গত কয়েক মাস ধরেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিযোগে বাংলাদেশিদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো হচ্ছে
উন্নত জীবনের আশায় গত বছরের অক্টোবরে ট্যুরিস্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান রুবেল (ছদ্মনাম)। মাত্র আট দিন পরেই তাকে আটক করা হয়, নেয়া হয় ডিটেনশন সেন্টারে। এরপর অপরাধীর মতো আটকে ফেরত পাঠানো হয় দেশে।
তার ভাষায়, ‘পুরা পেটে শিকল আছিলো, হাতে হাতকড়া ছিল, তারপর দোনো পায়ে কড়া লাগানো ছিল।’ এভাবেই ৬০ ঘণ্টার বিমানযাত্রায় ক্লান্ত-অবিশ্রান্ত হয়ে দেশে ফিরেন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনপ্রত্যাশী রুবেল।
দেশে ফেরত পাঠানোর আগে প্রায় ১০ মাস সেখানে রাখা হয় ২৯ বছর বয়সী এ যুবককে। কিন্তু ডিটেনশন সেন্টারে দেয়া হতো না পর্যাপ্ত খাবার।
অবৈধ অভিবাসনের অভিযোগে সর্বশেষ সামরিক বিমানে চাপিয়ে অন্য অনেকের সঙ্গে দেশে ফেরত পাঠানো হয় তাকে। সঙ্গে ছিল অন্য দেশের কয়েকজন নাগরিকও। তাদের সবাইকে শিকল বেঁধে, হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেশে ফেরত পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। এমনকি আড়াই দিনের সেই জার্নিতে কেবল চিজ দেয়া চারটি পাউরুটি, আর আধা লিটারেরও অর্ধেক পানি দেয়া হয়েছিল বলে জানান রুবেল।
সে বলে, ‘পানির জন্য ধরেন গলা শুকায়ে গেছে। আমরা এতো পানি চাইছি, আমাদেরকে ওনারা পানিই দেয় না। কিন্তু ওনারা ঠিকই একটার পর একটা বোতল খুইলা পানি খাইতাছে, এ খাবার খাইতাছে, ওই খাবার খাইতাছে, কিন্তু আমাদের কোনো গুরুত্বই নাই।’
পেটে শিকল বেঁধে রাখার কারণে পানিটাও মুখে তুলে খেতে কষ্ট হয়েছে তাদের। রুবেল বলেন, শৌচাগারে নেয়ার সময়ও পুরোপুরি খুলে দেয়া হয়নি হাতকড়া। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেন কোনো অফিসার।
সূত্র বলছে, গত ২ আগস্ট ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের সি-১৭ সামরিক উড়োজাহাজে একজন নারীসহ ৩৯ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়। একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন সেই ফ্লাইটে ফেরত আসা অন্য অভিবাসনপ্রত্যাশী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি জানান, সেই ফ্লাইটটিতে অন্য দেশের নাগরিকও ছিল। আর বেঁধে রাখার বিষয়টিও পুরোটা সময় ‘কন্টিনিউ’ করেছে।
তারও আগে কোরবানির ঈদের আগ দিয়ে ফেরত পাঠানো অন্য দলের সঙ্গে দেশে ফিরেছিলেন নোয়াখালীর ইমরান হোসেন। ব্রাজিলের ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে সড়ক পথে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন তিনি। ডিটেনশন সেন্টারে রাখার সময় খুব কম খাবার দেয়ার কথা জানান তিনিও। বিমানে শিকল পরিয়ে রাখা হয়নি তাদের। তবে বিমানে ওঠার আগে বিমানবন্দরের ছোট একটি কক্ষে ১৫ ঘণ্টার মতো রাখা হয়েছিল, সেখানে পরানো হয়েছিল শিকল আর হাতকড়া।
অবৈধ অভিবাসন নিয়ে কাজ করে এমন বেসরকারি সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে বিশেষ ভাড়া করা বিমানে একজন নারীসহ ৩০ বাংলাদেশিকে একইভাবে হাতে হাতকড়া এবং পায়ে শিকল বেঁধে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
তাদেরই একজন নোয়াখালীর আসগর হোসেন। তিনি জানান, বেশ কয়েকটি দেশের নাগরিক ওই ফ্লাইটে ছিল। একেক দেশে গিয়ে তাদের ফেরত দেয়া হয়েছে। কিন্তু পাঁচদিনের যাত্রার পুরোটা সময় তাদের শিকল পরিয়ে রাখা হয়েছিল। আসগর হোসেন বলেন, ‘বিমান যখন আমাদের এখানে ল্যান্ড করছে, তখন আমাদের হাত থেকে শিকলটা খুলছে।’
তিন ঘণ্টা রানওয়েতে থাকা বিমানে বহনকারী যাত্রীদের হাতকড়া ও শিকল খোলা হয় এবং বিমানবন্দরের অ্যারাইভাল এরিয়াতে পৌঁছানোর আগে সবাইকে শিকলমুক্ত করে দেয়া হয়। আগস্টে আসা আগের দলটির মতোই তাদেরও শৌচাগারে যাওয়ার সময় কেবল এক হাত খুলে দেয়া হয়েছে, খাবারও দেয়া হয়েছে সামান্য।
