ঢাকার বিশেষজ্ঞ টিম বরগুনায়, কুমিল্লার দাউদকান্দি ডেঙ্গুর হটস্পট
রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বড়দের পাশাপাশি শিশুদের চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। ছবিটি বুধবার তোলা -সংগৃহীত
সাগর তীরবর্তী জেলা বরগুনা। সেখানে প্রায় পৌনে ১১ লাখ মানুষের বসবাস। মশার দাপটে অতিষ্ঠ মানুষ। পৌরসভার দুই ঘরের মাঝখানে ড্রেনের জমে থাকা পানিতে মশার উপদ্রব বেশি। চোটখাটো জলাশয়গুলোতে মশা বেড়েই চলছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, মশার দাপট এত বেশি যে, মশা মারতে গেছে উল্টো মশাই ধাওয়া করছে মশকনিধন কর্মীকে। একটি বাড়িতে ১০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। এইভাবে ঘরে ঘরে আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগী।
জেলার হাসপাতালে ঠাঁই হচ্ছে না রোগীর। হাসপাতালে পর্যাপ্ত মশারির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় দিন দিন পরিস্থিতির আশঙ্কাজনকভাবে অবনতি ঘটছে। কারণ অনুসন্ধানে ঢাকার বিশেষজ্ঞ দল বরগুনায় গেছে। তারা সরজমিনে পরিদর্শন করে কারণ উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছেন।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় এডিস মশার কামড়ে সারাদেশে আরও ২১২ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে বুধবার,(১৮ জুন ২০২৫) পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ৬ হাজার ৬শ’ ৭৮ জন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ৩০ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে এই তথ্য জানা গেলেও বাসা বাড়ি কিংবা ডাক্তারে চেম্বারে খবর নিয়ে সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সংবাদের বরগুনা রিপোর্টার জানান, বরগুনায় ডেঙ্গু ভাইরাস এখন মহামারী আকার ধারণ করছে। কারণ অনুসন্ধানে আইইডিসিআরের প্রতিনিধিদল বরগুনায় গিয়ে পৌঁছেছেন। তারা হঠাৎ করে ব্যাপকহারে ডেঙ্গুর আক্রমণ বৃদ্ধির প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে সরেজমিনে পরিদর্শনের কাজ শুরু করেছে ঢাকা থেকে আগত আইইডিসিআরের ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল। এদিকে বগুনায় বেড়েই চলেছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। পাশাপাশি বাড়ছে মৃত্যুও
গত ১৭ জুন থেকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি এবং আক্রান্ত রোগীদের বিভিন্ন এলাকায় পরিদর্শন করে তথ্য সংগ্রহ করছেন তদন্ত দল। বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়গোনেস্টিক সেন্টার যাচ্ছেন।
গত ১৫ জুন আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ৬ সদস্যের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন টিম বরগুনায় পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল।
বরগুনায় অনুসন্ধানে আসা আইইডিসিআরের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হলেন আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. রত্না দাস, এফইটিপিবি ফেলো ডা. মো. তারিকুল ইসলাম লিমন, ডা. মোস্তফা নাহিয়ান হাবিব, কীটতত্ত্ববিদ মো. মোজাম্মেল হক, সিনিয়র মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট মো. আজিজুর রহমান এবং স্বাস্থ্য সহকারী মো. আব্দুলাহ আল মামুন।
বিগত দিন এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার তুলনায় ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে বরগুনায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। যা বর্তমানে সারাদেশের মোট আক্রান্তের এক চতুর্থাশ।
জেলায় এমন অস্বাভাবিকভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানেই বরগুনায় কাজ শুরু করেছে আইইডিসিআরের প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা ডেঙ্গু আক্রান্তের কারণ যেমন অনুসন্ধান করেন তেমনি প্রতিকারের পরামর্শ দেবেন সংশ্লিষ্ট মহলকে।
হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের সময় অনুসন্ধানকারী প্রতিনিধি দলের দলনেতা এফইটিপিবি ফেলো (অ্যাডভান্সড-১০ম কোহোর্ট) ডা. মো. তারিকুল ইসলাম লিমন উপস্থিত সাংবাদিকদেরকে বলেন, তারা মনে করেন অপরিষ্কার পানিতে ডেঙ্গু বেশি হয়। পরিষ্কার ও জমে থাকা পানিতে অর্থাৎ বৃষ্টির সময়ে ডাবের খোসা, টায়ার, ফুলের টবসহ বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে যায়।
