alt

জাতীয়

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক: ছয় ও চার লেনের কাজে ধীরগতি, দুর্ভোগ চরমে

দুই বছরের কাজে এগিয়েছে মাত্র ১৫ শতাংশ, ৬ ঘণ্টার রাস্তা পাড়ি দিতে সময় লাগছে ১১ ঘণ্টা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, সিলেট : বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক উন্নয়ন কাজে ধীরগতি, দুর্ভোগে এই সড়কে চলাচলকারীরা -সংবাদ

ঈদের ছুটি শেষে কাজে যোগ দিতে গত শনিবার রাতে কর্মস্থল ঢাকার উদ্দেশে বাসে সিলেট থেকে যাত্রা করেন আব্দুল কাইয়ুম। ২৩৫ কিলোমিটার দূরত্বের সিলেট থেকে বাসে ঢাকা যেতে সময় লাগে প্রায় ৬ ঘণ্টা। সে হিসেবে ভোরের আগেই সিলেটের জকিগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা কাইয়ুমের ঢাকায় পৌঁছে যাওয়ার কথা। কিন্তু তিনি ঢাকায় পৌঁছান পরদিন সকাল ১১টায়। তার সময় লাগে প্রায় ১১ ঘণ্টা।বিরক্তিকর এই ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে কাইয়ুম বলেন, এই সড়ক সম্প্রসারণের কাজ চলছে। তাই সড়কের অনেকটা জুড়ে মাটি, বালু, পাথরসহ বিভিন্ন সামগ্রী পড়ে আছে। বৃষ্টিতে আরও করুণ দশা। পুরো সড়ক কাদাময়। ফলে দুর্ঘটনা এড়াতে যানবাহনের গতি কমিয়ে আনতে হয়। তিনি বলেন, সিলেট থেকে মাধবপুর পর্যন্ত তবু মোটামুটি গতিতে গাড়ি চলেছে। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঢোকার পর থেকেই দীর্ঘ যানজটে পড়তে হয়। এই যানজট একেবারে ঢাকা পর্যন্ত ছিল। ফলে পাঁচ মিনিট গাড়ি চলে তো আধাঘণ্টা থেমে থাকে- এভাবেই আসতে হয়েছে।

একই অভিজ্ঞতা এই মহাসড়ক ব্যবহারকারী নরসিংদীর মো. শফিকুর রহমানের। তিনি বলেন, ‘রাজধানী থেকে নরনিসংদীর দূরত্ব মাত্র ৫৪ কিলোমিটার। আমার বাড়ি মহাসড়কের পাশেই। বাসে ঢাকার গুলিস্তান থেকে সেখানে যেতে সাধারণত সোয়া এক ঘণ্টা থেকে দেড়ঘণ্টা। কিন্তু এখন সেখানে তিন থেকে চার ঘণ্টা ব্যয় হয়। বিশেষ করে ছয় লেন ও চার লেনের কাজের জন্য কাঁচপুরসহ কয়েকটি পয়েন্টে যানজটে একেবারে নাজেহাল হতে হয়।’

তিনি আরও বলেন, আমাকে প্রতি সপ্তাহেই বাড়ি যেতে হয়। কিন্তু পথের ক্লান্তিতে একদিন বেকার যায়। কোনো কাজই হয় না। যেখানে দিনে গিয়ে কাজ শেষে আবার দিনেই ফেরা যায়, সেখানে একটা দিনের কর্মঘণ্টা পথেই শেষ হয়।

এই অভিজ্ঞতা সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট-ঢাকা সড়কে চলাচলকারী প্রায় সব যাত্রীদেরই। এ মহাসড়কটি অন্তত ১৬টি জেলার যাত্রীদেরকে যুক্ত করেছে। কিন্তু ভাঙাচোরা এই সড়কে দুই বছর ধরেই যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি যানজট হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল বিশ্বরোড থেকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর পর্যন্ত অংশে।

ঈদ বা যেকোনো ছুটি থাকলে তো আর কথাই নেই। সড়কে যানবাহন ও যাত্রীর চাপ বাড়লে তো পরিস্থিতি আরও নাজুক আকার ধারণ করে। ৫/৬ ঘণ্টার পথ পেরোতে ১৬/১৭ ঘণ্টাও লেগে যায়। এতে করে এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