বিমানবন্দর ও অভিবাসন নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের সূত্র অনুযায়ী, চলতি বছরের ৮ জুন একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে ৪২ জন বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনা হয়। এর আগে, ৬ মার্চ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত একাধিক ফ্লাইটে আরও অন্তত ৩৪ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। ২০২৪ সালের শুরু থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো বাংলাদেশির সংখ্যা অন্তত ১৮০ ছাড়িয়েছে।
অথচ এ নিয়ে সরকারের তরফ থেকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। বরং প্রত্যক্ষদর্শী কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ফেরা অভিবাসন প্রত্যাশীদের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বিমানবন্দরে আনা হয়। এ সময় কাউকে তাদের কাছে যেতে দেয়া হয়নি কিংবা কোনো ধরনের ছবি তোলার অনুমতি দেয়া হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অমানবিকভাবে দেশের ফেরত পাঠানোর কথা অস্বীকার করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের ইমিগ্রেশনের ডিআইজি পদে থাকা কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বলেন, ‘এভাবে কোনো বাংলাদেশি এয়ারপোর্টে আসে নাই। শুক্রবার, (০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫)ও আসে নাই। আমেরিকা থেকে যেগুলো এসেছে কোনোটাই এভাবে আসে নাই। যারা বলে তারা কেন বলে কী জন্য বলে আপনারা দেখবেন এটা।’
তবে গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে অভিবাসীদের দেশে ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এস এম মাহবুবুল আলম জানান, ‘ডিপোর্ট করার সময় কেউ কেউ হয়তো ভায়োলেন্ট আচরণ করে, এরকম নজির হয়তো আছে। আর বিভিন্ন দেশে যখন ডিপোর্ট করা হয়, সেক্ষেত্রে তাদেরও বোধহয় সিমিলারি বিষয়টাকে এড্রেস করা হয়।’
এছাড়া ফ্লাইটে অন্য দেশের নাগরিক থাকার কারণেও এমনটা করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
# ‘এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন’
পৃথিবীর যে দেশগুলো থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ বিদেশে কাজ করতে যায়, সেই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। আবার ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অনিয়মিত পথে যারা ইউরোপে প্রবেশ করে সেই তালিকায়ও গত এক দশক ধরে বাংলাদেশ প্রায় শীর্ষ দেশগুলোর একটি।
অভিবাসন নিয়ে কাজ করা বিশ্লেষকরা বলছেন, কেবল অর্থনৈতিক কারণেই না, সুশাসনের ঘাটতিসহ নানা সমস্যার কারণে বাংলাদেশের অনেকে দেশ ছাড়তে চায়। সে কারণে তৎপর থাকে দালাল চক্রও।
ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান বলেন, ‘যে কোনো মানুষের যেমন বৈধ পথে যে কোনো দেশে যাওয়ার যেমন নাগরিক অধিকার আছে, আবার কোনো দেশ যদি মনে করে সে আনডকুমেন্টেড মানুষ, তার নথি নাই, তাকে ফেরত পাঠাতে পারে। ওইটা ওই দেশের অধিকার।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু এ ফেরত আসার প্রক্রিয়াটা আন্তর্জাতিক আইনানুযায়ী অবশ্যই মানবিক হতে হয়। এখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো সুযোগ নাই। আমরা দেখেছি যুক্তরাষ্ট্র থেকে যাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে, তাদের হাতে হাতকড়া, শরীরে শিকল লাগিয়ে দীর্ঘসময় রাখা হচ্ছে। এ বিষয়টা আমরা বলবো মানবাধিকার লঙ্ঘন।’
বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ যারা মানবাধিকারের কথা বলে তারা অন্তত বাংলাদেশের নাগরিকদের এভাবে ফেরত পাঠাতে পারে না বলে মনে করেন তিনি।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশ সরকারের এ বিষয়গুলোতে সোচ্চার থাকা উচিত এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের যাতে অমানবিক প্রক্রিয়ায় পাঠানো না হয়, সেই বার্তাও যুক্তরাষ্ট্রকে দেয়া উচিত।