এ সমস্ত জায়গায় ডেঙ্গুর বিস্তার লাভ করে। আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে যাতে এই সমস্ত জায়গায় পানি জমে না থাকে। তিনি আশা করেন সবাই সচেতন হলে ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে সবাইকে রক্ষা করা যাবে।
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. রত্না দাস উপস্থিত সাংবাদিকদেরকে বলেন, ডেঙ্গুর কারণ এডিস মশা। বর্ষার সময় বিভিন্ন জায়গায় জমা পরিষ্কার পানিতে এডিস মশার বংশবিস্তার শুরু হয়। এরা জমা পানির মধ্যে ৩/৪ দিন সময়ে কমা আকৃতির অর্থাৎ কিউপা রূপ ধারণ করে। এরপর জ্যামিতিকহারে ছড়িয়ে পড়ে। এটি ভি আই পি লালিত মশা। বাসার ঘোপ, মটকার আড়ালে থাকে এবং সুবিধা মতো কামড়ায়।
তিনি বনে, অন্য জায়গার তুলনায় বরগুনায় কী কারণে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি এবং কোথায় জমা পানি কী অবস্থায় রয়েছে তা অনুসন্ধান এবং বিশ্লেষণ করার জন্যই তারা বরগুনায় এসেছেন।
এর পাশাপাশি তারা একটি সার্ভের কাজও করবেন বলে জানান। এছাড়াও জেলা প্রশাসন, সিভিলসার্জন, সাংবাদিকসহ অনেকের সঙ্গেই তারা বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছেন । বরগুনায় কী কারণে এত বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে তার অনুসন্ধানী কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। তিনিও আশা করেন সবার প্রচেষ্টায় ডেঙ্গুর এ প্রকোপ কমিয়ে আনা যাবে।
এদিকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় শুধু বরগুনা হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৫২ জন। জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১১ জন। বর্তমানে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন ২০৭ জন রোগী।
এ বছর এখন পর্যন্ত বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে ২ হাজার ৪৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে এ জেলার আরও ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সংবাদের কুমিল্লা রিপোর্টার জাহিদুর রহমান জানান, কুমিল্লার দাউদকান্দি ডেঙ্গুর হটস্পটে পরিণত হয়েছে। গত সাড়ে পাঁচ মাসে পৌরএলাকায় প্রায় ৬শ’ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। তার মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিন নারীর মৃত্যু হয়েছে। পৌর এলাকায় দুইটি ওয়ার্ডকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করছেন।
সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌর এলাকায় ডেঙ্গুর ভয়াবহতা সৃষ্টি হয়েছে। ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে রোগীদের বেসামাল অবস্থা। এ অবস্থায় সংকটাপন্ন রোগীদের রেফার করা হচ্ছে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে। বুধবার বিকেল পর্যন্ত শুধু দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৪ জন এবং বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি আছেন অর্ধশতাধিক ডেঙ্গু রোগী।
দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের ভাষ্য, গত জানুয়ারি থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত সাড়ে ৫ মাসে দাউদকান্দি পৌর এলাকায় ৬ শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে ৩ জন নারী ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন। এদের মধ্যে গত ১৩ জুন মারা গেছেন পৌর এলাকার দোনারচর গ্রামের শাহীনুর আক্তার (২৪), ১৮ মে একই গ্রামের সালমা বেগম (৫৬) ও ২৫ মে সব্জিকান্দি গ্রামের জ্যোস্না বেগম (৬০)।
এদিকে দাউদকান্দি পৌর সদরের ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড দুটিতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি অনেকটা মহামারী আকার ধারণ করেছে। ওই দুটি ওয়ার্ডকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ ও পৌর কর্তৃপক্ষ। পৌর এলাকার অপর ওয়ার্ডগুলোতেও ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার দাউদকান্দি পৌর সদরে ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের দোনারচর, সবজিকান্দি, দাউদকান্দি, সাহাপাড়া, বলদাখাল ও তুজারভাঙ্গা গ্রামগুলোতে বাড়ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা। এতে প্রতিটি পরিবারের কোন না কোন সদস্য আক্রান্ত হচ্ছেন। এতে পুরো পৌরসভা জুড়ে ডেঙ্গু আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষের মাঝে এক ধরনের ভীতি ও অস্থিরতা বিরাজ করছে।
পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর বিল্লাল হোসেন খন্দকার সুমন বলেন, আমার ওয়ার্ডে ডেঙ্গু পরিস্থিতি অস্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আমরা ঝোপঝাড় পরিষ্কার, জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করছি ও ফগার মেশিন দিয়ে ঔষধ ছিটানো হচ্ছে। ৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সালাহউদ্দিন সরকার বলেন, আমার ওয়ার্ডে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আরো শতাধিক আক্রান্ত হয়ে আছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর সচেতনতায়, লিফলেট বিতরণ, মাইকিং ও ওষুধ বিতরণ করছি।
দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, ঘণবসতি, খোলা ড্রেন, ঝোঁপঝাড় ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ থেকে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়ে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ডেঙ্গু রোগীদের তাৎক্ষণিক সেবা দিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বুধবার এ হাসপাতালে ১৪ জন ভর্তি রয়েছে। এছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে।
দাউদকান্দি পৌর প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেদওয়ান ইসলাম বলেন, আমরা পৌরসভার পক্ষ থেকে দুটি ওয়ার্ডকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করেছি। প্রতিদিন ডেঙ্গু মশার বিস্তার রোধে মশকনিধন কর্মসূচি গ্রহণ করছি। ফ্রগার মেশিনের মাধ্যমে উচ্চমাত্রার ওষুধ প্রয়োগ করছি।
মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকতা ডা. মুশতাক হোসেন সংবাদকে জানান, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবায় এলাকাভিত্তিক নমুনা কালেকশন করে রোগীদের মোবাইল নম্বর রেখে পরীক্ষা করে ম্যাসেজ পাঠিয়ে দেয়ার নিয়ম চালু করা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন। হটস্পটগুলোতে ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা সেবা দিয়ে নমুনা কালেকশান করের চিকিৎসা দিলে কিছুটা উপকার হবে।
তার মতে, এডিস মশা থেকে তিন ধরনের ভাইরাস ছড়ায়। তার মধ্যে ডেঙ্গু ভাইরাস, চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। এখন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ও আবার করোনাভাইরাস শুরু হয়েছে। পাঁচ ধরনের ভাইরাসে এখন শিশু থেকে নানা বয়সের মানুষ আক্রান্ত হচেছ। আবার মারাও যাচ্ছেন।
কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের বিভন্ন দেশে মশা দমনে আলাদা বিভাগ বা অধিদপ্তর রয়েছে। ওই অধিদপ্তরের কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস বিশেষজ্ঞ কাজ করেন। আর সেখানে মশার উপদ্রব দেখা যায়। সেখানে তাৎক্ষণিক ওষুধ দেয়া হয়। মশা মারতে যা কিছু দরকার সবই করা হয়। বাংলাদেশে এই ধরনের স্বাধীন অধিদপ্তর চালু করলে বছরজুড়ে মশা দমন করা সম্ভব। এখন সিটি করপোরেশন, পৌরভায়, মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। আবার ঠিকমতো ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না। কীটতত্ত্ব বিদদের তদন্তের রিপোর্ট দেয়ার পরও ওষুধ ছিটানো নিয়ে গাফিলতির অভিযোগ রয়েছে।
মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ্ ইমার্জেন্সি ও কন্ট্রোলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডা. জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১১০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৬ জন, ঢাকা বিভাগে ২৩ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ১৭ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৩৩ জন, খুলনায় ১২ জন, ময়মনসিংহে একজন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
হাসপাতালের তথ্য মতে, ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫২ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ১২ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪২ জন, কুর্মিটোলায় ১২ জন ভর্তি অছে। আর মহাখালী ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালে ১৭ জন ভর্তি আছে। এভাবে ঢাকার ১৮টি সরকারি হাসপাতালে ১৬১ জন ভর্তি আছে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আক্রান্তরা ভর্তি আছেন।
