ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার দাবিতে নগর ভবনে বুধবার ও অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন সংস্থাটির কর্মকর্তা কর্মচারীরা। তাদের সঙ্গে ঢাকাবাসীর ব্যানারে সেখানে একত্র হয়েছেন ইশরাকের অনুসারীরা। এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করার সময় দুপুর ১টার দিকে নগর ভবনে প্রবেশ করেন ইশরাক হোসেন। এরপর আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বক্তব্য দিয়ে নগর ভবন প্রাঙ্গণে মশকনিধন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
মশকনিধন কার্যক্রম উদ্বোধনের আগে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন চলমান থাকলেও নাগরিক জরুরি সেবাগুলোও আমাদের তত্ত্বাবধানে চলমান আছে। আমরা চাই, কোনোভাবেই যেন নাগরিক দুর্ভোগ না হয়। সামনে ডেঙ্গুর মৌসুম আসছে, ফলে মশকনিধন কার্যক্রম আরও জোরদার করতে আমরা আজ (বুধবার) এই কার্যক্রম উদ্বোধন করছি।’
এর আগে কয়েক দিন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নাগরিক সেবা কার্যক্রমের অচলাবস্থা কাটাতে নিজেদের তত্ত্বাবধানে ডিএসসিসির কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়ে আসছেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘আমরা ঢাকা শহরে মশকনিধন কর্মসূচিকে বেগবান ও সেটি যাতে চলমান থাকে, তা নিশ্চিত করার জন্য ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করছি।’
গত ১৫ জুন নগর ভবনের কনফারেন্স রুমে একটি সভা করেন ইশরাক হোসেন। নগর ভবনে এটিই ছিল তার প্রথম সভা। সভার ব্যানারে ইশরাক হোসেনের নামের সঙ্গে ‘মাননীয় মেয়র’ লেখা ছিল। সভার প্রধান অতিথি ছিলেন ইশরাক।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে। এরপর গত ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু আইনি জটিলতার কথা বলে ইশরাকের শপথের আয়োজন থেকে বিরত থাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এমন পরিস্থিতিতে ইশরাক সমর্থকরা আন্দোলনে নামলে নগর ভবন কার্যত অচল হয়ে পড়ে।