alt

জাতীয়

নানা ফল নিয়ে মেলা বসেছে ফার্মগেইটে, দেশি ফলের উৎসবে পুষ্টির আহ্বান

শাফিউল আল ইমরান : বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

কাঠলিচু, সফেদা, ড্রাগন, জামসহ বিভিন্ন ধরনের ফল নিয়ে মেলা বসেছে ঢাকার ফার্মগেইটে।সেখানে লিচু, আম, জাম, কাঁঠাল, আনারস, পেয়ারা, কামরাঙা থেকে শুরু করে বিলুপ্তপ্রায় বেত ফল, ডেউয়া, আতাফল—সবই মিলছে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন চত্বরে। গতকাল বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া এ মেলা চলবে শনিবার পর্যন্ত।

রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) প্রাঙ্গণে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী জাতীয় ফল মেলায়। ফলের রঙে, গন্ধে, স্বাদে এবং বৈচিত্র্যে রীতিমতো মাতোয়ারা দর্শনার্থীরা।

‘দেশি ফল বেশি খাই, আসুন ফলের গাছ লাগাই’—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে কৃষি মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ মেলা উদ্বোধন করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেন।

উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমরা চালের ক্ষেত্রে যেমন আত্মনির্ভরতা অর্জন করেছি, এবার ফলের ক্ষেত্রেও তা অর্জনের লক্ষ্য রাখছি। পুষ্টির চাহিদা পূরণে ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।’

‘বর্তমানে যেখানে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন কমপক্ষে ২০০ গ্রাম ফল খাওয়া প্রয়োজন, সেখানে আমরা খাচ্ছি মাত্র ৫৫-৬০ গ্রাম। এ ব্যবধান কমানোই সরকারের অন্যতম লক্ষ্য।’

বর্তমানে বিদেশে বাংলাদেশের ফল রপ্তানি করা হচ্ছে জানিয়ে কৃষি উপদেষ্টা বলেন, আপনারা শুনে খুশি হবেন, আমরা বিদেশে প্রচুর পরিমাণে আম, কাঁঠাল, পেয়ারা ইত্যাদি পাঠাচ্ছি। চীনে আমাদের নতুনভাবে আম পাঠানো শুরু হয়েছে। রপ্তানি বাড়লে কৃষকরা উপকৃত হবেন। আমরা যেন বেশি করে দেশি ফল খাই। এ ফল খেলে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রাও অনেক সাশ্রয় হবে।’

মেলায় সরকারি ২৬টি এবং বেসরকারি ৪৯টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। বিভিন্ন স্টলে দেশি ফলের পাশাপাশি উপস্থাপিত হয়েছে ফল চাষে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, উচ্চফলনশীল জাত এবং রাসায়নিকমুক্ত উৎপাদনের উদাহরণ।

এবারের ফল প্রদর্শনীতে ৬০ জাতের আম নিয়ে এসেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এসব আমের নামও বেশ বাহারি। যেমন- বিশ্বনাথ চ্যাটার্জি, গৌড়মতি, কালোপাহাড়, কুয়াপাহাড়ি, রানীপছন্দ, মল্লিকা, ক্ষীরশাপাতি, আনন্দপুরি, বাদশাভোগ, গ্রেট বোম্বাই ইত্যাদি। এছাড়া দুই শতাধিক দেশি ফলের সমাহার দেখা গেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের স্টলে।

দেশীয় কয়েকশ’ ফলের সমাহার বসিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনও। কাউফল, করমচা, ডেউয়া, আঁশফল, গাব, জগডুমুর, চাম্বুল, আতাফল, ডুমুর, চালতা, অরবরই, বিলিম্বি, শরিফা, সাতকরা, তৈকর, ডেফল, লুকলুকি, বৈচি, মুনিয়ার মতো বিলুপ্তপ্রায় ফল সংস্থাটির স্টলে দেখা গেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পার্টনার প্রকল্প মেলায় এনেছে উত্তম কৃষি চর্চার(গ্যাপ) মাধ্যমে ফল চাষের প্রযুক্তি। উত্তম কৃষি চর্চার মাধ্যমে চাষ করা ফল তাদের স্টলে শোভা পাচ্ছে।

রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের স্টলে মিলছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা রপ্তানির আম। বিদেশে কীভাবে আম রপ্তানি হয়, তা দর্শনার্থীদের জানাচ্ছেন প্রকল্পের কর্মকর্তারা। রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনের কলাকৌশলও দর্শনার্থীরা আগ্রহ ভরে জেনে নিচ্ছেন।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান মেলা দেখতে এসে বলেন, ‘এখানে এমন অনেক ফল দেখছি, যেগুলোর নামও আগে শুনিনি। নতুন জাত ও প্রযুক্তি নিয়ে অনেক কিছু জানতেও পারছি।’

ময়মনসিংহের যমযম ফুডসে বিক্রি হচ্ছে লালচিনি, জায়তুন তেল, কালোজিরার তেল, নারিকেল চিড়া, মণ্ডাসহ বিভিন্ন অর্গানিক ও শুকনা খাবার। মেলার শেষদিন পর্যন্ত দোকানটিতে ৩০ শতাংশ ছাড় চলবে বলে জানিয়েছেন যমযম ফুডসের কর্ণধার খোরশেদ আলম।

মেলায় দেখা মিলছে বিভিন্ন দেশি ফলের। ডেউয়া, সফেদা, বিলাতি গাব, করমচা, কাউফল, শরিফা, অড়বরই, বেতফল ও লটকনের মতো ফলগুলো আগ্রহভরে দেখছিলেন মেলায় আসা দর্শনার্থীরা। অনেকে মোবাইল ফোনে ছবি তুলে নিচ্ছিলেন।

আদাবর থেকে আসা মার্সিয়া আক্তার বলেন, “মেলায় এমন সব জিনিস পাওয়া যায়, যেগুলো অন্য কোথাও পাওয়া যায় না, সেজন্যই আসা।”

রাজধানীর ধানমণ্ডি থেকে আসা আফরোজা বেগম তেমনি একজন৷ তিনি মেলায় ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন ফলের ছবি তুলছিলেন। তিনি বললেন, ‘এখানে এমনও অনেক ফল দেখছি, যেগুলো আগে দেখার সুযোগ হয়নি।’

অনেকে দেশি ফল দেখে শৈশবে ফিরে যাচ্ছিলেন। উত্তরা থেকে আসা মাহমুদুর রহমান মাকে নিয়ে মেলায় এসেছেন৷ কয়েকটি ফল দেখিয়ে তিনি বললেন, ‘আগে এই ফলগুলো আমাদের বাড়িতে হতো কিংবা স্থানীয় বাজারেও পাওয়া যেত। এখন আর পাওয়া যায় না৷’

মেলা উপলক্ষে রাজধানীর কৃষি গবেষণা কাউন্সিল মিলনায়তনে ‘স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও বাণিজ্যিকীকরণে দেশি ফল: বর্তমান প্রেক্ষিত, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতির বক্তব্যে কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ‘দেশীয় ফলের উৎস, স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বিশ্বমানের। আমাদের কাজ হচ্ছে এগুলোর সংরক্ষণ, প্রচার ও বাজার সম্প্রসারণ।’

মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘দেশি ফলের অনেক জাত জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতেও টিকে থাকতে সক্ষম। পাশাপাশি কৃষকদের আয়ের নতুন দ্বারও খুলছে এসব ফল।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পরিচালক (প্রশাসন) মো. হাবিবউল্লাহ্ বলেন, জাতীয় ফল মেলা শুধু একটি প্রদর্শনী নয়, বরং এটা ফল চাষ, পুষ্টি, অর্থনীতি ও কৃষিনির্ভর সমাজের মধ্যে মেলবন্ধন তৈরি করছে। এখানে আছে কৃষক, গবেষক, ভোক্তা ও নীতিনির্ধারকদের কণ্ঠ। সরকারি-বেসরকারি অংশগ্রহণ, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, দেশের সব জেলায় বিস্তার এবং সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে এমন মেলা দেশি-দেশি ফলভিত্তিক একটি টেকসই বাজার ও সচেতনতা গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দেশি ফলকে বাঁচিয়ে পুষ্টির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব—এটাই জাতীয় ফল মেলার বড় বার্তা।

রাজধানীর পাশাপাশি এবার দেশের ৬৪টি জেলার ৪৩১টি উপজেলাতেও স্থানীয় ফল মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এতে স্থানীয় কৃষক, গবেষক এবং সাধারণ মানুষ একসঙ্গে মেলে ধরার সুযোগ পাচ্ছেন দেশি ফলের সম্ভাবনা ও পুষ্টি–বাণিজ্যের চিত্র।