ঢাকার বিশেষজ্ঞ টিম বরগুনায়, কুমিল্লার দাউদকান্দি ডেঙ্গুর হটস্পট
রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বড়দের পাশাপাশি শিশুদের চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। ছবিটি বুধবার তোলা -সংগৃহীত
বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
সাগর তীরবর্তী জেলা বরগুনা। সেখানে প্রায় পৌনে ১১ লাখ মানুষের বসবাস। মশার দাপটে অতিষ্ঠ মানুষ। পৌরসভার দুই ঘরের মাঝখানে ড্রেনের জমে থাকা পানিতে মশার উপদ্রব বেশি। চোটখাটো জলাশয়গুলোতে মশা বেড়েই চলছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, মশার দাপট এত বেশি যে, মশা মারতে গেছে উল্টো মশাই ধাওয়া করছে মশকনিধন কর্মীকে। একটি বাড়িতে ১০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। এইভাবে ঘরে ঘরে আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগী।
জেলার হাসপাতালে ঠাঁই হচ্ছে না রোগীর। হাসপাতালে পর্যাপ্ত মশারির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় দিন দিন পরিস্থিতির আশঙ্কাজনকভাবে অবনতি ঘটছে। কারণ অনুসন্ধানে ঢাকার বিশেষজ্ঞ দল বরগুনায় গেছে। তারা সরজমিনে পরিদর্শন করে কারণ উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছেন।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় এডিস মশার কামড়ে সারাদেশে আরও ২১২ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে বুধবার,(১৮ জুন ২০২৫) পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ৬ হাজার ৬শ’ ৭৮ জন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ৩০ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে এই তথ্য জানা গেলেও বাসা বাড়ি কিংবা ডাক্তারে চেম্বারে খবর নিয়ে সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সংবাদের বরগুনা রিপোর্টার জানান, বরগুনায় ডেঙ্গু ভাইরাস এখন মহামারী আকার ধারণ করছে। কারণ অনুসন্ধানে আইইডিসিআরের প্রতিনিধিদল বরগুনায় গিয়ে পৌঁছেছেন। তারা হঠাৎ করে ব্যাপকহারে ডেঙ্গুর আক্রমণ বৃদ্ধির প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে সরেজমিনে পরিদর্শনের কাজ শুরু করেছে ঢাকা থেকে আগত আইইডিসিআরের ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল। এদিকে বগুনায় বেড়েই চলেছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। পাশাপাশি বাড়ছে মৃত্যুও
গত ১৭ জুন থেকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি এবং আক্রান্ত রোগীদের বিভিন্ন এলাকায় পরিদর্শন করে তথ্য সংগ্রহ করছেন তদন্ত দল। বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়গোনেস্টিক সেন্টার যাচ্ছেন।
গত ১৫ জুন আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ৬ সদস্যের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন টিম বরগুনায় পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল।
বরগুনায় অনুসন্ধানে আসা আইইডিসিআরের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হলেন আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. রত্না দাস, এফইটিপিবি ফেলো ডা. মো. তারিকুল ইসলাম লিমন, ডা. মোস্তফা নাহিয়ান হাবিব, কীটতত্ত্ববিদ মো. মোজাম্মেল হক, সিনিয়র মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট মো. আজিজুর রহমান এবং স্বাস্থ্য সহকারী মো. আব্দুলাহ আল মামুন।
বিগত দিন এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার তুলনায় ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে বরগুনায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। যা বর্তমানে সারাদেশের মোট আক্রান্তের এক চতুর্থাশ।
জেলায় এমন অস্বাভাবিকভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানেই বরগুনায় কাজ শুরু করেছে আইইডিসিআরের প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা ডেঙ্গু আক্রান্তের কারণ যেমন অনুসন্ধান করেন তেমনি প্রতিকারের পরামর্শ দেবেন সংশ্লিষ্ট মহলকে।
হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের সময় অনুসন্ধানকারী প্রতিনিধি দলের দলনেতা এফইটিপিবি ফেলো (অ্যাডভান্সড-১০ম কোহোর্ট) ডা. মো. তারিকুল ইসলাম লিমন উপস্থিত সাংবাদিকদেরকে বলেন, তারা মনে করেন অপরিষ্কার পানিতে ডেঙ্গু বেশি হয়। পরিষ্কার ও জমে থাকা পানিতে অর্থাৎ বৃষ্টির সময়ে ডাবের খোসা, টায়ার, ফুলের টবসহ বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে যায়।
