alt

জাতীয়

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলেও ‘উদ্বেগ’ রয়ে গেছে: যুক্তরাষ্ট্র

সংবাদ ডেস্ক : বুধবার, ১৩ আগস্ট ২০২৫

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

ঘটনাবহুল জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হলেও কিছু বিষয়ে এখনও ‘উদ্বেগ রয়ে গেছে’ বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র।

দেশভিত্তিক মানবাধিকার চর্চা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, “অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যদিও কিছু সাংবাদিকের অভিযোগ, কী প্রকাশ করা যাবে সে বিষয়ে এখনও একটি ‘অদৃশ্য চাপ’ আছে।”

গতকাল মঙ্গলবার ‘২০২৪ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাক্টিসেস: বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিভিন্নভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো এ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি গতবছর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিস্থিতির উন্নয়নের বিষয়ে ধারণা দেয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনের সার-সংক্ষেপে বলা হয়েছে, “টানা কয়েক সপ্তাহের ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভ এবং পুলিশ ও আওয়ামী লীগের যুবসংগঠনের সঙ্গে সংঘর্ষে শত শত মানুষের মৃত্যুর পর ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেন। ৮ আগস্ট রাষ্ট্রপতি নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘প্রধান উপদেষ্টা’ হিসেবে শপথ করিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেন। আগস্টের কিছু ঘটনার পর দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়, যদিও কিছু উদ্বেগ রয়ে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, গতবছর বাংলাদেশে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেসব ঘটনার খবর এসেছে, তার বেশিরভাগই আগের সরকারের আমলের।

এর মধ্যে ছিল বেআইনি হত্যাকাণ্ড; গুম; নির্যাতন বা নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণ বা শাস্তি; নির্বিচারে গ্রেপ্তার বা আটক; অন্য দেশে অবস্থানরত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আন্তঃসীমান্ত দমন; মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় গুরুতর বাধা, যার মধ্যে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বা সহিংসতার হুমকি, অযৌক্তিক গ্রেপ্তার বা মামলা, এবং সেন্সরশিপ অন্তর্ভুক্ত; শ্রমিকদের সংগঠনের স্বাধীনতায় উল্লেখযোগ্য সীমাবদ্ধতা; শ্রমিক অধিকারকর্মী বা ট্রেড ইউনিয়ন সদস্যদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বা হুমকি; এবং বাজে ধরনের শিশুশ্রম।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আগের সরকারের আমলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়মুক্তির ব্যাপক অভিযোগ ছিল এবং যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে, সেই সরকারি কর্মকর্তা বা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের চিহ্নিত করা ও শাস্তি দিতে সরকার খুব কমই পদক্ষেপ নিয়েছে।’

অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আগের সরকারের কর্তাব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনছে, সে বিষয়টিও প্রতিবেদনে এসেছে।

সেখানে বলা হয়েছে, ‘মানবাধিকার সংগঠন ও গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সাবেক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জুলাই ও আগস্ট মাসে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে।

‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ বিষয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করেছে এবং বিচার নিশ্চিত করতে দেশের প্রচলিত বিচারব্যবস্থা ও বাংলাদেশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল- দুটিই ব্যবহার করে অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় এনেছে।’

প্রতিবেদনের ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ অংশে বলা হয়েছে, গত বছর আগের সরকার বা তাদের ‘এজেন্টরা’ বিচারবহির্ভূত হত্যার বহু ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ‘অসংখ্য প্রতিবেদন’ পাওয়া গেছে।

‘নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে মোট কতজন নিহত হয়েছেন তার কোনো পরিসংখ্যান আগের সরকার প্রকাশ করেনি এবং এসব ঘটনার স্বচ্ছ তদন্তের কোনো পদক্ষেপও নেয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই কাজ শুরু করেছে। বিরল কিছু ক্ষেত্রে আগের সরকার অভিযোগ আনলেও, দোষী সাব্যস্তদের সাধারণত প্রশাসনিক শাস্তি দেয়া হয়েছে।’

বছরজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সন্ত্রাসবাদ, মাদক ও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দমনের নামে অভিযান চালিয়েছে। সেসব অভিযান এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার সময়, বিশেষ করে জুলাইয়ের আন্দোলন চলাকালে, ‘বহু সন্দেহজনক মৃত্যুর’ ঘটনা ঘটেছে বলে পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।

জুলাই-আগস্টের আন্দোলন এবং অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে সরকার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদনের তথ্যগুলো যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