এই সড়কে দু’টি প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে জানা গেছে। জানা যায়, ঢাকা-সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীকরণের কাজ চলছে। প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। এই দুই প্রকল্পের কাজই চলছে একেবারে ধীরগতিতে। আশুগঞ্জ-আখাউড়া চারলেনের কাজ মাঝখানে কিছুদিন বন্ধু ছিল।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অংশের চলমান কাজের কারণে দীর্ঘদিন ধরে সড়কের একপাশ দিয়ে যানবাহন চলাচল করে। ফলে এই অংশে সবসময়ই লেগে থাকে দীর্ঘ যানজট।

সিলেট থেকে নিয়মিত ঢাকায় যাতায়াত করতে হয় ব্যবসায়ী ফয়সল আলমকে। তিনি বলেন, সবসময় ট্রেনের টিকেট পাওয়া যায় না। ফলে বাধ্য হয়ে অনেক সময় বাসে যেতে হয়। কিন্তু এই সড়কে বাসে করে যাতায়াতের দুর্ভোগের শেষ নেই। তিনি আরও বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে ছয় লেনের কাজ চলছে। এভাবে চলতে থাকলে ১০ বছরেও কাজ শেষ হবে না। ফয়সল বলেন, সড়কের এই দুরবস্থার সুযোগে সিলেট-ঢাকা রুটে বিমান ভাড়াও বাড়িয়ে দ্বিগুণ করে ফেলা হয়েছে।

কেবল যাত্রীরা নয়, সড়কের বেহাল দশার কারণে চালকদেরও নাভিশ্বাস উঠে গেছে। মিতালী বাসের চালক গউছ উদ্দিন বলেন, সড়কের এমন বেহাল অবস্থা যে আমরা যাত্রীদের কেবল যাত্রার সময় বলি। পৌঁছার সময়ের ব্যাপারে কোন নিশ্চয়তা দেই না। আগে ঢাকা-সিলেট একদিনে যাওয়া-আসা করতে পারতাম। এখন কেবল যেতেই একদিন লেগে যায়।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সিলেট অংশের হুমায়ুন রশীদ চত্বর থেকে শেরপুর পর্যন্ত অংশ ঘুরে দেখা যায়, মহাসড়কটির বিভিন্ন স্থানে একপাশ বন্ধ রেখে সম্প্রসারণ কাজ চলছে। বেশ কয়েকটি স্থানে চলছে সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ কাজ। অনেক জায়গায় মাটি ভরাট ও জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। নির্মাণ কাজের কারণে সড়ক সরু হয়ে যাওয়ায় প্রতিদিন দেখা দিচ্ছে যানজটের। এছাড়া সড়কের অনেক জায়গায় খানাখন্দেরও সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে বেড়েছে ভোগান্তি। বিভিন্ন স্থানে সড়ক দেবে গেছে, কোথাও তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্তের। এসব কারণে এই মহাসড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনাও।

ছয় লেনের কাজ চলমান থাকায় এখন ভাঙাচোড়া অংশও সংস্কার করছে না সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। যদিও তবে সড়ক ও জনপথ অধিপ্তরের কর্মকর্তা এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মূল সড়কে এখন উন্নয়ন কাজ হচ্ছে না। সড়কের পাশে কাজ করা হচ্ছে। ছয় লেনের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে মহাসড়কের সংস্কার কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। তাই একদিকে সম্প্রসারণ কাজের জন্য ভোগান্তি, অন্যদিকে ভাঙাচোরা মহাসড়কের কারণে এখন ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন জানান, মহাসড়কটি নতুন করে নির্মাণ হচ্ছে। দুই লেনের মহাসড়কটি ছয় লেন হচ্ছে। তাই পুরনো সড়কে খুব বেশি ব্যয় করা হচ্ছে না। যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন কেবল ততটুকু করা হচ্ছে।

ছয় লেনের কাজ দুই বছরে কাজ এগিয়েছে মাত্র ১৫ শতাংশ

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ছয় লেনের কাজ ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হলেও দুই বছরে কাজ এগিয়েছে মাত্র ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ। জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় কাজ হচ্ছে ধীরগতিতে। বর্তমান সড়কের দু’পাশে ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণের কাজ চলছে।

