বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে বৃহস্পতিবার শপথ পড়ানোর দাবিতে নগর ভবনের সামনে তার সমর্থকদের বিক্ষোভ -সংবাদ
রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড থেকে খাজনা দিতে এসেছিলেন হাবিব। ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য মিরপুর থেকে এসেছিলেন এইচ এম ইলিয়াচ।
এই দুজনের মতো অনেককেই নগর ভবন থেকে সেবা না পেয়ে ফিরে যেতে হয়েছে বৃহস্পতিবার,(১৯ জুন ২০২৫)। কেননা বৃহস্পতিবার ও নগর ভবন ছিল তালাবদ্ধ। বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভ করেন তার সমর্থকরা।
‘আমার দিনটাই আজকা চইলা গেল, অন্য কাজে যেতাম সেটাও হলো না’ বলেন নগর ভবনে সেবা নিতে আসা এইচ এম ইলিয়াচ
‘এক-দুই-তিন-চার, আসিফ তুই স্বৈরাচার; দফা এক দাবি এক, আসিফের পদত্যাগ; শপথ নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না;
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নগর ভবনের অভ্যর্থনা ও তথ্য কেন্দ্রে একজন বসে আছেন। নাগরিক সেবা নিতে যারাই আসছেন, তাদের বলছেন ‘দু-একদিন পড়ে আইসেন’।
মিজানুর রহমান নামের ওই ব্যক্তি সংবাদকে বলেন, ‘সব ডিপার্টমেন্ট বন্ধ। আমি নগর ভবনের অন্য ডিপার্টমেন্টের স্টাফ। এখানে লোক নাইতো, তাই বইসা আছি জাস্ট পাবলিকের মতো।’
হতাশায় ফিরতে থাকা সেবাপ্রত্যাশী হাবিব সংবাদকে বলেন, ‘আমি ভাবছিলাম আন্দোলন হয়তো শেষ হয়ে গেছে। তারা (নগর ভবন স্টাফ) বললেন, আপাতত কার্যক্রম বন্ধ।’
‘আমরা সেবাপ্রত্যাশী, সেবা আমরা চাইব। সরকারি কাজগুলো তো করতে হবে। বাড়ির খাজনা দেয়া, সেটা না করে বিকল্প তো কোনো ওয়ে নাই। সেবা যদি সঠিক সময়ে না পাওয়া যায়, সেটা একটা সমস্যা। ঢাকা শহরে জ্যাম, সময় নষ্ট না?’
আরেক সেবাপ্রত্যাশী এইচ এম ইলিয়াচ। বলেন, ‘আমার দিনটাই আজকা চইলা গেল। অন্য কাজে যেতাম সেটাও হলো না। সেটা আমার ক্ষতি হলো।’ ‘দ্রুত এই সমস্যার নিরসন হোক এটাই চাই,’ প্রত্যাশা তার।
এ সময় সেখানে বিএনপি সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হাবিব গোলদার এবং একই থানার প্রচার সম্পাদক শুকুর আলীর নেতৃত্বে বিএনপিসহ দলটির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের স্লোগান চলছে, ‘এক-দুই-তিন-চার, আসিফ তুই স্বৈরাচার; আসিফের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে; আসিফের চামড়া, তুলে নেবো আমরা; দফা এক দাবি এক, আসিফের পদত্যাগ; শপথ নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না;
ইশরাক ভাই এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সাথে; দিয়েছি তো রক্ত, আরও দিব রক্ত, ‘দাবি মোদের একটাই ইশরাক ভাইকে মেয়র চাই; ডাক দিয়েছে ইশরাক ভাই, ঘরে থাকার সময় নাই।’ ‘আসিফ না ইশরাক, ইশরাক ইশরাক, জিয়ার সৈনিক এক হও লড়াই করো।’
গত ১৫ জুন নগর ভবনের কনফারেন্স রুমে একটি সভা করেন ইশরাক হোসেন। নগর ভবনে এটিই ছিল তার প্রথম সভা। সভার ব্যানারে ইশরাক হোসেনের নামের সঙ্গে ‘মাননীয় মেয়র’ লেখা ছিল। সভার প্রধান অতিথি ছিলেন ইশরাক।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৭০টি ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক, ওয়ার্ড সচিবের সঙ্গে বৈঠক করার পর একদিন আগে নগর ভবনে মশকনিধন কার্যক্রমের উদ্বোধন করলেন ইশরাক হোসেন। উদ্বোধন শেষে প্রতিটি ওয়ার্ডের মশক সুপারভাইজারদের নিয়ে নগর ভবন মিলনায়তনে বৈঠকে বসেন তিনি।