সেখানে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের হার আগের বছরের প্রায় সমান ছিল।

প্রতিবেদনের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অংশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সংবিধানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হলেও আগের সরকার ‘নিয়মিতভাবে এ অধিকার লঙ্ঘন’ করেছে।

‘জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় আগের সরকারের বড় ধরনের বিধিনিষেধ ছিল। হয়রানি ও প্রতিশোধের ভয়ে অনেক সাংবাদিক ও ব্লগার সরকারবিরোধী সমালোচনা থেকে বিরত ছিলেন।’

সেপ্টেম্বরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা দেয়, ২০২৩ সালের সাইবার নিরাপত্তা আইন (সিএসএ), ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ, বর্তমানে বাতিল) এবং ২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন (আইসিটি অ্যাক্ট)-এর আওতায় করা এক হাজারের বেশি ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার করা হবে, যেগুলো ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাবিরোধী মতপ্রকাশের কারণে’ দায়ের করা হয়েছিল। এসব মামলায় আটক সবাইকে মুক্তি দেয়ার কথাও বলা হয়।

অন্তর্বর্তী সরকার অক্টোবর ও নভেম্বরে আগের সরকার বা ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ১৬৭ সাংবাদিকের অ্যাক্রিডিটেশন বাতিল করে, সে বিষয়টিও এসেছে প্রতিবেদনে।

সেখানে বলা হয়েছে, ‘স্বীকৃতি ছাড়া সাংবাদিকরা গণমাধ্যমে লিখতে ও প্রকাশ করতে পারলেও, সরকারি মন্ত্রণালয়ে ঢুকতে না পারায় তারা সরকারি অনুষ্ঠান বা সচিবালয়ের ভেতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন কাভার করতে পারেননি।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধানে সংবিধানবিরোধী সমালোচনাকে রাষ্ট্রদ্রোহের সঙ্গে সমানভাবে দেখা হয়। রাষ্ট্রদ্রোহের শাস্তি তিন বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।

‘আইনে ঘৃণাসূচক বক্তব্যের সীমা নির্ধারণ করা হলেও তার সংজ্ঞা স্পষ্ট নয়, যা সরকারকে ব্যাপক ক্ষমতা দিয়েছে এর ব্যাখ্যা নিজের মতো করে করার। সরকার যে কোনো বক্তব্য সীমিত করতে পারে, যদি তা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার বিরুদ্ধে যায়; বন্ধুত্বপূর্ণ বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষতি করে; জনশৃঙ্খলা, শালীনতা বা নৈতিকতার পরিপন্থী হয়; আদালত অবমাননা, মানহানি বা অপরাধে প্ররোচনা দেয়; কিংবা সাংবিধানিক সংস্থার সমালোচনা করে।’

হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সমেয সিএসএ ও ডিএসএ-তে ১৯টি মামলায় ১২ জন গ্রেপ্তার এবং ৬২ জন অভিযুক্ত হয়েছেন। এসব আইন ব্যবহার করা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ওয়েবসাইট ও অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের বক্তব্যের বিরুদ্ধে, এমনকি দেশের বাইরে বসবাসরত সমালোচকদের বিরুদ্ধেও।

সেপ্টেম্বরে খুলনায় উৎসব মণ্ডল নামে এক কিশোরকে ফেইসবুকে দেয়া এক মন্তব্যের জেরে গণপিটুনি দেয়া হয়। তিনি ইসলাম ধর্মের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করেছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে সিএসএ-তে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে হেফাজতে নেয় এবং চিকিৎসা করানো হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগের সরকারের আমলে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনে পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা এবং তৎকালীন শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের সংশ্লিষ্টদের দায় ছিল। বিশেষ করে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (ডিএসএ)-এর মামলায় এসব ঘটত, যাকে মানবাধিকার কর্মীরা সাংবাদিকদের ‘ভয় দেখানো ও দমিয়ে রাখার হাতিয়ার’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

সে সময় সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার, বিচার শুরুর আগেই আটক রাখা, দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়সাপেক্ষ ফৌজদারি মামলা, জরিমানা, কারাদণ্ড এবং অপরাধের তকমা লাগার ‘সামাজিক কলঙ্কের ঝুঁকি’ ছিল। তবে আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর পরিস্থিতির ‘অনেকটাই উন্নতি’ হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ এর জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ১১৫টি ঘটনায় ৩৮৮ জন সাংবাদিক হামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে জুলাই ও আগস্টের ছাত্র বিক্ষোভকালে পাঁচজন সাংবাদিক গুলিবিদ্ধ হন।