ঢাকা সিলেট ৬ লেন প্রকল্পের সিলেট অংশের প্রজেক্ট ম্যানেজার দেবাশীষ রায় বলেন, প্রকল্পের কাজ এখন পর্যন্ত ১৫/১৬ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। আমাদের ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা ছিল। এ কারণে কাজ আশানুরূপ এগোয়নি। তবে এখন জটিলতা অনেকটা কেটে গেছে। এখন দ্রুত গতিতেই কাজ এগিয়ে চলবে।

এই প্রকল্পের আওতায় নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে সিলেট পর্যন্ত ২০৯ কিলোমিটার সড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ সম্প্রসারণ এবং সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের ৫৬ দশমিক ১৬ কিলোমিটার এলাকা চার লেনে উন্নীতকরণ করার কথা। আগামী বছরের ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা।

তিন মাস বন্ধ ছিল চার লেন প্রকল্পের কাজ

গত ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর প্রায় তিন মাস বন্ধ ছিল আশুগঞ্জ-আখাউড়া ৫১ কিলোমিটার সড়কে চার লেন প্রকল্পের কাজ। যদিও নভেম্বর থেকে আবার এই সড়কের কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের কাজের কারণে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে প্রায়ই অচলাবস্থা দেখা দেয়।

জানা যায়, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রকল্পে নিয়োজিত ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজ দেশে চলে যাওয়ায় বন্ধ ছিল নির্মাণকাজ। ফলে আশুগঞ্জ-আখাউড়া চার লেন জাতীয় মহাসড়ক প্রকল্প নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল।

এই সড়কে চলাচলকারী একাধিক বাস চালক জানান, এই মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় খানাখন্দের কারণে যান চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়। মহাসড়কের আশুগঞ্জ থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত ১২ দশমিক ২১ কিলোমিটার; এ অংশ জুড়ে আছে খানাখন্দ ও ছোট-বড় গর্ত। যে কারণে এখানে গাড়ির সর্বোচ্চ গতিবেগ নেমে আসে ১০ কিলোমিটারে। এই ১২ কিলোমিটার এলাকায় সবসময় দীর্ঘ জানজট লেগে থাকে।

চার লেন মহাসড়ক প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. শামীম আহমেদ বলেন, এখন পুরোদমে কাজ এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রায় ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তবে পুরো কাজ শেষ করতে প্রকল্পের মেয়াদ আরও বাড়তে পারে।

সাঁওতালদের জমিতে ইপিজেড নির্মাণ নয়, ১৩ সংগঠনের দাবি

গণতান্ত্রিক যাত্রায় বাংলাদেশকে সহায়তা দেবে ব্রিটেন: সারাহ কুক

‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠ্যক্রম সরকার নিয়ন্ত্রণ করবে’

ছবি

ফার্মগেটের ফলের মেলায় পুষ্টির ওপর গুরুত্ব

তিন মাসের মধ্যে সাকিবের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন

শার্শার সীমান্ত এলাকায় ৬টি করাতকল বন্ধ করেছে বিজিবি

‘প্রয়োজনীয়’ অস্ত্র নিয়েই কাজ করছে পুলিশ : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ডিবির হারুনের সহযোগী জাহাঙ্গীরের স্থাপনাসহ আরেক প্লট জব্দের আদেশ

ছবি

নগর ভবনে তালা, ইশরাক সমর্থকদের বিক্ষোভ অব্যাহত

ছবি

সরকারি সেবা নিতে প্রায় ৩২ শতাংশ নাগরিককে ঘুষ দিতে হয়

আদালত থেকে পালালো হত্যা মামলার আসামি

দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা চূড়ান্ত, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ আগামী সপ্তাহে: ইসি

চাকরি অধ্যাদেশ বাতিল দাবি: প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে সচিবালয় কর্মচারীদের বিক্ষোভ

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দিবস পালনের সিদ্ধান্ত থাকবে সাধারণ ছুটি

গুমে জড়িত অনেকে ‘ক্ষমতার কেন্দ্রে’, ভিকটিমদের ভয় দেখাচ্ছে: গুমসংক্রান্ত কমিশন

ছবি

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে দ্বিমত

নাগরিক সেবায় অচলাবস্থা নিয়ে মুখ খুললেন আসিফ মাহমুদ

অস্ত্র, মাদক, সন্ত্রাস দমনে সেনাবাহিনীর নজরদারি জোরদার

ছবি

সরকারি সেবা নিতে গিয়ে ঘুষ-দুর্নীতির শিকার ৩২ শতাংশ নাগরিক: জরিপ

ছবি

৫ আগস্ট হবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দিবস, থাকবে সাধারণ ছুটি