গত কয়েক মাস ধরেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিযোগে বাংলাদেশিদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো হচ্ছে
শুক্রবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
উন্নত জীবনের আশায় গত বছরের অক্টোবরে ট্যুরিস্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান রুবেল (ছদ্মনাম)। মাত্র আট দিন পরেই তাকে আটক করা হয়, নেয়া হয় ডিটেনশন সেন্টারে। এরপর অপরাধীর মতো আটকে ফেরত পাঠানো হয় দেশে।
তার ভাষায়, ‘পুরা পেটে শিকল আছিলো, হাতে হাতকড়া ছিল, তারপর দোনো পায়ে কড়া লাগানো ছিল।’ এভাবেই ৬০ ঘণ্টার বিমানযাত্রায় ক্লান্ত-অবিশ্রান্ত হয়ে দেশে ফিরেন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনপ্রত্যাশী রুবেল।
দেশে ফেরত পাঠানোর আগে প্রায় ১০ মাস সেখানে রাখা হয় ২৯ বছর বয়সী এ যুবককে। কিন্তু ডিটেনশন সেন্টারে দেয়া হতো না পর্যাপ্ত খাবার।
অবৈধ অভিবাসনের অভিযোগে সর্বশেষ সামরিক বিমানে চাপিয়ে অন্য অনেকের সঙ্গে দেশে ফেরত পাঠানো হয় তাকে। সঙ্গে ছিল অন্য দেশের কয়েকজন নাগরিকও। তাদের সবাইকে শিকল বেঁধে, হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেশে ফেরত পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। এমনকি আড়াই দিনের সেই জার্নিতে কেবল চিজ দেয়া চারটি পাউরুটি, আর আধা লিটারেরও অর্ধেক পানি দেয়া হয়েছিল বলে জানান রুবেল।
সে বলে, ‘পানির জন্য ধরেন গলা শুকায়ে গেছে। আমরা এতো পানি চাইছি, আমাদেরকে ওনারা পানিই দেয় না। কিন্তু ওনারা ঠিকই একটার পর একটা বোতল খুইলা পানি খাইতাছে, এ খাবার খাইতাছে, ওই খাবার খাইতাছে, কিন্তু আমাদের কোনো গুরুত্বই নাই।’
পেটে শিকল বেঁধে রাখার কারণে পানিটাও মুখে তুলে খেতে কষ্ট হয়েছে তাদের। রুবেল বলেন, শৌচাগারে নেয়ার সময়ও পুরোপুরি খুলে দেয়া হয়নি হাতকড়া। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেন কোনো অফিসার।
সূত্র বলছে, গত ২ আগস্ট ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের সি-১৭ সামরিক উড়োজাহাজে একজন নারীসহ ৩৯ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়। একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন সেই ফ্লাইটে ফেরত আসা অন্য অভিবাসনপ্রত্যাশী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি জানান, সেই ফ্লাইটটিতে অন্য দেশের নাগরিকও ছিল। আর বেঁধে রাখার বিষয়টিও পুরোটা সময় ‘কন্টিনিউ’ করেছে।
তারও আগে কোরবানির ঈদের আগ দিয়ে ফেরত পাঠানো অন্য দলের সঙ্গে দেশে ফিরেছিলেন নোয়াখালীর ইমরান হোসেন। ব্রাজিলের ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে সড়ক পথে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন তিনি। ডিটেনশন সেন্টারে রাখার সময় খুব কম খাবার দেয়ার কথা জানান তিনিও। বিমানে শিকল পরিয়ে রাখা হয়নি তাদের। তবে বিমানে ওঠার আগে বিমানবন্দরের ছোট একটি কক্ষে ১৫ ঘণ্টার মতো রাখা হয়েছিল, সেখানে পরানো হয়েছিল শিকল আর হাতকড়া।
অবৈধ অভিবাসন নিয়ে কাজ করে এমন বেসরকারি সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে বিশেষ ভাড়া করা বিমানে একজন নারীসহ ৩০ বাংলাদেশিকে একইভাবে হাতে হাতকড়া এবং পায়ে শিকল বেঁধে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
তাদেরই একজন নোয়াখালীর আসগর হোসেন। তিনি জানান, বেশ কয়েকটি দেশের নাগরিক ওই ফ্লাইটে ছিল। একেক দেশে গিয়ে তাদের ফেরত দেয়া হয়েছে। কিন্তু পাঁচদিনের যাত্রার পুরোটা সময় তাদের শিকল পরিয়ে রাখা হয়েছিল। আসগর হোসেন বলেন, ‘বিমান যখন আমাদের এখানে ল্যান্ড করছে, তখন আমাদের হাত থেকে শিকলটা খুলছে।’
তিন ঘণ্টা রানওয়েতে থাকা বিমানে বহনকারী যাত্রীদের হাতকড়া ও শিকল খোলা হয় এবং বিমানবন্দরের অ্যারাইভাল এরিয়াতে পৌঁছানোর আগে সবাইকে শিকলমুক্ত করে দেয়া হয়। আগস্টে আসা আগের দলটির মতোই তাদেরও শৌচাগারে যাওয়ার সময় কেবল এক হাত খুলে দেয়া হয়েছে, খাবারও দেয়া হয়েছে সামান্য।