মশকনিধন কার্যক্রম উদ্বোধনের আগে ইশরাক হোসেন বলছিলেন, ‘আমাদের আন্দোলন চলমান থাকলেও নাগরিক জরুরি সেবাগুলোও আমাদের তত্ত্বাবধানে চলমান আছে। আমরা চাই, কোনোভাবেই যেন নাগরিক দুর্ভোগ না হয়। সামনে ডেঙ্গুর মৌসুম আসছে, ফলে মশকনিধন কার্যক্রম আরও জোরদার করতে আমরা আজ (গতকাল বুধবার) এই কার্যক্রম উদ্বোধন করছি।’
গত ১৪ মে থেকে নগর ভবনের সামনে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে ইশরাক সমর্থক ও বিএনপি নেতাকর্মীরা। পরে ডিএসসিসি কর্মচারী ইউনিয়নও তাতে যোগ দেয়।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে। এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু আইনি জটিলতার কথা বলে ইশরাকের শপথের আয়োজন থেকে বিরত থাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এমন পরিস্থিতিতে ইশরাক সমর্থকরা আন্দোলনে নামলে নগর ভবনের সেবা কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
তবে এ বিষয় বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, আর চুপ থাকার মতো পরিবেশ পরিস্থিতি নেই।
সরকারের উচ্চপর্যায়ে এটা নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত আসবে, বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, একই সঙ্গে আমরা যখন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের কথা বলি, সেটা রক্ষা করতে গেলে প্রত্যেকের কাছ থেকেই দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশিত। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে দায়িত্বশীল আচরণ করার চেষ্টা করছি। তবে যেভাবে নাগরিক সেবা ডেডলকের দিকে যাচ্ছে, আর চুপ থাকার মতো পরিবেশ পরিস্থিতি নেই। সরকারের উচ্চপর্যায়ে এটা নিয়ে কনসার্ন আছে। সেখানে আলোচনার ভিত্তিতে যেটা সিদ্ধান্ত আসে, আমি সেটাই বাস্তবায়ন করব।’
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে বৃহস্পতিবার শপথ পড়ানোর দাবিতে নগর ভবনের সামনে তার সমর্থকদের বিক্ষোভ -সংবাদ
বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫
রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড থেকে খাজনা দিতে এসেছিলেন হাবিব। ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য মিরপুর থেকে এসেছিলেন এইচ এম ইলিয়াচ।
এই দুজনের মতো অনেককেই নগর ভবন থেকে সেবা না পেয়ে ফিরে যেতে হয়েছে বৃহস্পতিবার,(১৯ জুন ২০২৫)। কেননা বৃহস্পতিবার ও নগর ভবন ছিল তালাবদ্ধ। বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভ করেন তার সমর্থকরা।
‘আমার দিনটাই আজকা চইলা গেল, অন্য কাজে যেতাম সেটাও হলো না’ বলেন নগর ভবনে সেবা নিতে আসা এইচ এম ইলিয়াচ
‘এক-দুই-তিন-চার, আসিফ তুই স্বৈরাচার; দফা এক দাবি এক, আসিফের পদত্যাগ; শপথ নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না;
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নগর ভবনের অভ্যর্থনা ও তথ্য কেন্দ্রে একজন বসে আছেন। নাগরিক সেবা নিতে যারাই আসছেন, তাদের বলছেন ‘দু-একদিন পড়ে আইসেন’।
মিজানুর রহমান নামের ওই ব্যক্তি সংবাদকে বলেন, ‘সব ডিপার্টমেন্ট বন্ধ। আমি নগর ভবনের অন্য ডিপার্টমেন্টের স্টাফ। এখানে লোক নাইতো, তাই বইসা আছি জাস্ট পাবলিকের মতো।’
হতাশায় ফিরতে থাকা সেবাপ্রত্যাশী হাবিব সংবাদকে বলেন, ‘আমি ভাবছিলাম আন্দোলন হয়তো শেষ হয়ে গেছে। তারা (নগর ভবন স্টাফ) বললেন, আপাতত কার্যক্রম বন্ধ।’
‘আমরা সেবাপ্রত্যাশী, সেবা আমরা চাইব। সরকারি কাজগুলো তো করতে হবে। বাড়ির খাজনা দেয়া, সেটা না করে বিকল্প তো কোনো ওয়ে নাই। সেবা যদি সঠিক সময়ে না পাওয়া যায়, সেটা একটা সমস্যা। ঢাকা শহরে জ্যাম, সময় নষ্ট না?’
