ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
বাংলাদেশে ভবিষ্যতে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না- এমন অভিমত বাংলাদেশের ৮৯ শতাংশ মানুষের। এছাড়া ৮৩ শতাংশ মানুষ চান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। আর রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি পরিবর্তনের পক্ষে দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ। অন্যদিকে উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে আসন বণ্টন চান ৭১ শতাংশ মানুষ। বেসরকারি সংস্থা সুজন পরিচালিত এক জরিপে এমন তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
মঙ্গলবার,(১২ আগস্ট ২০২৫ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে জনমত যাচাইয়ের এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সুজন প্রস্তাবিত জাতীয় সনদ চূড়ান্তকরণে জনমত যাচাইয়ে এসব তথ্য উঠে এসেছে বলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জরিপের তথ্য উপস্থাপন করেন সুজনের জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন। সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ও অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন।
একরাম হোসেন জানান, দেশের সব জেলার মানুষের মতামত নেয়া হয়েছে। জরিপে অংশ নিয়েছেন ১ হাজার ৩৭৩ জন। এরমধ্যে নারী ৩৩৫ জন, পুরুষ ১ হাজার ৩৩ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের রয়েছেন ৫ জন। নাগরিক সংলাপ হয়েছে ১৫টি। জরিপে অংশ নেয়া সবাইকে ৪০টি প্রশ্ন করা হয় বলে জানান তিনি।
সম্মেলনে জনমত যাচাইয়ে উঠে আসা তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি পরিবর্তনের পক্ষে ৯০ শতাংশ মানুষ মত দেয়ার চিত্র উঠে এসেছে জরিপে। বর্তমান বাংলাদেশ সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে ‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা’ রয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এর বদলে পাঁচটি মূলনীতি সুপারিশ করে। সেগুলো হলো- সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি।
সিপিবি, বাসদ, বাসদ-মার্কসবাদী ও বাংলাদেশ জাসদ- এই চার বামপন্থি দল বলে, বিদ্যমান মূলনীতিগুলো বাদ দেয়া যাবে না। বরং কমিশন প্রস্তাবিত নতুন মূলনীতি এর সঙ্গে যোগ করা যেতে পারে।
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে যুক্ত হওয়া ‘আল্লাহর উপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস’ রাখার কথা বলে আসছিল। তবে পরে কমিশন এখন যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা তারা মেনে নেয়।
জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি বলে, কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে তারা একমত। পরে নোট অব ডিসেন্টসহ রাষ্ট্রের মূলনীতি পরিবর্তনের পক্ষে ঐকমত্য হওয়ার কথা বলা হয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের সময়ে অনুষ্ঠিত দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অনিয়ম জালিয়াতির তদন্ত চান ৭৯ শতাংশ মানুষ।
সুজনের জরিপে অংশ নেয়া ৬৯ শতাংশ মানুষ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে মত দিয়েছেন, ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে নিম্নকক্ষে নারী আসন চান ৬৩ শতাংশ, উচ্চকক্ষে নারীদের জন্য ৩০টি সংরক্ষিত আসনের পক্ষে ৬৯ শতাংশ মানুষ একমত হয়েছেন।
একরাম হোসেন বলেন, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে একশত আসনের জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের পক্ষে মত দিয়েছেন ৭১ শতাংশ। জাতীয় সংসদে বিরোধীদল থেকে ডেপুটি স্পিকার নিয়োগ চান ৮৬ শতাংশ, বিরোধীদল থেকে উচ্চকক্ষের ডেপুটি স্পিকার নিয়োগ চান ৮২ শতাংশ। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের পক্ষে ৮৭ শতাংশ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি চান ৮৮ শতাংশ, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধন চান ৮৭ শতাংশ মানুষ।
নির্বাচনী ব্যয় নিয়ে অসত্য তথ্য প্রদানকারীর প্রার্থিতা বা ফলাফল বাতিল চান ৮৮ শতাংশ মানুষ। চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিগ্রস্ত ও সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের রাজনৈতিক দলে অযোগ্য হিসেবে দেখতে চান ৯২ শতাংশ মানুষ। এছাড়া পাসপোর্টের তথ্য ব্যবহার করে প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ব্যালট বা অনলাইনে ভোট চান ৮৭ শতাংশ মানুষ।
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নির্বাচিত সরকার কীভাবে সংস্কার কাজ বাস্তবায়ন করবে তার একটি চিত্র ২০১৩ সালে তুলে ধরেছিলাম। ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগেও আমরা সারাদেশের একটা জনমত জরিপ করেছিলাম। এবারও জনগণ মতামত দিয়েছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও মতামত দিয়েছি। যেই সরকারে যাবে তারা প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করবে। সেই হিসেবে জাতীয় সনদের একটা খসড়া আমরা ঐকমত্য কমিশনে জমা দিয়েছি।’ জনমত সৃষ্টি করাই এ কাজের উদ্দেশ্য বলে জানান বদিউল আলম মজুমদার।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘নির্বাচন হলেই সুশাসন পাওয়া যায়, এমন নয়। বিগত সরকারের সময়ের অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন দুর্নীতি তুলে ধরা হয়েছে। রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংস্কার প্রয়োজন।’
সংবাদ সম্মেলনে সুজনের প্রস্তাবিত জাতীয় সনদের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এই সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক, মানবিক ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র বিনির্মাণের দিকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।’
