বোরোর মৌসুম মাত্র শেষ হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ফসল ভালো হয়েছে, আবার ফসল নষ্টও হয়নি। তারপরও বাড়লো চালের দাম। কেজিতে আট টাকা পর্যন্ত। হঠাৎ চালের দাম বাড়ায় ক্রেতা, বিক্রেতা উভয়েই অবাক হয়েছেন। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘সব মিলারের কারসাজি। বড় বড় কোম্পানি ধান কিনে স্টক করে রাখছে। এমন চলতেই থাকবে। কিছুই করার নাই।’
রাজধানী শ্যামলীর একটি খাবার হোটেলের ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন দুলাল সংবাদকে বলেন, ‘তিন দিন আগে যে মিনিকেট চাল পাইকারিতে কেজি কিনতাম ৭২ টাকায় সেটা হইছে ৮০ টাকা। কেজিতে ৮ টাকা বাড়ছে।
সুপার পাম তেলের দামও বাড়ছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ঈদের আগেই সুপার পাম অয়েল কেজি কিনছি ১৫৮ টাকায়, এখন ১৬৪ টাকা, কেজিতে ৬ টাকা বাড়ছে। দোকানদাররা বলছেন, দাম নাকি আরও বাড়বে।’
এখন তো চালের দাম বাড়া অযৌক্তিক, মাত্র বাজারে নতুন চাল নামলো,’ বলেন তিনি।
শুক্রবার,(২০ জুন ২০২৫) রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, শ্যামলী কাঁচাবাজার, কারওয়ানবাজার এবং সেগুনবাগিচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজার ও জাত, মানভেদে খুচরায় মিনিকেট নামক চাল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় আর বিআর আটাশ জাতের চাল ৬২ থেকে ৬৫ টাকায়।
রাজধানী মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট চালের পাইকারি আড়তের মেসার্স জামি এন্টার প্রাইজের স্বত্বাধিকারী ইকবাল সংবাদকে বলেন, ‘ঈদের আগ থেকে বাড়তে ছিল, ঈদের পর বেশি বাড়ছে। আগে যে মিনিকেট চাল পাইকারি দর ছিল কেজি ৬৮ টাকা, সেটা এখন ৭৪ টাকা। কেজিতে ৬ টাকা বাড়ছে।’
ভর মৌসুমে চালের দাম বাড়ার কারণ কী এই কৌতূহলের জবাবে রহস্য করলেন তিনি। বললেন ‘এটা কী হলো ভাই জানেন? ট্রাকের পেছনে লেখা থাকে জন্ম থেকে জ্বলছি। এ বিষয়টা তাই।’
ব্যাখ্যা করলেন, ‘যে সরকারই থাক কিছুই করতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘এখন তো আর কৃষকের কাছে তেমন ধান নাই। বড় বড় কোম্পানি যাদের বেশি টাকা আছে তারা ধান কিনে স্টক করে রাখছে। এমন চলতেই থাকবে। কিছুই করার নাই। প্রতিকার করার জন্য সরকারের একটাই রাস্তা আছে, সেটা হলো দেশের বাইরে থেকে চাল আমদানি করা।’
এই ব্যবসায়ী ব্যাংক লোন নিয়েও অভিযোগ করেন। বলেন, ‘ব্যাংক করে কি জানেন? মিল যে জায়গাটায় আছে সে জায়গার দাম ধরে ১০ টাকা আর পেছনের জায়গাটার দাম ৫ টাকা হলে সেটার দামও ধরে ১০ টাকা। মিলের দাম ১০ টাকা হলেও ব্যাংক তাকে ২০ টাকা দেয় লোন। ফাঁকা জায়গায় গোডাউন হলেও লোন দেয় ৩০ টাকা। একেকটা কোম্পানির একাধিক গোডাউন আছে। সেই টাকা দিয়ে ধান কিনে গোডাউন স্টক করে রাখে, এই কারণে দাম বাড়ে। এটার সমাধান একটাই সরকার লোনগুলো কমায় দিক। লোন দেয়ার সময় সঠিক যাচাই-বাছাই করে লোন দিক।’