সাঁওতালদের জমিতে ইপিজেড নির্মাণ নয়, ১৩ সংগঠনের দাবি

গণতান্ত্রিক যাত্রায় বাংলাদেশকে সহায়তা দেবে ব্রিটেন: সারাহ কুক

‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠ্যক্রম সরকার নিয়ন্ত্রণ করবে’

ছবি

ফার্মগেটের ফলের মেলায় পুষ্টির ওপর গুরুত্ব

তিন মাসের মধ্যে সাকিবের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন

শার্শার সীমান্ত এলাকায় ৬টি করাতকল বন্ধ করেছে বিজিবি

‘প্রয়োজনীয়’ অস্ত্র নিয়েই কাজ করছে পুলিশ : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ডিবির হারুনের সহযোগী জাহাঙ্গীরের স্থাপনাসহ আরেক প্লট জব্দের আদেশ

ছবি

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক: ছয় ও চার লেনের কাজে ধীরগতি, দুর্ভোগ চরমে

ছবি

নগর ভবনে তালা, ইশরাক সমর্থকদের বিক্ষোভ অব্যাহত

ছবি

সরকারি সেবা নিতে প্রায় ৩২ শতাংশ নাগরিককে ঘুষ দিতে হয়

আদালত থেকে পালালো হত্যা মামলার আসামি

দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা চূড়ান্ত, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ আগামী সপ্তাহে: ইসি

চাকরি অধ্যাদেশ বাতিল দাবি: প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে সচিবালয় কর্মচারীদের বিক্ষোভ

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দিবস পালনের সিদ্ধান্ত থাকবে সাধারণ ছুটি

গুমে জড়িত অনেকে ‘ক্ষমতার কেন্দ্রে’, ভিকটিমদের ভয় দেখাচ্ছে: গুমসংক্রান্ত কমিশন

ছবি

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে দ্বিমত

নাগরিক সেবায় অচলাবস্থা নিয়ে মুখ খুললেন আসিফ মাহমুদ

অস্ত্র, মাদক, সন্ত্রাস দমনে সেনাবাহিনীর নজরদারি জোরদার

ছবি

সরকারি সেবা নিতে গিয়ে ঘুষ-দুর্নীতির শিকার ৩২ শতাংশ নাগরিক: জরিপ

ছবি

৫ আগস্ট হবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দিবস, থাকবে সাধারণ ছুটি

তেহরান থেকে বাংলাদেশিরা নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন : ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব

ছবি

পররাষ্ট্র সচিব হলেন আসাদ আলম সিয়াম

ছবি

আইন মন্ত্রণালয়: ট্রুথ কমিশন নিয়ে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে

“পুলিশ প্রয়োজনীয় অস্ত্র নিয়েই কাজ করছে”—ঢামেকে গুলিবিদ্ধদের দেখতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

সচিবালয়ে ভবন অবরোধ করে কর্মচারীদের বিক্ষোভ

ছবি

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের পথে পাশে থাকবে যুক্তরাজ্য: ব্রিটিশ হাই কমিশনার

কেরাণীগঞ্জে ধর্ষণের দায়ে সৎবাবার মৃত্যুদণ্ড

যশোরে নগদের টাকা ছিনতাই: গাড়িচালকসহ ৭ জন গ্রেপ্তার

‘হতাশা’ রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র বিদ্রোহে ঠেলে দিতে পারে -ক্রাইসিস গ্রুপ

ছবি

চান্দিনার মাধাইয়া-নবাবপুর সড়ক যেন মরণফাঁদ

নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ডিএমপিকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ আইজিপির

বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবে অস্ট্রেলিয়া

তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় বাংলাদেশের কূটনীতিকের বাসভবন বিধ্বস্ত