এ সমস্ত জায়গায় ডেঙ্গুর বিস্তার লাভ করে। আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে যাতে এই সমস্ত জায়গায় পানি জমে না থাকে। তিনি আশা করেন সবাই সচেতন হলে ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে সবাইকে রক্ষা করা যাবে।
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. রত্না দাস উপস্থিত সাংবাদিকদেরকে বলেন, ডেঙ্গুর কারণ এডিস মশা। বর্ষার সময় বিভিন্ন জায়গায় জমা পরিষ্কার পানিতে এডিস মশার বংশবিস্তার শুরু হয়। এরা জমা পানির মধ্যে ৩/৪ দিন সময়ে কমা আকৃতির অর্থাৎ কিউপা রূপ ধারণ করে। এরপর জ্যামিতিকহারে ছড়িয়ে পড়ে। এটি ভি আই পি লালিত মশা। বাসার ঘোপ, মটকার আড়ালে থাকে এবং সুবিধা মতো কামড়ায়।
তিনি বনে, অন্য জায়গার তুলনায় বরগুনায় কী কারণে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি এবং কোথায় জমা পানি কী অবস্থায় রয়েছে তা অনুসন্ধান এবং বিশ্লেষণ করার জন্যই তারা বরগুনায় এসেছেন।
এর পাশাপাশি তারা একটি সার্ভের কাজও করবেন বলে জানান। এছাড়াও জেলা প্রশাসন, সিভিলসার্জন, সাংবাদিকসহ অনেকের সঙ্গেই তারা বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছেন । বরগুনায় কী কারণে এত বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে তার অনুসন্ধানী কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। তিনিও আশা করেন সবার প্রচেষ্টায় ডেঙ্গুর এ প্রকোপ কমিয়ে আনা যাবে।
এদিকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় শুধু বরগুনা হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৫২ জন। জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১১ জন। বর্তমানে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন ২০৭ জন রোগী।
এ বছর এখন পর্যন্ত বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে ২ হাজার ৪৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে এ জেলার আরও ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সংবাদের কুমিল্লা রিপোর্টার জাহিদুর রহমান জানান, কুমিল্লার দাউদকান্দি ডেঙ্গুর হটস্পটে পরিণত হয়েছে। গত সাড়ে পাঁচ মাসে পৌরএলাকায় প্রায় ৬শ’ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। তার মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিন নারীর মৃত্যু হয়েছে। পৌর এলাকায় দুইটি ওয়ার্ডকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করছেন।
সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌর এলাকায় ডেঙ্গুর ভয়াবহতা সৃষ্টি হয়েছে। ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে রোগীদের বেসামাল অবস্থা। এ অবস্থায় সংকটাপন্ন রোগীদের রেফার করা হচ্ছে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে। বুধবার বিকেল পর্যন্ত শুধু দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৪ জন এবং বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি আছেন অর্ধশতাধিক ডেঙ্গু রোগী।
দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের ভাষ্য, গত জানুয়ারি থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত সাড়ে ৫ মাসে দাউদকান্দি পৌর এলাকায় ৬ শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে ৩ জন নারী ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন। এদের মধ্যে গত ১৩ জুন মারা গেছেন পৌর এলাকার দোনারচর গ্রামের শাহীনুর আক্তার (২৪), ১৮ মে একই গ্রামের সালমা বেগম (৫৬) ও ২৫ মে সব্জিকান্দি গ্রামের জ্যোস্না বেগম (৬০)।
এদিকে দাউদকান্দি পৌর সদরের ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড দুটিতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি অনেকটা মহামারী আকার ধারণ করেছে। ওই দুটি ওয়ার্ডকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ ও পৌর কর্তৃপক্ষ। পৌর এলাকার অপর ওয়ার্ডগুলোতেও ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার দাউদকান্দি পৌর সদরে ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের দোনারচর, সবজিকান্দি, দাউদকান্দি, সাহাপাড়া, বলদাখাল ও তুজারভাঙ্গা গ্রামগুলোতে বাড়ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা। এতে প্রতিটি পরিবারের কোন না কোন সদস্য আক্রান্ত হচ্ছেন। এতে পুরো পৌরসভা জুড়ে ডেঙ্গু আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষের মাঝে এক ধরনের ভীতি ও অস্থিরতা বিরাজ করছে।
পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর বিল্লাল হোসেন খন্দকার সুমন বলেন, আমার ওয়ার্ডে ডেঙ্গু পরিস্থিতি অস্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আমরা ঝোপঝাড় পরিষ্কার, জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করছি ও ফগার মেশিন দিয়ে ঔষধ ছিটানো হচ্ছে। ৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সালাহউদ্দিন সরকার বলেন, আমার ওয়ার্ডে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আরো শতাধিক আক্রান্ত হয়ে আছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর সচেতনতায়, লিফলেট বিতরণ, মাইকিং ও ওষুধ বিতরণ করছি।
দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, ঘণবসতি, খোলা ড্রেন, ঝোঁপঝাড় ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ থেকে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়ে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ডেঙ্গু রোগীদের তাৎক্ষণিক সেবা দিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বুধবার এ হাসপাতালে ১৪ জন ভর্তি রয়েছে। এছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে।
দাউদকান্দি পৌর প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেদওয়ান ইসলাম বলেন, আমরা পৌরসভার পক্ষ থেকে দুটি ওয়ার্ডকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করেছি। প্রতিদিন ডেঙ্গু মশার বিস্তার রোধে মশকনিধন কর্মসূচি গ্রহণ করছি। ফ্রগার মেশিনের মাধ্যমে উচ্চমাত্রার ওষুধ প্রয়োগ করছি।
মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকতা ডা. মুশতাক হোসেন সংবাদকে জানান, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবায় এলাকাভিত্তিক নমুনা কালেকশন করে রোগীদের মোবাইল নম্বর রেখে পরীক্ষা করে ম্যাসেজ পাঠিয়ে দেয়ার নিয়ম চালু করা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন। হটস্পটগুলোতে ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা সেবা দিয়ে নমুনা কালেকশান করের চিকিৎসা দিলে কিছুটা উপকার হবে।
তার মতে, এডিস মশা থেকে তিন ধরনের ভাইরাস ছড়ায়। তার মধ্যে ডেঙ্গু ভাইরাস, চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। এখন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ও আবার করোনাভাইরাস শুরু হয়েছে। পাঁচ ধরনের ভাইরাসে এখন শিশু থেকে নানা বয়সের মানুষ আক্রান্ত হচেছ। আবার মারাও যাচ্ছেন।
কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের বিভন্ন দেশে মশা দমনে আলাদা বিভাগ বা অধিদপ্তর রয়েছে। ওই অধিদপ্তরের কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস বিশেষজ্ঞ কাজ করেন। আর সেখানে মশার উপদ্রব দেখা যায়। সেখানে তাৎক্ষণিক ওষুধ দেয়া হয়। মশা মারতে যা কিছু দরকার সবই করা হয়। বাংলাদেশে এই ধরনের স্বাধীন অধিদপ্তর চালু করলে বছরজুড়ে মশা দমন করা সম্ভব। এখন সিটি করপোরেশন, পৌরভায়, মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। আবার ঠিকমতো ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না। কীটতত্ত্ব বিদদের তদন্তের রিপোর্ট দেয়ার পরও ওষুধ ছিটানো নিয়ে গাফিলতির অভিযোগ রয়েছে।
মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ্ ইমার্জেন্সি ও কন্ট্রোলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডা. জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১১০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৬ জন, ঢাকা বিভাগে ২৩ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ১৭ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৩৩ জন, খুলনায় ১২ জন, ময়মনসিংহে একজন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
হাসপাতালের তথ্য মতে, ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫২ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ১২ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪২ জন, কুর্মিটোলায় ১২ জন ভর্তি অছে। আর মহাখালী ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালে ১৭ জন ভর্তি আছে। এভাবে ঢাকার ১৮টি সরকারি হাসপাতালে ১৬১ জন ভর্তি আছে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আক্রান্তরা ভর্তি আছেন।