তিনি এও বলেন, ‘দাম বাড়লে আমরা যে খুব মজা পাই, তা কিন্তু না। আমাদের ভিতরেও অনেক কষ্ট। কারণ গত মাসে একজন ২ হাজার টাকা দিয়ে এক বস্তা চাল নিয়েছে আর আজকে এলে ২১শ’ টাকা বস্তা চাইলাম। তখন ওই ক্রেতার কাছে জবাবদিহি করতে হয়। কিন্তু মিলাররা তো সেটা বোঝে না।’
ওই পাইকারি আড়তের আরেক চাল ব্যবসায়ী জাহিদ হাসান সংবাদকে বলেন, ‘মিলাররা সিন্ডিকেট কইরা দাম বাড়াইছে। আমরা যে রাম (যেমন দাম) কিনি, সেরাম বেচি।’ ‘চালের বাজার এখন ঠিক নাই,’ বলেও জানান জাহিদ।
চালের বাজারের পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় রাজধানী কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা মেসার্স নিউ সেনবাগ রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মুনসুর আহমেদের সঙ্গে। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘চার-পাঁচ দিনে চালের দাম কেজিতে ছয়-সাত টাকা বাড়ছে। বেশি দাম বাড়ছে মিনিকেটে, কেজিতে ছয়-সাত টাকা আর অন্যান্য চালে দুই-তিন টাকা বাড়ছে। ভালো মানের মিনিকেট ৮০ টাকার ওপরে। আর মনজুর মিনিকেট ৭৯ টাকা। কয়েকদিন আগে একই চাল বিক্রি করছি সত্তর-বাহাত্তর। বিআর আটাশ আগে বিক্রি করেছি চুয়ান্ন-পঞ্চান্ন। এখন বিক্রি করছি সাতান্ন-আটান্ন। ‘ফসলটা নামছে দুই মাস হইছে। এবারের মতো ভালো ফসল গত পাঁচ বছরেও হয় নাই। একটা ধানও নষ্ট হয় নাই। এখন যদি চালের দাম বাড়ে, তাহলে আর কী হলো।’
এই পাইকারি বাজারের দুই দোকান পরেই আরেক পাইকারি হাজি ইসমাইল অ্যান্ড সন্সের বিক্রেতা মহিম সংবাদকে জানালেন, ‘মিনিকেট চালের দাম কেজিতে সাত-আট টাকা বাড়ছে।’ সুপার পাম অয়েলের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে কারওয়ান বাজারের
খুচরা বিক্রেতা আব্দুস ছালাম সংবাদকে বলেন, ‘সুপার পাম অয়েল নাই, পাম অয়েল আছে। কেজি ১৬৫ টাকা। ঈদের সময় দাম কম ছিল কেজি ১৫৮ থেকে ১৬০ টাকা, ঈদের পর দাম বাড়ছে। ১ ড্রামে ১ হাজার টাকা বাড়ছে।’ হঠাৎ করে দাম বাড়ার কারণ কী? জবাবে তিনি বলেন, ‘ডিলাররা বলতে পারবেন।
বেচাবিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে শ্যামলী কাঁচাবাজারের খুচরা ব্যবসায়ী কামাল উদ্দীন সংবাদকে বলেন, ‘ঈদভাঙ্গা মাস, বেচাবিক্রি কম।’
টিসিবির শুক্রবার ঢাকা মহানগরীর বাজার দরের তালিকাতেও চাল, লুজ পাম অয়েল ও সুপার পাম অয়েলের দাম বাড়ার তথ্য পাওয়া যায়। সপ্তাহের ব্যবধানে মাঝারি মানের চালের দাম ৫ দশমিক ২২ শতাংশ ও মোটা চালের দাম ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেড়েছে। টিসিবির তালিকায় আরও দেখা যায়, লুজ পাম অয়েল ২ শতাংশ ওপর ও সুপার পাম অয়েল ২ দশমিক ৩০ শতাংশ বেড়েছে।
শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫
বোরোর মৌসুম মাত্র শেষ হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ফসল ভালো হয়েছে, আবার ফসল নষ্টও হয়নি। তারপরও বাড়লো চালের দাম। কেজিতে আট টাকা পর্যন্ত। হঠাৎ চালের দাম বাড়ায় ক্রেতা, বিক্রেতা উভয়েই অবাক হয়েছেন। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘সব মিলারের কারসাজি। বড় বড় কোম্পানি ধান কিনে স্টক করে রাখছে। এমন চলতেই থাকবে। কিছুই করার নাই।’
রাজধানী শ্যামলীর একটি খাবার হোটেলের ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন দুলাল সংবাদকে বলেন, ‘তিন দিন আগে যে মিনিকেট চাল পাইকারিতে কেজি কিনতাম ৭২ টাকায় সেটা হইছে ৮০ টাকা। কেজিতে ৮ টাকা বাড়ছে।
সুপার পাম তেলের দামও বাড়ছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ঈদের আগেই সুপার পাম অয়েল কেজি কিনছি ১৫৮ টাকায়, এখন ১৬৪ টাকা, কেজিতে ৬ টাকা বাড়ছে। দোকানদাররা বলছেন, দাম নাকি আরও বাড়বে।’
এখন তো চালের দাম বাড়া অযৌক্তিক, মাত্র বাজারে নতুন চাল নামলো,’ বলেন তিনি।
শুক্রবার,(২০ জুন ২০২৫) রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, শ্যামলী কাঁচাবাজার, কারওয়ানবাজার এবং সেগুনবাগিচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজার ও জাত, মানভেদে খুচরায় মিনিকেট নামক চাল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় আর বিআর আটাশ জাতের চাল ৬২ থেকে ৬৫ টাকায়।
রাজধানী মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট চালের পাইকারি আড়তের মেসার্স জামি এন্টার প্রাইজের স্বত্বাধিকারী ইকবাল সংবাদকে বলেন, ‘ঈদের আগ থেকে বাড়তে ছিল, ঈদের পর বেশি বাড়ছে। আগে যে মিনিকেট চাল পাইকারি দর ছিল কেজি ৬৮ টাকা, সেটা এখন ৭৪ টাকা। কেজিতে ৬ টাকা বাড়ছে।’
ভর মৌসুমে চালের দাম বাড়ার কারণ কী এই কৌতূহলের জবাবে রহস্য করলেন তিনি। বললেন ‘এটা কী হলো ভাই জানেন? ট্রাকের পেছনে লেখা থাকে জন্ম থেকে জ্বলছি। এ বিষয়টা তাই।’
ব্যাখ্যা করলেন, ‘যে সরকারই থাক কিছুই করতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘এখন তো আর কৃষকের কাছে তেমন ধান নাই। বড় বড় কোম্পানি যাদের বেশি টাকা আছে তারা ধান কিনে স্টক করে রাখছে। এমন চলতেই থাকবে। কিছুই করার নাই। প্রতিকার করার জন্য সরকারের একটাই রাস্তা আছে, সেটা হলো দেশের বাইরে থেকে চাল আমদানি করা।’
এই ব্যবসায়ী ব্যাংক লোন নিয়েও অভিযোগ করেন। বলেন, ‘ব্যাংক করে কি জানেন? মিল যে জায়গাটায় আছে সে জায়গার দাম ধরে ১০ টাকা আর পেছনের জায়গাটার দাম ৫ টাকা হলে সেটার দামও ধরে ১০ টাকা। মিলের দাম ১০ টাকা হলেও ব্যাংক তাকে ২০ টাকা দেয় লোন। ফাঁকা জায়গায় গোডাউন হলেও লোন দেয় ৩০ টাকা। একেকটা কোম্পানির একাধিক গোডাউন আছে। সেই টাকা দিয়ে ধান কিনে গোডাউন স্টক করে রাখে, এই কারণে দাম বাড়ে। এটার সমাধান একটাই সরকার লোনগুলো কমায় দিক। লোন দেয়ার সময় সঠিক যাচাই-বাছাই করে লোন দিক।’