ছবি

ডেঙ্গুর বিস্তার সারাদেশে, বরগুনায় মহামারী

সাধারণ স্কুলে কমছে শিক্ষার্থী মাদ্রাসায় বাড়ছে ভর্তি

tab

জাতীয়

নানা ফল নিয়ে মেলা বসেছে ফার্মগেইটে, দেশি ফলের উৎসবে পুষ্টির আহ্বান

শাফিউল আল ইমরান

বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

কাঠলিচু, সফেদা, ড্রাগন, জামসহ বিভিন্ন ধরনের ফল নিয়ে মেলা বসেছে ঢাকার ফার্মগেইটে।সেখানে লিচু, আম, জাম, কাঁঠাল, আনারস, পেয়ারা, কামরাঙা থেকে শুরু করে বিলুপ্তপ্রায় বেত ফল, ডেউয়া, আতাফল—সবই মিলছে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন চত্বরে। গতকাল বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া এ মেলা চলবে শনিবার পর্যন্ত।

রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) প্রাঙ্গণে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী জাতীয় ফল মেলায়। ফলের রঙে, গন্ধে, স্বাদে এবং বৈচিত্র্যে রীতিমতো মাতোয়ারা দর্শনার্থীরা।

‘দেশি ফল বেশি খাই, আসুন ফলের গাছ লাগাই’—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে কৃষি মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ মেলা উদ্বোধন করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেন।

উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমরা চালের ক্ষেত্রে যেমন আত্মনির্ভরতা অর্জন করেছি, এবার ফলের ক্ষেত্রেও তা অর্জনের লক্ষ্য রাখছি। পুষ্টির চাহিদা পূরণে ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।’

‘বর্তমানে যেখানে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন কমপক্ষে ২০০ গ্রাম ফল খাওয়া প্রয়োজন, সেখানে আমরা খাচ্ছি মাত্র ৫৫-৬০ গ্রাম। এ ব্যবধান কমানোই সরকারের অন্যতম লক্ষ্য।’

বর্তমানে বিদেশে বাংলাদেশের ফল রপ্তানি করা হচ্ছে জানিয়ে কৃষি উপদেষ্টা বলেন, আপনারা শুনে খুশি হবেন, আমরা বিদেশে প্রচুর পরিমাণে আম, কাঁঠাল, পেয়ারা ইত্যাদি পাঠাচ্ছি। চীনে আমাদের নতুনভাবে আম পাঠানো শুরু হয়েছে। রপ্তানি বাড়লে কৃষকরা উপকৃত হবেন। আমরা যেন বেশি করে দেশি ফল খাই। এ ফল খেলে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রাও অনেক সাশ্রয় হবে।’

মেলায় সরকারি ২৬টি এবং বেসরকারি ৪৯টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। বিভিন্ন স্টলে দেশি ফলের পাশাপাশি উপস্থাপিত হয়েছে ফল চাষে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, উচ্চফলনশীল জাত এবং রাসায়নিকমুক্ত উৎপাদনের উদাহরণ।

এবারের ফল প্রদর্শনীতে ৬০ জাতের আম নিয়ে এসেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এসব আমের নামও বেশ বাহারি। যেমন- বিশ্বনাথ চ্যাটার্জি, গৌড়মতি, কালোপাহাড়, কুয়াপাহাড়ি, রানীপছন্দ, মল্লিকা, ক্ষীরশাপাতি, আনন্দপুরি, বাদশাভোগ, গ্রেট বোম্বাই ইত্যাদি। এছাড়া দুই শতাধিক দেশি ফলের সমাহার দেখা গেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের স্টলে।

দেশীয় কয়েকশ’ ফলের সমাহার বসিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনও। কাউফল, করমচা, ডেউয়া, আঁশফল, গাব, জগডুমুর, চাম্বুল, আতাফল, ডুমুর, চালতা, অরবরই, বিলিম্বি, শরিফা, সাতকরা, তৈকর, ডেফল, লুকলুকি, বৈচি, মুনিয়ার মতো বিলুপ্তপ্রায় ফল সংস্থাটির স্টলে দেখা গেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পার্টনার প্রকল্প মেলায় এনেছে উত্তম কৃষি চর্চার(গ্যাপ) মাধ্যমে ফল চাষের প্রযুক্তি। উত্তম কৃষি চর্চার মাধ্যমে চাষ করা ফল তাদের স্টলে শোভা পাচ্ছে।

রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের স্টলে মিলছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা রপ্তানির আম। বিদেশে কীভাবে আম রপ্তানি হয়, তা দর্শনার্থীদের জানাচ্ছেন প্রকল্পের কর্মকর্তারা। রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনের কলাকৌশলও দর্শনার্থীরা আগ্রহ ভরে জেনে নিচ্ছেন।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান মেলা দেখতে এসে বলেন, ‘এখানে এমন অনেক ফল দেখছি, যেগুলোর নামও আগে শুনিনি। নতুন জাত ও প্রযুক্তি নিয়ে অনেক কিছু জানতেও পারছি।’

ময়মনসিংহের যমযম ফুডসে বিক্রি হচ্ছে লালচিনি, জায়তুন তেল, কালোজিরার তেল, নারিকেল চিড়া, মণ্ডাসহ বিভিন্ন অর্গানিক ও শুকনা খাবার। মেলার শেষদিন পর্যন্ত দোকানটিতে ৩০ শতাংশ ছাড় চলবে বলে জানিয়েছেন যমযম ফুডসের কর্ণধার খোরশেদ আলম।

মেলায় দেখা মিলছে বিভিন্ন দেশি ফলের। ডেউয়া, সফেদা, বিলাতি গাব, করমচা, কাউফল, শরিফা, অড়বরই, বেতফল ও লটকনের মতো ফলগুলো আগ্রহভরে দেখছিলেন মেলায় আসা দর্শনার্থীরা। অনেকে মোবাইল ফোনে ছবি তুলে নিচ্ছিলেন।

আদাবর থেকে আসা মার্সিয়া আক্তার বলেন, “মেলায় এমন সব জিনিস পাওয়া যায়, যেগুলো অন্য কোথাও পাওয়া যায় না, সেজন্যই আসা।”

রাজধানীর ধানমণ্ডি থেকে আসা আফরোজা বেগম তেমনি একজন৷ তিনি মেলায় ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন ফলের ছবি তুলছিলেন। তিনি বললেন, ‘এখানে এমনও অনেক ফল দেখছি, যেগুলো আগে দেখার সুযোগ হয়নি।’

অনেকে দেশি ফল দেখে শৈশবে ফিরে যাচ্ছিলেন। উত্তরা থেকে আসা মাহমুদুর রহমান মাকে নিয়ে মেলায় এসেছেন৷ কয়েকটি ফল দেখিয়ে তিনি বললেন, ‘আগে এই ফলগুলো আমাদের বাড়িতে হতো কিংবা স্থানীয় বাজারেও পাওয়া যেত। এখন আর পাওয়া যায় না৷’

মেলা উপলক্ষে রাজধানীর কৃষি গবেষণা কাউন্সিল মিলনায়তনে ‘স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও বাণিজ্যিকীকরণে দেশি ফল: বর্তমান প্রেক্ষিত, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতির বক্তব্যে কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ‘দেশীয় ফলের উৎস, স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বিশ্বমানের। আমাদের কাজ হচ্ছে এগুলোর সংরক্ষণ, প্রচার ও বাজার সম্প্রসারণ।’

মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘দেশি ফলের অনেক জাত জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতেও টিকে থাকতে সক্ষম। পাশাপাশি কৃষকদের আয়ের নতুন দ্বারও খুলছে এসব ফল।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পরিচালক (প্রশাসন) মো. হাবিবউল্লাহ্ বলেন, জাতীয় ফল মেলা শুধু একটি প্রদর্শনী নয়, বরং এটা ফল চাষ, পুষ্টি, অর্থনীতি ও কৃষিনির্ভর সমাজের মধ্যে মেলবন্ধন তৈরি করছে। এখানে আছে কৃষক, গবেষক, ভোক্তা ও নীতিনির্ধারকদের কণ্ঠ। সরকারি-বেসরকারি অংশগ্রহণ, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, দেশের সব জেলায় বিস্তার এবং সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে এমন মেলা দেশি-দেশি ফলভিত্তিক একটি টেকসই বাজার ও সচেতনতা গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দেশি ফলকে বাঁচিয়ে পুষ্টির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব—এটাই জাতীয় ফল মেলার বড় বার্তা।

রাজধানীর পাশাপাশি এবার দেশের ৬৪টি জেলার ৪৩১টি উপজেলাতেও স্থানীয় ফল মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এতে স্থানীয় কৃষক, গবেষক এবং সাধারণ মানুষ একসঙ্গে মেলে ধরার সুযোগ পাচ্ছেন দেশি ফলের সম্ভাবনা ও পুষ্টি–বাণিজ্যের চিত্র।

back to top