তেহরান থেকে বাংলাদেশিরা নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন : ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব

ছবি

পররাষ্ট্র সচিব হলেন আসাদ আলম সিয়াম

ছবি

নানা ফল নিয়ে মেলা বসেছে ফার্মগেইটে, দেশি ফলের উৎসবে পুষ্টির আহ্বান

ছবি

আইন মন্ত্রণালয়: ট্রুথ কমিশন নিয়ে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে

“পুলিশ প্রয়োজনীয় অস্ত্র নিয়েই কাজ করছে”—ঢামেকে গুলিবিদ্ধদের দেখতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

সচিবালয়ে ভবন অবরোধ করে কর্মচারীদের বিক্ষোভ

ছবি

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের পথে পাশে থাকবে যুক্তরাজ্য: ব্রিটিশ হাই কমিশনার

কেরাণীগঞ্জে ধর্ষণের দায়ে সৎবাবার মৃত্যুদণ্ড

যশোরে নগদের টাকা ছিনতাই: গাড়িচালকসহ ৭ জন গ্রেপ্তার

‘হতাশা’ রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র বিদ্রোহে ঠেলে দিতে পারে -ক্রাইসিস গ্রুপ

ছবি

চান্দিনার মাধাইয়া-নবাবপুর সড়ক যেন মরণফাঁদ

নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ডিএমপিকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ আইজিপির

বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবে অস্ট্রেলিয়া

তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় বাংলাদেশের কূটনীতিকের বাসভবন বিধ্বস্ত

ছবি

ডেঙ্গুর বিস্তার সারাদেশে, বরগুনায় মহামারী

সাধারণ স্কুলে কমছে শিক্ষার্থী মাদ্রাসায় বাড়ছে ভর্তি

tab

জাতীয়

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক: ছয় ও চার লেনের কাজে ধীরগতি, দুর্ভোগ চরমে

দুই বছরের কাজে এগিয়েছে মাত্র ১৫ শতাংশ, ৬ ঘণ্টার রাস্তা পাড়ি দিতে সময় লাগছে ১১ ঘণ্টা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, সিলেট

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক উন্নয়ন কাজে ধীরগতি, দুর্ভোগে এই সড়কে চলাচলকারীরা -সংবাদ

বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

ঈদের ছুটি শেষে কাজে যোগ দিতে গত শনিবার রাতে কর্মস্থল ঢাকার উদ্দেশে বাসে সিলেট থেকে যাত্রা করেন আব্দুল কাইয়ুম। ২৩৫ কিলোমিটার দূরত্বের সিলেট থেকে বাসে ঢাকা যেতে সময় লাগে প্রায় ৬ ঘণ্টা। সে হিসেবে ভোরের আগেই সিলেটের জকিগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা কাইয়ুমের ঢাকায় পৌঁছে যাওয়ার কথা। কিন্তু তিনি ঢাকায় পৌঁছান পরদিন সকাল ১১টায়। তার সময় লাগে প্রায় ১১ ঘণ্টা।বিরক্তিকর এই ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে কাইয়ুম বলেন, এই সড়ক সম্প্রসারণের কাজ চলছে। তাই সড়কের অনেকটা জুড়ে মাটি, বালু, পাথরসহ বিভিন্ন সামগ্রী পড়ে আছে। বৃষ্টিতে আরও করুণ দশা। পুরো সড়ক কাদাময়। ফলে দুর্ঘটনা এড়াতে যানবাহনের গতি কমিয়ে আনতে হয়। তিনি বলেন, সিলেট থেকে মাধবপুর পর্যন্ত তবু মোটামুটি গতিতে গাড়ি চলেছে। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঢোকার পর থেকেই দীর্ঘ যানজটে পড়তে হয়। এই যানজট একেবারে ঢাকা পর্যন্ত ছিল। ফলে পাঁচ মিনিট গাড়ি চলে তো আধাঘণ্টা থেমে থাকে- এভাবেই আসতে হয়েছে।