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট ২০২৫
বাংলাদেশে ভবিষ্যতে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না- এমন অভিমত বাংলাদেশের ৮৯ শতাংশ মানুষের। এছাড়া ৮৩ শতাংশ মানুষ চান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। আর রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি পরিবর্তনের পক্ষে দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ। অন্যদিকে উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে আসন বণ্টন চান ৭১ শতাংশ মানুষ। বেসরকারি সংস্থা সুজন পরিচালিত এক জরিপে এমন তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
মঙ্গলবার,(১২ আগস্ট ২০২৫ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে জনমত যাচাইয়ের এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সুজন প্রস্তাবিত জাতীয় সনদ চূড়ান্তকরণে জনমত যাচাইয়ে এসব তথ্য উঠে এসেছে বলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জরিপের তথ্য উপস্থাপন করেন সুজনের জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন। সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ও অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন।
একরাম হোসেন জানান, দেশের সব জেলার মানুষের মতামত নেয়া হয়েছে। জরিপে অংশ নিয়েছেন ১ হাজার ৩৭৩ জন। এরমধ্যে নারী ৩৩৫ জন, পুরুষ ১ হাজার ৩৩ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের রয়েছেন ৫ জন। নাগরিক সংলাপ হয়েছে ১৫টি। জরিপে অংশ নেয়া সবাইকে ৪০টি প্রশ্ন করা হয় বলে জানান তিনি।
সম্মেলনে জনমত যাচাইয়ে উঠে আসা তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি পরিবর্তনের পক্ষে ৯০ শতাংশ মানুষ মত দেয়ার চিত্র উঠে এসেছে জরিপে। বর্তমান বাংলাদেশ সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে ‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা’ রয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এর বদলে পাঁচটি মূলনীতি সুপারিশ করে। সেগুলো হলো- সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি।
সিপিবি, বাসদ, বাসদ-মার্কসবাদী ও বাংলাদেশ জাসদ- এই চার বামপন্থি দল বলে, বিদ্যমান মূলনীতিগুলো বাদ দেয়া যাবে না। বরং কমিশন প্রস্তাবিত নতুন মূলনীতি এর সঙ্গে যোগ করা যেতে পারে।
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে যুক্ত হওয়া ‘আল্লাহর উপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস’ রাখার কথা বলে আসছিল। তবে পরে কমিশন এখন যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা তারা মেনে নেয়।
জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি বলে, কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে তারা একমত। পরে নোট অব ডিসেন্টসহ রাষ্ট্রের মূলনীতি পরিবর্তনের পক্ষে ঐকমত্য হওয়ার কথা বলা হয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের সময়ে অনুষ্ঠিত দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অনিয়ম জালিয়াতির তদন্ত চান ৭৯ শতাংশ মানুষ।
সুজনের জরিপে অংশ নেয়া ৬৯ শতাংশ মানুষ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে মত দিয়েছেন, ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে নিম্নকক্ষে নারী আসন চান ৬৩ শতাংশ, উচ্চকক্ষে নারীদের জন্য ৩০টি সংরক্ষিত আসনের পক্ষে ৬৯ শতাংশ মানুষ একমত হয়েছেন।
একরাম হোসেন বলেন, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে একশত আসনের জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের পক্ষে মত দিয়েছেন ৭১ শতাংশ। জাতীয় সংসদে বিরোধীদল থেকে ডেপুটি স্পিকার নিয়োগ চান ৮৬ শতাংশ, বিরোধীদল থেকে উচ্চকক্ষের ডেপুটি স্পিকার নিয়োগ চান ৮২ শতাংশ। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের পক্ষে ৮৭ শতাংশ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি চান ৮৮ শতাংশ, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধন চান ৮৭ শতাংশ মানুষ।
নির্বাচনী ব্যয় নিয়ে অসত্য তথ্য প্রদানকারীর প্রার্থিতা বা ফলাফল বাতিল চান ৮৮ শতাংশ মানুষ। চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিগ্রস্ত ও সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের রাজনৈতিক দলে অযোগ্য হিসেবে দেখতে চান ৯২ শতাংশ মানুষ। এছাড়া পাসপোর্টের তথ্য ব্যবহার করে প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ব্যালট বা অনলাইনে ভোট চান ৮৭ শতাংশ মানুষ।
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নির্বাচিত সরকার কীভাবে সংস্কার কাজ বাস্তবায়ন করবে তার একটি চিত্র ২০১৩ সালে তুলে ধরেছিলাম। ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগেও আমরা সারাদেশের একটা জনমত জরিপ করেছিলাম। এবারও জনগণ মতামত দিয়েছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও মতামত দিয়েছি। যেই সরকারে যাবে তারা প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করবে। সেই হিসেবে জাতীয় সনদের একটা খসড়া আমরা ঐকমত্য কমিশনে জমা দিয়েছি।’ জনমত সৃষ্টি করাই এ কাজের উদ্দেশ্য বলে জানান বদিউল আলম মজুমদার।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘নির্বাচন হলেই সুশাসন পাওয়া যায়, এমন নয়। বিগত সরকারের সময়ের অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন দুর্নীতি তুলে ধরা হয়েছে। রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংস্কার প্রয়োজন।’
সংবাদ সম্মেলনে সুজনের প্রস্তাবিত জাতীয় সনদের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এই সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক, মানবিক ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র বিনির্মাণের দিকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।’