মানবাধিকার সংস্থা এইচআরএসএসের হিসাবে, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সাংবাদিকদের ওপর হামলা বা হয়রানির ১২০টি ঘটনায় দুই সাংবাদিক নিহত ও ১২৮ জন আহত হন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “আগের সরকারের সময়ে স্বাধীন প্রিন্ট ও অনলাইন গণমাধ্যম সক্রিয় থাকলেও সমালোচনামূলক প্রতিবেদনের কারণে তারা নানা চাপে পড়ত। ফলে গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারত না। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যদিও কিছু সাংবাদিকের অভিযোগ, কী প্রকাশ করা যাবে সে বিষয়ে এখনও একটি ‘অদৃশ্য চাপ’ আছে।”

অভ্যুত্থানের পর সংবাদমাধ্যমের পরিস্থিতি তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, ‘সরকার পরিবর্তনের পর গণমাধ্যমে খবর আসে, আগের সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে চিহ্নিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত অভিযোগে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, যেগুলোর কিছুতে তথ্য-প্রমাণ ছিল দুর্বল, আবার কিছু অভিযোগ ‘চাঁদাবাজি’ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

‘আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে অন্তত চারজন সাংবাদিক- ফারজানা রূপা, শাকিল আহমেদ, মোজ্জাম্মেল বাবু ও শ্যামল দত্ত গ্রেপ্তার হন। হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পক্ষের লোক হিসেবে তাদের দেখা হতো বলে উল্লেখ করা হয়।

কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) এর বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এই চারজনসহ আরও ২০ জনের বেশি সাংবাদিকের নাম একটি মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যাতে অভিযোগ ছিল, তারা গণবিক্ষোভের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। একই ঘটনায় আরও ২৮ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছিল ’

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, ‘স্বাধীন সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের অভিযোগ, আগের সরকারের সময়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয়া বা বেসরকারি কোম্পানিগুলোর ওপর চাপ দিয়ে তাদের বিজ্ঞাপন বন্ধ করিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করত।’

‘সমালোচনামূলক সংবাদ প্রকাশ বা বিরোধী রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম ও বিবৃতি প্রচারের কারণে গণমাধ্যমকে শাস্তির মুখে পড়তে হতো। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এসব পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।’

ছবি

ঋণ বা টাকা ছাপিয়ে অর্থনীতি চালানো সম্ভব নয়: খসরু

ছবি

জরায়ুতে নয়, নারীর লিভারে বেড়ে উঠছে ভ্রণ!

ছবি

প্রবাসী কল্যাণ ভবনে কোরিয়াগামী কর্মীদের বিক্ষোভ

ছবি

স্বাস্থ্য খাত সংস্কার: ষষ্ঠ দিনের মতো ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ

ছবি

সাদা পাথর লুটপাট: ধরাছোঁয়ার বাইরে গডফাদাররা

ছবি

ধমক দিয়ে নির্বাচন থামানো যাবে না: বিএনপি

ছবি

চানখাঁরপুলে ৬ হত্যা: অভিযোগ গঠনের আদেশ আগামী ২১ আগস্ট

ছবি

গত ১১ মাসে সাড়ে ৩ হাজার হত্যা মামলা

ছবি

গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অনাকাক্সিক্ষত ও ঢালাও অভিযোগের প্রতিবাদ সম্পাদক পরিষদের

ছবি

রংপুরে দুইজনকে পিটিয়ে হত্যা: পুলিশের বিরুদ্ধে মব দেখে উদ্ধার না করে চলে যাওয়ার অভিযোগ

ছবি

আমরা জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ: বৈধতা নিয়ে হাই কোর্টের রায় ২ সেপ্টেম্বর

ছবি

জাতিসংঘ যুব উপদেষ্টা পরিষদে বাংলাদেশের ঝুমু

ছবি

যতীন সরকারের জীবনাবসান

ছবি

বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ, সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত

ছবি

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি স্থিতিশীল, তবে কিছু উদ্বেগ রয়ে গেছে: যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

গণতন্ত্র শক্তিশালী ও জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: ইউনূস

ছবি

জাতীয় পার্টিতে বিভক্তি: ইসিতে আনিসুল-হাওলাদার কমিটির স্বীকৃতি দাবি

ছবি

চার বিভাগে ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস

ছবি

ইউকেএম থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেলেন মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