আরেক সেবাপ্রত্যাশী এইচ এম ইলিয়াচ। বলেন, ‘আমার দিনটাই আজকা চইলা গেল। অন্য কাজে যেতাম সেটাও হলো না। সেটা আমার ক্ষতি হলো।’ ‘দ্রুত এই সমস্যার নিরসন হোক এটাই চাই,’ প্রত্যাশা তার।
এ সময় সেখানে বিএনপি সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হাবিব গোলদার এবং একই থানার প্রচার সম্পাদক শুকুর আলীর নেতৃত্বে বিএনপিসহ দলটির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের স্লোগান চলছে, ‘এক-দুই-তিন-চার, আসিফ তুই স্বৈরাচার; আসিফের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে; আসিফের চামড়া, তুলে নেবো আমরা; দফা এক দাবি এক, আসিফের পদত্যাগ; শপথ নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না;
ইশরাক ভাই এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সাথে; দিয়েছি তো রক্ত, আরও দিব রক্ত, ‘দাবি মোদের একটাই ইশরাক ভাইকে মেয়র চাই; ডাক দিয়েছে ইশরাক ভাই, ঘরে থাকার সময় নাই।’ ‘আসিফ না ইশরাক, ইশরাক ইশরাক, জিয়ার সৈনিক এক হও লড়াই করো।’
গত ১৫ জুন নগর ভবনের কনফারেন্স রুমে একটি সভা করেন ইশরাক হোসেন। নগর ভবনে এটিই ছিল তার প্রথম সভা। সভার ব্যানারে ইশরাক হোসেনের নামের সঙ্গে ‘মাননীয় মেয়র’ লেখা ছিল। সভার প্রধান অতিথি ছিলেন ইশরাক।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৭০টি ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক, ওয়ার্ড সচিবের সঙ্গে বৈঠক করার পর একদিন আগে নগর ভবনে মশকনিধন কার্যক্রমের উদ্বোধন করলেন ইশরাক হোসেন। উদ্বোধন শেষে প্রতিটি ওয়ার্ডের মশক সুপারভাইজারদের নিয়ে নগর ভবন মিলনায়তনে বৈঠকে বসেন তিনি।
মশকনিধন কার্যক্রম উদ্বোধনের আগে ইশরাক হোসেন বলছিলেন, ‘আমাদের আন্দোলন চলমান থাকলেও নাগরিক জরুরি সেবাগুলোও আমাদের তত্ত্বাবধানে চলমান আছে। আমরা চাই, কোনোভাবেই যেন নাগরিক দুর্ভোগ না হয়। সামনে ডেঙ্গুর মৌসুম আসছে, ফলে মশকনিধন কার্যক্রম আরও জোরদার করতে আমরা আজ (গতকাল বুধবার) এই কার্যক্রম উদ্বোধন করছি।’
গত ১৪ মে থেকে নগর ভবনের সামনে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে ইশরাক সমর্থক ও বিএনপি নেতাকর্মীরা। পরে ডিএসসিসি কর্মচারী ইউনিয়নও তাতে যোগ দেয়।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে। এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু আইনি জটিলতার কথা বলে ইশরাকের শপথের আয়োজন থেকে বিরত থাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এমন পরিস্থিতিতে ইশরাক সমর্থকরা আন্দোলনে নামলে নগর ভবনের সেবা কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
তবে এ বিষয় বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, আর চুপ থাকার মতো পরিবেশ পরিস্থিতি নেই।
সরকারের উচ্চপর্যায়ে এটা নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত আসবে, বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, একই সঙ্গে আমরা যখন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের কথা বলি, সেটা রক্ষা করতে গেলে প্রত্যেকের কাছ থেকেই দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশিত। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে দায়িত্বশীল আচরণ করার চেষ্টা করছি। তবে যেভাবে নাগরিক সেবা ডেডলকের দিকে যাচ্ছে, আর চুপ থাকার মতো পরিবেশ পরিস্থিতি নেই। সরকারের উচ্চপর্যায়ে এটা নিয়ে কনসার্ন আছে। সেখানে আলোচনার ভিত্তিতে যেটা সিদ্ধান্ত আসে, আমি সেটাই বাস্তবায়ন করব।’