বিমানবন্দর ও অভিবাসন নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের সূত্র অনুযায়ী, চলতি বছরের ৮ জুন একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে ৪২ জন বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনা হয়। এর আগে, ৬ মার্চ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত একাধিক ফ্লাইটে আরও অন্তত ৩৪ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। ২০২৪ সালের শুরু থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো বাংলাদেশির সংখ্যা অন্তত ১৮০ ছাড়িয়েছে।
অথচ এ নিয়ে সরকারের তরফ থেকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। বরং প্রত্যক্ষদর্শী কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ফেরা অভিবাসন প্রত্যাশীদের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বিমানবন্দরে আনা হয়। এ সময় কাউকে তাদের কাছে যেতে দেয়া হয়নি কিংবা কোনো ধরনের ছবি তোলার অনুমতি দেয়া হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অমানবিকভাবে দেশের ফেরত পাঠানোর কথা অস্বীকার করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের ইমিগ্রেশনের ডিআইজি পদে থাকা কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বলেন, ‘এভাবে কোনো বাংলাদেশি এয়ারপোর্টে আসে নাই। শুক্রবার, (০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫)ও আসে নাই। আমেরিকা থেকে যেগুলো এসেছে কোনোটাই এভাবে আসে নাই। যারা বলে তারা কেন বলে কী জন্য বলে আপনারা দেখবেন এটা।’
তবে গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে অভিবাসীদের দেশে ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এস এম মাহবুবুল আলম জানান, ‘ডিপোর্ট করার সময় কেউ কেউ হয়তো ভায়োলেন্ট আচরণ করে, এরকম নজির হয়তো আছে। আর বিভিন্ন দেশে যখন ডিপোর্ট করা হয়, সেক্ষেত্রে তাদেরও বোধহয় সিমিলারি বিষয়টাকে এড্রেস করা হয়।’
এছাড়া ফ্লাইটে অন্য দেশের নাগরিক থাকার কারণেও এমনটা করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
# ‘এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন’
পৃথিবীর যে দেশগুলো থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ বিদেশে কাজ করতে যায়, সেই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। আবার ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অনিয়মিত পথে যারা ইউরোপে প্রবেশ করে সেই তালিকায়ও গত এক দশক ধরে বাংলাদেশ প্রায় শীর্ষ দেশগুলোর একটি।
অভিবাসন নিয়ে কাজ করা বিশ্লেষকরা বলছেন, কেবল অর্থনৈতিক কারণেই না, সুশাসনের ঘাটতিসহ নানা সমস্যার কারণে বাংলাদেশের অনেকে দেশ ছাড়তে চায়। সে কারণে তৎপর থাকে দালাল চক্রও।
ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান বলেন, ‘যে কোনো মানুষের যেমন বৈধ পথে যে কোনো দেশে যাওয়ার যেমন নাগরিক অধিকার আছে, আবার কোনো দেশ যদি মনে করে সে আনডকুমেন্টেড মানুষ, তার নথি নাই, তাকে ফেরত পাঠাতে পারে। ওইটা ওই দেশের অধিকার।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু এ ফেরত আসার প্রক্রিয়াটা আন্তর্জাতিক আইনানুযায়ী অবশ্যই মানবিক হতে হয়। এখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো সুযোগ নাই। আমরা দেখেছি যুক্তরাষ্ট্র থেকে যাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে, তাদের হাতে হাতকড়া, শরীরে শিকল লাগিয়ে দীর্ঘসময় রাখা হচ্ছে। এ বিষয়টা আমরা বলবো মানবাধিকার লঙ্ঘন।’
বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ যারা মানবাধিকারের কথা বলে তারা অন্তত বাংলাদেশের নাগরিকদের এভাবে ফেরত পাঠাতে পারে না বলে মনে করেন তিনি।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশ সরকারের এ বিষয়গুলোতে সোচ্চার থাকা উচিত এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের যাতে অমানবিক প্রক্রিয়ায় পাঠানো না হয়, সেই বার্তাও যুক্তরাষ্ট্রকে দেয়া উচিত।