জুলাইয়ে সড়ক, রেল ও নৌপথে দুর্ঘটনায় ৫৬৮ জনের মৃত্যু, সবচেয়ে বেশী সড়কপথে:যাত্রী কল্যাণ সমিতি

ছবি

আদালতে কাঁদলেন ছাগলকাণ্ডের মতিউর, জামিন হয়নি

ছবি

কর্মসংস্থান ও পরিবর্তনের রাজনীতিই লক্ষ্য: তারেক রহমান

ছবি

শিক্ষকের পিটুনিতে ৪১ শিক্ষার্থী আহত, দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের হাতুড়ি পেটা

ছবি

ভারতে পাচার বাংলাদেশি কিশোরী: তিন মাসে ২২৩ বার ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ

ছবি

মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধসহ সচিবালয়ে ৭ নির্দেশনা জারি

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু

ছবি

লুট হয়ে গেছে সাদা পাথর, এখন সেখানে শুধুই গর্ত

ছবি

শেখ হাসিনার পক্ষে লড়তে চান আইনজীবী জেড আই খান পান্না, ট্রাইব্যুনালের ‘না’

ছবি

সুজনের জরিপের তথ্য: দুই মেয়াদের বেশি কাউকে প্রধানমন্ত্রী পদে চায় না ৮৯ শতাংশ মানুষ

ছবি

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

ছবি

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে বাড়ছে ভোটকেন্দ্র ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা

ছবি

ড্যাবের নির্বাচন-পরবর্তী উত্তেজনা: পঙ্গুতে পরীক্ষার হলে শিক্ষককে হুমকি, পরীক্ষা স্থগিত

ছবি

পাঁচ চুক্তি স্বাক্ষর, মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান

ছবি

ডাকসুর একমাত্র নারী ভিপি মাহফুজা খানমের মৃত্যু

ছবি

বাংলাদেশ–মালয়েশিয়া সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারত্বে উন্নীত করার অঙ্গীকার

tab

জাতীয়

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলেও ‘উদ্বেগ’ রয়ে গেছে: যুক্তরাষ্ট্র

সংবাদ ডেস্ক

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

বুধবার, ১৩ আগস্ট ২০২৫

ঘটনাবহুল জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হলেও কিছু বিষয়ে এখনও ‘উদ্বেগ রয়ে গেছে’ বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র।

দেশভিত্তিক মানবাধিকার চর্চা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, “অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যদিও কিছু সাংবাদিকের অভিযোগ, কী প্রকাশ করা যাবে সে বিষয়ে এখনও একটি ‘অদৃশ্য চাপ’ আছে।”

গতকাল মঙ্গলবার ‘২০২৪ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাক্টিসেস: বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিভিন্নভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো এ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি গতবছর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিস্থিতির উন্নয়নের বিষয়ে ধারণা দেয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনের সার-সংক্ষেপে বলা হয়েছে, “টানা কয়েক সপ্তাহের ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভ এবং পুলিশ ও আওয়ামী লীগের যুবসংগঠনের সঙ্গে সংঘর্ষে শত শত মানুষের মৃত্যুর পর ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেন। ৮ আগস্ট রাষ্ট্রপতি নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘প্রধান উপদেষ্টা’ হিসেবে শপথ করিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেন। আগস্টের কিছু ঘটনার পর দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়, যদিও কিছু উদ্বেগ রয়ে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, গতবছর বাংলাদেশে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেসব ঘটনার খবর এসেছে, তার বেশিরভাগই আগের সরকারের আমলের।

এর মধ্যে ছিল বেআইনি হত্যাকাণ্ড; গুম; নির্যাতন বা নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণ বা শাস্তি; নির্বিচারে গ্রেপ্তার বা আটক; অন্য দেশে অবস্থানরত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আন্তঃসীমান্ত দমন; মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় গুরুতর বাধা, যার মধ্যে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বা সহিংসতার হুমকি, অযৌক্তিক গ্রেপ্তার বা মামলা, এবং সেন্সরশিপ অন্তর্ভুক্ত; শ্রমিকদের সংগঠনের স্বাধীনতায় উল্লেখযোগ্য সীমাবদ্ধতা; শ্রমিক অধিকারকর্মী বা ট্রেড ইউনিয়ন সদস্যদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বা হুমকি; এবং বাজে ধরনের শিশুশ্রম।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আগের সরকারের আমলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়মুক্তির ব্যাপক অভিযোগ ছিল এবং যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে, সেই সরকারি কর্মকর্তা বা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের চিহ্নিত করা ও শাস্তি দিতে সরকার খুব কমই পদক্ষেপ নিয়েছে।’

অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আগের সরকারের কর্তাব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনছে, সে বিষয়টিও প্রতিবেদনে এসেছে।

সেখানে বলা হয়েছে, ‘মানবাধিকার সংগঠন ও গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সাবেক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জুলাই ও আগস্ট মাসে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে।

‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ বিষয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করেছে এবং বিচার নিশ্চিত করতে দেশের প্রচলিত বিচারব্যবস্থা ও বাংলাদেশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল- দুটিই ব্যবহার করে অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় এনেছে।’

প্রতিবেদনের ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ অংশে বলা হয়েছে, গত বছর আগের সরকার বা তাদের ‘এজেন্টরা’ বিচারবহির্ভূত হত্যার বহু ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ‘অসংখ্য প্রতিবেদন’ পাওয়া গেছে।

‘নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে মোট কতজন নিহত হয়েছেন তার কোনো পরিসংখ্যান আগের সরকার প্রকাশ করেনি এবং এসব ঘটনার স্বচ্ছ তদন্তের কোনো পদক্ষেপও নেয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই কাজ শুরু করেছে। বিরল কিছু ক্ষেত্রে আগের সরকার অভিযোগ আনলেও, দোষী সাব্যস্তদের সাধারণত প্রশাসনিক শাস্তি দেয়া হয়েছে।’

বছরজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সন্ত্রাসবাদ, মাদক ও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দমনের নামে অভিযান চালিয়েছে। সেসব অভিযান এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার সময়, বিশেষ করে জুলাইয়ের আন্দোলন চলাকালে, ‘বহু সন্দেহজনক মৃত্যুর’ ঘটনা ঘটেছে বলে পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।

জুলাই-আগস্টের আন্দোলন এবং অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে সরকার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদনের তথ্যগুলো যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

সেখানে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের হার আগের বছরের প্রায় সমান ছিল।

প্রতিবেদনের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অংশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সংবিধানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হলেও আগের সরকার ‘নিয়মিতভাবে এ অধিকার লঙ্ঘন’ করেছে।

‘জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় আগের সরকারের বড় ধরনের বিধিনিষেধ ছিল। হয়রানি ও প্রতিশোধের ভয়ে অনেক সাংবাদিক ও ব্লগার সরকারবিরোধী সমালোচনা থেকে বিরত ছিলেন।’

সেপ্টেম্বরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা দেয়, ২০২৩ সালের সাইবার নিরাপত্তা আইন (সিএসএ), ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ, বর্তমানে বাতিল) এবং ২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন (আইসিটি অ্যাক্ট)-এর আওতায় করা এক হাজারের বেশি ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার করা হবে, যেগুলো ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাবিরোধী মতপ্রকাশের কারণে’ দায়ের করা হয়েছিল। এসব মামলায় আটক সবাইকে মুক্তি দেয়ার কথাও বলা হয়।

অন্তর্বর্তী সরকার অক্টোবর ও নভেম্বরে আগের সরকার বা ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ১৬৭ সাংবাদিকের অ্যাক্রিডিটেশন বাতিল করে, সে বিষয়টিও এসেছে প্রতিবেদনে।

সেখানে বলা হয়েছে, ‘স্বীকৃতি ছাড়া সাংবাদিকরা গণমাধ্যমে লিখতে ও প্রকাশ করতে পারলেও, সরকারি মন্ত্রণালয়ে ঢুকতে না পারায় তারা সরকারি অনুষ্ঠান বা সচিবালয়ের ভেতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন কাভার করতে পারেননি।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধানে সংবিধানবিরোধী সমালোচনাকে রাষ্ট্রদ্রোহের সঙ্গে সমানভাবে দেখা হয়। রাষ্ট্রদ্রোহের শাস্তি তিন বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।

‘আইনে ঘৃণাসূচক বক্তব্যের সীমা নির্ধারণ করা হলেও তার সংজ্ঞা স্পষ্ট নয়, যা সরকারকে ব্যাপক ক্ষমতা দিয়েছে এর ব্যাখ্যা নিজের মতো করে করার। সরকার যে কোনো বক্তব্য সীমিত করতে পারে, যদি তা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার বিরুদ্ধে যায়; বন্ধুত্বপূর্ণ বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষতি করে; জনশৃঙ্খলা, শালীনতা বা নৈতিকতার পরিপন্থী হয়; আদালত অবমাননা, মানহানি বা অপরাধে প্ররোচনা দেয়; কিংবা সাংবিধানিক সংস্থার সমালোচনা করে।’

হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সমেয সিএসএ ও ডিএসএ-তে ১৯টি মামলায় ১২ জন গ্রেপ্তার এবং ৬২ জন অভিযুক্ত হয়েছেন। এসব আইন ব্যবহার করা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ওয়েবসাইট ও অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের বক্তব্যের বিরুদ্ধে, এমনকি দেশের বাইরে বসবাসরত সমালোচকদের বিরুদ্ধেও।

সেপ্টেম্বরে খুলনায় উৎসব মণ্ডল নামে এক কিশোরকে ফেইসবুকে দেয়া এক মন্তব্যের জেরে গণপিটুনি দেয়া হয়। তিনি ইসলাম ধর্মের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করেছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে সিএসএ-তে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে হেফাজতে নেয় এবং চিকিৎসা করানো হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগের সরকারের আমলে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনে পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা এবং তৎকালীন শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের সংশ্লিষ্টদের দায় ছিল। বিশেষ করে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (ডিএসএ)-এর মামলায় এসব ঘটত, যাকে মানবাধিকার কর্মীরা সাংবাদিকদের ‘ভয় দেখানো ও দমিয়ে রাখার হাতিয়ার’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

সে সময় সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার, বিচার শুরুর আগেই আটক রাখা, দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়সাপেক্ষ ফৌজদারি মামলা, জরিমানা, কারাদণ্ড এবং অপরাধের তকমা লাগার ‘সামাজিক কলঙ্কের ঝুঁকি’ ছিল। তবে আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর পরিস্থিতির ‘অনেকটাই উন্নতি’ হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ এর জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ১১৫টি ঘটনায় ৩৮৮ জন সাংবাদিক হামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে জুলাই ও আগস্টের ছাত্র বিক্ষোভকালে পাঁচজন সাংবাদিক গুলিবিদ্ধ হন।

মানবাধিকার সংস্থা এইচআরএসএসের হিসাবে, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সাংবাদিকদের ওপর হামলা বা হয়রানির ১২০টি ঘটনায় দুই সাংবাদিক নিহত ও ১২৮ জন আহত হন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “আগের সরকারের সময়ে স্বাধীন প্রিন্ট ও অনলাইন গণমাধ্যম সক্রিয় থাকলেও সমালোচনামূলক প্রতিবেদনের কারণে তারা নানা চাপে পড়ত। ফলে গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারত না। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যদিও কিছু সাংবাদিকের অভিযোগ, কী প্রকাশ করা যাবে সে বিষয়ে এখনও একটি ‘অদৃশ্য চাপ’ আছে।”

অভ্যুত্থানের পর সংবাদমাধ্যমের পরিস্থিতি তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, ‘সরকার পরিবর্তনের পর গণমাধ্যমে খবর আসে, আগের সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে চিহ্নিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত অভিযোগে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, যেগুলোর কিছুতে তথ্য-প্রমাণ ছিল দুর্বল, আবার কিছু অভিযোগ ‘চাঁদাবাজি’ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

‘আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে অন্তত চারজন সাংবাদিক- ফারজানা রূপা, শাকিল আহমেদ, মোজ্জাম্মেল বাবু ও শ্যামল দত্ত গ্রেপ্তার হন। হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পক্ষের লোক হিসেবে তাদের দেখা হতো বলে উল্লেখ করা হয়।

কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) এর বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এই চারজনসহ আরও ২০ জনের বেশি সাংবাদিকের নাম একটি মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যাতে অভিযোগ ছিল, তারা গণবিক্ষোভের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। একই ঘটনায় আরও ২৮ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছিল ’

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, ‘স্বাধীন সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের অভিযোগ, আগের সরকারের সময়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয়া বা বেসরকারি কোম্পানিগুলোর ওপর চাপ দিয়ে তাদের বিজ্ঞাপন বন্ধ করিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করত।’

‘সমালোচনামূলক সংবাদ প্রকাশ বা বিরোধী রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম ও বিবৃতি প্রচারের কারণে গণমাধ্যমকে শাস্তির মুখে পড়তে হতো। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এসব পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।’

back to top