তিনি এও বলেন, ‘দাম বাড়লে আমরা যে খুব মজা পাই, তা কিন্তু না। আমাদের ভিতরেও অনেক কষ্ট। কারণ গত মাসে একজন ২ হাজার টাকা দিয়ে এক বস্তা চাল নিয়েছে আর আজকে এলে ২১শ’ টাকা বস্তা চাইলাম। তখন ওই ক্রেতার কাছে জবাবদিহি করতে হয়। কিন্তু মিলাররা তো সেটা বোঝে না।’
ওই পাইকারি আড়তের আরেক চাল ব্যবসায়ী জাহিদ হাসান সংবাদকে বলেন, ‘মিলাররা সিন্ডিকেট কইরা দাম বাড়াইছে। আমরা যে রাম (যেমন দাম) কিনি, সেরাম বেচি।’ ‘চালের বাজার এখন ঠিক নাই,’ বলেও জানান জাহিদ।
চালের বাজারের পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় রাজধানী কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা মেসার্স নিউ সেনবাগ রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মুনসুর আহমেদের সঙ্গে। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘চার-পাঁচ দিনে চালের দাম কেজিতে ছয়-সাত টাকা বাড়ছে। বেশি দাম বাড়ছে মিনিকেটে, কেজিতে ছয়-সাত টাকা আর অন্যান্য চালে দুই-তিন টাকা বাড়ছে। ভালো মানের মিনিকেট ৮০ টাকার ওপরে। আর মনজুর মিনিকেট ৭৯ টাকা। কয়েকদিন আগে একই চাল বিক্রি করছি সত্তর-বাহাত্তর। বিআর আটাশ আগে বিক্রি করেছি চুয়ান্ন-পঞ্চান্ন। এখন বিক্রি করছি সাতান্ন-আটান্ন। ‘ফসলটা নামছে দুই মাস হইছে। এবারের মতো ভালো ফসল গত পাঁচ বছরেও হয় নাই। একটা ধানও নষ্ট হয় নাই। এখন যদি চালের দাম বাড়ে, তাহলে আর কী হলো।’
এই পাইকারি বাজারের দুই দোকান পরেই আরেক পাইকারি হাজি ইসমাইল অ্যান্ড সন্সের বিক্রেতা মহিম সংবাদকে জানালেন, ‘মিনিকেট চালের দাম কেজিতে সাত-আট টাকা বাড়ছে।’ সুপার পাম অয়েলের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে কারওয়ান বাজারের
খুচরা বিক্রেতা আব্দুস ছালাম সংবাদকে বলেন, ‘সুপার পাম অয়েল নাই, পাম অয়েল আছে। কেজি ১৬৫ টাকা। ঈদের সময় দাম কম ছিল কেজি ১৫৮ থেকে ১৬০ টাকা, ঈদের পর দাম বাড়ছে। ১ ড্রামে ১ হাজার টাকা বাড়ছে।’ হঠাৎ করে দাম বাড়ার কারণ কী? জবাবে তিনি বলেন, ‘ডিলাররা বলতে পারবেন।
বেচাবিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে শ্যামলী কাঁচাবাজারের খুচরা ব্যবসায়ী কামাল উদ্দীন সংবাদকে বলেন, ‘ঈদভাঙ্গা মাস, বেচাবিক্রি কম।’
টিসিবির শুক্রবার ঢাকা মহানগরীর বাজার দরের তালিকাতেও চাল, লুজ পাম অয়েল ও সুপার পাম অয়েলের দাম বাড়ার তথ্য পাওয়া যায়। সপ্তাহের ব্যবধানে মাঝারি মানের চালের দাম ৫ দশমিক ২২ শতাংশ ও মোটা চালের দাম ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেড়েছে। টিসিবির তালিকায় আরও দেখা যায়, লুজ পাম অয়েল ২ শতাংশ ওপর ও সুপার পাম অয়েল ২ দশমিক ৩০ শতাংশ বেড়েছে।