একই অভিজ্ঞতা এই মহাসড়ক ব্যবহারকারী নরসিংদীর মো. শফিকুর রহমানের। তিনি বলেন, ‘রাজধানী থেকে নরনিসংদীর দূরত্ব মাত্র ৫৪ কিলোমিটার। আমার বাড়ি মহাসড়কের পাশেই। বাসে ঢাকার গুলিস্তান থেকে সেখানে যেতে সাধারণত সোয়া এক ঘণ্টা থেকে দেড়ঘণ্টা। কিন্তু এখন সেখানে তিন থেকে চার ঘণ্টা ব্যয় হয়। বিশেষ করে ছয় লেন ও চার লেনের কাজের জন্য কাঁচপুরসহ কয়েকটি পয়েন্টে যানজটে একেবারে নাজেহাল হতে হয়।’

তিনি আরও বলেন, আমাকে প্রতি সপ্তাহেই বাড়ি যেতে হয়। কিন্তু পথের ক্লান্তিতে একদিন বেকার যায়। কোনো কাজই হয় না। যেখানে দিনে গিয়ে কাজ শেষে আবার দিনেই ফেরা যায়, সেখানে একটা দিনের কর্মঘণ্টা পথেই শেষ হয়।

এই অভিজ্ঞতা সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট-ঢাকা সড়কে চলাচলকারী প্রায় সব যাত্রীদেরই। এ মহাসড়কটি অন্তত ১৬টি জেলার যাত্রীদেরকে যুক্ত করেছে। কিন্তু ভাঙাচোরা এই সড়কে দুই বছর ধরেই যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি যানজট হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল বিশ্বরোড থেকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর পর্যন্ত অংশে।

ঈদ বা যেকোনো ছুটি থাকলে তো আর কথাই নেই। সড়কে যানবাহন ও যাত্রীর চাপ বাড়লে তো পরিস্থিতি আরও নাজুক আকার ধারণ করে। ৫/৬ ঘণ্টার পথ পেরোতে ১৬/১৭ ঘণ্টাও লেগে যায়। এতে করে এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

এই সড়কে দু’টি প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে জানা গেছে। জানা যায়, ঢাকা-সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীকরণের কাজ চলছে। প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। এই দুই প্রকল্পের কাজই চলছে একেবারে ধীরগতিতে। আশুগঞ্জ-আখাউড়া চারলেনের কাজ মাঝখানে কিছুদিন বন্ধু ছিল।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অংশের চলমান কাজের কারণে দীর্ঘদিন ধরে সড়কের একপাশ দিয়ে যানবাহন চলাচল করে। ফলে এই অংশে সবসময়ই লেগে থাকে দীর্ঘ যানজট।

সিলেট থেকে নিয়মিত ঢাকায় যাতায়াত করতে হয় ব্যবসায়ী ফয়সল আলমকে। তিনি বলেন, সবসময় ট্রেনের টিকেট পাওয়া যায় না। ফলে বাধ্য হয়ে অনেক সময় বাসে যেতে হয়। কিন্তু এই সড়কে বাসে করে যাতায়াতের দুর্ভোগের শেষ নেই। তিনি আরও বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে ছয় লেনের কাজ চলছে। এভাবে চলতে থাকলে ১০ বছরেও কাজ শেষ হবে না। ফয়সল বলেন, সড়কের এই দুরবস্থার সুযোগে সিলেট-ঢাকা রুটে বিমান ভাড়াও বাড়িয়ে দ্বিগুণ করে ফেলা হয়েছে।

কেবল যাত্রীরা নয়, সড়কের বেহাল দশার কারণে চালকদেরও নাভিশ্বাস উঠে গেছে। মিতালী বাসের চালক গউছ উদ্দিন বলেন, সড়কের এমন বেহাল অবস্থা যে আমরা যাত্রীদের কেবল যাত্রার সময় বলি। পৌঁছার সময়ের ব্যাপারে কোন নিশ্চয়তা দেই না। আগে ঢাকা-সিলেট একদিনে যাওয়া-আসা করতে পারতাম। এখন কেবল যেতেই একদিন লেগে যায়।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সিলেট অংশের হুমায়ুন রশীদ চত্বর থেকে শেরপুর পর্যন্ত অংশ ঘুরে দেখা যায়, মহাসড়কটির বিভিন্ন স্থানে একপাশ বন্ধ রেখে সম্প্রসারণ কাজ চলছে। বেশ কয়েকটি স্থানে চলছে সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ কাজ। অনেক জায়গায় মাটি ভরাট ও জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। নির্মাণ কাজের কারণে সড়ক সরু হয়ে যাওয়ায় প্রতিদিন দেখা দিচ্ছে যানজটের। এছাড়া সড়কের অনেক জায়গায় খানাখন্দেরও সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে বেড়েছে ভোগান্তি। বিভিন্ন স্থানে সড়ক দেবে গেছে, কোথাও তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্তের। এসব কারণে এই মহাসড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনাও।

ছয় লেনের কাজ চলমান থাকায় এখন ভাঙাচোড়া অংশও সংস্কার করছে না সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। যদিও তবে সড়ক ও জনপথ অধিপ্তরের কর্মকর্তা এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মূল সড়কে এখন উন্নয়ন কাজ হচ্ছে না। সড়কের পাশে কাজ করা হচ্ছে। ছয় লেনের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে মহাসড়কের সংস্কার কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। তাই একদিকে সম্প্রসারণ কাজের জন্য ভোগান্তি, অন্যদিকে ভাঙাচোরা মহাসড়কের কারণে এখন ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন জানান, মহাসড়কটি নতুন করে নির্মাণ হচ্ছে। দুই লেনের মহাসড়কটি ছয় লেন হচ্ছে। তাই পুরনো সড়কে খুব বেশি ব্যয় করা হচ্ছে না। যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন কেবল ততটুকু করা হচ্ছে।

ছয় লেনের কাজ দুই বছরে কাজ এগিয়েছে মাত্র ১৫ শতাংশ

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ছয় লেনের কাজ ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হলেও দুই বছরে কাজ এগিয়েছে মাত্র ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ। জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় কাজ হচ্ছে ধীরগতিতে। বর্তমান সড়কের দু’পাশে ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণের কাজ চলছে।

ঢাকা সিলেট ৬ লেন প্রকল্পের সিলেট অংশের প্রজেক্ট ম্যানেজার দেবাশীষ রায় বলেন, প্রকল্পের কাজ এখন পর্যন্ত ১৫/১৬ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। আমাদের ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা ছিল। এ কারণে কাজ আশানুরূপ এগোয়নি। তবে এখন জটিলতা অনেকটা কেটে গেছে। এখন দ্রুত গতিতেই কাজ এগিয়ে চলবে।

এই প্রকল্পের আওতায় নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে সিলেট পর্যন্ত ২০৯ কিলোমিটার সড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ সম্প্রসারণ এবং সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের ৫৬ দশমিক ১৬ কিলোমিটার এলাকা চার লেনে উন্নীতকরণ করার কথা। আগামী বছরের ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা।

তিন মাস বন্ধ ছিল চার লেন প্রকল্পের কাজ

গত ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর প্রায় তিন মাস বন্ধ ছিল আশুগঞ্জ-আখাউড়া ৫১ কিলোমিটার সড়কে চার লেন প্রকল্পের কাজ। যদিও নভেম্বর থেকে আবার এই সড়কের কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের কাজের কারণে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে প্রায়ই অচলাবস্থা দেখা দেয়।

জানা যায়, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রকল্পে নিয়োজিত ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজ দেশে চলে যাওয়ায় বন্ধ ছিল নির্মাণকাজ। ফলে আশুগঞ্জ-আখাউড়া চার লেন জাতীয় মহাসড়ক প্রকল্প নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল।

এই সড়কে চলাচলকারী একাধিক বাস চালক জানান, এই মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় খানাখন্দের কারণে যান চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়। মহাসড়কের আশুগঞ্জ থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত ১২ দশমিক ২১ কিলোমিটার; এ অংশ জুড়ে আছে খানাখন্দ ও ছোট-বড় গর্ত। যে কারণে এখানে গাড়ির সর্বোচ্চ গতিবেগ নেমে আসে ১০ কিলোমিটারে। এই ১২ কিলোমিটার এলাকায় সবসময় দীর্ঘ জানজট লেগে থাকে।

চার লেন মহাসড়ক প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. শামীম আহমেদ বলেন, এখন পুরোদমে কাজ এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রায় ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তবে পুরো কাজ শেষ করতে প্রকল্পের মেয়াদ আরও বাড়তে পারে।

back to top